আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সালমান ও তাঁর পরিচালকদের গল্প ৫ (সালমান -মৌসুমি জুটির শেষ পর্ব)

প্রিয় ব্লগার বন্ধুরা আপনাদের জন্য আমার নিয়মিত জনপ্রিয় সিরিজ 'সালমান ও তাঁর পরিচালকদের গল্প' এর ৫ম পর্ব নিয়ে হাজির হয়েছি যাকে 'সালমান -মৌসুমি জুটির শেষ পর্ব ' বলতে পারেন। আজ এখানে সংক্ষেপে সালমান - মৌসুমি অভিনীত সর্বশেষ ছবিটি নিয়ে সংক্ষেপে একটা ধারনা দেয়ার চেষ্টা করবো। । গাজী মাজহারুল আনোয়ার এর 'স্নেহ' - ৯৩ তে বাম্পারহিট কেয়ামত থেকে কেয়ামত ' ছবির সুপারহিট জুটি সালমান - মৌসুমির শেষ মুক্তিপ্রাপ্ত ছবিটির নাম 'স্নেহ'। ছবিটি ৯৫ সালে মুক্তি পায়।

ছবিটির প্রযোজনা সংস্থা ও পরিচালক হলেন আমাদের বাংলা চলচ্চিত্রের বিখ্যাত ও জনপ্রিয় গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ার। সাল্মান -মৌসুমি জুটির অন্যসব ছবির গল্প ও ব্যবসার দিক দিয়ে এই ছবিটি ছিল একেবারেই আলাদা। অর্থাৎ সালমান -মৌসুমি জুটির যতগুলি ছবি এর আগে মুক্তি পেয়েছিল তাঁর সবগুলোই ছিল রোমান্টিক প্রেমের গল্পের ছবি যার সবগুলো ছিলে সুপার -ডুপারহিট। কিন্তু 'স্নেহ' ছবিটি ছিল পারিবারিক টানাপোড়ন বা 'ফ্যামিলি ড্রামা' নির্ভর ছবি যেখানে সাল্মান -মৌসুমির প্রেম এর কাহিনীটি মুখ্য নয় , মুখ্য ছিল একজন ডাক্তার (আলমগীর) এর জীবনে ঘটে যাওয়া একটি ভুলবুঝাবুঝি ও সম্পর্কের বিচ্ছেদ এর গল্প যেখানে শাবানা একজন আদর্শবান ও আত্নসম্মান রক্ষাকারী বাঙ্গালী নারী যিনি তাঁর স্বামীর সংসার থেকে বিতারিত হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে সবাইকে ছাড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন এবং একমাত্র সন্তানকে পিতার পরিচয় ছাড়াই মানুষ করতে চেয়েছেন। অর্থাৎ ছবির গল্প পুরোটাই আবর্তিত হয়েছিল আলমগীর - শাবানা কে কেন্দ্র করে যেখানে সাল্মান আলমগীর -শাবানার একমাত্র সন্তানের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন।

ফলে দর্শক এখানে সাল্মান - মৌসুমির প্রেমের রসায়ন সেভাবে পায়নি যার কারনে সাল্মান - মৌসুমি জুটির অন্য সব ছবিরচেয়ে এটাকে ফ্লপ বলা যায় যা এই জুটির একমাত্র ফ্লপ ছবি হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল সেই সময়। ছবির গল্প সুন্দর, টানটান উত্তেজনা, চমৎকার কিছু গান থাকা সত্ত্বেও ছবিটি পূর্বের ছবিগুলোর মতো ব্যবসা করতে পারেনি। এই ছবির সবচেয়ে আকর্ষণীয় যেটি ছিল সেটা হলো সেই সময়ের দুর্দান্ত খলনায়ক হুমায়ূন ফরিদির খুব চমৎকার পজিটিভ অভিনয় যিনি শাবানার পিতার পরিবারের আমল থেকে শাবানাদের সংসারে আশ্রিত অবস্থায় আছেন এবং শাবানার দুর্দিনে শাবানার পাশে থেকেছিলেন যাকে ছবিতে সাল্মানের মামা চরিত্রে দর্শক দেখতে পায়। যিনি ছোটকাল থেকেই মা-বাবার স্নেহ বঞ্চিত সাল্মাঙ্কে কোলেপিঠে করে মানুষ করেছিলেন এবং সাল্মান যাকে শুধু মামা নয় একজন প্রিয় বন্ধু হিসেবেই জানে ও মানে। আলমগীর - শাবানা, সাল্মান ,ফরিদির খুব চমৎকার অভিনয় সমৃদ্ধ ছবির নাম 'স্নেহ'।

ছবির গানগুলো বেশ চমৎকার ছিল। সবগুলো গানের কথা লিখেছিলেন পরিচালক গাজী মাজহারুল আনোয়ার আর সুর করেছিলেন জনপ্রিয় সঙ্গীত পরিচালক আলী হোসেন। গানগুলোর মধ্য ফরিদি -সাল্মান এর মিলিত অভিনীত সুবীর নন্দী ও খুরশিদ আলম এর কণ্ঠের গানটি 'মামা ও মামা' দর্শকরা বেশ উপভোগ করেছিলেন। এরপর সালমান - মৌসুমি জুটি ও প্রয়াত খালিদ হাসান মিলু ও সালমা জাহান এর কণ্ঠের 'চিঠি লিখলাম তোমাকে এবং খালিদ হাসান মিলুর কণ্ঠে 'তুমি যেখানেই থাকো / ও আমার ভালোবাসা ' গান দুটি ছিল সেই সময়ের খুব জনপ্রিয় দুটি গান। আমার ব্যক্তিগত বেশী পছন্দ ছিল সুবীর নন্দী ও খুরশিদ আলমের 'মামা ও মামা আমি তোমার ভাগিনা ' এবং খালিদ হাসান মিলুর কণ্ঠের 'ও আমার ভালোবাসা 'গান দুটি।

সবগুলো গানের কথা ,সুর ছিল খুবই চমৎকার। গানগুলো শুনলে মনে হবে কখনও কখনও বাংলা আধুনিক কোন গান। ছবিটি সেই সময় আমরা যারা দেখেছিলাম তাদের কারোরই খারাপ লাগেনি। কারন ছবির গল্পটি ছিল বেশ দ্বন্দ্বমুখর ও চমৎকার । কিন্তু সালমান -মৌসুমির রোমান্টিক প্রেমের ছবি হিসেবে যদি কেউ দেখতে চায় তাহলে তিনি বেশ বড় একটা ধাক্কা খাবেন।

যা সেই সময় অনেকে এই ভেবেই ভুল করেছিল ফলে ছবিটি ব্যবসায়িক ভাবে সেই রকম সুপার ডুপার হিট হয়নি । তবে এর পেছনে শুধু পারিবারিক গল্পকে দায়ী করলে ভুল হবে। কারন ছবিটি মুক্তি পাওয়ার আগেই সালমান -মৌসুমি জুটির দূরত্ব বেড়ে যায় অনেক। ফলে ততদিনে সালমান - শাবনুর ও সানী - মৌসুমি জুটি দর্শকদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা বেশী পেয়েছিল। এই ছবির পরিচালক গাজী মাজহারুল আনোয়ার এই ছবি মুক্তির আগে রোজার ঈদে সানী -মৌসুমি জুটির 'ক্ষুধা' ছবিটি মুক্তি দিয়েছিলেন যেটি ব্যবসায়িক দিক দিয়ে 'স্নেহ' ছবির চেয়ে অনেক বেশী সাফল্য পেয়েছিল।

'ক্ষুধা' ছবিটি ঈদের সেরা কয়েকটি ব্যবসা সফল ছবির একটি ছিল। ফলে গাজীর এই ছবিটি সালমান - মৌসুমিকে দর্শক সেভাবে পায়নি। এই ছবির মাধ্যমেই সমাপ্তি ঘটে বাংলা চলচ্চিত্রের খুব ক্ষণস্থায়ী সুপার ডুপার হিট ও জনপ্রিয় জুটি সালমান - মৌসুমি' জুটির যা সবসময় বাংলা চলচ্চিত্রের সেরা কয়েকটি জুটির অন্যতম হয়ে থাকবে। *** বাংলা চলচ্চিত্রকে ভালোবাসুন এবং এই শিল্পকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসুন *** এমন আরও অনেক কিছু জানতে সবসময় একটি শিক্ষিত রেডিও র সঙ্গে থাকুন । ।

 ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ২৮ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.