আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শাহজাহান

কিছু না। বেশ আয়েশী ভঙ্গিতে হুডতোলা রিকশায় চেপে যাচ্ছি আর থিওরি অব রিলেটিভিটির ভয়ংকর সব সুত্র মনে করার চেষ্টা করছি । আকাশের অবস্থাও তেমন ভালো নেই । যে কোন সময় বৃষ্টি নামতে পারে । আকাশের এমন অবস্থায় যে কোন একটা বিষয় নিয়ে ভাবাটাও বেশ বিপদের ।

ধরুন রিলেটিভিটি অব টাইম বা টাইম ডাইলেশান নিয়ে ভাবছি । তখন মনে হবে “ এই গেল, এই গেল । ট্রেন বুঝি আজ মিস হয়েই গেল । ” এসময় কাল দীর্ঘায়নের ব্যাপার স্যাপার সব ফালতু মনে হয় । মেজাজ চরমে উঠার আগেই ভাবলাম একটা গান ধরা দরকার ।

পরীক্ষার আগে মন প্রফুল্ল রাখাটাই নিয়ম । একটা রিলেক্স সংগীত দরকার । “বারান্দায় , আমি আরাম কেদারায় বসে দু’পা নাচাইরে………” । ভাবছি গানটাকে রিলেক্স সংগীত ঘোষনা করব । এত কঠিন সাবজেক্টের আগে এমন হালকা রসিকতা মনে আসাতেই আনন্দ ।

মেঘ আরো বাড়ছে । বৃষ্টি হবে, হচ্ছে করতে করতেই শুরু হল ঝুম বৃষ্টি । কোনমতে রিকশার হুড ফেলে এই যাত্রায় রক্ষা পেলেও ভাবছি রিকশা থেকে নেমে ট্রেনে উঠবো কি করে । স্টেশনে এসে দেখি কাকপক্ষীও নেই । “ আমি কি তবে ট্রেন মিস করলাম” ।

ঘড়িতে টাইম দেকলাম নয়টা দশ । না ট্রেন এখনো আসেনী । অবশ্য একটু বৃষ্টি হলেই বিশ্ববিদ্যালয় যাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যায় । এটাও কি রিলেটিভিটির পার্ট ! স্টেশনের একপাশে বাচ্চু ভাইয়ের টং । বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর থেকে আমার সকালের নাশতার প্রধান দুই যোগানদাতা বাচ্চু ভাইয়ের টং আর মউর দোয়ান ।

আজ কিছুই খেতে ভালো লাগছেনা । সিগারেট জ্বালিয়ে চায়ের অর্ডার দিলাম । কিছু কিছু সময় থাকে যখন অমৃতও গরল মনে হয় । আজ তাই হচ্ছে । চায়ে চুমুক দিতেই মনে হল এই রকম ফালতু জিনিষ মানুষ খায় ।

মনে হচ্ছে অস্থিরতা আরো বাড়ছে । আরেকটা সিগারেট ধরালাম । নাহ, চোখ বন্ধ করে থাকি কিছুক্ষন । “ ভাই, পেপার নিবেন” চোখ খুলে দেখি সাত কি আট বছরের একটা ছেলে সামনে দাড়িয়ে । একমুহূর্ত না ভেবে বললাম “ না ” ।

“ আপনের কি মন খারাপ । আফা আহে নাই ” । “ প্যাটপ্যাট করিস নাতো । যা সামনে থেকে” । “ চিন্তা কইরেন না ।

আফা আইসা পড়ব” এবার ভালো করে তাকালাম ছেলেটার দিকে । উষ্কখুষ্ক চুল, লাল রংয়ের শার্ট পরা । চেহারায় একটা মায়ামায়া ছাপ আছে । “ভাই আফায় তো অনেক সোন্দর । আপনে তারে বিয়া করবেন” “ আপারে তোর ভালো লাগে ” “হ ।

আফার চেহারায় অনেক মায়া । আমার মার মত” “ কই থাকস তুই ” “ ওই যে আমাগো লাইগা সেন্টার আছে। পথশিশু সেন্টার । হেইখানে” “ তোর মা কই থাকে ? ” “ জানিনা ” “তোর বাপ ” “ হেয় মইরা গেছে ” এত সহজভাবে ছেলেটা এসব বলে দিলো আর আমার মাথায় বজ্রপাতের মত এসে লাগলো । আমি বলার মত কোন কথাই পাচ্ছিনা ।

কিছু একটা বলবো এমন সময় সে বলে উঠলো “বাপ মইরা যাওনের পর মায় একডা বাসায় কাম করতো । একদিন সকালে ঘুম থেইকা উইঠা দেহি, মায় নাই । বইসাই আছি, বইসাই আছি । মায় আর আহে না । হেই যে গেছে, মায় আর ফিরা আহে নাই ।

” কি ভয়ংকর অবস্থা । আমাকে সাগরের মাঝখানে ছোট্ট একটা ভেলা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হল । আমি তখন কি করবো ? ডানে যাবো না বামে যাবো ? গেলেই বা কি হবে । এসব চিন্তার জট পাকছে মাথায় । সাংঘাতিক ।

মনে হচ্ছে আমি মিনকোস্কির সময় ব্যাখ্যার t=0 এর আগে চলে যাচ্ছি । যে সময়ে ঘটে যাওয়া বিষয়াবলি এখনো মানুষের অজানা । কি ঘটেছে, তার ব্যাখ্যা বিজ্ঞানীদের কাছে নেই । “ একটা পেপার কিনেন। ১০০টা পেপার বেচতে পারলে ৫০ টেকা পামু ।

সকাল থেইকা কিছুই খাই নাই” “ নে ধর । সিঙ্গাড়া খা” ক্ষুধার্ত শিশু গোগ্রাসে গরম গরম ধোয়া তোলা সিঙ্গাড়া খাচ্ছে । এমন সুন্দর দৃশ্য দেখে মন ভরে গেল । জিজ্ঞেস করলাম “ নাম কিরে তোর ” “ মায় কি নাম রাখসিলো ভুইলা গেছি । তয় একেকজন একেক নামে ডাকে।

চাইলে আপনেও একটা নাম দিতে পারেন” কোন কিছুই না ভেবেই বললাম “যা, তোর নাম শাহ জাহান ” “ হুনছি এইডা কোন বাদশার নাম” “ তুই লেখাপড়া করস নাকি? ” “না ” “পড়বি । সকালে এই কাম করবি আর বিকেলে পড়বি ” “ হ । তাইলে তো বালোই অয় ” পকেট থেকে মোবাইল ফোন বের করে কল দিলাম সবুজকে । তারা পথশিশুদের জন্য চারুলতা নামে একটা স্কুল চালায় । প্রায় চল্লিশ জন ছিন্নমুল শিশু পড়তে যায় ওখানে ।

রিং পড়ছে , কিন্তু নবাবজাদা রিসিভ করছে না । সময়মতো একজনরেও পাওয়া যায়না ্বোর অভিক । ফোন দেয়ার আগেই দেখি সে সামনে এসে হাজির । তাকে শাহজাহানের কথা বললাম । ওকে ভর্তি করিয়ে দিতে চারুলতায় ।

ট্রেন চলা শুরু করেছে আমি ট্রেনে চেপে যাচ্ছি বিশ্ববিদ্যালয় । এখন ভাবছি, ছেলেটার নাম শাহ জাহান দিলাম কেন । কোন ব্যাখ্যা দাড় করাতে পারলাম না । শাহ জাহান পড়াশোনা করে রাজা বাদশাহ টাইপ কিছু হবে এমনটা আমি ভাবছিনা । ভাবছি পড়াশোনা করে সে ছোট একটা চাকরি করবে ।

তরি একটা পরিবার হবে । একটা ছেলে, একটা মেয়ে । হয়তো মাঝরাতে ঘুম ভেঙ্গে মেয়ে তাকে বলবে “ বাজান, কও কাইল আমারে বাজার থেইকা লাল ফিতা কিন্না দিবা। ” সারাদিন কাজের ক্লান্তি আর রাজ্যের ঘুম ফেলে শাহ জাহান তার মেয়ের কপালে চুমু দিয়ে বলবে “হ। কিন্না দিমু মা ্আয় আমার বুকে শান্তিতে ঘুমা ” ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.