ঢাকায় আসার পর থেকে এ পর্যন্ত দুটো টিউশনি করিয়েছি। দুটোরই অভিজ্ঞতা চরম উদ্ভট।
প্রথমটা ছেলে। আমার চেয়ে ছাত্রের ওজন দ্বিগুণ আর আয়তন তিনগুন। পড়াশুনার বেলায় খালি কলসি, তাই বাজে বেশি।
ছাত্রের উপর আবার নাকি মাঝে মাঝে পরী ভর করে। ছাত্রের বাবা ডাক্তার। খরচের হাতও উন্মুক্ত। শুধু আমার বেলায় হাত মুষ্ঠিবদ্ধ। যাই হোক সে আরেক কাহিনি।
আমার ছাত্রের ঘটনা বলি।
আমি বেশ হালকা পাতলা গড়নের। ঢাকাইয়া আলট্রা মডার্ন ছাত্র আমারে কয় স্যার আপ্নের কি হইছে? আপ্নের শইলে কিছু নাই। কি খান? পড়াবেন ক্যামনে?
কয়েক সেকেন্ড ভাবলাম। ইজ্জতের উপর হামলা।
এই প্রশ্নের উপর নির্ভর করবে আমি ছাত্রের উপর কর্তৃত্ব করব নাকি ছাত্র আমার উপর কর্তৃত্ব করবে।
বললাম “আসলে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সবাইকে সব কিছু দেয় না। যেমন তোমার দিকে দেখ। তোমার যা আছে সব গিয়ে জমেছে তোমার শরীরে, পেটে। মাথাটা খালি।
আর আমার হয়েছে উল্টা ঘটনা। আমার যা আছে বেশিরভাগ গিয়ে জমেছে মাথায়, তাই শরীরে একটু টানাটানি চলছে। সেটা কিভাবে বাড়াতে হবে তাও প্রয়োজনের সময় মাথা খাটিয়ে বের করব”।
বলাই বাহুল্য ছাত্র আমার পুরাই ক্লিন বোল্ড।
যাই হোক বেশি দিন পড়াইনি।
দুই মাস পড়িয়েছিলাম, দ্বিতীয় মাসের বেতনও নেইনি
ভার্সিটির এক বড়ভাইয়ের রিকোয়েস্টে আরেকটা টিউশনি। এবারে ছাত্রী, বাসা মগবাজার। ভিকারুন্নিসাতে পড়ে ক্লাস এইটে। গাড়ি দিয়ে স্কুলে যায়, নিজের বেড রুমের সাথে কালার ম্যাচ করা এসি ছাড়া ঘুম হয়না টাইপ পুতুপুতু মেয়ে।
সচেতন ভাবেই আমি খুব সিম্পলি যেতাম আর বহু কষ্টে অভ্যাসের বাইরে গিয়ে কথা কম বলার চেষ্টা করতাম।
আমাকে দেখে আধাগাঁইয়া আধাশহুরে মনে হওয়াই স্বাভাবিক ছিল। ইন ফ্যাক্ট আমি চেয়েছিলাম সেভাবেই নিজেকে প্রেজেন্ট করতে।
তাতেও বিপদ। পড়াতে যাবার ২য় বা ৩য় দিনে ছাত্রী আমাকে সরাসরি জিজ্ঞাসা করে বসলো স্যার ফিজিক্যাল রিলেশন করা কি খারাপ?? আমি পুরাই টাশকিত। ক্লাস এইটের মেয়ে বলে কি? জ্ঞান বৃক্ষের যাবতীয় ফল এর মধ্যেই খাওয়া শেষ করেছে নাকি?
ছাত্রীর অ্যাটিচুড বোঝার চেষ্টা করলাম।
গরম মাথা ঠাণ্ডা হওয়ার জন্য ব্রেন সেল গুলোকে কয়েক সেকেন্ডের জন্য সময় দিলাম রিলাক্স করার জন্য। তারপর সাজিয়ে নিলাম কি উত্তর দিব। উত্তরের উপর নির্ভর করবে আমার ইজ্জত।
“আসলে ব্যাপারটা অনেক কিছুর উপর নির্ভর করে। বয়স, পরিবেশ, সম্পর্ক আরও অনেক কিছু।
তুমি যদি কোন নববিবাহিত দম্পত্তিকে গিয়ে বল ফিজিক্যাল রিলেশন করা খারাপ আপনারা বিরত থাকুন আর এর বদলে তারা যদি তোমার দুই গালে দুই থাপ্পড় দেয় তাহলে তাদের খুব বেশি দোষ দেওয়া যায় না। তারপর তুমি যদি তোমার মাকে গিয়ে বল ফিজিক্যাল রিলেশন করা খারাপ না, তুমিও তা করতে চাও, শুনে তোমার মাও যদি তোমার গালে পাঁচ আঙ্গুলের ছাপ বসিয়ে দেয় তাকেও দোষ দেওয়া যায়না। দুই যায়গায় থাপ্পড় খেয়ে তুমি যদি আমাকে গিজ্ঞাসা কর সব দোষ কি তোমার, তাহলে আমি বলব নাঃ, তোমাকেও খুব বেশি দোষ দেওয়া যায়না”।
যাই হোক প্রথম সাময়িক পরিক্ষায় গনিতে ফেল করা ছাত্রী আমার দ্বিতীয় সাময়িক পরিক্ষায় ৬৫ পেয়ে পাস করে। অবশ্য পরীক্ষার আগেই প্রশ্ন হাতে পেয়ে।
পাঠক কি থমকে গেলেন ? আমিও গিয়েছিলাম। স্কুলের বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকদের কাছে প্রাইভেট পড়লে পরীক্ষার আগে প্রশ্ন বলে দেওয়ার কালচার যে ভিকারুন্নিসার মত প্রতিষ্ঠানে হতে পারে তা আমারও ধারনার বাইরে ছিল। কিন্তু এটাই সেখানকার নিয়মিত কালচার।
জ্বি, প্রথম সাময়িক পরীক্ষায় প্রশ্ন পেয়েও ছাত্রী আমার ফেল করেছিল। সেই ফেল করা ছাত্রী দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষায় ৬৫ পাওয়ার পর ছাত্রীর মা আমাকে বলে মাত্র ৬৫ পেল কেন? টিউশনির ওইখানেই ইতি।
কন্যা আপনার পাস করেছে এটাই তো যথেষ্ট। তাই নয় কি?
ওটাই ছিল শেষ টিউশনি। তার পর আর পড়াইনি, পরানোর ইচ্ছাও নেই।
যাই হোক, টিউশনি নিয়ে আমার নিজস্ব কিছু মতামত/অভিমত আছে। সেগুলো হয়ত বলব অন্য কোন সময়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।