যদি ঠাঁই দিলে তবে কেন আজ হৃদয়ে দিলে না প্রেমের নৈবদ্য আবার জেগেছে দেখো শোষিতের প্রাণ! আবার শোনা যায় আজ গণশক্তির গান! যুগের নিস্তব্ধতা ভেঙ্গে সংগ্রামের অগ্নিশপথে দেখো বাঙ্গালীর নবউত্থান- ফুলবাড়ীতে জনতার জলোচ্ছ্বাসে দেখো কাঁপে সেই পুরনো শয়তান! দেখো কাঁপে লুটেরা, কাঁপে অত্যাচারী বেনিয়ার প্রাণ!! ওরা ভেবেছিল আমরা মরে গেছি, ওরা ভেবেছিল আমরা ভুলে গেছি রক্তের ঋণ , না, আমরা তো মরিনি, ঘুমিয়ে ছিলাম; ঘুমের অসারতা ভেঙ্গে আমরা দেখেছি অর্থনৈতিক সাম্রাজ্যবাদের নীল দংশন; আমরা দেখেছি খনিজের উপর বিদেশি বেনিয়ার লোলুপ দৃষ্টির বীভৎসতা! আমরা বুঝেছি উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলনের চরম বিভীষিকা- প্রাণ ও পরিবেশের চরম বিপর্যয়- একটি সুন্দর সকাল বাঁচাতে আমরা তাই জড়ো হয়েছি এই ফুলবাড়িতে- জ্বলন্ত অগ্নিবলয়ের প্রান্তে! প্রতিবাদের বজ্রনির্ঘোষ ধ্বনিতে প্রকম্পিত করেছি সেদিন বাংলার আকাশ –বাতাস, প্রতিরোধের অগ্নিশিখায় সেদিন ফসফরাসের মত জ্বলজ্বল করে জ্বলেছে বাংলাদেশের প্রাণ! “ মানুষকে বোকা বানিয়ে শোষণের দিন শেষ” “ মানুষকে অন্ধকারে রেখে আগ্রাসনের দিন শেষ” মিছিলে মিছিলে সেদিন এই শ্লোগানই পাঠিয়ে দিলাম লুটেরা বহুজাতিকের হেডকোয়ার্টারে- ফুলবাড়ী আজ আর কোন বসতভিটাই শুধু নয়, ফুলবাড়ী আজ এক জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরি! সংগ্রামের দীপশিখা প্রজ্বলনের নোতুন সূতিকাগার! বিপ্লবী জনতার জয়োল্লাসেরই অপর নাম “ফুলবাড়ী”- এখানে কি ছিল না, বলো? মিছিলের ফেনিল চূড়ায় শ্লোগানের বজ্রনিনাদ, আকাশে উৎক্ষিপ্ত প্রতিবাদী মুষ্টিবদ্ধ হাত, বাতাসে কম্পমান বিক্ষিপ্ত কেশাগ্র, আর বুদ্ধিজীবীর শাণিত ভাষণের নিবিড় সংশ্লেষে এখানে আমরা লিখেছি “ফুলবাড়ী” উপাখ্যান – সংগ্রামের নোতুন মহাকাব্য! এখানে কি ছিল না, বলো? ‘জাগরণ’, ‘বিপ্লব’, ‘দ্রোহ’, ‘দেশপ্রেম’- এইসব নির্বাসিত শব্দগুলি আবার ফিরে এসেছে রাজপথে, ফিরে এসেছে অলিতে-গলিতে, সড়কে-মহাসড়কে, ফিরে এসেছে আমাদের মুষ্টিবদ্ধ হাতে, ফিরে এসেছে আন্দোলনের নোতুন অর্থ নিয়ে এই ফুলবাড়ীতে – জনতার আপন ঠিকানায়।। এখানে কি ছিল না, বলো? পুলিশী হামলা, নির্যাতনের বিভীষিকা, গুলির আওয়াজ, আহতদের আর্তনাদ, রক্তাক্ত দেহের চিৎকার, ভয়ার্ত গুমোট আবহ এবং সাতটি তাজা প্রাণের মৃত্যুতে সহস্র শ্মশানের নীরবতা! তবু আমরা পিছিয়ে আসিনি কখনো, মুহূর্তের জন্যও ভয় আমাদের আড়ষ্ট করতে পারেনি এতটুকু – চেতনার শাণিত আহবানে আমরা এগিয়ে চলেছি মুক্তির মোহনায়- অর্থনৈতিক সাম্রাজ্যবাদ প্রতিরোধের নির্বাসিত আন্দোলনকে নিয়ে এসেছি এই ফুলবাড়ীতে – জনতার আপন ঠিকানায়।। ফুলবাড়ী আজ আর কোন স্থানের নাম শুধু নয়। ফুলবাড়ী আজ আমাদের পরিশীলিত চেতনারই অপর নাম। ফুলবাড়ী আজ গণমানুষের মুক্তি আন্দোলনের এক নোতুন পাঠশালা, এক নোতুন সূতিকাগার !!! .......................রচনাকালঃ ২৬ আগস্ট, ২০০৮ কাব্যগ্রন্থ “ দ্রোহের নীল প্রহর”
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।