বর্তমানে চট্টগ্রাম এবং বান্দরবান জেলায় সীমিত আকারে অ্যাভোকেডো চাষ হচ্ছে। এ ফলের আদি জন্মস্থান মধ্য আমেরিকা। বর্তমানে উষ্ণ ও অব-উষ্ণমণ্ডলের বিভিন্ন দেশে এ ফলের চাষ বিস্তার লাভ করেছে।
এটি একটি চিরহরিত্ বৃক্ষ। মাঝারি আকারের এ গাছ ৮-১০ মিটার লম্বা হয়।
গাছের শিকড় অগভীর। শাখা-প্রশাখা ভঙ্গুর প্রকৃতির এবং পাতা উপ-বৃত্তাকার। শাখার অগ্রভাগে গুচ্ছাকারে ফুল ফোটে। ফুল উভয়লিঙ্গি। কীট-পতঙ্গের সাহায্যে পরাগায়ণ হয়।
ফলের আকৃতি গোলাকার কিংবা নাশপাতির মতো। ফলের মাঝে একটি বীজ থাকে। জাতভেদে ফলের ওজন ২০০ থেকে ৭০০ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে। ফলের রং হালকা সবুজ থেকে কালচে সবুজ।
অ্যাভোকেডোর প্রজাতির সংখ্যা ১৫০টি।
অ্যাভোকেডোকে তিনটি গোত্রে বিভক্ত করা হয়েছে; যথা—ক. মেক্সিকান গোত্র, খ. ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান গোত্র এবং গ. গুয়াতেমালান গোত্র। এ তিনটি গোত্রের ফলের মধ্যে আকার, আয়তন, ওজন, তেলের পরিমাণ, বীজের আকার, ফল পাকার সময় ইত্যাদি বৈশিষ্ট্যের ক্ষেত্রে ভিন্নতা রয়েছে অ্যাভোকেডোর জনপ্রিয় জাতগুলোর মধ্যে। যথা :
ক. কুয়ার্টে,
খ. হাশ,
গ. পুয়েবলা,
ঘ. লুলা,
ঙ. বেকন,
চ. রিকজন ইত্যাদির নাম উল্লেখযোগ্য।
জলবায়ুর ভিন্নতা অনুযায়ী অ্যাভোকেডোর জাত নির্বাচন করা আবশ্যক। কোনো কোনো জাত প্রকৃত উষ্ণমণ্ডল থেকে শুরু করে অব-উষ্ণমণ্ডল।
এমনকি শীতপ্রধান উষ্ণতম স্থানে জমে থাকে। অ্যাভোকেডো চাষের জন্য গড় তাপমাত্রা ১৩ ডিগ্রি থেকে ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস হওয়া সবচেয়ে উপযোগী। ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায়ও গাছ জন্মে, তবে ফুল ও ফল ধারণ ব্যাহত হয়। অ্যাভোকেডো চাষের জন্য দোঁয়াশ ও জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ উর্বর বেলে দোঁয়াশ মাটি সবচেয়ে উপযোগী। তবে যে স্থানে এর চাষ করা হবে সেই স্থানটি সুনিষ্কাশিত হওয়া আবশ্যক।
কারণ এ গাছ জলাবদ্ধতা মোটেই সহ্য করতে পারে না। তাছাড়া লবণাক্ত মাটিতে গাছ ভালো হয় না। অ্যাভোকেডো চাষের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত অম্লক্ষারত্ব হচ্ছে ৫-৭।
বীজের সাহায্যে অ্যাভোকেডোর বংশবিস্তার করা যায় অতি সহজেই। একটি বীজকে লম্বালম্বিভাবে ৪-৬ ভাগ করে কেটে লাগালে প্রত্যেক ভাগ থেকে চারা গজায়, অবশ্য সে ক্ষেত্রে প্রত্যেক ভাগে ভ্রূণের অংশ থাকতে হবে।
ফল থেকে বীজ বের করার ২-৩ সপ্তাহের মধ্যেই বীজ অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। বীজ বপনের আগে বীজের আবরণ অপসারণ করলে অঙ্কুরণ ত্বরান্বিত হয়। অযৌন পদ্ধতিতেও বংশবিস্তার করানো যায়। জোড়কলম বা গ্রাফটিং গুটিকলাম, ভিনিয়ার, টি-বার্ডিংয়ের মাধ্যমে বংশবিস্তার হয়ে থাকে।
অ্যাভোকেডো যেহেতু বহুবর্ষজীবী, সে জন্য চারা রোপণের জন্য উঁচু জমি নির্বাচন করতে হবে যেন বন্যার পানি না ওঠে এবং প্রচুর রোদ থাকে।
এক গাছ থেকে অপর গাছের দূরত্ব জাতভেদে ৮-১০ মিটার হতে হবে। চারা কিংবা বীজ রোপণের আগে ১ বর্গ মিটার আয়তনের গর্ত খনন করে তাতে ২০ কেজি গোবর সার, ৩০০ গ্রাম টিএসপি এবং ২০০ গ্রাম ইউরিয়া সার মিশিয়ে ১৫ দিন পর চারা রোপণ করতে হবে। অ্যাভোকেডো গাছ অতিশয় ভঙ্গুর প্রকৃতির। এ জন্য বাগানের চারপাশে বায়ু প্রতিরোধী অন্যান্য গাছ লাগাতে হবে।
প্রতিবছর গাছে ফল ধারণের পর একবার, বর্ষার আগে একবার এবং বর্ষা শেষে একবার প্রতিটি গাছের চারপাশে ভালোভাবে কুপিয়ে সার ছিটিয়ে দিতে হবে।
১ থেকে ৫ বছর বয়সী গাছে প্রতিবছর ১০-১৫ কেজি গোবর সার, ৪০০ গ্রাম ইউরিয়া এবং ৩০০ গ্রাম করে টিএসপি ও এমপি সার প্রয়োগ করতে হবে। ১০ বছর পর্যন্ত প্রতিবছর ২০% হারে সারের পরিমাণ বাড়াতে হবে। শুষ্ক মৌসুমে ১০-১৫ দিন পরপর পানি সেচ দিতে হবে। মিলি বাগ, স্কেল ইনসেক্ট ও জোট মাকড়সা এ ফলের প্রধান অনিষ্টকারী হিসেবে পরিগণিত হয়। রোগের মধ্যে ফল ও শিকড়ের পচন রোগ, স্ক্যাব রোগ ইত্যাদি অন্যতম।
শীতের শেষভাগে অ্যাভোকেডো গাছে ফুল আসে এবং বর্ষা শেষে ফল পাকতে শুরু করে। পাকা ফল বেশ কিছুদিন পর্যন্ত গাছে রেখে দেয়া যায়। সহজে ঝরে পড়ে না। গাছ থেকে ফল সংগ্রহের পর ফল নরম হয়। জাতভেদে গাছপ্রতি ১০০-৫০০টি পর্যন্ত ফল হতে পারে।
পাকা ফল ৫ ডিগ্রি থেকে ৭ ডিগ্রি সে. তাপমাত্রায় ৩০-৩৫ দিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়। কলম থেকে উত্পাদিত গাছের বয়স ২ বছর হলেই সে গাছে ফুল ও ফল আসে। আর বীজ থেকে উত্পাদিত গাছে ফল আসে তিন-চার বছর পর। অ্যাভোকেডো গাছ ২০ বছর পর্যন্ত ফল দেয়।
পুষ্টিমানের দিক থেকে অ্যাভোকেডোর স্থান অনেক উচ্চে।
এ ফলে শর্করার পরিমাণ কম থাকায় এটিকে বহুমূত্র রোগীর জন্য একটি উত্তম খাদ্য হিসেবে গণ্য করা হয়। ফল সাধারণত টনটুকা অবস্থায় খাওয়া হয়। সালাদ হিসেবেও এর প্রচলন আছে। এর তেল বিভিন্ন প্রসাধনী সামগ্রী তৈরির প্রধান উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।