আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বেশি বাড় বেড়ো, না ঝরে পড়ে যাবে।

সবুজের বুকে লাল, সেতো উড়বেই চিরকাল তথাকথিত নির্বাচনে যখন আওয়ামি লিগ সব হিসাব নিকাশকে উলটে দিয়ে দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় "নির্বাচিত" হলো, তখন থেকেই তাদের মুখে ভিশন ২০২১ সালের কথা শুনছি। বোদ্ধা মাত্রেই বুঝতে পারার কথা যে এটি ২০২১ সাল পর্যন্ত আওয়ামি লিগের ক্ষমতায় থাকার একটি সুদুর প্রসারি ষড়যন্ত্র বৈত নয় ! ১৯৭২- ১৯৭৫, ১৯৯৬-২০০১ এবং অধুনা ২০০৭ থেকে এখন পর্যন্ত আওয়ামি লিগ সরকারে থাকার সময় সারা দেশে যে মাৎসন্যায় তৈরি করেছে, তাতে অন্তত সরকা্রে থাকার মত যোগ্যতা তাদের কোনদিনও ছিল না, এখনও নেই। সরকার পরিচালনায় সীমাহীন ব্যার্থতা থেকে উদ্ভুত সাধারণ মানুষের পুঞ্জিভুত আক্রোশের কারণেই ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট শেখ মুজিবর রহমান, হাতেগোণা কয়েকজন জুনিয়ার অফিসারের হাতে পরিবারসহ নিহত হলেও , কোন প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করে, সন্ত্রাসকে রীতিমত গডফাদার কেন্দ্রিক বানিয়ে , সারা দেশে রক্তের হোলি খেলার অপরাধে ২০০১ সালের নির্বাচনে জনগণ প্রবল বিতৃষ্ণার যথাযোগ্য ফল ভোগ করে আওয়ামি লিগ। এর পর বিরোধী দলে থাকাকালিন সময় সরকার বিরোধীতার নাম করে সন্ত্রাস নৈরাজ্যের মাধ্যমে সারা দেশের মানুষকে অস্থির করে তোলে।

আর ভেতরে ভেতরে বিদেশি মদদ ভিক্ষা করে তৎকালিন বিএনপি সরকারের পরিবর্তে বিশ্বব্যাংকের কর্মচারি এবং আওয়ামি প্রেমিক সেনাপ্রধানের পৃষ্ঠপোষকতায় একটি অনির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতায় আসতে সাহায্য করে। এর পেছনে যে আওয়ামি লিগের হাত ছিল, তার বড় প্রমান ক্ষমতায় আসার পরেও জেঃ মইনকে সেনাপ্রধানে পদে রাখা। এবং নির্বাচনের আগে বলে বেড়ানো যে, ক্ষমতায় আসলে ফকরু মইনের সরকারের সব কার্যক্রমের বৈধতা তারা দিবে। বিশ্ব নিয়ন্তা ক্ষমতাধর দেশগুলি, যারা গণতন্ত্রের ফেরিওয়ালা, পান থেকে চুন খসলে, যারা গণতন্ত্র রক্ষায় নির্বিচারে গণহত্যা চালাতেও কার্পণ্য করে না, তারা কিন্ত বাংলাদেশের সংবিধান মোতাবেক ৯০ দিনের তত্ত্ববধায়ক সরকারের দুই বছর মেয়াদি শাসনের বিরুদ্ধে টু শব্দটিও করেনি। বিউটিনেস, আনোয়ার চৌধুরি, পিনাকি ভট্টাচার্য প্রমুখ রাস্ট্রদুতের ষড়যন্ত্রের প্রধান সাথিই ছিল আওয়ামি লিগ।

সাথে ছিল প্রথম আলোর মতি, ডেইলি স্টারের মাহাফুজ সহ তথাকথিত সুশিল কাম ছুপা আওয়ামি লিগারদের অংশগ্রহন। ফলে মিডিয়ার ব্যাপক অপপ্রচারে বিএনপির বিরুদ্ধে কিছু মানুষ বিভ্রান্ত হলো। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব তারেক রহমানকে মধ্যযুগিয় কায়দায় নির্যাতন করে দেশ ত্যাগে বাধ্য করা হলো। বিএনপি থেকে কিছু সুবিধাবাদিকে দল ত্যাগ করিয়ে বিএনপিকে চিরতরে ধবংস করার চক্রান্ত হলো। এর পরে সুযোগ বুঝে নীল নকশার নির্বাচন আয়োজন করে আওয়ামি লিগকে ক্ষমতায় বসানো হলো।

এর আগে অবশ্য যুক্তরাস্ট্র এবং যুক্তরাজ্য এই দুই মহা শক্তিধর প্রভাবশালি রাস্ট্রের কাছে দাসখত দিয়েই এসেছিলেন হাসিনা। আর ভারতের সেবাদাসগিরি তো তাদের চিরদিনের স্বভাব। যদিও অজুহাত ছিলো কানের চিকিৎসা করানোর, কিন্ত চিকিৎসার নামে দিব্যি সুস্থ সবল স্বাস্থ্যে বিদেশে বোনের ছেলের বিয়ে খেয়ে বেড়িয়েছিলেন শেখ হাসিনা। কুকুরের পেটে যেমন ঘি হজম হয় না, তেমনি দুই তৃতিয়াংশ ভোটে নির্বাচিত হওয়াটাও তেমনি আওয়ামি লিগের পেটে হজম হয়নি। তাই সব কিছু গিলে চিরদিনের জন্য ক্ষমতা কুক্ষিগত করার নোংরা প্রয়াসে, তারা শুরু করলো নিত্য নতুন ষড়যন্ত্র।

সেই ষড়যন্ত্রের প্রথম টার্গেটই হয়েছিল সেনাবাহিনী। ৫৭ জন সৎ চৌকষ এবং দেশপ্রেমিক অফিসারকে হত্যা করানো হলো যেন ক্ষমতার পথের কাটা না থাকে। ব্যাতিক্রম ছিল ডিজি শাকিল, যে কিনা জেনারেল মইনের অবৈধ আয়ের সহযোগি ও সাক্ষি দুইই ছিল। তাকে হত্যা করে মইনের কুকীর্তি চিরকালের মত ধামাচাপা দেয়া হলো। আর ওইদিকে আওয়ামি লিগের বিদেশি প্রভু প্রণব বাবুর হুংকার শুনে সেনাবাহিনীর বেচে থাকা বাঘেরা বেড়ালের মত মিউ মিউ স্বভাবের হয়ে গেলো।

যারা অন্তত মৌখিক প্রতিবাদের সাহস করেছিলেন,তাদের কয়েকজনকে জোর করে অবসর দেয়া হলো। আর সেনা অফিসার হত্যার নীল নক্সাকারি বলে কুখ্যাত একজন ফজলে নুর তাপসের উপর কথিত বোমা হামলার ষড়যন্ত্রের মিথ্যা অভিযোগে অনেককেই জেলে পোড়া হলো। ব্যাস ! পথের প্রথম কাটা শেষ। বাংলাদেশের মানুষ কেউকে শ্রদ্ধা করুক বা না করুক, অন্তত বিচারপতিদের নিরপেক্ষতা নিয়ে কোনদিন অশ্রদ্ধা পোষণ করেনি। ক্ষমতায় থাকলেও, আদালতের কাছ থেকে, ১৯৯৬ তে প্রলাপ বকার অপরাধে হাসিনা পেয়েছিল রঙ হেডেড বলে তিরস্কার।

আর মিথ্যা অপবাদ দেবার অভিযোগে হাসিনার কয়েকজন মন্ত্রির জরিমানা হয়েছিল। ক্ষমতা নিরংকুশ করার পথে দ্বিতীয় বাধা বাংলাদেশের আইন আদালতকে তাই দলিয় প্লাটফর্ম বানাতে প্রধান বিচারপতিকে দশ লক্ষ টাকা দিয়ে কেনা হয়েছিল। জ্বি, আমি সেই কুলাঙ্গার বিচারপতি খায়রুলের কথাই বলছি, যার হাত দিয়ে জিয়ার শাসনকাল কে অবৈধ বলে রায় দেয়ানো হয়েছিল। গত জোট সরকারের আমলে প্রধান বিচারপতির এজলাশ ভাংচুর করা, কিংবা খুনের দায়ে অভিযুক্ত এই ধরনের লোকজনকে বিচারপতি বানিয়ে, আদালতকে তামাশা বানিয়ে ফেলে আওয়ামি লিগ দ্বিতীয় পথের কাটাও সরিয়ে ফেলতে সমর্থ্য হয়েছিল। আর আইন মন্ত্রি কিংবা প্রতিমন্ত্রি হিসাবে যাদের বসানো হয়েছে, তারা খুব বেশি হলে হানিফ সংকেতের ইত্যাদি অনুষ্ঠানে বিনোদন দানকারি হিসাবেই উপস্থাপিত হতে পারেন।

এদের মধ্যে জুনিয়ার জনের আবার রাজাকারদের সাথে বিশেষ সম্পর্কের কথা শোনা যায়। এর পর ইচ্ছা মত আইন, সংবিধান ইত্যাদি কাটাছেড়া করে, দলিয় লোকজনদের মামলা গায়েব করে, খুনের দায়ে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত কিংবা দুর্ণীতি দায়ে সাজাপ্রাপ্তদের মাফ করিয়ে, বস্তত আওয়ামি লিগ সন্ত্রাস এবং দুর্ণীতিকে রাস্ট্রিয় পৃষ্ঠপোষকতা দান করে। লক্ষ্মিপুরের বিএনপি নেতাকে কেটে টুকরা টুকরো করে নদীতে ভাসিয়ে দেয়া আওয়ামি লিগ নেতা তাহের পুত্র বিপ্লবকে ক্ষমা করে দেয়া হয়েছিল। এর পরেও দিন দিন জনগণ বিতশৃদ্ধ হয়ে উঠলে খেলা হয় যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ট্রাম কার্ড। সেখানেও রীতিমত আনাড়িপনার পরিচয় দেয় তারা।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে পুজি করে হারানো জন সমর্থন ফিরে পাবার আশায়, শাহাবাগে ছাত্রলিগ এবং সাংস্কৃতিক লিগের যৌথ পরিচালনায় বিশাল নাটক মঞ্চস্থ হলে, প্রথম দিকে প্রচুর মানুষ ধোকা খায়। কিন্ত কিছুদিনের মধ্যেই সেখানে আওয়ামি কুটচাল ধরতে পেরে সেখান থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলে, ফ্রি বিরিয়ানি আর তল্পিবাহক মিডীয়া এটিএন বাংলা, ৭১ টিভি, সময় টিভি, আর টিভি, মতি-মাহাফুজ-গোলাম সারওয়ার ইত্যাদি দিয়েও আর জনসমর্থন ধরে রাখা যায়নি। আর এই মুখোশ উন্মোচনের কাজটি আমার দেশ নামের পত্রিকাটি করার ফলে, ফ্যাসিবাদি মাও-স্ট্যালিনের পন্থায় সম্পাদকের নামে ভুয়া মামলা দিয়ে জেলে ভরা হয়, এবং পত্রিকাটি বন্ধ করে দেয়া হয়। আওয়ামি লিগের তল্পিবাহক হিসাবে যে সব মিডিয়া রয়েছে, তারা মুখে অসাম্প্রদায়িক চেতনার কথা বললেও, তারা সব গুলি চরম সাম্প্রদায়িক ইসলাম বিদ্বেষি গোষ্ঠির একান্ত অনুগত। প্রকাশ্যে ইসলাম বিদ্বেষি প্রচারণার বিরুদ্ধে তাই সিংহ ভাগ আলেম ওলামারা প্রতিবাদ করলে, রাতের আধারে তাদের প্রতিবাদ সমাবেশে পাকিস্থানি হানাদারদের আদলে রীতিমত গণহত্যা চালানো হয়।

অথচ মানবাধিকারের শিখন্ডি তথাকথিত মানবতাবাদিরা (কি বাংলাদেশে কিংবা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে) সেক্ষেত্রে মুখে কুলুপ এটে বসেছিল। কারণ ওরা মুসলমানদের মানুষ হিসাবেই গণ্য করে না। শেয়ার বাজারের কোটি কোটি টাকা লোপাট করে, পদ্মা সেতু নিয়ে দুর্ণীতি করে, ডেসটিনি(চেতনাধারিদের একজন হলেন প্রধান) হলমার্ক, ইত্যাদি ছুপা আওয়ামি লুটপাট কেন্দ্র থেকে কোষাগার শুন্য করে আওয়ামি লিগের প্রধান থেকে শুরু করে মাঝারি নেতা পর্যন্ত গলা পর্যন্ত আকন্ঠ হারাম গিলেছেন। আর এর প্রতিবাদ করলেই কন্ঠরোধ করার জন্য কখন ফেইস বুক বন্ধ, কখনো ব্লগ বন্ধ, কখন টিভি চ্যানেল বন্ধ কখনো পত্রিকা বন্ধ করে তাদের বাকশালি চরিত্রের পরিপুর্ণ চেহারা দেখিয়েছেন। এত কিছুতেও যখন কাজ হয়নি, তখন সন্ত্রাস দমন আইনের নামে স্টালিন মার্কা একটা আইন করা হয়েছে।

যেখানে অনলাইনে লেখালেখি করলেও সেটি যদি সরকার দেশবিরোধী মনে করে, তবে লেখককে সেই দোষে সাজা দিয়ে পারবে এখনকার আওয়ামি আদালত। স্বভাবতই এর বিরুদ্ধে তথাকথিত চেতনাধারি, বাকস্বাধীনতার ধব্জাধারি ইত্যাদির কোন আওয়াজ নেই। পাঠকদের মনে করিয়ে দিতে চাই যে, আমাদের দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি হলো, আওয়ামি লিগ, সুশিল সমাজ, সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্ব, লেখক বুদ্ধিজীবি, মানবাধিকার নেতা কর্মি, মিডীয়া মালিক, পত্রিকার সম্পাদক, কলাম লেখক ইত্যাদি। সবাই না। যারা নির্লজ্জ আওয়ামি চাটুকারিতা আকন্ঠ নিমজ্জিত , আমি তাদেরকেই দেশদ্রোহি পাপি বলে অভিহিত করছি।

আওয়ামি লিগের কুকর্ম ধরা পড়লে যারা সাফাই গাইবার জন্য ঘেউ ঘেউ করে, তারাই গণশত্রু। দেশের আইন আদালত গিলে, সেনাবাহিনীকে পঙ্গু করে, বিরোধি দলের নেতা কর্মিদের বিরুদ্ধে হাস্যকর মিথ্যা মামলা দিয়ে, নির্বিচারে নিরপরাধ মানুষদের উপর টিয়ার গ্যাস, বিষাক্ত স্প্রে, এবং গুলি বর্ষন করেও মানুষদের দমাতে সম্পুর্ণ ব্যার্থ হয়েছে আওয়ামি লিগ। যার ফলশ্রুতিতে সামান্য সুযোগ পেয়েই ভোটের মাধ্যমে দেশের চারটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামি লিগের মুখে কষিয়ে চড় মেরেছে বাংলাদেশের জনগণ। এতে ক্ষমতা হারানোর আশঙ্কায় আওয়ামি লিগ রীতিমত উন্মাদ হয়ে গিয়েছে। এখন ক্ষমতা ধরে রাখার আশায় বিশ্ব মোড়লের পায়ে নাকে খত দিতে টিফকা (টিফা নয়) বলে আরেকটি দেশবিরোধী চুক্তি করেছে।

এর আগে বাংলাদেশের মানুষের রায় ছাড়াই এক তরফাভাবে ভারতকে কোন বিনিময় ব্যাতিরেকেই এমন কিছু সুযোগ সুবিধা দিয়েছে আওয়ামি লিগ, যে সুযোগ ভারত তার নিজের কোন রাজ্য থেকেই সহজে পাবে না। ভারত এবং বিশ্বমোড়লকে সবকিছু উজার করে দেবার পেছনে যে কারণ, সেটা স্বভাবতই আওয়ামি লিগের নিজস্বার্থে। কারণ এতে বাংলাদেশের কোন কল্যাণ নিহিত নেই, বরং দেশের পায়ে আরেকটি দাসত্ব শেকল পড়ানো হয়েছে। রাস্ট্রিয় পৃষ্ঠপোষকতায় হত্যা, নৈরাজ্য, সন্ত্রাস ইত্যাদি দিয়ে আইন আদালত বা সেনাবাহিনীকে বংশদবত বানানো গেলেও, সাধারণ মানুষকে আওয়ামি ভৃত্য বানানো যাবে না। আর সেই চেস্টা করা হলে, আওয়ামি লিগের নাম নিশানা বাংলাদেশ থেকে মুছে যাবে।

আওয়ামি লিগের প্রধান নেতাদের নাম ইতিহাসের আস্তাকুরে নিক্ষিপ্ত হবে। তাই সময় থাকতেই শুধরে যান। জনগণ খেপলে, ভারত আমেরিকা কোন কাজে আসবে না। আর ইতিহাস থেকে শিক্ষা না নিলে, বাড়াবাড়ি চুড়ান্ত করবেন আপনারা। আর বেশি বাড় বাড়লে ঝরে পড়ে যাবেন।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১২ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.