ওই যে নদী যায়রে বইয়া... প্রভাবশালীদের দখলের বিষয়ে পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশের জের ধরে আমার ওপর নেমে আসা চারটি সাজানো মামলার দুর্যোগে এলাকা ছাড়া হয়ে ঢাকায় পত্রিকা অফিসে ঠাঁই হয়। বেশ ভালোই সময় কাটছিল। সকাল থেকে বেশিরভাগ সময় কাটতো মামলার জামিনের জন্য বিভিন্ন কাগজপত্র সংগ্রহ করে। বিকেল চারটায় যথারীতি কাজে লেগে যেতাম নিউজ ডেস্কে। এভাবে দিন দশেক চলার পরই ঘনিয়ে এলা ঈদ।
২০০৯ সালের সেপ্টেম্বরের শেষ দিক। ঈদের আগের রাতে বন্ধু ফকরুল ইসলামের নারায়ণগঞ্জ সানারপাড়ের বাসা থেকে চলে এলাম ঢাকার পশ্চিম রাজাবাজারের একটি মেসবাড়িতে। ঈদ ঘনিয়ে আসায় হোটেলে থাকতে ভালো লাগছিল না। ঈদের আগের দিন আবার ফকরুলের বাসায়ও মন বসেনি। তাই খোঁড়া অযুহাত দেখিয়ে ওই মেসবাড়িতে আসা।
এলাকার কয়েকজন শিক্ষার্থী সেখানে থাকতো। ঈদে তারা সবাই বাড়ি চলে গেছে।
সন্ধ্যায় ওয়ারেছ ভাই (এমএ ওয়ারেছ, ইনচার্জ, বিশাল বাংলা, প্রথম আলো) ফোন করে বললেন, সকালে যেন অবশ্যই তাঁর পান্থপথের বাসায় যাই। রাতে কোনো কিছু খেতে ইচ্ছে করছিল না। রাত প্রায় দেড়টা পর্যন্ত বাসার ভেতরে পায়চারি করে কাটে।
এরপর শুয়ে পড়লাম। কখন ঘুমিয়েছি জানি না।
ঈদের দিন সকালে মুঠোফোনে রিং বাজছিল। ঘুম-ঘুম চোখে রিসিভ করলাম। আবদুল হক সাহেব ফোন করেছেন।
এসআই আবদুল হক। আমার বিরুদ্ধে দায়ের করা চারটি মামলার একটির তদন্ত কর্মকর্তা তিনি। হক সাহেব ঈদের শুভেচ্ছা জনালেন। পাশাপাশি মামলা পরিস্থিতির জন্য দুঃখ প্রকাশ করলেন। তিনি জানালেন এলাকার আমার কয়েকজন সাংবাদিক বন্ধুর কর্মকাণ্ড, যাঁরা প্রভাবশালী সেই দখলবাজ নেতার পকেটে ঢুকে ’চুক-চুক’ করছিলেন।
হক সাহেবের সঙ্গে কথা শেষ হতে না হতেই ওয়ারেছ ভাই ফোন করলেন। তিনি জনতে চাইলেন ঈদের নামাজ কোথায় পড়ব। বললাম নামাজ পড়ব না। তিনি বললেন, ’তা হলে এখনই চলে আসুন, আমি বাসার সামনে আছি। ’
বাসায় ফোন করে মাকে চাইলাম।
মা কোনো কথা বলতে পারছিলেন না। ফোন ধরে মা ফুপিয়ে-ফুপিয়ে কাঁদছিলেন। আমার চোখ ভিজে গেল। তবে মা-কে বুঝতে না দিয়ে বললাম, চিন্তা করবেন না। আমরা ভালো আছি মা।
ঈদের পরেই চলে আসবো। সব ঝামেলা শেষ হয়ে যাচ্ছে। আব্বা-মা’র সঙ্গে কথা শেষ করে চুপচাপ বসে রইলাম। ছোট ভাই এলিট (সাইমুন রহমান এলিট, আমার দেশ প্রতিনিধি, আমার আপন ছোট বাই। এলিটও আমার সঙ্গে তিনটি মামলার আসামী) চুপ করে বসে ঘরের মেঝের দিকে তাকিয়ে ছিল।
ওর চোখ থেকে দরদর করে পানি পড়ছিল। বাইরেও বৃষ্টি শুরু হল। আস্তে আস্তে বৃষ্টির তোড় বেড়ে চলছে। মনে মনে বলছি, বেড়ে যাক বৃষ্টি। ঝড় শুরু হলে মন্দ হয় না।
কোথাও না নেমে ঘরে বসে সময়টা পার করে দেওয়া যাবে। এরই মধ্যে আবার ফেন করলেন ওয়ারেছ ভাই। বললেন শাহআলম সনি চলে আসছেন। আপনারা তাড়াতাড়ি আসুন। ওয়ারেছ ভাইকে ফেরাবো এমন শক্তি আমার নেই।
এলিটকে বললাম চল, যাই। ঘরে তালা দিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। তখনও বৃষ্টি চলছিল। ইলশেগুড়ি বৃষ্টিতে ভিজেই পায়ে হেটে চললাম পান্থ পথের দিকে। তখনও চোখের কোণ বেয়ে অশ্রু ঝরছিল আমাদের।
তবে চোখের জলে বৃষ্টির জলে একাকার হয়ে যাওয়ায় অন্য কেউই হয়তো দেখেনি সে অশ্রু।
বিঃদ্রঃ কাল ঈদ। তাই ওই সময়কার ঈদের আগের ও পরের দিনগুলোর কথা আগে লিখলাম। পরে আবার পেছনের কথা লিখবো আশা করি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।