আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অমরত্বের আশা

মৃত্যু অমোঘ সত্য জেনেও সৃষ্টির আদি থেকেই মানুষ অমরত্ব লাভের আশায় চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

অমরত্ব পাওয়ার জন্য বিচিত্র সব উপায় আবিষ্কারের চেষ্টা চালাচ্ছে। কেউ করেছে অমৃতের সন্ধান, কেউ ধ্যানমগ্ন থেকেছে আবার কেউ চেষ্টা করেছে জাদুবিদ্যার আশ্রয়ে। আবার বিজ্ঞানীরাও চেষ্টা চালাচ্ছেন অধরা এই স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে। কিন্তু মৃত্যু সেই অজেয়ই থেকে গেছে।

আর সে কারণেই এই আধুনিক সময়ে এসেও অমরত্বের লোভে মানুষের চোখ জ্বল জ্বল করে ওঠে। কিন্তু সত্যি কী অমরত্ব লাভ সম্ভব? কী সম্ভব, নাকি শুধুই রূপকথা?

নিউইয়র্কে গ্লোবাল ফিউচার ২০৪৫ আন্তর্জাতিক কংগ্রেস অনুষ্ঠিত সম্মেলনে বিশেষজ্ঞরা কিন্তু আশার বাণীই শোনান। তাদের ভাষ্য মতে, স্নায়ুবিজ্ঞান, জৈবপ্রযুক্তি এবং রোবোটিঙ্রে সমন্বিত ব্যবস্থার মাধ্যমে মানব মস্তিষ্ক কৃত্রিম ব্যবস্থায় রূপান্তর সম্ভব। ২০৪৫ সালের মধ্যে মানব মস্তিষ্ককে মেশিনে রূপান্তরের মাধ্যমে অমরত্ব লাভ সম্ভব এই বিশ্বাস ওই সম্মেলনের শেষ বক্তব্য ছিল। মূলত বহুকাল থেকেই মানুষ অমরত্বের সন্ধানে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

দীর্ঘ এ পথযাত্রায় মানুষের সফলতাও কম নয়। কৃত্রিম অঙ্গপ্রতঙ্গ ব্যবহারের মাধ্যমে সুস্থ হয়ে উঠছে মানুষ। কৃত্রিম কিডনি স্থাপন করে বেঁচে থাকছেন অনেক কিডনি রোগী। বিকলাঙ্গরা অঙ্গ ফিরে পাচ্ছেন রোবোটিঙ্রে কল্যাণে। এর প্রতিফলন আমরা দেখতে পাই বর্তমান নির্মিত সিনেমাগুলোতে।

বিরূপ পরিবেশেও মানুষকে টিকে থাকতে হলে এ অমরত্ব লাভের বিশেষ দিকগুলোর দিকেই বেশি করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হচ্ছে। কিভাবে মানব মস্তিষ্ক মন, কৃত্রিম দেহতে স্থানান্তরিত করা যায় সেদিকগুলোই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে বিজ্ঞানীরা। বিজ্ঞানী দিমিত্রি অবশ্য আবার নতুন করে আলো জ্বেলেছেন। তার ভাষ্য ছিল ২০৪৫ বিষয়ক প্রকল্পটি মানুষের অমরত্ব লাভের জন্য আগামী ৩২ বছর ধরে কাজ করবে। শুরুর দিকে রোবোটিক এভাটার তৈরি করা হবে যা দূর থেকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব, মানব মস্তিষ্কের আদলে কম্পিউটার মস্তিষ্ক তৈরি করা হবে, হলোগ্রাফিক এভাটারের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা হবে।

মানুষের অমরত্ব বিষয়ক উদ্যোগটি আন্তর্জাতিক মিডিয়াতে বেশ সাড়া জাগিয়েছে। অনেকেই বলে থাকেন রাশিয়ার ৩০ জন শীর্ষ বিজ্ঞানী অমরত্ব বিষয়ক প্রযুক্তি নিয়ে গোপনে কাজ করছেন।

এছাড়াও ডাটা ট্রান্সফারেরও নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন করে অমরত্বের স্বাদ নেওয়ার চেষ্টাও চালাচ্ছে। এভাবে কম্পিউটারে মন আপলোড করে অমরত্ব পাবে মানুষ। এ মতবাদে বিশ্বাসী একদল বিজ্ঞানী।

নন্দিত বিজ্ঞানী রে কার্জওয়েল, পিটার ডায়াম্যান্ডিস ও মারভিন মিনস্কি ছাড়াও অনেকেই এ ব্যাপারে ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া যাবে বলে মনে করেন। স্নায়ু বিজ্ঞানের অবিশ্বাস্য উন্নতির কল্যাণে মস্তিষ্কের কার্যক্রম রেকর্ড করতে পেরেছেন বিজ্ঞানীরা। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত মস্তিষ্কের আংশিক পুনর্গঠনেও সফল হয়েছেন তারা। মস্তিষ্কভিত্তিক কম্পিউটার তৈরিতেও অনেকখানি এগিয়ে গেছেন প্রযুক্তিবিদরা। একে তারা বলছেন ব্রেইন-কম্পিউটার ইন্টারফেস (বিসিআই)।

এ ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের ককলিয়ার ইমপ্লান্টকে বিশেষ ইলেকট্রোডের সহায়তায় জুড়ে দেওয়া হয় কম্পিউটারের সঙ্গে। কয়েক দিন আগে এ ধরনের একটি কম্পিউটারের মাধ্যমে জন্ম বধির এক ব্যক্তি প্রথমবারের মতো শব্দ শুনতে পান। অনেক বিজ্ঞানী দল আবার বিসিআইকে মেরুদণ্ড শুকিয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের কার্যক্ষমতা পুনরুদ্ধারে ব্যবহার করছেন। কার্জওয়েলের অন্যতম পরিচয় তিনি গুগলের প্রকৌশল বিভাগের পরিচালক। তার মতে, ২০৪৫ সালের মধ্যেই ক্ষমতায় মানুষের মস্তিষ্ককে ছাড়িয়ে যাবে প্রযুক্তি।

সৃষ্টি হবে নতুন ধরনের অতি বুদ্ধিমত্তার, যাকে বিজ্ঞানীরা বলছেন সিঙ্গুলারিটি। অন্য বিজ্ঞানীদের ধারণা, ২১০০ সালের মধ্যেই মানুষের ওপর আধিপত্য বিস্তার করবে রোবট। মুরের নীতি অনুযায়ী, প্রতি দুই বছর অন্তর কম্পিউটিং ক্ষমতা দ্বিগুণ বৃদ্ধি পায়। এদিকে বেশকিছু প্রযুক্তির কল্পনাতীত উন্নতি হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে জেনেটিক সিকোয়েন্সিং ও ত্রিমাত্রিক মুদ্রণ। কার্জওয়েল বলেন, অতি রক্ষণশীল হিসাব অনুযায়ী মানুষের মস্তিষ্কের ক্ষমতাকে ১০০ কোটি গুণ বাড়ানো সম্ভব।

ইতসকভ ও অন্য ট্রান্সহিউম্যানিস্টরা সিঙ্গুলারিটিকে ধরছেন ডিজিটাল অমরত্ব হিসেবে। তাদের মতে, প্রযুক্তি ব্যবহার করে মানুষের মস্তিষ্কের কার্যধারা ও মনের অলিগলি এখনই কম্পিউটারে অল্প পরিমাণে হলেও ধরা সম্ভব হচ্ছে। কয়েক বছরের মধ্যে প্রযুক্তি দিয়েই মানুষের সব চিন্তাধারার প্রক্রিয়াকে আবেগের সংমিশ্রণসহ হয়তো কম্পিউটার প্রোগ্রাম হিসেবে আপলোড করা সম্ভব হবে। তখন খুব সহজেই এ দেহের বাইরেও বেঁচে থাকা যাবে অনন্তকাল।

 

 



সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।