ভেন বললো তোমার না মোবাইলের সিম কেনার কথা। এত রকম চক্করে ঢাকায় কথা বলার কথা ভুলেই গিয়েছিলাম। সিম কেনার হ্যাপা কম নয়। সব সিম দিয়ে মুঞ্জালায় কথা বলা যায়না (বাংলাকে সম্ভবত এরা মুঞ্জালা বলে)। এখন আমি ভেন ছাড়া আর কারও সাথে কথা বলার চেষ্টাও করি না।
যা বলার ভেন কে বলি। সে বলে তার দেশি ভাই বোন কে। তবে সেটি একটি মহা বিব্রতকর ব্যাবস্থা। আমাকে মাঝে রেখে দুই পক্ষ সমানে কিচির মিচির করতে থাকে। আমার কানে যা ঢোকে তা মোটেও পাখির কাকলি নয়।
দুই চৈনিক মহা আনন্দের সাথে কথা বললেও, কথার ফ্রিকোয়েন্সি ও আওয়াজ আস্তে আস্তে এমন বাড়তে থাকে যে আমার মত চাইনিজ মূর্খ লোকের কাছে তা ঝগড়া ছাড়া আর কিছু মনে হয় না। এয়ার পোর্টে, সেই উপকারি মহিলার সাথে ভেনের আলাপ শুনেই মনে হয়েছিল ভেন ঝগড়া করছে। এক ধরনের বিব্রত কর আনন্দের অনুভূতি হয়েছিল তখন। আহারে এই বিভুইয়ে আমার পক্ষে ঝগড়া করার একজন লোক আছে। পরে ভেনের ধ্যদ্ধেড়ে সিট্রন গাড়িতে ঊঠতে ঊঠতে বুঝলাম।
নহিলার সাথে আগে থেকেই ভেনের পরিচয় ছিল এবং ভেন ঝগড়াও করেনি।
ভেন কে বললাম ঠিক আছে তোমার ড্রাইভার কে খেয়ে নিতে বল। আমরা ততক্ষণে সিমের ব্যবস্থা করি। ভেন বলল অসুবিধা নেই। আমরা এক সাথেই খাব।
সিম একটা পেলাম। দেশে ফোন করতে পারলাম না। এক এক বার ফোন করতে ব্যর্থ হই আর ভেন বাইরে যেয়ে কার সাথে মোবাইলে কথা বলে আমাকে ন্তুন বুদ্ধি দেয়। শেষ পর্যন্ত দেখা গেল সমস্যাটি অতি সামান্য। ৮৮০ এর আগে দুটি শুন্য না দিয়ে আমি + চিহ্ন যোগ করাতেই এই ব্যরথতা।
মনে মনে শাহ মোয়াজ্জেম কে ধন্যবাদ দিলাম। আমাদের দেশে যত পলিটিক্যাল জিনিয়াস আছে শাহ মোয়াচজ্জেম তাদের অন্যতম (!)। তিনি অনেক দিন আগেই এ ধরনের একটি তত্ত দিয়েছিলেন। বিষয়টি শালিনতার মাত্রা ছাড়বে সন্দেহে বানিটি এখানে উদ্ধৃত কর লাম না।
কাছেই একটা KFC পাওয়া গেল।
বদলে যাওয়া চীন কে চেনার ভাল যায়গা KFC । ভেতরে কোন টেবিল খালি পাওয়া গেল না। বাইরেও ভীড়ের কমতি নেই। সম্ভবত বিদেশি বলেই খাতির করে একটা টেবিলা জায়গা করে দেওয়া হল। মুরগি ইসলামি নিয়মে জবাই করা হয়েছে কি না জানতে গেলাম না।
জানতে চাইলেই বা কে বুঝবে। সাপ, ব্যাং, প্রায় বাচ্চা ফোটা ডিম ( চীন ফেরত বন্ধুদের কাছে এরকম দুই একটা গল্প শুনেই চীনে এসেছি) খেতে হচ্ছে না তাই যথেষ্ট। মুরগি, ভাত জাতীয় একটা কিছু আর আলু ভাজি (ফ্রেঞ্চ ফ্রাই) নিয়ে বসলাম ভেন, আমি আর দ্রেইভার। তিরিশের আগে পরে হবে দ্রাইভারের বয়স, নাম সম্ভবত হং । সম্ভবত বলছি এজন্যে যে প্রথম দেখায় হাত বাড়িয়ে দিয়ে এধরনের একটি শবদ উচ্চারণ করেছিল সে।
বুঝতে না পেরে নাম জিজ্ঞেস করায় হাসি হাসি মুখ করে বলল নো ইংরিশ। এক ঝটকায় দ্বিধা দন্দ ঝেড়ে ফেলেও বাঙালি মুসলমানের সংস্কার থেকে পুরো পুরি বের হতে পারলাম না। আমার মুরগির বেশির ভাগই ভেনের পেটে গেল। KFC তার পছন্দের জায়গা। খাওয়ার পর ভেন বলল তোমার লাগেজ এসে গেছে, সন্ধায় নাগাদ হোটেলে পৌছে যাবে।
অনেকটাই কেটে গেল দুশ্চিন্তা। সিয়েরা লিওনে এরকম বিচ্ছ্রিরি সিচুয়েশনে পড়েছিলাম আমি আর আসাদ। আমরা পৌছানোর দু’দিন পরে পৌছেছিল আমাদের লাগেজ। সে দু’দিন একেবারে যা তা অবস্থা, টুথ ব্রাশ থেকে জামা কাপড় সবই ছিল সেখানে। আর জামা কাপড় ধার করে ওভার সাইজ হোক আন্ডার সাইজ হোক চালিয়ে নেওয়াআ যায়।
টুথব্রাশ?
সারাদিন খবরের কাগজ পড়া হয়নি। কুনমিঙ্গের ফ্লাইটে দু’দুটি নিঊজ পেপার দিয়ে ছিল। ছবি দেখা ছাড়া আর কিছুই করা হয়নি। আশে পাশে কোন ম্যাগাজিনের দোকান আছে কিনা জিগেস করাতে ভেন জানলো বই খাতার দোকান ডাউন টাউনে আছে। বিস্মিত হয়ে জ্জিগেস করলাম
কোন দোকানই নেই।
বিস্ময়ের উত্তরে বিস্মিত না হয়ে ভেন বলল হোয়াই শুড বি এ বুক শপ হিয়ার? অল দ্যা স্কুলস আর এট দা ডাউন টাউন। অকাট্য যুক্তি। আমার আর কি বলার থক্তে পারে।
ভেন কে আগেই দুইশ’ ডলার দিয়েছলাম। হোটেল ভাড়া, খাবার, সিমের দাম বাদ দিলে সেখানে আর কিছু থাকে না।
ভেন কে বললাম তোমাকে আর কিছু ডলার দিই তুমি আমাকে ইয়ুয়ান দাও। সে বলল আজ টাকার দরকার কি তুমি কাল ভাঙিয়ে নিও। শেষ পর্যন্ত, ATM থেকে টাকা তুলে দিল সে। এর পর নিয়ে গেল বিরাট এক শপিং মলে। বাজার অর্থনীতি চীনাদের কে ভাল মতই বেঁধে ফেলেছে।
আমি ভেন কে বললাম তুমি কখনও ইন্ডিয়া গিয়েছো? ইন্ডিয়ায় বড়লোক যেমন আছে, না খেয়ে থাকা মানুষের সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়। ভেনের উত্তর ইয়েস সেইম থিং হেয়ার ইন চায়না। মেনি পিপল আর শেইমলেসলি রিচ, বাট সাম পিপল স্টারভ।
চীনের মার্কেট গুলির সবচে বড় অসুবিধা হচ্ছে, এক্সিট, ক্যাশ এধরনের কিছু বিশেষ দরকারি কথা ছাড়া সব কিছুই লেখা থাকে চীনা ভাষায়। বোতল, কিম্বা প্যাকেটে দাম ছাড়া সব কিছুই তাই।
ঠেকে গেলে উদ্ধার করারও কেঊ নেই।
কি কিনতে কি কিনে ফেলি! কেনা কাটার তেমন উতসাহ পেলাম না। হোটেলে নামিয়ে দেবার সময় ভেন রাতের খবারের কথা জিজ্ঞাসা করায় বললাম আমি নিজেই ব্যবস্থা করব।
রুমে এসে দেখি টিভি চলেনা। রিসেপসনে ফোন করলাম।
কি বলল তার কিছুই বুঝলাম না। কিছুক্ষন পরে দেখি ভেন এসে হাজির। তার পেছনে হোটেল ম্যানেজার। জানা গেল আমার কথা বুঝতে না পেরে ভেন কে ডকে আনা হয়েছে বাসা থেকা। একটু পরে টিভি চালু হল।
তবে না হলেই ভাল হত। ( অসমাপ্ত)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।