আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মাহে রমজান

সূর্য ওঠা থেকে সূর্য ডোবা পর্যন্ত পানাহার এবং সেই সাথে যাবতীয় ভোগ-বিলাস থেকেও বিরত থাকার নাম রোযা। প্রতিটি সবল মুসলমানের জন্য রমজান মাসের প্রতি দিন রোজা রাখা ফরজ । মুসলমান, প্রাপ্তবয়স্ক, বুদ্ধিমান নারীপুরুষ, যাদের সুস্থ শরীর, তাদের রোজা রাখা ফরজ। এই রোজা চাঁদ দেখে রাখতে হবে এবং চাঁদ দেখে ছাড়তে সবে। পবিত্র কুরআনের সুরা বাক্বারার ১৮৩ নম্বর আয়াতে ঘোষণা করেছেন- “হে ঈমানদারগণ, তোমাদের উপর রোজা বা সিয়াম ফরজ করা হয়েছে, যেমন করে তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর ফরজ করা হয়েছিল।

সম্ভবতঃ এর ফলে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারবে। ” যাদের শরীরের ওজন বেশি এবং যাদের কম, উভয়ের জন্যই রোজার উপযোগীতা রয়েছে। রোজা সিগারেট এবং মদের মত অনেক ধরনের আসক্তি থেকেও আমাদের মুক্তি দিতে পারে। প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ইফতারি ও সেহ্‌রির খাবার খেলে ক্ষুধার ভাব বেশি লাগে। যদি পরিমিত পরিমাণে খাওয়া হয়, তাহলে ক্ষুধাটা অত তীব্র হয় না।

সারা দিন রোজা রাখার পর এত সব ক্যালরিযুক্ত খাবার বেশি খেলে যেমন শরীরের ওজন বেড়ে যায়, তেমনি হজমেও গোলমাল হতে পারে। ইফতারির প্রধান আকর্ষণ শরবত। ইফতারিতে ফল খাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন ধরনের ফলে রয়েছে ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ। ফল ত্বক সুন্দর রাখে, পরিপাকে সহায়তা করে।

লৌহ থাকার কারণে খেজুর রক্তশূন্যতায় উপকারী। আপেল রক্ত পরিশোধক হিসেবে কাজ করে ইত্যাদি। সারা দিন না খেয়ে থাকার পর ডুবোতেলে ভাজা খাবার অনেক সময় পাকস্থলীতে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। তাই ভাজা খাবার কমিয়ে সহজপাচ্য ও জলীয় খাবার খেতে পারলে ভালো হয়। জান্নাতে একটি দরজা রয়েছে।

যার নাম রইয়ান। কেয়ামতের দিন সিয়াম পালনকারীরাই শুধু সে দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে। তাদের ছাড়া অন্য কেউ সে দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। সেদিন ঘোষণা করা হবে, সিয়াম পালনকারীরা কোথায় ? তখন তারা দাঁড়িয়ে যাবে সে দরজা দিয়ে প্রবেশ করার জন্য। যখন তারা প্রবেশ করবে দরজা বন্ধ করে দেয়া হবে ফলে তারা ব্যতীত অন্য কেউ প্রবেশ করতে পারবে না।

রমজান একটি পবিত্র মাস। এই মাসে আল্লাহ তাঁর সৃষ্টিকে সর্বক্ষণ পরীক্ষা করেন এবং মানবজাতিকে আখিরাতের অপরিসীম, অশেষ সুখ লাভের সুযোগ করে দেন। রোযা হলো সম্পূর্ণ পবিত্রতা অর্জনের এবং আল্লাহ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির উপায়। রোজার মাসে মানুষ কাজকর্মে ফাঁকি দেয়, হাসপাতাল ও অফিস আদালতেও চিকিৎসক এবং কর্মকর্তা কর্মচারীরা ঠিকমত আসেন না, আসলেও সারাদিন ঝিমোন, দায়সারা গোছে কাজ করেন এবং ভাবেন কখন বাড়ি ফিরতে পারবেন । গর্ভবতী নারীদে্র রোজা রাখা নিজের ও ভবিষ্যতের সন্তানের জন্য চরম ক্ষতিকর ।

রোজার সময় রাতে উঠতে হয় বলে ঘুম কম হয়, বিকেলে ক্ষুধা বেশি লাগে বলে শরীর দুর্বল হয় ও বিশ্রামের প্রয়োজন হয়। তাই সকালে একটু বেশি সময় ঘুমিয়ে নিন বা বিকেলে একটু রেস্ট নিন অথবা রাতে এক ঘণ্টা আগে ঘুমাতে যান । রমজানে মাইগ্রেনের সমস্যা তিনগুন বেড়ে যায়, প্রায় ৯০ মিলিয়ন মুসলিম রমজানে মাইগ্রেন আক্রান্ত হয়। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, সারা বিশ্বের প্রায় ৫০ মিলিয়ন ডায়াবেটিসের রোগী রোজা রাখে। অপরাধ, ভিক্ষাবৃত্তি এবং পতিতাবৃত্তি রোজার মাসে বেড়ে যায়, খুন (১.৫%) এবং চুরি (৩.৫%) হারে বৃদ্ধি পায়, রোজার মাসে শপিং করা এবং দেশের বাড়িতে ঈদ করতে যাওয়ার দরুণ ছিনতাই ও ডাকাতি বেশ পরিমানে বৃদ্ধি পায় ।

রিকশায় বসে আরাম করে একটা সিগারেট ধরাবো, মানুষজন কেমন চোখে তাকায়ে থাকে, ভয়ও লাগে, কখন জানি সংযমীরা প্রতিরোধ করে বসে। রাত তিনটা থেকে শুরু হয় চেচামেচি, ঘুম না ভাঙ্গিয়ে ছাড় নাই। একজন রোজাদার কারও সঙ্গে ঝগড়া বাধাবে না। কেউ তার সঙ্গে ঝগড়া বাধালেও সে নিজেকে তাতে জড়াবে না। পরিষ্কার বলে দেবে, আমি রোজা রেখেছি।

তাই ঝগড়া করতে পারব না। মহানবী (সা.) এভাবেই বলতে শিক্ষা দিয়েছেন। এ মাসে ওঠতে-বসতে, চলতে-ফিরতে যখনই সুযোগ পাব তখনই বলতে থাকব; এমনকি হাত-পায়ের যে কোনো কাজের মধ্যেও মুখে অনবরত জপতে থাকব : ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ আল্লাহ! আমাকে মাফ কর, আল্লাহ!, আমাকে জান্নাত দাও, আল্লাহ! আমাকে জাহান্নাম থেকে বাঁচাও। ’ রমজান মাস সামনে রেখে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানোর পুরোনো কৌশলই নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। আর তা হলো, রমজান মাস শুরুর আগেই দাম বাড়িয়ে নেওয়া।

বাণিজ্যসচিব গোলাম হোসেন সাংবাদিকদের জানান, রমজান মাসে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই। পণ্যের পর্যাপ্ত মজুদে তিনি সন্তুষ্ট। চলতি জুলাই মাসে পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে ৩১ হাজার ৬৭৭ টন। ডলারকে টাকায় রূপান্তর করলে প্রতি টনের দাম দাঁড়ায় ১১ হাজার দুই টাকা। পাঁচ শতাংশ শুল্ক ধরে দাম দাঁড়ায় ১১ হাজার ৫৫২ টাকা।

পরিবহন ও অন্যান্য খরচ ১০ শতাংশ ধরলে দাম ১২ হাজার ৭০৭ টাকা। এর ওপর ১০ শতাংশ মুনাফা ধরলে দাম হয় ১৩ হাজার ৯৭৮ টাকা। অর্থাৎ, পেঁয়াজের কেজি দাঁড়ায় ১৩ টাকা ৯৮ পয়সা। কিন্তু বাজারে পেয়াজের কেজি ৩৫ টাকা । টিসিবির তথ্য কর্মকর্তা হুমায়ুন কবীর বলেন- ‘রমজান মাসে টিসিবির মজুদ বাড়ছে।

মাছ-মাংসের দাম বেশি বলে সাধারণ মানুষ ডিম খাওয়ার চিন্তা করে। কিন্তু ডিমের হালি প্রায় ৪০ টাকায় ওঠায় মানুষের সে আশায়ও গুড়েবালি। টিসিবির হিসাবেই, ডিমের দাম এক বছরে বেড়েছে ৪৫ শতাংশ। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সুন্দর, তাকওয়া অর্জনের উপযোগী একটি রামাদান দান করুন, আল্লাহ আমাদের রামাদানের মাধ্যমে রাহমাত, বারাকাহ, মাগফিরাত এবং জাহান্নাম থেকে নাজাত প্রাপ্তির ব্যবস্থা করে দিন। আল্লাহ আমাদেরকে এই রামাদান এবং আরো আরো রামাদান পাওয়ার তাওফিক দান করুন।

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন রমজানের প্রতি রাতে ও দিনে বহু মানুষকে মুক্তি দিয়ে থাকেন এবং প্রতি রাত ও দিবসে মুসলিমের দোয়া-প্রার্থনা কবুল করা হয়। সকল প্রশংসা আল্লাহ তায়ালার জন্য যিনি সমগ্র বিশ্বের রব। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।