আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব। ‘বিএনপি ভারতের দালাল’। অন্য কেউ নয়, কথাটি বলেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ।
১৯৯৬ সালের ১০ এপ্রিল জাতীয় আইনজীবী ফেডারেশনের এক সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।
তবে তখন তিনি বিএনপি নয়, জাতীয় পার্টির নেতা ছিলেন।
সে সময় জাতীয় পার্টি বিএনপির বিরুদ্ধে আন্দোলন করছিল। কেবল মওদুদ আহমদ নয়, একই ধরনের কথা বলেছিলেন জামায়াতে ইসলামীর সে সময়ের আমির গোলাম আযম। একই বছরের ২৬ এপ্রিল ঢাকায় দলটির এক সমাবেশে তিনি বলেন, ‘বিএনপি সরকার ভারতের সাথে সবচেয়ে বেশি মিত্রতা করেছে। ভারতের কাছে দেশ বিকিয়ে দিয়েছে তারা। ভোট বাগানোর জন্য তারা আজ স্বাধীনতার রক্ষক সেজেছে।
তারা দাবি করছে স্বাধীনতার একমাত্র রক্ষক তারাই, অন্যরা বিরোধী।
বিএনপিকে ভারতের দালাল বলার কিছুদিন পরই অবম্য মওদুদ আহমদ বিএনপিতে যোগ দেন এবং ভারতের ‘আগ্রাসন’ এর বিরুদ্ধে দলটি সোচ্চার বলে দাবি করে আসছেন তিনি। আর এই বক্তব্য দেয়ার চার বছর পর গোলাম আযম যোগ বাঁধেন বিএনপির সাথে। এরপর থেকে এরা অবশ্য আগের সুরে কোনো কথা বলছেন না।
মওদুদ আহমেদ সেদিন বলেছিলেন, ‘বিএনপি জাতীয়তাবাদী শক্তির প্রতিনিধিত্ব করার অধিকার হারিয়েছে।
ক্ষমতায় থাকাকালে তারা ভারতের দালালি করেছে। এখন ভোটের জন্য জাতীয়তাবাদী শক্তির ঐক্যের ডাক দিচ্ছে’।
মওদুদ আহমদ বলেন, ‘খালেদা জিয়া ভারতের প্রধামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে পুশইনের চুক্তি করে বাংলাদেশের স্বার্থ বিকিয়ে দিয়েছেন। বাংলাদেশকে ভারতের বাজারে পরিণত করেছেন। এখন ভোট পাওয়ার জন্য বলছেন, গোলামী চুক্তি (বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী চুক্তি) বাস্তবায়ন করবেন না।
ক্ষমতায় থাকতে তিনি সেই চুক্তি বাতিল করেননি কেন?’।
মওদুদ আহমদের এই বক্তব্য ১৯৯৬ সালের ১১ এপ্রিল গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করে ভোরের কাগজ।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে মওদুদ আহমদের এ রকম অবস্থান অবশ্য অভিনব নয়। মুক্তিযুদ্ধের আগে বঙ্গবন্ধুর আইনজীবী মওদুদ মুক্তিযুদ্ধের পর আওয়ামী লীগে যোগ দেন। পঁচাত্তরের পট পরিবর্তনের পর জিয়াউর রহমানের মন্ত্রিসভার সদস্য হন তিনি।
পরে আরেক সামরিক শাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ক্ষমতা দখলের পর তার প্রতিষ্ঠিত জাতীয় পার্টিতেও যোগ দেন মওদুদ। এরশাদ আমলে বাংলাদেশের উপ প্রধানমন্ত্রীও হয়েছিলেন তিনি। ১৯৯৬ সালে আবার তিনি যোগ দেন বিএনপিতে। এরপর অবশ্য গত প্রায় দেড় যুগ ধরে আর দলবদল করেননি।
জামায়াত যখন বিএনপির বিরুদ্ধে আন্দোলন করছিল তখন এ রকম বক্তব্য প্রায়ই দিতেন জামায়াত নেতারা।
বিএনপিকে তখন ইসলামের সবচেয়ে বড় শত্রু হিসেবেও আখ্যায়িত করেছিল দলটি। ১৯৯৬ সালের ২৬ এপ্রিল ঢাকায় জামায়াতের এক সমাবেশে গোলাম আযম এও বলেছিলেন, বিএনপি সবচেয়ে বড় ইসলামবিরোধী। তিনি সেদিন বলেন, ‘বিএনপি সরকারের সময় সবচেয়ে বেশি ইসলামবিরোধী কাজ হয়েছে। ইসলামের বিরুদ্ধে বই লেখা হয়েছে। সেই লেখকদের তারা হেফাজত করেছে।
তাদের এক মহিলা এমপি পারিবারিক আইন বদলানোর জন্য সংসদে বিল এনেছিলেন’।
এখন অবম্য মওদুদ এবং জামায়াতের নেতারা একই ধরনের অভিযোগ তুলছেন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে। মানবতারিবোধী অপরাধর বিচারকেও ইসলামের বিরুদ্ধে সরকারের অবস্থান হিসেবে দেখাতে চাইলে জামায়াত।
দেড় যুগ আগের এমন বক্তব্য এখনও বিশ্বাস করেন কি না, সে বিষয়ে মওদুদ আহমদ এবং গোলাম আযমকে জিজ্ঞাসা করার অবশ্য সুযোগ নাই। কারণ পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে পুলিশের করা মামলায় মওদুদ আহমেদ এখন কারাগারে।
আর মানবতবিরোধী অপরাধের মামলায় কারাগারে গোলাম আযম।
বিএনপি নেতাদের প্রতিক্রিয়া: বিএনপি ভারতের দালাল- জাতীয় পার্টির নেতা থাকাকালে মওদুদ আহমদের এমন বক্তব্যকে বিএনপি কীভাবে দেখে, জানতে ঢাকা টাইমসের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়েছিল বিএনপির তিনজন কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে। তারা তিনজনই বলেছেন, মওদুদ আহমদ একেক সময় একেক কথা বলেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার বলেন, ‘মওদুদ সাহেবরা তো আগে অনেক কথা বলেছেন, এখনও বলেন, তার তো কথার শেষ নাই’।
মওদুদের বক্তব্যের পর ভারত বিষয়ে বিএনপির অবস্থানের কী পরিবর্তন হয়েছে, জানতে চাইলে দলটির এই নেতা বলেন, ‘ভারতের ব্যাপারে বিএনপির দৃষ্টিভঙ্গীর কোনো পরিবর্তন আসেনি।
ভারতকে বিএনপি কখনই শত্রু হিসেবে মনে করেনি। দেশটি বাংলাদেশকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করলে তখন এর প্রতিবাদ করেছে’।
তবে এম কে আনোয়ার স্বীকার না করলেও গত বছর বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ভারত সফরের আগে থেকেই দেশটির বিষয়ে বিএনপির দৃষ্টিভঙ্গীর গুণগত পরিবর্তন দৃশ্যমান। আগের মতো দলটির নেতা এখন আর ভারতের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেন না। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে টিপাইমুখ প্রকল্প নিয়ে বিএনপি সোচ্চার থাকলেও খালেদা জিয়ার ভারত সফরের পর থেকে বিষয়টি নিয়ে আর কিছুই বলছে না দলটি।
বরং এখন বিএনপি নেতারা বলছেন, তারা ভারতের সাথে সুসম্পর্ক চান।
এম কে আনোয়ার বলেন, ‘সম্প্রতি আমি ভারত সফর সফর করেছি। দেশটির সরকার আমাদের জানিয়ে দিয়েছে, তারা বাংলাদেশের কোনো বিশেষ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করতে চায় না। তারা বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চায়। বিএনপির নীতিও তাই’।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ঢাকা টাইমসকে বলেছেন, ‘কেবল ভারত না কোনো দেশের সাথেই খারাপ সম্পর্ক নাই আর বিশেষ সম্পর্কও নাই’। মওদুদ আহমদের কথা মতো বিএনপি কি আসলেই ভারতের দালাল?, জানতে চাইলে আমীর খসরু বলেন, ‘ওনার মন্তব্যের ব্যাপারে আমি কিছু বলতে চাই না’।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য রফিকুল ইসলাম মিয়ার কাছে মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মওদুদ সাহেব এতদিন বাইরে (জেলের) ছিলেনঅ তাকে জিজ্ঞাসা না করে আমাকে কেন জিজ্ঞেস করছেন? তিনি একেক সময় একেক কথা বলেন’।
সুত্র ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।