বেইজিংয়ে ১০০ মিটারে তাঁর উদ্যাপন অলিম্পিক ইতিহাসেই অমর এক ছবি। গত পরশু ২০০ মিটার জয়ের পর যা করলেন, সেটিও বোধ হয় এর পাশেই স্থান পাবে। জয়ের পর কোথায়, সমাপ্তিরেখাটাই তো পেরোলেন ঠোঁটে আঙুল রেখে।
জ্যামাইকান ট্রায়ালে দুটি পরাজয় আর চোট-টোট মিলিয়ে যাঁরা উসাইন বোল্টের শেষ দেখে ফেলেছিলেন, আবারও ‘স্প্রিন্ট ডাবল’ জিতে ইতিহাস গড়াই তাঁদের জন্য যথেষ্ট জবাব ছিল। সেটিতেই সন্তুষ্ট থাকলে তিনি আর বোল্ট কেন!
ঠোঁটে আঙুল দিয়ে কী বুঝিয়েছেন, সেটিও বললেন তীব্র শ্লেষের সঙ্গে, ‘অনেক আজেবাজে কথা হয়েছে।
ঠোঁটে আঙুল দিয়ে ওদের বললাম, “স্টপ টকিং”। আমি এখন জীবিত কিংবদন্তি। ’
জীবিত কিংবদন্তি তো বটেই। অলিম্পিক ইতিহাসে এই প্রথম কারও দুই অলিম্পিকে ‘স্প্রিন্ট ডাবল’। ২০০ মিটারে দুটি সোনাও আর কারও নেই।
১০০ ও ২০০ মিটার মিলিয়ে চারটি সোনাও নয়। ১০০ মিটারে জেতার পর নিজেই বলে দিয়েছিলেন, কিংবদন্তি হতে আর একটি ধাপ বাকি। ২০০ মিটারটা জিতলেই হবে। জিতলেন তো বটেই, সেটিও এমন হেলাফেলায় যে সবার মনে হলো, আরেকটু চেষ্টা করলে বোধ হয় নিজের বিশ্ব রেকর্ডটাও ভেঙে ফেলতে পারতেন।
বিশ্ব রেকর্ড ১৯.১৯ সেকেন্ড।
গত পরশু বোল্ট শেষ করলেন ১৯.৩২ সেকেন্ডে। ১৫ মিটার বাকি থাকতেই পাশে তাকাতে শুরু করলেন। শেষ পদক্ষেপটা যত বেশি সম্ভব লম্বা করতে স্প্রিন্টাররা সামনে ঝুঁকে শেষ করেন, আর বোল্ট ঠোঁটে আঙুল রেখে টানটান বুকে সোজা মাথায় পেরোলেন সমাপ্তিরেখা। কেন, রেকর্ড ভাঙার চেষ্টা করলেন না কেন? কারণ ছিল। ‘বাঁকটাতে খুব দ্রুত দৌড়াতে চেয়েছিলাম।
তা করতে গিয়ে পাশে একটু টানমতো লেগেছিল। এরপর শুধু ব্লেকের দিকে চোখ রেখেছি, ও যেন সামনে চলে না যায়। ’
বোল্টকে নিয়ে সংশয়ের বীজটা বুনে দিয়েছিলেন এই ব্লেকই, জ্যামাইকান ট্রায়ালে বোল্টকে দুবার হারিয়ে। শুনে অবাক হবেন, এ জন্য বোল্টের কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। ১০০ মিটার জয়ের পর যা বলেছিলেন, এদিন আবার বললেন তা, ‘ও আমার চোখ খুলে দিয়েছিল।
এটাই ছিল টার্নিং পয়েন্ট। ’
বোল্টের দৌড়ের মতো তাঁর উদ্যাপনটাও কম দর্শনীয় নয়। এদিন তা আরও বেশি রঙিন। পাশে যে সতীর্থ দুই জ্যামাইকান। ১৯.৪৪ সেকেন্ডে ইয়োহান ব্লেকের রুপা, ব্রোঞ্জ জিতলেন ওয়ারেন উইয়্যার (১৯.৮৪)।
অলিম্পিকে ২০০ মিটারে যুক্তরাষ্ট্র ছয়বার ১-২-৩ হয়েছে। শুধু ২০০ মিটারই নয়, যেকোনো ইভেন্টেই জ্যামাইকার ‘ক্লিন সুইপ’ এই প্রথম।
ট্র্যাকে এমনই এক মূর্তিমান বিস্ময় যে তাঁর উপস্থিতি অন্যদেরও সেরাটা বের করে আনে। নিজে উড়ে যান, বাকিদেরও উড়িয়ে আনেন তাঁর সঙ্গে। এই লন্ডনেই অলিম্পিক ইতিহাসে ১০০ মিটারে সাতজন ১০ সেকেন্ডের নিচে দৌড়েছেন (পাওয়েল চোট না পেলে হয়তো সংখ্যাটা আট-ই হতো)।
এদিনও ইতিহাসে প্রথম চারজন ২০০ মিটার পেরিয়ে গেলেন ২০ সেকেন্ডের নিচে।
জেতার পর বোল্ট কী কী করলেন, তা নিয়েই মজার একটা টিভি অনুষ্ঠান হতে পারে। সংশয়বাদীদের মুখ বন্ধ করে রাখার বার্তাটা যথেষ্ট দেওয়া হয়েছে মনে হওয়ার পর ট্র্যাকে কয়েকবার বুক ডন দিয়ে নিলেন। ল্যাপ অব অনার দিতে দিতে এক আলোকচিত্রীর কাছ থেকে ক্যামেরা নিয়ে উল্টো আলোকচিত্রীদেরই ছবি তুলতে শুরু করলেন। ছবি তুললেন ইয়োহান ব্লেকেরও।
হঠাৎ ছুটে গিয়ে উবু হয়ে চুমু খেলেন সমাপ্তিরেখায়। উঠে দাঁড়িয়ে তাঁর সেই ট্রেডমার্ক উদ্যাপন—কাল্পনিক ধনুকে কাল্পনিক তির ছোড়া।
বেইজিং থেকেই এটি করে আসছেন। তবে এদিন মনে হলো, এই তিরটাও বুঝি সমালোচকদের বুকেই বিদ্ধ করতে চেয়েছেন। সর্বকালের সেরা স্প্রিন্টার হিসেবে এখন প্রায় প্রতিদ্বন্দ্বীহীন।
ক্রীড়া ইতিহাসে বোল্টের স্থান নিয়েও আলোচনা হচ্ছে। বোল্ট কি এখন মোহাম্মদ আলী-পেলে-মাইকেল জর্ডানদের মতো নির্দিষ্ট কোনো খেলার সীমানা ছাড়িয়ে যাওয়া সর্বজনীন ক্রীড়া কিংবদন্তি?
মোহাম্মদ আলীর সঙ্গে কোথায় যেন একটা মিল আছে। সেটি কি কখনো কখনো ঔদ্ধত্য মনে হওয়া প্রবল আত্মবিশ্বাসে! আলী একবার অবলীলায় বলেছিলেন, ‘আমার মতো গ্রেট হলে বিনয়ী হওয়া কঠিন। ’ পরশু রাতের সংবাদ সম্মেলনে বোল্ট নিজেকে এতবার ‘সেরা’ আর ‘কিংবদন্তি’ বললেন যে মোহাম্মদ আলীকে মনে পড়তে বাধ্য।
তবে বোল্টও বিনয়ী হতে জানেন! আলী-জর্ডান-পেলের সঙ্গে তুলনার প্রসঙ্গটাতেই যাঁর পরিচয় পাওয়া গেল।
তিনি নিজে এ প্রসঙ্গে কথা না বলে সেই ভার দিয়ে দিলেন অন্যদের ওপর।
কী নামে ডাকা যায় তাঁকে, এ নিয়ে অন্যদের মাথা ঘামনোর দায় থেকে অবশ্য মুক্তিই দিয়েছেন। জীবিত কিংবদন্তি!
সুত্র:প্রথম আলো। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।