অভিলাসী মন চন্দ্রে না পাক, জোছনায় পাক সামান্য ঠাই গ্রামীন ব্যাংক ইস্যুতে শুধু সমগ্র বাংলাদেশই নয়, বরং সারাবিশ্বের মানুষের ধারনা এবং বিবেচনা পরিষ্কার। আমরা সবাই জানি, নোবেল জয়ী গ্রামীন ব্যাংক ইতিমধ্যেই মৌলিকত্ব হারিয়ে সরকারী ক্রীড়ানকে পরিনতে হবার পথে। কিন্তু এরও মাঝে, একদল মানুষ আজ সরকার ও সরকারী দল সমর্থকদের প্রচারনায় বিভ্রান্ত! সরকারের সিদ্ধান্তগুলোর সমর্থকেরা অনেক কিছুই দেখছে কিন্তু বুঝতে পারছে না আসল ব্যাপারটিই!
ভুল পথে চলা পথিকদের স্বদেশবাসী হিসেবে পথ দেখানোর দায়িত্ববোধ থেকেই এই পোস্ট।
সরকারী সিদ্বান্তের সমর্থকদের মূলত ২টি অভিযোগ,
১ম অভিযোগ, ডঃ ইউনুস'কে তো আজ না হয় কাল গ্রামীন ব্যাংক ছেড়ে যেতেই হবে, তবে সে কেন থাকতে চায়?
-দুঃখজনক বিষয় হলো যে, তারা বুঝতে চাচ্ছে না অথবা পারছে না যে, ডঃ ইউনুস তার প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানটিতে পদ ধরে রাখতে চাইছেন না, বরং গ্রামীন ব্যাংক'কে আর দশটি সরকারী ব্যাংকের মত অচল করে দেবার ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদ করছে।
সহজভাবে বললে, সরকার গ্রামীনের পরিচালনা পর্ষদের ক্ষমতা খর্ব করে সেটির চেয়ারম্যানের ক্ষমতা বাড়াচ্ছে।
এর ফলে ব্যাংকটা আর দশটা সরকারী ব্যাংকের মত হয়ে যাবে। এবং ৮৩ লক্ষ ঋনগ্রহীতা নারী, যারা বর্তমানে ব্যাংকের মালিকানা ভোগ করে, তারা অধিকার হারাবে। ৩% শেয়ারের মালিক সরকারের চেয়ে ব্যাংকটির ৯৭% এর মালিক ৮৩ ঋনগ্রহীতা নারীদের ভেতর থেকে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের ক্ষমতার নিয়ন্ত্রনে থাকা বেশি যৌক্তিক ও ন্যায্য!
২য় অভিযোগ, কেন পশ্চিমারা এ বিষয়ে নাক গলাচ্ছে? নিশ্চয়ই ইউনুস বাইরের লোক এনে আমাদের অপমান করছে!
- এটাও ভুল! এখানে ব্যাক্তি ডঃ ইউনুসের জন্য আমাদের সিংহভাগ জনগণের বা পশ্চিমাদের মাথা ব্যাথা'র নেই বরং মাথা ব্যাথা রয়েছে একটি নোবেল বিজয়ী প্রতিষ্ঠানকে বাংলাদেশের প্রায় সব সেক্টরে ব্যার্থ সরকারের মর্জিমাফিক একটি প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরের ঘটনায়! বাংলাদেশের সরকারী দক্ষতা সম্পর্কে সারা বিশ্বেরই ধারনা রয়েছে বিধায়, সারা বিশ্বের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলা দেখে যে কোন ব্যাক্তি বা সরকারই চুপ থাকতে পারে না। দলীয় দালালদের সহায়তায় আমাদের ১৬ কোটি মানুষের জীবন নিয়ে সরকারী ছিনিমিনি খেলা চলে, কারন এই ১৬ কোটি বাংলাদেশির অভিবাবক বাংলাদেশ সরকার, কিন্তু গ্রামীন তা নয়! সভ্য সমাজে এমন ছিনিমিনি খেলা অগ্রহনযোগ্য বিধায়, এবং সারা বিশ্বে'র কল্যাণে দৃষ্টান্তমূলক হওয়ায় গ্রামীন ব্যাংক সম্পর্কে আফ্রিকা-আমেরিকা-আরব-চীন-জাপানে'র মত পশ্চিমারা নিজ থেকেই এ সম্পর্কে আগ্রহী।
কেন ওরা এত আগ্রহী, সেটাই বলবো এখন,
--বিশ্বের আধুনিক ইতিহাসে দারিদ্রতাই সবচেয়ে ভয়াবহ সমস্যা।
এরই ফলে সব অশুভ ঘটনা ঘটে। মানুষদের আর্থিক সহায়তা প্রদানের জন্য ব্যাংকিং সিস্টেম হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে চালু রয়েছে, কিন্তু বাংলাদেশের সন্তান ডঃ ইউনুসের আগে কেউই ব্যাংকিং সেক্টরকে সমাজের সবচেয়ে দরিদ্র গোষ্ঠি'র জন্য কার্যকর করে দেখাতে পারে নাই।
৮৩ লক্ষ মানুষকে বিনা মর্টগেজে ঋন প্রদান করা শুধুমাত্র একটি দৃষ্টান্তমূলক সফল ব্যাংকিংই নয় বরং এটা তার চেয়ে অনেক বৃহৎ একটি কনসেপ্ট। বিশেষ করে যখন, নারী মুক্তি'র মত মানবজাতি'র আরেকটি বৃহৎ জনসেপ্টও এর সাথে জড়িত, তখন এর মহত্ব বুঝতে না পারাটাই এক বিস্ময়!!!
পৃথিবীর ইতিহাসে এর আগে একমাত্র সমাজতন্ত্রই কাগজে-কলমে দারিদ্রতা বিমোচনে চেষ্টা করেছিল, কিন্তু বাস্তবে চরমভাবে ব্যার্থ হয়েছে। মার্ক্স-এ্যাঙ্গেলরা ব্যার্থ হলেও, আমাদের দেশের ডঃ ইউনুস কিন্তু চলতি রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক কাঠামোর ভেতর থেকেই মানব ইতিহাসের অন্যতম মহৎ ও প্রয়োজনীয় পদ্ধতি আবিষ্কার ও প্রয়োগ করে দেখিয়ে দিয়েছেন! যাদের নিয়ে কারো মাথা ব্যাথা ছিল না, তাদের জন্যই তিনি সারা জীবন পরিশ্রম করে, বেঁচে থাকতেই সকলের সন্মান ও স্বীকৃতি পর্যন্ত অর্জন করে সফলতার চুড়ান্ত স্পর্ষ করেছেন।
বিষয়টার মূল্য উপলব্ধি করতে পেরেই আমাদের মতই সারা বিশ্ব এই ইস্যুটিতে এতটা আগ্রহী। এখানে জুজু'র কোন স্থান নেই, হবেও না!
সারা বিশ্ব আজ ক্ষুদ্ধ, আমরাও, সাথে বাংলাদেশি হিসেবে পাই কিছুটা বোনাস লজ্জা! যাকে নিয়া মানবজাতি গর্বিত সেই মানুষটিকেই এ দেশে এভাবে অপমানিত হতে হয়! যেই সরকার আমাদের অভিবাবকের দায়িত্ব পালনের কথা, তাদেরই হাতে ডঃ ইউনুস'কে হতে হয় নিগৃহীত!
-------------------------------------------
যাইহোক, আমরা বাংগালী জাতি সুবিচারের সাথে কোনদিনই আপোষ করি নাই। ইতিহাস তার সাক্ষী। আমরা তরুন প্রজন্ম চোখের সামনেই দেখলাম কিভাবে আমাদের আন্তর্জাতিক গর্বে'র জায়গাটি আভ্যন্তরীন প্রতিহিংসা'র আগুনে পুড়লো। আমরা তরুনেরা নিকট অদুর ভবিষ্যতে যখনই সুযোগ পাবো, আমরা এই ভুল শুধরে নেবই নেব!!! ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।