মনের সব স্বপ্নগুলো একদিন বাস্তব হয়ে ধরা দেবে, আমি সেই বিশ্বাসে বিশ্বাসী। বৈষম্য আর পুঁজিতন্ত্রের বার্তা নিয়ে ঘুরেছি বহু পথ।
সিডনি, টরেন্টো, মাদ্রিদ, ঘুরে এসেছি পেরিসে।
দেখেছি চোখ ধাঁধানো আলোক সজ্জা আর আকাশচুম্বি অট্টালিকার সারি,
প্রশস্ত স্বচ্ছ রাস্তা, বাহারি গাড়ি আর অবিরাম জ্বলতে থাকা ল্যম্পপোষ্ট।
ধুলোহীন ঝকঝকে শহর, তবে কৃত্রিম আর অবিশ্বাসে ঠাসা।
ফর্সা রঙ করা নারী মুখ আর নগ্ন যৌবন বাসের বাড়াবাড়ি।
তবুও হেটে চলেছি অন্তহীন; কায়রো, বার্লিন, পার হয়ে অষ্ট্রিয়া।
লন্ডনের পথে দেখেছি সভ্যতার ছাপ, বড় জীর্ণ, অপবিত্র আর অপরিণত।
মস্কোর পথে দেখিছি সাম্যবাদীদের কঙ্কালসার দেহ আর
মার্কস, লেনিনের মাথা ভাঙা স্টাচু।
সাম্যের অবয়বে নজরুল, গোর্কি আর চেগুয়ে ভারার সমাধিতে কেঁদেছিল দিনের পর দিন।
মিথ্যে গণতন্ত্রের আড়ালে পুঁজিবাদীদের লুটপাট,
ক্ষুধা আর বৈষম্যের মহামারিতে মরছে মানুষ।
ক্লান্ত পায়ে কাবুলে এসে দেখি যুদ্ধ।
ধুলোয় মিশেছে বাগদাদ।
ধর্ম যুদ্ধ? না কি ঐশ্বর্য পুঁজি করনের নগ্ন প্রতিযোগীতা?
কুয়াশায় ফেসে-ফেসে গিয়ে দাঁড়িয়েছি ইংলিশ চ্যানেল।
সমুদ্রের গভীর তলদেশও জয় করেছে মানুষ!
সমুদ্রের সেই গভীরে দিনে-রাতে হুইচাল বাজিয়ে ছুটে চলেছে ট্রেন।
কখন যেন আঁধারের গায়ে ফেসে চলে এলাম সোমালিয়ায়।
আঁতকে উঠি! কি বীভৎস! অসহ্য আর অপ্রত্যাশিত।
ক্ষুধায় মরেছে মানুষ; চলছে দুর্ভিক্ষ!
বুকের রক্ত হিম হয়ে চোখ ফেটে বের হতে লাগলো রক্তের খন্ড।
জানলাম, দুর্গম সমুদ্রতল জয় করেছে মানুষ, কিন্তু ক্ষুধাকে জয় করতে পারেনি আজও,
যা ছিল মানুষের সবচেয়ে প্রথম কাজ।
খাদ্যের অভাবে মরছে মানুষ!
প্রবল হতাশায় ছুটে চলি রোমের পথে-পথে,
দেখি স্লেফ আর গ্লাডিএটরের নিপীড়িত বিদায়ী আত্মার
আট্ট হাসিতে কাঁপছে রোমক্লোজম।
কাঁদছে জুলিয়াস সিজার আর আলেকজান্দ্রিয়ার বিষাদিত ভুমিতে
শুয়ে আছে এনথনি আর ক্লিওপ্রেট্টা।
এথেন্সের পথে এসে থমকে দাঁড়াই,
দেখি সক্রেটিসের সমাধিতে কোটি মানুষে ভিড়,
মুক্তি আর সাম্য চায় তারা।
প্রবল এক ঝঞ্ঝায় চলে এলাম বোষ্টন, ওয়াশিংটন, ক্যলিফোর্নিয়া,
কলোরাডো, সানফ্রান্সিকো, নিউইয়ার্কে এসে দেখি
ওয়ালস্ট্রিটে চলছে অদমনীম বিক্ষোভ।
সারা পৃথিবীর সচেতন মানুষগুলো জড়ো হয়েছে সেখানে।
বিক্ষোভে ফেটে পড়ে ক্ষিপ্র কণ্ঠে বলছে, বিশ্বের সব সম্পদ এসে জমা হয়েছে
কিছু মানুষের হাতে।
তাদের সংখ্যা এক ভাগেরও কম।
যার জন্য খাদ্যের অভাবে মরছে পৃথিবীর মানুষ, ভূমিহীন হচ্ছে দিনে পর দিন।
টাইম্স স্কয়ার থেকে ফিরতে দেখি মাধবীলতার সেই শান্ত চোখ।
এত গভীর আর শান্ত আগে কখনো দেখি নি।
ম্যনিলার প্যাসিগ নদীর জলে ধোয়া চোখ, আর মুদ্রিত দৃষ্টি।
দিল্লী, কলকাতা পেরিয়ে ঢাকায় এসে দেখি,
পুজিবাজার লুটে নিচ্ছে পুঁজিতন্ত্রের লুটেরার দল।
বেইজং গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকি মাও সেতুং-এর সমাধিতে।
পিয়ংইয়াং-এ চলছে সাম্যের গান;
মন ভাল করা গান।
নিশুতি রাতে এক ঝাক নক্ষত্রের মতো দেখি মাধবীলতার চোখ।
কে যেন এসে বলে যায়, গণতন্ত্র বলে কিছুই নেই,
বিশ্ব জুড়ে চলছে পুঁজিতন্ত্রের কাড়াকাড়ি।
তবুও মাধবীলাতার চোখে তাকিয়ে অপেক্ষায় থাকি;
অকুণ্ঠিত সাম্য আর বৈষম্যহীন সমাজ ফিরে পাবার আশায়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।