আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আলোকিত মানুষ গঠনে শিক্ষার ভূমিকা

মানুষ স্রষ্টার শ্রেষ্ঠ জীব। বিধাতা এই মানুষকে সব রকম উন্নত গুণাবলীর অধিকারী করে ধরাধামে পাঠান। ধরাধামে এসে মানুষ জন্মলগ্ন থেকে শিখতে শুরু করে-মৃত্যুর আগমূহুর্ত পর্যন্ত শিখে। এই শিক্ষা দুইভাবে হয়ে থাকে। অনানুষ্ঠানিক ভাবে ও আনুষ্ঠানিক ভাবে।

জীবনের প্রথম দিকে মা-বাবা, ভাই-বোন, পরিবারের অন্যান্য সদস্যবৃন্দ, আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী থেকে অনানুষ্ঠানিক ভাবে শিক্ষা গ্রহণ করে। তখন তার শিক্ষাক্ষেত্রের পরিধি সীমিত থাকে। আস্তে আস্তে পর্যায়ক্রমে বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণ করে থাকে। এর বাইরেও সারাজীবন বিভিন্ন পরিবেশ-পরিস্থিতিতে অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা অর্জিত হয়। বিভিন্ন ক্ষেত্র হতে গৃহীত শিক্ষা দ্বারা অর্জিত জ্ঞান ও কর্ম কৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে কর্মজীবনে অবতীর্ণ হয়।

কেউ সফলতার আলোতে অবগাহন করে কেউ ব্যর্থতার সাগরে পতিত হয়ে সফল হওয়ার পথ খুঁজে বেড়ান। এই সফল বা ব্যর্থ কেবল মাত্র ব্যক্তিক কারণে হয় না। এর সাথে সম্পর্ক থাকে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রযন্ত্রের কর্ম কৌশল। এই সফলতা বা ব্যর্থতা কেবলমাত্র ভাল কাজের ক্ষেত্রে বিবেচ্য। সফল মানব জীবন ও ব্যর্থ মানব জীবনের বাইরেও রয়েছে একটি জীবন।

আর সেটি হল আলোকিত জীবন। এই জীবন নির্ভর করে শিক্ষার গুনগত মানের উপর। গুনগত দিক থেকে শিক্ষা দুই ধরনের- (১) সু-শিক্ষা ও (২) কু-শিক্ষা। সু-শিক্ষায় শিক্ষিত একজন মানুষ ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ তথা রাষ্ট্রের জন্য সুখ-শান্তি ও কল্যাণ বয়ে আনে। দেশকে অধিষ্ঠিত হতে সাহায্য করে বিশ্ব-দরবারের উন্নত আসরে।

এমনকি বৃহত্তর পরিসরে বিশ্বময় কল্যাণের সুবাতাস বইয়ে দিতে পারে। তখন তাঁরাই হয়ে ওঠেন আলোকিত মানুষ এবং তাঁদের জীবন হয় আলোকিত জীবন। কিন্তু একজন মানুষ শিক্ষিত হয়েও যদি হীনমন্যতা, সংকীর্ণতা, কুসংস্কার, হিংস্রতা, পরধর্ম ও পরমত অসহষ্ণুতা ইত্যাদির ঊর্ধ্বে উঠে ব্যক্তি-মনের উন্মেষ ঘটাতে না পারে তবে সেই শিক্ষা কুশিক্ষা ছাড়া আর কি হতে পারে? এই কু-শিক্ষিত মানুষ ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, দেশ তথা সারা বিশ্বের জন্য পাপ-তাপ ও ধ্বংসের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। একজন মানুষ সু-শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে উঠা একার পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠেনা। এই ক্ষেত্রে মা-বাবা, ভাই-বোন, পরিবারের অন্য সকল সদস্য, আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী ও শিক্ষকদের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।

দেশ প্রেমিক ও মানবতাবাদী মানুষের ভূমিকাও রয়েছে যথেষ্ঠ। একজন শিক্ষার্থী তার নিজের অভিভাবকের ও শিক্ষকমন্ডলীর সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে তার ভিতরের সুপ্ত প্রতিভাকে বিকশিত করে তার চরিত্রে সকল মানবীয় গুণাবলীর উন্মেষ ঘটানো সম্ভব। সে যেন ব্যক্তিক, পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক জীবনের সকল স্তরে সফল হতে পারে এবং মানব কল্যাণে কাজ করে যেতে পারে সে জন্য আমাদের সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। কোমল মনের, আবেগ প্রবণ ও তারুণ্যের শক্তিতে ভরপুর এই সকল শিক্ষার্থী যেন কোন ঘৃণ্য রাজনৈতিক চক্রের ও অন্যান্য কুচক্রী মহলের ক্রীড়ানক হয়ে নিজেকে অনিশ্চিত জীবনের দিকে নিয়ে না যায় এই ব্যাপারে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে এবং তাদেরকে বুঝাতে হবে যে মা-বাবা, দেশ-জাতি এমন কি বিশ্বের সকল সভ্য মানুষ তাদের নিকট ভাল কিছু প্রত্যাশা করে। তরুন শিক্ষার্থীদের এই সব বিষয়ে সজাগ করতে হলে সচেতন কবি-সাহিত্যিকদেরকে তাদের নিরপেক্ষ ও জনকল্যানধর্মী লেখনী, সরকারি ও বেসরকারি সকল প্রচার মাধ্যমগুলির তথ্যমূলক ও উপদেশ মূলক প্রচার অভিযানের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।

সরকারি, বেসরকারি ও অন্যান্য উদ্যোক্তাদের উদ্যোগে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। যাতে অর্ধ-শিক্ষিত, শিক্ষিত সকল শ্রেণীর তরুণ-তরুণী যেন কাজ করার সুযোগ পায়। তাছাড়া সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থার পাশাপাশি কর্মমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা আরো গতিশীল করা এখন সময়ের দাবি। কাজ করার যথেষ্ট সুযোগ থাকলে অনৈতিক পথ থেকে অনেক যুবক-যুবতী ফিরে আসবে এবং অনৈতিক উপায়ে আয় করার প্রবণতা অনেকাংশে হ্রাস পাবে। জাতীয় ও বৈশ্বিক এই ক্রান্তি লগ্নে মানবজাতিকে রক্ষা করতে হলে ঘরে ঘরে সুসন্তান চাই, সু-শিক্ষিত জন গোষ্ঠী চাই, সুন্দর মনের মানুষ চাই।

এই মানুষগুলোর উজ্জ্বল আলোকছটায় আরো অনেকগুলো আলোকিত মানুষ সৃষ্টি হবে এবং সর্বস্তরে কল্যান বয়ে আসবে। তাই সকল দেশ প্রেমিক, সকল সভ্যমানুষ যে যেখানে থেকে যতটুকু সম্ভব আলোকিত মানুষ গঠনে ভূমিকা রাখলে আমরা আমাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষে পৌছাতে পারব। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।