আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সাইফ শাহজাহান

সাইফ শাহজাহান তুমি আর বাংলাদেশ হাত ধরে যাচ্ছো পরস্পর বইমেলা কি কেবলই ঘোরাঘুরির মেলা? বিনোদনহীন এই ঢাকা মহানগরীতে গোটা ফেব্র“য়ারি মাস জুড়ে কেবলই বৈকালিক সময় ক্ষেপণের ক্ষেত্র? মোটা দাগে আমরা অনেকেই বইমেলাকে নিয়ে এরকমটা ধরেই সিদ্ধান্ত টানি। কিন্তু তা বোধকরি সত্য নয়। তাহলে সত্যটা কি? সত্য কি এই যে, সস্তা আবেগ উচ্ছ্বাস ছাড়া সেখানে কেউ দেশোদ্ধারে ব্রতী? এইসব সহজ সিদ্ধান্ত কিংবা অসহজ প্রশ্নের উত্তর দেবার উত্তরদাতাকে কে কোথায় খুঁজে পাবে? মেলার মাঠে কত ‘মানুষ’ কত ‘লেখক’, কত ‘পাঠক’ই না ঘোরে। সোজা বাংলা ভাষায় ‘ঘারাঘুরি’ করে বসেটসে কোথাও আড্ডা মারে, চা খায়- এই সব ‘চরিত্র’রা আবার ঘরে ফিরে চ্যানেলের বাটনে হাত বোলায়-- কোথায়, কোন চ্যনেলে, তার লম্বা মাথা কিংবা মোটা বপু দেখা গেল-- যে উনি মেলার মাঠে চরে বেড়াচ্ছেন! খোঁজেন পরদিনের পত্রিকায় তার নাম ছাপা হলো কি না। নাম ছাপা না হলে ভাবেন, মেলা কাভার করছে যে সংবাদকর্মী বা সাংবাদিক তারা বোধ হয় তাকে গুনল না।

গোনাগুনতির এই হিসাব আবার নিলর্জ্জের মত জাহির করে বসে তাদের কেউ কেউ। তো লম্বা, মোটা, বেঁটে এই রকম নানা কিসিমের চরে বেড়ানো দ্বিপদ কিংবা বিপদ কিংবা অনেক পদদের জন্য বইমেলা ক্যাটওয়াকের ক্ষেত্র বটে!! যদি শুধু এইসব মানুষ নাকি জন্তুদের কথা ভাবি তাহলে বইমেলা এক ভয়ংকর হাটও বটে। এইসব হালুমেরা কিংবা হুক্কাহুয়ারা বহাল তবিয়তে চরে ফিরুন কিন্তু আমি দেখি বইমেলার তারুণ্যকে। অনাগত দিনের বাংলাদেশের স্বপ্ন ঝলোমলো শিশু ও তরুণেরা কলকল শব্দ করে প্রাণবন্ত স্রোতোস্বিনী নদীর মত যখন পাশ দিয়ে চলে যায় বইয়ের স্টলের দিকে। খুঁজে খুঁজে কেনে তাদের পছন্দের বইগুলো- প্রবন্ধের, কবিতার, গল্পের, উপন্যাসের-- তখন সাড়া জাগে আমার প্রাণেও।

স্টলের কর্মীরা হয়তো কাগুজে নোটের স্ফীত অংকে পুলকিত হয় কিন্তু আমার পুলক জাগে প্রাণে; আমি উপলব্ধি করি, গভীরভাবে অনুভব করি এই শ্বাপদ শংকুল মেলার মাঠেও বাংলাদেশের যে-প্রাণ সেই প্রাণকে, সেই প্রাণের জোয়ারের কলকল ধ্বনি কাগজের মুদ্রায় শব্দ করে না কিন্তু সুর হয়ে ছড়িয়ে পড়ে একাডেমীর চত্বরে, সোহরাওয়ার্দ্দী উদ্যানের নির্মল বাতাসে, বিশ্ববিদ্যালয়েল দোয়েল চত্বর, টিএসসি হয়ে গোটা বাংলাদেশে। আমি জানি মেলা শেষে বণিকী উল্লাসে বিভিন্ন পত্রিকায় আমার সহকর্মীরা টাকার অংকে হিসাব কষবেন এবারের মেলায় বিশ কোটি কিংবা ত্রিশ কোটি টাকার বই বিক্রি হয়েছে, ৫০ লাখ বই বেচে। হ্যাঁ, আমরা এভাবেই টাকার উল্লাসে মেপে নেব বইমেলাকে কিন্তু আমি জানি বইমেলার মধ্যদিয়ে বাংলাদেশের প্রাণের যে প্রবাহ প্রবাহিত হয়ে যাচ্ছে, বাংলাদেশের অনাগত ভবিষ্যতের দিকে-- তাকে হাজার কোটি টাকার অংকেও কিনতে পারা সম্ভব নয়। কত শত বছর আগে কবি ওমর খৈয়াম বলেছিলেন, সামনে যা পাও হাত পেতে নাও বাকির খাতা শূন্য থাক,/ দূরের বাদ্য লাভ কি শুনে/ মাঝখানে যে বেজায় ফাঁক। ’ এই ইহজাগতিক সত্যে বিশ্বাসী মেলার মাঠের লম্বা, মোটু, বেঁটে মানুষেরা, যারা চোখের পিচুটি মুছে পত্রিকার পাতায় খোঁজে নাম, চত্বরে চরে বেড়াবার কৃত্যে-- তারা এই তারুণ্যকে বুঝবে না, অ¯তগামী সূর্যের আলোয় তারা আগামীদিনের সূর্যোদয়ের কথা ভাবতেও পারবে নাÑ অথচ এই মেলার এই চত্বরে নিরন্তর বয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের অবিনশ্বর প্রাণ।

কেবল ভাষা শহীদদের আÍত্যাগেই নয় বাংলা ও বাঙালির আবহমান সংগ্রামের সৈনিকদের রুটিরুজির লড়াইয়ে, স্বপ্নবান তারুণ্যের স্বপ্নে জাগবার আর বাঁচবার প্রেরণায়। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।