ভালো মন ছাড়া মানুষ আর স্বাদহীন ইলিশ মাছ একই কথা
আনিছ সাহেব কিছুই দেখতে পারছেন না। গ্রামাঞ্চলে যে এত তাড়াতাড়ি সন্ধ্যা নেমে আসে তা তার জানা ছিল না। সাথে টর্চ লাইটটাও আনতে ভুলে গেছেন। চাদের আলো ছাড়া কোথাও কোন আলো নেই। আবছা আবছা ভাবে সবকিছু দেখা যাচ্ছে।
রাস্তাঘাট ও চিনেন না। আনিছ সাহেবের মনে হচ্ছে তিনি পথ হারিয়ে ফেলেছেন। কি করবেন কিছুই বুঝতে পারছেন না। এমন সময় পাশ থেকে কে যেন বলে উঠলো,
স্যার কি কোথাও যাবেন?
আনিছ সাহেব মুখ ঘুরিয়ে তাকালেন। ২২ বা ২৩ বছরের এক ছেলেকে দেখা যাচ্ছে।
আনিছ সাহেব বুঝার চেষ্টা করলে ছেলেটাকে বিশ্বাষ করা যায় কিনা। বিশ্বাষ না করা গেলেও কিছু করার নেই। তিনি এখন গভীর সমুদ্রে পতিত হয়েছেন। গভীর সমুদ্রে পতিত মানুষ খড়কুটো ধরেও বাচার চেষ্টা করে। বাচার জন্য তিনিও খড়কুটো ধরতে রাজি।
ছেলেটা আবার জিজ্ঞেষ করলো,
স্যার কি কোথাও যাবেন?
আনিছ সাহেব উত্তর দিলেন, হ্যা।
কার বাসায় যাবেন?
রহমান মাষ্টারের বাড়িতে যাব।
ও, আমিতো তার বাড়ি চিনি। আসুন আপনাকে এগিয়ে দেই।
আনিছ সাহেব কোন কথা না বলে ছেলেটার পিছে পিছে হাটতে লাগলেন।
আনিছ সাহেব ছেলেটার মুখের দিকে তাকালেন, অন্ধকারে ঠিকমত দেখা যাচ্ছে না। তবে ছেলেটার মুখে একটা মায়া মায়া ভাব আছে তা ঠিকই বোঝা যাচ্ছে। কিছুক্ষণ পর আনিছ সাহেব প্রশ্ন করলেন,
তোমার নাম কি?
আমার নাম রাজু।
রাজু, ভালো নাম। বলে মাথা নাড়াতে লাগলেন আনিছ সাহেব।
আনিছ সাহেব আশেপাশে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করলেন কোথায় আছেন। ভালো করে কিছুই বোঝা যাচ্ছে না।
কিছুক্ষণ হাটার পর রাজু বলল, স্যার ঔ যে বাড়িটা দেখা যাচ্ছে ঔটাই রহমান মাষ্টারের বাড়ি।
আনিছ সাহেব সামনে তাকিয়ে দেখলেন কিছু দুরেই একটা বড়িতে আলো জ্বলছে।
রাজু এবার বলল, স্যার এ রাস্তা ধরে চলে যান।
একটু পরেই পৌছে যাবেন। আমার এখন চলে যেতে হবে।
বলেই রাজু হাটা ধরল। আনিছ সাহেবকে ধন্যবাদ দেওয়ার ও সময়টুকুও না দিয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই অন্ধকারে হারিয়ে গেল। আনিছ সাহেব সামনে তাকালেন।
আলো দেখে তিনি বাড়িটার দিকে হাটা ধলেন। দরজায় নক করতেই রহমান মাষ্টার দরজা খুললেন। আনিছ সাহেবকে দেখেই রহমান সাহেব খুশিতে আটখানা হয়ে গেলেন।
আরে স্যার যে। আসেন আসেন।
আপনি আসবেন বলেই অপেক্ষা করছিলাম। পথে ঘাটে কোন সমস্যা হয় নি তো?
সমস্যা তো একটু হয়েছিলো, পথ হারিয়ে ফেলেছিলাম। পরে একটা ছেলে এসে রাস্তা দেখিয়ে দিলো।
বলতে বলতে আনিছ সাহেব ঘরে ঢুকলেন। রহমান মাষ্টার আনিছ সাহেব কে বসিয়ে পাশের রুমে চলে গেলেন।
আনিছ সাহেব এদিকে ওদিকে দেখতে লাগলেন। গ্রামাঞ্চলের ঘরবাড়ি যেরকম হয় সে রকম ই ঘরটা। হঠাৎ একটা ছবিতে আনিছ সাহেবের চোখ আটকে গেল। একটা ছেলের যুবক বয়সের ছবি। ছেলেটাকে চেনা চেনা মনে হলো আনিছ সাহেবের।
কিন্তু ঠিক কোথায় দেখেছেন মনে করতে পারলেন না।
একটু পরেই রহমান সাহেব একটা ট্রে হাতে ঘরে ঢুকলেন। ট্রেতে করে চা বিস্কিত নিয়ে এসেছেন। আনিছ সাহেবের সামনের টেবিলে রাখতে রাখতে বললেন, স্যার, এই চা বিস্কিট টুকু খেয়ে নেন।
আনিছ সাহেব ছবিটা দেখিয়ে বললেন, এই ছবিটা কার?
রহমান সাহেব ছবিটার দিকে তাকিয়ে বললেন, ছবিটা স্যার আমার ছেলে রাজুর।
এইবার আনিছ সাহেব ছেলেটাকে চিনলেন। এই ছেলেটাই তাকে এগিয়ে দিয়েছিল।
আনিছ সাহেব বলে উঠলেন, বলেন কি? এই ছেলেইতো আমাকে এগিয়ে দিলো।
রহমান সাহেব কিছুটা চমকে গিয়ে বললেন, কি বলেন স্যার। এটাতো সম্ভব না।
আনিছ সাহেব বললেন, কেন সম্ভব না? আমি নিশ্চিত। ঔতো আমাকে এগিয়ে দিলো।
নাহ স্যার। আপনি হয়তো ভুল দেখেছেন।
আরে নাহ।
ওকেই দেখেছি আমি। ওই আমাকে এগিয়ে দিয়ে গেছে।
স্যার এটা কোন মতই সম্ভব না। আমার ছেলেতো ২ বছর আগেই মারা গিয়েছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।