আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শ্রেষ্ঠ কথাসাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদের মহাপ্রয়াণ ও ভারতীয়দের গল্প

বাংলাদেশের সমকালীন শ্রেষ্ঠ কথাসাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদের মৃতু্যতে ভারতীয় মিডিয়ার নিস্পৃহতা নিয়ে বেশকিছু লেখা দেখলাম। ভালো লিখেছেন সবাই। তারা কোন মানসিকতার তা না বুঝতে পারার মতো এতো বেবোধ আমরা নই। কিন্তু প্রতু্যত্তরে আমরা কী দিই সেই বিষয়ে একটা কাহিনী না বল পারছি না। ... আমি শুনেছি এদেশের কোনো মানুষের সাথে ওপারের কারো পরিচিত হওয়ার পরের কথা।

মানে আদর আপ্যায়নের ব্যাপারটা। দুপুরের খাবারে একটা ডিমের চার-ভাগের একভাগ তার বাংলাদেশী বন্ধুকে তুলে দেবে পাতে। আর ৩২ পাটি দাঁত কেলিয়ে বলবে, দাদা ডিমের পুরোটাই খেতে হবে কিন্তু ! এই কথার সত্যতা পেয়েছি পরে। একজন আমলা ভারত-বাংলাদেশের ভূ-খণ্ড সমস্যা সমাধানে জেলা পর্যায়ে দুতরফা দুদেশের মধ্যে বৈঠকের কথা বলছিলেন তার বন্ধুদের সাথে। আমি সেই আলোচনা থেকে যতটুকু শুনেছি তার সারমর্ম হচ্ছে, ভারতের ৪/৫জনের প্রতিনিধিদলের জন্য আমাদের ওই আমলারা আয়োজন করেছিলেন এলাহি খানাপিনা।

মানে দু-তিনপ্রকার মাংস, কয়েক পদের মাছ, ডিম, সবজি, দই ... মানে সাধারণত আমরা অতিথি আপ্যায়নে যা যা দিয়ে থাকি। তারা মানে ভারতের আমলারা খাবারের আয়োজন দেখে অভিভুত হয়ে যান। কারণ পরের জন্য এমন খাওয়ার আয়োজন তারা এই জনম কেনো পরজনমেও কল্পনা করতে ভয় পান। যাহোক পেটপুরে চেটেপুটে খেয়ে ছিলেন তারা। আর যাবার বেলায় যে নেমন্তন্ন তারা করে যান, তাতেও কিছুটা সংশয় ছিল।

দাদা, আপনারাও তো শিগগির আসছেন, এমন আপ্যায়ন আমরা পারবো না ঠিকই, তবে চেষ্টার কোনো কমতি থাকবে না... ইত্যাদি টাইপের। যাহোক আমাদের প্রতিনিধিদল সেদেশে যান এবং আপ্যায়িত হন- স্রেফ চা বিস্কুটে। কেননা আলোচনা ছিল অল্প সময়ের। ওরা এমন বেহায়া যে, সভা দুপুরের মানে একটার আগে শেষ হয়ে যাওয়ায় তারা জানান, সময় হয়নি তো তাই দাদা লাঞ্চ করাতে পারলাম না। মজার বিষয় হলো, সপ্তাহ খানেক বাদে ভারতের ওই প্রতিনিধিরা আবার এলেন এদেশে।

তখন আমাদের দেশের প্রতিনিধিদের একজন জৈষ্ঠ এক আমলাকে জানান তার ক্ষোভের কথা। স্যার ওরা আমাদের বিশ্রিভাবে অপমান করেছে। এবার আমরা তাদের একটা টোস্ট আর লাল চা এক কাপ করে দেবো। কিন্তু তিনি রাজি হননি। ওই আমলা বলেছিলেন, আমরা এদেশের মানুষ।

আমাদের হৃদয় অনেক বড়, এদেশ আমাদের তেমন আতিথেয়তা শেখায়নি। অর্থাৎ সেবারও তারা আয়োজন করেন রাজকীয় খানাপিনার। এমন আয়োজন দেখে ভারত থেকে আসা অতিথিরা লজ্জা পেয়েছিলেন কিনা জানি না.. তবে, সংকোচ একটু বোধ হয় হয়েছিলো তাদের। অঅয়োজন দেখে তারা বিস্ময়ভাবটা একদম লুকোতে পারেননি। তাদের একজন বলেই ফেললেন, দাদা আপনারা গিয়েছিলেন আমরা কিছুই করতে পারিনি।

তারপরও আপনারা কী বিশাল কারবার করেছেন আমাদের জন্য! অপনারা অতিথিসেবা করতে পারেনও বটে! আমাদের আয়োজকরা চুপ করে সব শুনলেন। দাদারা খাচ্ছেন। খাবারের একেবারে শেষ পর্যায়ে মুখ খুললেন আমাদের জৈষ্ঠ আমলা। তিনি বললেন, পাকিস্তানিদের সাথে আমরা ছিলাম দীর্ঘদিন। আর কিছু না শিখলেও অন্তত এটুকু শিখেছি তাদের কাছ থেকে কীভাবে অতিথিদের সেবা-যত্ন করতে হয়।

তাছাড়া আমরা তো এদেশেরই সন্তান। আমাদের পরিবার থেকেই শেখানো হয় অতিথিরা যেনো কোনোভাবেই মন খারাপ না করে সেদিকে নজর রাখার... আমরা সেসব কখনোই ভুলি না, ভুলতে চাইও না! ওনাদের কী হয়েছিলো জানি না। সামান্যতম লজ্জাবোধ থাকলে কিছুক্ষণ আগে গলাধকরণকৃত খাবার উগড়ে যেতো। কত বড় বেহায়া, বেলাজ, বেশরম না হলে হে হে হে বলে তা খেতে পারে এইসব জানোয়ারগুলো। আর তারা করবে আমাদের হুমায়ুন আহমেদের গুণগান।

তার মৃতু্যতে তাদের কী এসে যায়! এখানে কি তাদের কোনো বাণিজ্যিক স্বার্থ আছে। আমি বিস্মিত হই না তাদের কোনো আচরণে, কেননা আমি জানি তাদের ভেতরে মনুষ্যত্ব বলে আসলে কিছুই নেই। যারা একটু আবেগি আছে, খোঁজ নিন-তারা বাংলাদেশ থেকে সেখানে মাইগ্রেট করেছে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.