আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কলকাতার এক মা ও তাঁর কুলাঙ্গার পুত্র

বৃদ্ধা মা'কে ভরণপোষণ দিতে অপরাগ এক কুলাঙ্গার পুত্র আদালতে দাড়িয়ে নিজের মাকে অস্বীকার করে বলেছেন, "যাকে খোরপোষ দিতে বলা হচ্ছে, ওই বৃদ্ধা আমার মা না, সে একজন ভাড়া করা ভিক্ষারী। " ঘটনাটি কলকাতার। গর্ভধারিণী মা'কে নিয়ে এমন নিষ্ঠুর মানষিকতা প্রকাশকারী সেই পুত্র ভারত সরকারের আবাসন মন্ত্রণালয়ের পদস্থ কর্মকর্তা এবং তার স্ত্রী কলকাতার সল্টলেক এলাকার একটি মেয়েদের স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা। ওই কুলাঙ্গার পুত্র তার বাবার করে দেয়া বাড়িতেই স্বপরিবারে থাকেন। অথচ সেখানে জায়গা হলোনা ৮৮ বছরের বৃদ্ধা মনিকা দেবীর।

স্বামীর মৃত্যুর পর আইন অনুযায়ী মা মনিকা ওই বাড়ির (কলকাতার বেলগাছিয়া রোড়ের ৬৪/৫৬ নম্বরের তিনতলা বাড়ি) মালিক। কিন্তু এই বৃদ্ধার শিক্ষিত চাকুরিজীবী পুত্র ও পুত্রবধু অত্যাচারে তাকে ছাড়তে হয় প্রয়াত স্বামীর বাড়ি। এই নিষ্ঠুর নির্মমতার শিকার মা মনিকা দেবী তার সরকারি কর্মকর্তা পুত্র অমলের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন স্রেফ ভরণপোষণ চেয়ে। তিনিতো জানেন তিনি যেকটা দিন বেঁচে আছেন, সেকটা দিন দু-বেলা দৃ-মুঠো খাওয়া আর একটু সেবা যত্ন পেলেই চলে। কিন্তু সেটুকুর জন্য তাকে আদালতের আশ্রয় নিতে হবে কেনো? কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকায় লিখেছে, সন্তানের এ হেন আচরণে বীতশ্রদ্ধ হয়ে শেষমেশ শিয়ালদহের বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে মামলা করেন বৃদ্ধা।

সেটা ২০০৯ সাল। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পরে পুত্র অমলবাবুকে বিচারক নির্দেশ দেন, মাকে বাড়ি ফিরিয়ে নিতে হবে। মায়ের দেখাশোনার জন্য লোক রাখতে হবে। প্রতি মাসের ১০ তারিখের মধ্যে খোরপোষ বাবদ ৫ হাজার টাকা দিতে হবে। এ ছাড়া, মামলার সময়কাল বিচার করে বকেয়া বাবদ এককালীন দেড় লক্ষ টাকা দেওয়ার নির্দেশ দেন বিচারক।

শিয়ালদহ আদালতের এই রায়ের বিরুদ্ধে আলিপুর আদালতে মামলা করেছিলেন অমলবাবু। কিন্তু তাতে রায়ের কোনও হেরফের হয়নি। এরপর ওই কুলাঙ্গার পুত্র অমল আপিল করেন কলকাতা হাইকোর্টে। এজলাসে দাড়িয়ে অমল বললো, যাঁকে খোরপোষ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে নিম্ন আদালত, সেই বৃদ্ধা তাঁর মা নন। শিয়ালদহ স্টেশন থেকে এক ভিখিরিকে ভাড়া করে এনে তাঁর মা বলে দাবি করা হচ্ছে।

ছেলের কাছ থেকে এমন অভিযোগ পেয়ে হাইকোর্টের বিচারপতি দু’পক্ষের আইনজীবীকে যাবতীয় কাগজপত্র, মায়ের ছবি এবং অন্যান্য নথি পেশ করতে বলেন। ব্যক্তিগত ভাবে বৃদ্ধাকে আদালতে হাজির হওয়ারও নির্দেশ দেন বিচারপতি। সব দিক খতিয়ে দেখে তিনি নিশ্চিত হন, ভিখিরি নন, এই বৃদ্ধাই অমলবাবুর মা মনিকাদেবী। এই মামলার রায় ঘোষণার শুরুতেই অমলবাবুকে ‘দুর্বিনীত, কুলাঙ্গার’ ছেলে বলে মন্তব্য করেন বিচারপতি অহলুওয়ালিয়া। এই মামলায় মনিকাদেবীর আইনজীবী ছিলেন সুপ্রদীপ রায় এবং সিদ্ধার্থ রায় নামে দুজন আইনজীবী।

তাঁদের মন্তব্য, “শেষ পর্যন্ত মানবিকতারই জয় হল। এই মামলা লড়ে যা তৃপ্তি পেলাম, তা আগে কখনও পাইনি। ” আনন্দবাজারে প্রকাশিত সংবাদের লিঙ্ক দেয়া হলো : http://www.anandabazar.com/19cal1.html মায়ের জন্য কত টাকাই বা খরচ হতো কুলাঙ্গার অমলের। সৃষ্টিকর্তাতো সেই সামর্থ্য দিয়েছিল তার। সামর্থ্য না থাকলেও তোকে করতে হবে মা-বাবা'র প্রতি।

এটাই মহব্বত, এটাই ভালবাসা, এটাই ভক্তি-শ্রদ্ধা। ধর্মও সেকথা বলে। স্বামী হারা মায়ের মনে অমল কেবল কষ্টই দেয়নি, সে মা'কে অসম্মানীত করেছে নিষ্ঠুর ভাবে। তুই ধ্বংস হয়ে যাবি, তোকে নিজে হাতে ভিক্ষারী বানাবেন তোর ভগবান। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৭ বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।