জার্মানিতে লিগ খেলছেন জাতীয় হকি তারকা রাসেল মাহমুদ জিমি। বাংলাদেশ নামে হকিতে ‘অখ্যাত’ এক দেশের খেলোয়াড় হিসেবে বিশ্ব হকির অন্যতম পরাশক্তি জার্মানিতে তাঁর সদম্ভ বিচরণ। অথচ এই জিমিরাই নিজের দেশে মাঠের বাইরে বসে থাকেন দিনের পর দিন। বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন করতে হয় তাঁদের। রুটি-রুজির সংস্থানে এ টেবিল-ও টেবিল ধরনা দিতে হয় প্রতিনিয়ত।
ব্যাপারটি একেবারেই ভালো লাগে না জিমির। খেলোয়াড়দের কাজ মাঠে গিয়ে খেলা, আন্দোলন নয়। মৌলিক সুযোগ-সুবিধাগুলো নিশ্চিত করতে পারলে তাঁরাও দেশকে অনেক কিছুই দিতে পারবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
সুদূর জার্মানিতে বসে জিমি কথা বলেছেন প্রথম আলো ডটকমের সঙ্গে। তাঁর কথা, ‘বাধ্য হয়েই আন্দোলনে নেমেছিলাম।
দলবদল খেলোয়াড়দের রুটি-রুজির সংস্থান, এটা একটা মৌলিক ব্যাপার। এটি নিয়ে সময়ক্ষেপণ, দীর্ঘসূত্রতা ভালো লাগছিল না। ’
দলবদলের দাবিতে হকি খেলোয়াড়েরা আন্দোলনে নেমেছিলেন এমন একটি সময়, যখন দেশের হকিতে বইছিল সাফল্যের সুবাতাস। দিল্লিতে বিশ্ব হকি লিগের দ্বিতীয় পর্বে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের কারণে হকি নিয়ে দেশের ক্রীড়াঙ্গনে বইছিল আশাবাদের জোয়ার। পৃষ্ঠপোষকেরা এগিয়ে আসছিলেন, দর্শকদেরও আগ্রহ ফিরছিল।
কিন্তু দলবদলের দাবিতে জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের এশিয়া কাপের ক্যাম্প বর্জন হকি সম্পর্কে নেতিবাচক বার্তাটিই যেন নতুন করে ছড়িয়ে দিল চারদিকে। তাহলে কী দেশের হকি আবার উল্টোপথে হাঁটা শুরু করল! ব্যাপারটি নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে জিমি বলেন, ‘দেশের হকিকে এগিয়ে নিতে হলে খেলোয়াড়দের সুযোগ-সুবিধা বাড়াতেই হবে। জার্মানিতে আমার দলে একজন ভারতীয় খেলোয়াড় খেলে। সে ইন্ডিয়ান অয়েলে খেলোয়াড় কোটায় চাকরি করে। ফেডারেশন থেকে সে মাসিক বেতন পায় এক লাখ রুপি।
সে আমাকে বলেছে, সম্প্রতি ইন্ডিয়ান অয়েল তাঁকে একটি ফ্ল্যাট কেনার অর্থ দিয়েছে। গাড়ি কেনার জন্য আলাদা টাকা দিয়েছে। আমরা এত কিছু চাই না। নিয়মিত খেলতে চাই। ফেডারেশনের কাছ থেকে মৌলিক কিছু সুযোগ-সুবিধা চাই।
এসব না দিলে হকি এগোবে কীভাবে?’
জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের এই আন্দোলন ছিল দেশের সব হকি খেলোয়াড়দের জন্য—এ কথা জানিয়ে জিমি বলেন, ‘জাতীয় দলের ৩০ জন খেলোয়াড়ই তো দেশের হকির সবকিছু নয়। দ্বিতীয় বিভাগ, প্রথম বিভাগ, প্রিমিয়ার মিলিয়ে এ দেশে হকি খেলোয়াড়ের সংখ্যা প্রায় তিন-চার শ। নিয়মিত লিগ না হলে, দলবদল না হলে এরা কোথায় যাবে?’
বিশ্ব হকি লিগের পারফরম্যান্স বাংলাদেশকে হকির বিশ্বে পরিচিত করেছে বলে জানালেন জিমি। জার্মানিতে লিগ খেলতে গিয়ে ব্যাপারটি বেশ ভালোই বুঝতে পারছেন এই হকি তারকা। তিনি বলেন, ‘জার্মানিতে অনেকেই আমাকে এটা বলেছে।
তাঁরা দিল্লির বিশ্ব হকি লিগে বাংলাদেশের খেলা দেখে মুগ্ধ। সবারই এক কথা, অভিজ্ঞতার অভাবই আমাদের তৃতীয় রাউন্ডে খেলা থেকে বঞ্চিত করেছে। অভিজ্ঞতাটা একটু বেশি হলে সেদিন আয়ারল্যান্ডকে হারিয়ে দেওয়া কোনো সমস্যাই ছিল না। ’
আগস্টে অনুষ্ঠেয় এশিয়া কাপে বিশ্ব হকি লিগের পারফরম্যান্স ধরে রাখতে চান জিমি। তবে তিনি সন্দিহান, সেখানে জাতীয় হকি দল প্রত্যাশামাফিক পারফরম করতে পারবে কি না।
তিনি বলেন, এর আগে লিগটা হলে ভালো হতো। কিন্তু সবকিছুই তো অনিশ্চয়তায় রয়েছে। কর্মকর্তারা ব্যস্ত নির্বাচন নিয়ে। ’
তার পরও এশিয়া কাপে প্রথম পাঁচটি দলের মধ্যে থাকতে চান জিমি, ‘বিশ্ব হকি লিগে আমরা চীনকে হারিয়েছি। যদিও এশিয়া কাপে আমাদের গ্রুপে ভারত ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দল আছে।
তার পরও আমরা আমাদের সামর্থ্যের পুরোটা ঢেলে দিতে চাই। আমাদের গ্রুপে ওমান আছে। ওমানকে হারাতে পারলে পরের রাউন্ডে জাপানকে মোকাবিলা করতে হবে। পাঁচে থাকা খুবই সম্ভব। ’
জাতীয় দলের জন্য নতুন পাকিস্তানি কোচ আসছেন।
নাভিদ আলম। এককালে পাকিস্তানের জাতীয় দলে খেলা এই হাইপ্রোফাইল কোচকে স্বাগত জানিয়েছেন জিমি। তবে কোচ আসায় রাতারাতি যে সবকিছু বদলে যাবে—বিষয়টি মানতে নারাজ জিমি। তাঁর মতে, ‘জাতীয় দলের কোচ খেলোয়াড়দের মানসিকতার উন্নতি ঘটাতে পারেন। নতুন কিছু শেখাতে পারেন না।
ফেডারেশনের উচিত নতুন বিদেশি কোচকে স্থানীয় হকি কোচদের মানোন্নয়নে কাজে লাগানো। স্থানীয় কোচরা উপকৃত হলে তাতে হকিরই লাভ। ’।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।