তিন।
সেনঝেন পৌছে পড়লাম আরেক বিড়ম্বনায়। কুনমিং থেকে আমার লাগেজ পৌছেনি। লস্ট এন্ড ফাউন্ডে গিয়ে নিজেঈ লস্ট হয়ে গেলাম। এরা চৈনিক ছাড়া অন্য কোন ভাষা বোঝে না।
আর আমার চৈনিক জ্ঞান নি হাঊ ( কেমন আছেন?) পর্যন্ত। লস্ট এন্ড ফাউন্ডের ৮০ বর্গ ফুট অফিসে তখন আমি ছাড়াও আরও প্রায় নয় দশ জন মানুস। এছাড়া বিভিন্ন অফিস ইক্যুপমেন্ট, চেয়ার টেবিলের ভিড়ে পা রাখার পর্যন্ত জায়গা নেই। এক মাঝ বয়সী চাইনিজ মহিলা এই অফিসের কর্তাব্যক্তি। তাঁকে ঘিরেই বাকিদের ঘোরাঘুরি।
আমার দিকে তাঁর নজর পড়লেও নজরদারি করছেন অন্যদের সাথে। আমি উপগ্রহের মত ঘুরলেও ভাষার প্রাচীর ডিঙ্গিয়ে নিজের স্ট্যাটাস বুঝতে পারছি না। তাঁর অনুগ্রহ লাভের আপ্রান চেস্টা করে যাচ্ছি। তিনি অন্য সবার সাথেই কথা বলে যাচ্ছেন। এদের সকলেরই সমস্যা এক।
লাগেজ মিসিং। আমি ভেতরে ভেতরে অস্থির হয়ে উঠেছি। আমাকে রিসিভ করতে PUXIN Technology কোম্পানির এক ভদ্রলোকের আসার কথা। এদিকে নিজের মোবাইলে বাংলাদেশি সিম। তাছাড়া পুক্সিন কোম্পানির সাথে যোগাযোগের খটমট একটা ঠিকানা আছে বটে তা আমি বাংলা লেখা দেখেও উচ্চারণ করতে পারিনা।
শেষ পর্যন্ত ম্যাডাম মুখ তুলে চাইলেন এবং আমার পাসপোর্ট ঘাটাঘাটির পরও জানতে চিলেন হুইচ কান্ত্রি? আমার ধয্যের শেষ নেই। যথা সম্ভব মিস্টি করে বললাম বাংলাদেশ। এর পর তিনি আমার পাসপোর্ট হাতে বেরিয়ে গেলেন। মিনিট পাঁচেক পরে ফিরলেন একজন ইংরেজি জানা লোক নিয়ে। তার প্রশ্ন এবং আমার উত্তরের মধ্যে কোন সমন্বয় হছিল কিনা জানি না।
শেষ পর্যন্ত তিনি ইশারা ইঙ্গিতে আর আমি বাংলায় কথা বলতে থাকলাম। ক্রমে ভিড় বাড়তে থাকলো লস্ট এন্ড ফাউন্ডে, হঠাত আমার মনে পড়লো টিকেটের পিছনে ইংরেজিতে পুক্সিন কোম্পানির ঠিকানা আর ফোন নাম্বার লেখা ছিল। ম্যাডাম কে সেটা দেখনোয় কাজ হল। তিনি কোথাও ফোন করে আমাকে ইশারা করলেন তাঁর সাথে যাবার জন্যে। বাইরে এসে দেখি ছোকরা বয়সী এক ভদ্রলোক দাঁড়িয়ে।
তাঁর মুচকি হাসি দেখে একটু ভরসা পেলাম। তিনি হাত বাড়িয়ে দিলেন। ওয়েল কাম টু সেঞ্ঝেন। দিস ইজ ভেন।
ভেন ইন
ভেনের সাথে আমার পরিচয় ই মেইলে।
পুক্সিন কম্পানির হয়ে আমার চীন সফরের গেরো ছোটাচ্ছিল সে গত দুই মাস ধরে। এয়ারপোরটে গাড়ি পাঠালেই হত। তবু সে রোববারের আরাম আয়েশ বাদ দিয়ে এয়ারপোরটে দাঁড়িয়ে আছে সাড়ে দশটা থেকে। মহিলার সাথে তার কি কথা বারতা হল তা বোঝার চেস্টাও করলাম না। সারা রাত ঘুম হয়নি।
ভেন বললো চিন্তার কিছু নেই। তোমার লাগেজ সম্ভবত কুনমিঙ্গে রয়ে গেছে, বিকাল নাগাদ পেয়ে যাবা। আমি বললাম হোটেল ঠিক করেছো? ভেনের সাথে অনেক দিন আগে থেকেই হোটেল নিয়ে কথা বারতা হচ্ছিল। সে লিখেছিল আগে আসো তারপর দেখা যাবে। চায়না সম্পর্কে বাংলাদেশে অনেক ভয়বহ গল্প প্রচারিত আছে।
বিশেষ করে খাওয়া দাওয়া নিয়ে। আমি ইন্টারনেটেও অনেক ঘাটাঘাটি করেছি। সস্তায় ভাল হোটেলের খোঁজে। তবে সাহস করে বুক করিনি। তার প্রধান কারণ ইন্টারনেটে ভাল ম্যাপ পাইনি।
মনে হয়েছে হোটেল হয়তো সস্তায় পেলাম কিন্তু কাজের জায়গায় যেতে যদি ভাড়া বেশি লেগে যায় তখন হায় হায় করা ছাড়া উপায় থাকবে না। আবার ভেবেছিলাম যদি এক রুমের এপার্টমেন্ট পাওয়া যায় তাহলে নিজেই রান্না বান্না করে ফেলব সাপ ব্যাঙের ভয় থাকবে না। ভেন আমাকে হতাশ করে দিয়ে বলল এপার্টমেন্ট পাওয়া যাবে না। আগে চল পেটে কিছু দিয়ে নাও তারপর হোটেলে যাওয়া যাবে। সেখানেও আমার আপত্তি কারন খেতে গেলে ডলার ভাঙ্গাতে হবে।
সেনঝেন্র দোকানে ডলার নেয় না। হোটেলে গিয়ে ডলার ভাঙ্গিয়ে অন্যান্য কাজ সারা যাবে। ভেন কি বুঝলো জানিনা, বললো সেনঝেনে ইসলাম নেই। তাই ইসলামি হোটেল ও নেই। ইসলাম নেই শব্দটা ঝঁকি খাবার মত।
বললাম
- ইসলাম নেই তোমাকে কে বললো আমিই তো ইসলাম। তুমি দ্যাখোনি আমার পুরো নাম সাইদুল ইসলাম
- ও, আই থট ইতস ইয়ো ফ্যামিলি নেইম।
- আচ্ছা ঠিক আছে আগে হোটেলে চল।
- তোমার নামটা কি ভাবে প্রোনাউন্স কর?
- সাইদুল ইসলাম
- ইয়েস সাই ই ডুল ইজলাম, রাইট?
কথা বলতে বলতে গাড়ি থামলো পিংডি হোটেলের সামনে। (সেনঝেনের এই এলাকাটির নাম পিংডি ডিস্ট্রিক্ট।
গোয়াঞ্জু প্রদেশের সবচেয়ে বড় শহর সেনঝেনের বয়স মাত্র তিরিশ বছর। পরিকল্পিত ভাবে গড়ে উঠেছে চীনের তৃতীয় বৃহত্তম এ শহর; এই প্রসঙ্গে পরে লিখবো সময়
পেলে। )
ভেন বললো আগে তুমি রুম গুলি ঘুরে দ্যাখো, পছন্দ হলে নিও। হোটেল টা বেশ সুন্দর। গত বছর অফিসের কাজে সিঙ্গাপুরের একটি সেভেন স্টার হোটেলে থাকার সুযোগ হয়ে ছিল।
এটির রুম গুলি প্রায় সে রকমই তবে তারা আর ভাড়া কম। ভেন যখন বলল ৭দিন থাকতে লাগবে ১০০০ ইয়ুয়ান। দ্বিতীয় কোন চিন্তার অবকাশ থাকলো না, বললাম রুমের চাবি দিতে বল। বলল তোমাকে কিছু টাকা এডভান্স করতে হবে। তোমার কাছে যদি ইয়ুয়ান না থাকে আমি দিয়ে দিচ্ছি তুমি পরে আমাকে দিয়ে দিও।
লাগেজ হারানোর বেদনা তখন কিছুটা ফিঁকে হয়ে এসেছে। রুমে ল্যাপ টপ রেখে বেরিয়ে পড়লাম মানি এক্সচেঞ্জের খোজে। চীন দেশে রাস্তার মোড়ে মোড়ে মানি এক্সচেঞ্জ নেই। টাকা ভাঙ্গাতে হয় ব্যাংকে। ব্যাংক খোলা পেলেও রবিবার বলে টাকা ভাঙ্গানো গেলনা।
ভেন বলল টাকা কাল ভাঙ্গিয়ো। আমার তো বিব্রত কর পরিস্থিতি, টাকা না ভাঙ্গালে খাবো কি। বললাম তোমাকে ডলার দিই তুমি ইয়ুয়ান দাও। ও বলল আমার কাছে এত টাকা নেই। তোমাকে দিলে লাঞ্চ খেতে পারবো না।
বললাম লাঞ্চ আমি খাওয়াবো। (অসমাপ্ত)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।