আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

"রেটিনা ডিসপ্লে" ডিসপ্লে প্রযুক্তির এক নতুন সম্ভাবনা.........

মানুষের চোখে (রেটিনায়) প্রতি ইঞ্চিতে পিক্সেলের ঘনত্ব (pixel density) কত? মনে করা হয় এই ঘনত্ব ৩০০ PPI (pixel per inch)। এই ৩০০ PPI দিয়েই আমরা একটি নির্দিষ্ট দূরত্ব থেকে অসীম দূরত্ব পর্যন্ত স্পষ্ট দেখতে পারি। মানুষের চোখে যদি পিক্সেলের ঘনত্ব আরো বেশী থাকত তবে কি আরো দূরত্বের বস্তু আরো স্পষ্ট ভাবে দেখা যেত? উত্তর হলো "না"। যারা চোখের ভিশন কৌশল সম্পর্কে জানেন তারা ধরতে পারবেন স্পষ্ট দেখার ব্যাপারটা যতটা পিক্সেলের উপর নির্ভর করে কার চেয়ে বেশী নির্ভর করে রেটিনার সঠিক স্থানে আগত আলোর প্রতিফলন। চোখের সার্বিক ম্যাকানিজমের জন্য ৩০০ PPI হলো এপ্রোপিয়েট।

[ এবার আসা যাক ডিসপ্লে বিষয়ে, বর্তমান ডিসপ্লে টেকনোলজির উন্নয়ন হচ্ছে প্রতি এককে পিক্সেলের ঘনত্ব দিয়ে। বিভিন্ন কোম্পানী প্রতিযোগীতা করছে কে কত কম এরিয়ায় বেশী সংখ্যক পিক্সেল ব্যবহার করে তাদের পন্য বাজারজাত করবে। এ ক্ষেত্রে আমি বলব এ্যপল সবচাইতে এগিয়ে আছে। এ্যপলের লেটেষ্ট পন্যের ডিসপ্লেতে তারা সংযোজন করছে রেটিনা ডিসপ্লে প্রযুক্তি। বর্তমানে রেটিনা ডিসপ্লে একটা ব্র্যণ্ড নেম বা মার্কেটিং টার্মে পরিনত হয়েছে যা সর্ব প্রথম এ্যপল ব্যবহার করে ২০১০ সালে আই ফোন-ফোর-এ, এখন এটা এ্যপলের প্যেটেন্ট করা টেকনোলজি।

এ্যপল বলছে কোন ডিসপ্লের প্রতি ইঞ্চিতে যদি ৩০০ PPI এর অধিক (অর্থাৎ মানুষের রেটিনার অধিক) পিক্সেল থাকে তবে খোলা চোখে একটা নির্দিষ্ট দূরত্ব পর্যন্ত মানুষ পার্থক্য করতে পারবে না এটা অরিজিনাল কিনা, অর্থাৎ ন্যাচারাল ইমেজের সাথে ডিসপ্লে ইমেজের পিক্সেলেশনের পার্থক্য বুঝা যাবে না। এই দূরত্বটা নির্ভর করে ডিসপ্লে ডিভাইসটি কত বড় তার উপর। যেমন মোবাইল ফোনের টিপিক্যাল ভিউইং দূরত্ব ১০ ইঞ্চি, আইপ্যাডের ১৫ ইঞ্চি এবং ল্যাপটপের (১৩ থেকে ১৪ ইঞ্চি) ২০ ইঞ্চি। এই দূরত্বের পার্থক্যের জন্যই তাদের PPI ঘনত্ব ভিন্ন। PPI ভিন্ন হওয়ার করনে যেন ইমেজ কোয়ালিটি পরিবর্তন না হয় এজন্য প্রত্যেকটার রেজুল্যাশন ভিন্ন।

নিচের টেবিলে খেয়াল করুন: আইপ্যাড এবং ম্যাক বুক-প্রোর PPI ৩০০-এর কম হলেও এ্যপল রেটিনা ডিসপ্লে বলছে কারন হাই রেজু্লেশনের কারণে টিপিক্যাল ভিউইং দূরত্বে ইমেজ কোয়ালিটি আইফোনের মতই। একটু তুলনা করা যাক রেটিনা ডিসপ্লের সাথে সমসাময়িক ডিভাইসগুলোর রেজ্যুলেশন- এ্যপলের নতুন আইপ্যাডের (অনেকে আইপ্যাড-৩ বলে) তুলনায় আইপ্যাড-২ এর রেজ্যুলেশন প্রায় অর্ধেক (২০৪৮ x ১৫৩৬ এবং ১০২৪ x ৭৬৮), এমনকি মর্ডান HD-TV-র রেজ্যুলেশনের (১৯২০ x ১০৮০) চেয়েও নতুন আইপ্যাডের রেজ্যুলেশন বেশী। বর্তমানে স্যামসং, আসুস ও লেনোভোর যে সব এণ্ডরয়েড ট্যাবলেটস গুলো পাওয়া যাচ্ছে সেগুলোর রেজ্যুলেশনের (১৯২০ x ১০৮০) HD-TV-র মত আর PPI নতুন আইপ্যাডের চেয়ে কম হওয়ায় ইমেজের শার্পিং নতুন আইপ্যাডের মত নয়। নিচের টেক্স ইমেজটা খেয়াল করুন: মর্ডাণ এ্যপল ডিভাইসের রেটিনা ডিসপ্লে গুলো কারা তৈরী করছে? এ্যপল নিজে না অন্য কেউ- মজার ব্যাপার হলো এই মার্কেটিং টার্ম নিয়ে এ্যপল এত গর্ব করলেও রেটিনা ডিসপ্লে কিন্তু এ্যপল নিজে তৈরি করে না, তারা থিম আইডিয়া দেয় এবং কনট্রাক্ট বেসিসে অন্যের কাছ থেকে তৈরি করিয়ে নিয়ে আসে। উইকি থেকে জানা যায় আইফোন-4 ও 4s, আইপড টাস্ ও ম্যাক বুক-প্রো ডিভাইসগুলোর ডিসপ্লে আরেক প্রযুক্তি জায়ান্ট LG তৈরি করে।

আর নতুন আইপ্যাডের ডিসপ্লে তৈরি করে স্মার্ট ফোনের প্রধান প্রতিদ্বন্দী ও টেকনো জায়ান্ট Samsung. প্যাটেন্ট সমস্যা নিয়ে এ্যপল-স্যামসং-এর যতই দ্বন্দ থাক নিজেদের মধ্যে তারা একটা কোলাবোরেশন ঠিকই করে নিয়েছে। প্রশ্ন আসতে পারে Samsung বা LG তারা রেটিনা ডিসপ্লে এ্যপলকে তৈরি করে দিলেও নিজেদের পন্যে কেন ব্যবহার করছে না? উত্তর হলো এই প্রযুক্তির একমাত্র স্বত্ত্বাধীকারী এ্যপল, Samsung বা LG এ্যপলের জন্য তৈরি করছে ঠিকই কিন্তু নিজেদের পন্যে ব্যবহারের পারমিশান নাই। রেটিনা ডিসপ্লের কিছু সীমাবদ্ধতা যদিও রেটিনা ডিসপ্লে ডিসপ্লে প্রযুক্তির অন্য যে কোন ডিভাইসের চাইতে বেটার তারপরও এই প্রযুক্তির কিছু কিছু সমস্যা আছে। ১. ইয়েলো টিন্ট: ইউজারদের কাছ থেকে যে সমস্যাগুলো বেশী পাওয়া যায় এর মধ্যে ইয়েলো টিন্ট অন্যতম। অতিরিক্ত ব্রাইট পিক্সেলেশান কনট্রাস্ট ও হিউ এর কারণে সমমানের নন-রেটিনার চেয়ে রেটিনা ডিসপ্লেতে হলদে টিন্ট বেশী থাকে ঠিক নিচের ইমেজের মতো: ২. পাওয়ার কনজামশান: বেশী PPI ঘনত্বের জন্য অধিক সংখ্যক এলইডি ব্যবহার করতে হয়েছে।

এলইডিকে সর্বাধিক উজ্জল আলো প্রদানের জন্য বেশী বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে হয়। এজন্য রেটিনা ডিসপ্লে আইফোন ও আইপ্যাডের ব্যাটারী সামান্য বড় হয়। কিন্তু নন-রেটিনার তুলনায় দীর্ঘসময় চার্জ দিতে পারে না, খুব দ্রুতই চার্জ শেষ হয়ে যায়। রেটিনা ডিসপ্লেকে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য A5X processor-এর সাথে quad-core graphics এবং বেশী মেমরীর RAM ব্যবহার করা হয়েছে যার কারণে বেশী বিদ্যুৎ করজামশান হয়। ৩. ষ্টোরেজ সমস্যা: শুধু বেশী পাওয়ার খরচ হয় তাই নয় সাথে সাথে বেশী স্পেসও প্রয়োজন হয়।

রেটিনা ডিসপ্লে ডিভাইসের এপ্লিক্যাশন, সফটওয়্যার ও আইকন নন-রেটিনার তুলনায় অনেক বড় (MB) হয় ফলে বেশী মেমরীর দখল করে। গ্রাফিক্যাল রিচ এপ্লিক্যাশনের জন্য রেটিনা ডিসপ্লে বেশ বিপদজনক। সিম্পল JPEG ইমেজ, টেক্স ও ভিডিও ফাইল আইপ্যাড-২ তে কোন সমস্যা হয় না কিন্তু নতুন আইপ্যাডে সমস্যা হয়। আইপ্যাড-২ এর তুলনায় নতুন আইপ্যাডে ৪ গুন বেশী পিক্সেল থাকায় ঐ ফাইলগুলোর বেষ্ট ভিউ-এর জন্য ৪ গুণ বড় হতে হয়। ধন্যবাদ সবাইকে.... আমার আরো কয়েকটা টেকি পোষ্ট, ইচ্ছা করলে ঘুরে আসতে পারেন Click This Link Click This Link  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।