ইকুয়েডর সরকার আজ বৃহস্পতিবার উইকিলিকসের প্রধান সম্পাদক ও প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিয়েছে। এর মধ্যদিয়ে ব্রিটেনের সঙ্গে দেশটির কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও খারাপ হলো। ব্রিটেন ইতিমধ্যে হুমকি দিয়েছে, লন্ডনে ইকুয়েডর দূতাবাস থেকে অ্যাসাঞ্জের পালিয়ে যাওয়া ঠেকাতে প্রয়োজনে কূটনৈতিক শিষ্টাচার বর্জন করা হবে।
আট সপ্তাহ আগে সুইডেনে বিচারের মুখোমুখি হওয়া থেকে বাঁচতে অ্যাসাঞ্জ লন্ডনে ইকুয়েডর দূতাবাসে ঢুকে আশ্রয় চান। তাঁর ধারণা, ব্রিটিশ সরকার তাঁকে সুইডেনের হাতে তুলে দেবে এবং সুইডেন পরবর্তী সময় তাঁকে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় হত্যা করতে পারে।
সুইডেনে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে মামলা চলছে।
ইকুয়েডরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রিকার্ডো প্যাটিনো বলেন, অ্যাসাঞ্জের নিরাপত্তা ও অধিকার বুঝে পাওয়া বিষয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে তাঁর দেশ উইকিলিকসের এই সম্পাদককে আশ্রয় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কুইটোতে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ ঘোষণা দেন।
রয়টার্সের এক খবরে আজ বলা হয়, বিপুলসংখ্যক গোপন মার্কিন নথি ফাঁস করে দিয়ে অ্যাসাঞ্জ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তাঁর মিত্রদের বুকে যে ক্ষোভের আগুন জ্বালিয়েছিলেন, ইকুয়েডরের এই নতুন সিদ্ধান্ত নিশ্চিতভাবেই তাতে ঘি ঢেলে দিল।
লন্ডনে ইকুয়েডর দূতাবাসের সামনে অ্যাসাঞ্জের সমর্থকেরা সিদ্ধান্তটিকে হাততালি ও লাউডস্পিকারে হর্ষধ্বনি দিয়ে স্বাগত জানান।
অ্যাসাঞ্জকে সুইডেনের হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে তাঁর একদল সমর্থক দীর্ঘদিন ধরে ওই দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ করে আসছেন।
এর আগে ব্রিটেন বলেছিল, অ্যাসাঞ্জকে আটক করতে দেশটি প্রয়োজনে ওই দূতাবাসের কূটনৈতিক সুবিধা বাতিল করবে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেন, ‘ব্রিটেন যদি ইকুয়েডর দূতাবাসের কূটনৈতিক অবস্থানকে ক্ষুণ্ন করে, তবে কী হবে তা বলার সময় এখনো আসেনি। রাজনৈতিক আশ্রয় দিলেই সবকিছু আগাগোড়া বদলে যাবে না। ’ তিনি আরও বলেন, ‘অ্যাসাঞ্জকে তুলে দেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের একটি আইনি বাধ্যকতা আছে।
আইন বলছে, তাঁকে আমাদের সুইডেনের হাতে তুলে দিতে হবে। আর আমরা আইন মেনেই চলতে চাই। ’
তবে ইকুয়েডর দূতাবাসের কূটনৈতিক সুবিধা বাতিলের যে সিদ্ধান্ত ব্রিটেন নিয়েছে, তার সমালোচনা করেছেন অনেক সাবেক কূটনীতিক। তাঁরা সাবধান করে দিয়েছেন, এর ফলে অনেক দেশই বিভিন্ন ব্রিটিশ দূতাবাসের সুবিধা বাতিল করতে পারে। রাশিয়ায় ব্রিটেনের সাবেক রাষ্ট্রদূত টনি ব্রেন্টন বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাত্কারে বলেন, ‘আমার মনে হচ্ছে, এ ক্ষেত্রে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিজেদের সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে।
’
ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট রাফায়েল কোরেয়া যুক্তরাষ্ট্রের ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’ প্রচার মাধ্যম এবং ‘সাম্রাজ্যবাদের’ একজন স্বঘোষিত শত্রু। টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক খবরে বলা হয়, লাতিন আমেরিকার বামপন্থী রাষ্ট্রনেতাদের অন্যতম রাফায়েল। গত মে মাসে এক সাক্ষাত্কার দেওয়ার সময় তিনি অ্যাসাঞ্জের সাথে বিভিন্ন বিষয়ে একমত হন। তখন তিনি ঠাট্টা করে বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র বিরোধী কাজ করে অ্যাসাঞ্জ ‘ধিকৃতদের ক্লাবে যোগ দিয়েছেন। ’
লন্ডনে ইকুয়েডরের দূতাবাসে ব্রিটেন সরকারের অভিযান চালানোর সিদ্ধান্তকে ইকুয়েডরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্যাটিনো ‘বর্বর’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
তবে তিনি স্বীকার করেন, অ্যাসাঞ্জের ইকুয়েডরে পালিয়ে যাওয়ার পথ একটাই। আর তা হলো, যদি ব্রিটেন সরকার অ্যাসাঞ্জকে বিমানে ওঠার অনুমতি দেয়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।