আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বর্ষায় ঝিরিপথে ভ্রমন

স্বপ্ন দেখে যাই...
আমাদের দেশের পাহারগুলো আমার খুব পছন্দ। সবুজে সবুজে ঢাকা... শুনেছিলাম বর্ষায় নাকি তার রুপ আরো অনেক সুন্দর। এবার প্লান হল যে বর্ষায় কেওক্রাডং যাওয়া হবে। গাড়ির রাস্তায় না যেয়ে ঝিরিপথ ধরে বগা লেক পর্যন্ত , তারপর কেওক্রাডং। আর আমাদের আরো একটা প্লান ছিলো বাংলাদেশে adventure travelling documentary film বানানোর।

ঠিক করা হলো এই জার্নিটাই হবে সেই প্রজেক্ট এর প্রথম ফিল্ম। এই সেই অনেক রকম প্রস্তুতির পরে ১৮ জনের টিম রওনা দিল বান্দরবনের উদ্দেশে। অফিস এর কাজের জন্য টিম এর সাথে যেতে না পেরে এক দিন পরে রওনা দিয়েও তাদের কে ধরে ফেললাম বগামুখ পারার আগেই। আমার সাথে ছিল আমার ভাই। এখন ২০ জনের বিশাল গ্রুপ।

এর তার শাথে পরিচিত হতে না হতেই চা পান বিরতি সমাপ্ত। সবাই মিলে দল বেধে হাটতে শুরু করলাম। ওহ, বলা হয় নাই, এর আগেই লাইরাম্পি নামে একটা ছোট পাহার পার হয়ে আসতে হয়েছে জেটার দুই দিকের ঢাল ই বেশ খারা। সবাই চিন্তিত ছিল যে আমি কিভাবে পার হব। ঃ) (আমি বেশ শক্ত সামর্থ কিনা ) .. তো পথে একটু পর পর ঝিরি পার হতে হয়।

বর্ষাকাল বলে কোথাও কোথাও স্রোত অনেক বেশি। সবাইকে হাত ধরে ধরে পার হতে হচ্ছে। পানির নিচে ছোট বড় পাথর। কিছু কিছু খুব ই পিচ্ছিল। তাই সাবধানে পার হচ্ছিলাম।

কেউ একজন বলল রুমা বাজ়ার থেকে বগালেক পর্যন্ত নাকি ৫২ বার ঝিরি পার করতে হয়। আমাদের কারো অবশ্য গুনে দেখার সময় ছিল না। সন্ধার আগেই বগামুখ পারা পৌছাতে হবে। শুটিং এর কারনে এম্নিতেই দেরি হচ্ছে। যতই এগুচ্ছিলাম সামনে, মনে হচ্ছিল কোন সবুজ দেশে চলে এসেছি।

সবুজের বিভিন্ন শেড দিয়ে ঘেরা চারপাশ। ঘাসের সবুজ, পাতার সবুজ, দূর পাহারের নিলচে সবুজ... আহা...এমন দেশে যদি বাকিটা জীবন পার করে দিতে পারতাম... বগামুখ পাড়ায় আমাদের মনে রাখার মত অভিজ্ঞতা হচ্ছে হাতি পোকার সাথে পরিচয়। চোখে দেখা যায় না এমন সাইজ এর পোকা যে বড় বড় মানুষ কে অস্থির করে তুলতে পারে তার জলন্ত(কামড় দেয়া মাত্র অই জায়গা যেন জলে যাচ্ছিল!) প্রমান এই আনুবিক্ষনিক সাইজ এর হাতি পোকা। যে এর নামকরন করেছিল সে সার্থক! পরদিন সকালে রওনা দিলাম বগা লাকে এর উদ্দেশে। জানাই ছিল এই পথ টা আরো একটু কঠিন হবে।

বেশ কিছুদুর ঢাল বেয়ে খাড়া পথ ধরে উঠতে হবে... সবাই গল্প করে করে হাটছিলাম। ঝিরি পাওয়া মাত্র সবাই পানি খেয়ে নিচ্ছিল এবং বোতল ভরে পানি নিয়ে নিচ্ছিল। ঝিরির পানির মত মজার পানি আমি আর কখনো খাইনি। অনেকেই আমার সাথে একমত হবে। পানি খেয়ে প্রান জুড়িয়ে যাওয়ার সত্তিকারের অভিজ্ঞতা হয়েছে।

হতে পারে ক্লান্তির কারনে আর বেশি ভালো লাগছিল। এর পরে এক সময় বেশিরভাগ পথ ই হয় এক্তু পর পর ঝিরি পার হতে হচ্ছে অথবা ঝিরি ধরেই উপরে উঠতে হচ্ছে। উপরে ঘন নীল আকাশ, দুই পাশে সবুজে ঢাকা পাহারি দেয়াল, পায়ের নিচে ঝিরিস্রোত... কোথাও কোথাও তা মিনি ঝর্নার রুপ নিয়েছে... কল্পনায় ও এমন সুন্দর জায়গা ভেবে নেয়া দুস্কর!...
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।