পাওয়ার অব পিপল স্ট্রংগার দেন দি পিপল ইন পাওয়ার। http://mhcairo.blogspot.com/ প্রধানমন্ত্রী খুব দম্ভের সঙ্গে বলেছেন, ‘পদ্মা সেতু তৈরি কোনো ব্যাপারই নয়!’ একথা শুনে মনে হয় কথার তুবড়ি ছুটিয়েই তিনি বাজিমাত্ করবেন। কিন্তু তিনি পদ্মা সেতু নিজেদের অর্থায়নেই করবেন, একথা বাংলাদেশের বাস্তব পরিস্থিতিতে এক চরম গণবিরোধী ও প্রতিক্রিয়াশীল উক্তি ছাড়া অন্য কিছু নয়। কারণ তার এই দাম্ভিক বক্তব্য কার্যকর করতে গিয়ে দেশের গরিব ও মধ্যবিত্ত শ্রমজীবী জনগণকে এমন সঙ্কটের মধ্যে পড়তে হবে যা তাদের জীবনকে এখনকার দুর্দশাগ্রস্ত জীবনের থেকে আরও ভয়াবহভাবে দুর্দশার মধ্যে নিক্ষেপ করবে।
প্রথমত এটা বলা দরকার যে, তিনি একথা বলে বিশ্বব্যাংককে লাথি মারার ভাব দেখালেও বিশ্বব্যাংকের মতো একটি সাম্রাজ্যবাদী অর্থ সংস্থার কাছে তারা দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে জিম্মি করে রেখেছেন।
এই জিম্মি অবস্থার কথা আবার প্রধানমন্ত্রী তার প্রতিদিনের এলোপাতাড়ি কথাবার্তার মধ্যে কয়েকদিন আগেই বলেছেন। বাংলাদেশকে ঋণ দিয়ে বিশ্বব্যাংক আদমজী জুট মিল ধ্বংস করা, বিএডিসি বিলুপ্ত করা, তেলের দাম বৃদ্ধি করা, শ্রমিক মজুরি বৃদ্ধি না করা ইত্যাদি নানা বিষয়ে যে হুকুম জারি করে এসেছে সেগুলো বাংলাদেশকে কার্যকর করতে হয়েছে। তার কথায় এটা স্পষ্ট যে, এসব নির্দেশ মান্য করে আসায় দেশের ক্ষতি হয়েছে, কিন্তু শুধু তাদের সরকারই নয়, অন্য সরকারগুলোকেও বাধ্য হয়ে তাদের নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করতে হয়েছে। এসব ঠিক কথা, কিন্তু এখন তারা এ নিয়ে কথা বললেও এতদিন তো বিশ্বব্যাংকের কথা মতোই তারা চলেছেন। সে সরকার আওয়ামী লীগের হোক অথবা বিএনপি অথবা জাতীয় পার্টির।
এর কারণ বাংলাদেশে যারা ১৯৭২ সাল থেকে ক্ষমতায় আছে এটাই তাদের শ্রেণীচরিত্র। এই শ্রেণীচরিত্রের কারণে তাদের সাম্রাজ্যবাদের দাসত্ব এবং বিশ্বব্যাংকসহ তাদের বিভিন্ন সংস্থার নির্দেশ মেনে চলতে হয়েছে।
এটাই যদি সত্যি হয়, তাহলে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী রাতারাতি বিশ্বব্যাংকের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের লাথি মারার ভাব দেখিয়ে কেন বলছেন যে, পদ্মা সেতু তাদের নিজেদের অর্থায়নে তিনি করবেন এবং এই কাজ করাটা কোনো ব্যাপারই নয়। অর্থাত্ এটা খুবই সহজ!!
বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থায় এটা সহজ হতে পারে তাদের জন্যই যারা জনগণের জীবনের কোনো পরোয়া করে না। পদ্মা সেতু নিয়ে হম্বিতম্বি করলেও প্রধানমন্ত্রী এবং তার অনুগত অর্থমন্ত্রী কি অস্বীকার করতে পারেন যে, পদ্মা সেতুর অর্থায়নের প্রশ্ন বাদ দিয়েও বাংলাদেশে এখন ১৪টি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে কাজ হচ্ছে? বিশ্বব্যাংক তো পদ্মা সেতুর ব্যাপারে এক এবং অন্য প্রকল্পের ক্ষেত্রে অন্য রকম নয়।
এটা যদি কেউ ভাবে তাহলে তার থেকে আহাম্মক আর কে আছে? কিন্তু প্রধানমন্ত্রী পদ্মা সেতুর অর্থায়নকে লাথি মেরে অন্য প্রকল্পগুলোর অর্থায়নকে যেভাবে চুমু খাচ্ছেন তার মধ্যে এই আহাম্মকি ছাড়া আর কি আছে? ঘরের চোর-ঘুষখোরকে প্রশ্রয় দেয়া এবং বাঁচানোর চেষ্টা করতে গিয়ে সহজ পথ ছেড়ে প্রধানমন্ত্রী এখন যে পথ ধরেছেন তাতে পদ্মা সেতু তো হবেই না, উপরন্তু বর্তমান শাসক শ্রেণীর কাঠামোর মধ্যেও জনগণের জন্য যতটুকু করা সম্ভব হতো সেই সম্ভাবনাকেও জলাঞ্জলি দেয়া হবে।
প্রথমেই বলা হয়েছে যে নিজেদের অর্থায়নে পদ্মা সেতু করতে গেলে দেশের গরিব ও মধ্যবিত্ত জনগণের দুর্দশা আরও বাড়িয়ে তোলা হবে, তাদের জীবন আরও দুর্বিষহ হবে। এর সহজ এবং সহজবোধ্য কারণ এই দেশ একটি অনুন্নত, পশ্চাত্পদ ও গরিব দেশ। এখানকার জনসংখ্যা বিশাল এবং সমস্যার সংখ্যাও বিপুল। এ কারণে দেশের সম্পদ ও সেইসঙ্গে বিদেশি ঋণ যুক্ত হয়েও বার্ষিক এবং উন্নয়ন বাজেটে যা বরাদ্দ হয় তাতে মানুষের আয়, খাদ্য, চিকিত্সা, শিক্ষা, বাসস্থান কোনো কিছুরই সুষ্ঠু সমাধান হয় না।
বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র দেশ হিসেবেই পড়ে থাকে। ‘পদ্মা সেতু তৈরি কোনো ব্যাপারই নয়’, একথা বলতে পারে তারা যাদের সম্পদ এত বেশি যে, দেশের মানুষের নিম্নতম সুখ-শান্তি ও নিরাপত্তা বিধান করার পরও তাদের হাতে যথেষ্ট উদ্বৃত্ত থাকে। কিন্তু যে দেশকে নিজেদের বার্ষিক এবং উন্নয়ন বাজেটের জন্য বিদেশিদের কাছে ভিক্ষাপাত্র হাতে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়, যে দেশের আর্থিক অবস্থা এমন যে বয়স্ক ও কার্যক্ষম মানুষকে কাজ দেয়ার ক্ষমতা তাদের নেই, তার জন্যও তাদের বিদেশিদের কাছে ধরনা দিতে হয়—তাদের পক্ষে এই দম্ভোক্তি আহাম্মকিরই নামান্তর। এজন্য শুধু বিশ্বের সব থেকে দরিদ্র ও দুর্নীতিবাজ দেশ হিসেবেই নয়, অচিরেই বাংলাদেশ বিশ্বের সব থেকে আহাম্মক দেশ হিসেবেও বিবেচিত ও পরিগণিত হবে।
শাসক শ্রেণী ও সরকারের উচ্চমার্গের লোকেরা যা বলেন ও করেন তার প্রভাব তাদের প্রশাসনের সর্বক্ষেত্রে পড়ে।
বাংলাদেশেও তাই ঘটছে। সরকারের প্রধানমন্ত্রীর আহম্মকি কথাবার্তা অন্যদেরকে এই ধরনের কথাবার্তা বেপরোয়াভাবে বলতে উদ্বুদ্ধ করছে। কাজেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর একথা বলতে অসুবিধা হচ্ছে না যে, তাদের সরকারের আমলে কোনো ক্রসফায়ার হত্যা হয়নি! আগে তিনি বলছিলেন বিএনপির আমলে ক্রসফায়ারে যে ঐতিহ্য সৃষ্টি হয়েছে তা রাতারাতি বন্ধ করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। কাজেই এখনও ক্রসফায়ার চলছে। প্রধানমন্ত্রী বলছেন, তারা কোনো বিদেশির কাছেই পদ্মা সেতুর অর্থায়নের জন্য আর যাবেন না।
কিন্তু তার অর্থমন্ত্রী বলছেন, বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে এ নিয়ে দেনদরবারের সুযোগ এখনও আছে। অন্যদের সঙ্গেও কথাবার্তা হচ্ছে। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) বিশ্বব্যাংকের সিদ্ধান্তের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে পদ্মা সেতুকে অর্থায়ন না করার সিদ্ধান্ত প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই জানিয়ে দিয়েছিল। তা সত্ত্বেও অর্থমন্ত্রী আবার এডিবির কাছে তদবির করে চিঠি দিয়েছিলেন এই অর্থায়নের জন্য। এডিবি আবার খুব স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছে, বিশ্বব্যাংক যেভাবে দুর্নীতিবাজদের শাস্তি দেয়ার কথা বলেছে সেটা না করলে তাদের দ্বারা এই অর্থায়ন সম্ভব নয়! সরকার এই অর্থায়নের জন্য মালয়েশীয় সরকারের কাছেও ঘুরঘুর করছে।
কিন্তু বাংলাদেশে সরকারি লোকজনের চুরি-দুর্নীতির বহর দেখে তারাও এ ব্যাপারে বিশেষ আগ্রহী নয়।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক স্বউদ্যোগে পদ্মা সেতু নির্মাণ এবং তার জন্য দেশের লোকের থেকে চাঁদা ওঠানোর যে পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করা হয়েছে তাতে তাদের দলের এবং অঙ্গসংগঠনগুলোর সামনে দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের নতুন এক দরজা খুলে দেয়া হয়েছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের পদ্মা সেতু চাঁদাবাজি এবং তা নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি-লুটপাট করতে গিয়ে তাদেরই কর্মী নিহত হওয়াই এর দৃষ্টান্ত। অর্থমন্ত্রী এই ধরনের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের লাঠিপেটা করার নির্দেশ দিয়েছেন! কিন্তু তাদের এ ধরনের অথর্ব নির্দেশ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা যতদূর মেনে চলে এটা তারা বিগত সাড়ে তিন বছরে ভালোভাবেই দেখিয়ে দিয়েছে। কাজেই এ ধরনের আহাম্মকি নির্দেশের কোনো কার্যকারিতা তাদের ক্ষেত্রে নেই।
তারা দেশের সর্বত্র এখন নিজেদের মতো করেই পদ্মা সেতু তহবিলের জন্য চাঁদা সংগ্রহ করতে থাকবে, এর জন্য মানুষের ওপর হুকুম করবে এবং সংগৃহীত চাঁদা পদ্মা সেতু তহবিলে জমা না দিয়ে নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করবে। এই লুটপাট ‘নিজেদের অর্থায়নে’ পদ্মা সেতু নির্মাণের আওয়ামী কর্মসূচি অপরিহার্য অনুষঙ্গ। এটা বন্ধ করার কোনো ক্ষমতা আওয়ামী লীগ দল ও সরকার কারও যে নেই এটা ছাত্রলীগ বেশ ভালোভাবেই প্রমাণ করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বিশ্বব্যাংক কর্তৃক পদ্মা সেতুর অর্থায়ন বন্ধ করা প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে বলেছেন, একজনকে কোনো এক ব্যাংকের এমডি না করার সঙ্গে তাদের এই সিদ্ধান্ত সম্পর্কিত এবং এ ব্যাপারে তার কাছে খবর আগেই ছিল! এখানে যে তিনি গ্রামীণ ব্যাংক এবং ইউনূসের কথা বলছেন এ নিয়ে কোনো গর্দভেরও সংশয় নেই। তাহলে প্রধানমন্ত্রীর নিজের উক্তি থেকেই দেখা যাচ্ছে যে, বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের প্রকৃত মালিক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দালাল হিসেবে ডক্টর ইউনূসের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় আওয়ামী লীগের প্রধানমন্ত্রীর শোচনীয় পরাজয় হয়েছে! এ ধরনের আহাম্মকি বক্তব্য কি কোনো দেশের প্রধানমন্ত্রীর যোগ্য কাজ? এটা কি আদৌ শোভনীয়?
চুরি, ঘুষখোরি, দুর্নীতিই শুধু নয়, আওয়ামী লীগ ও তাদের প্রধানমন্ত্রীর নানা আহাম্মকি কথাবার্তার প্রভাব তাদের প্রশাসনের সর্বত্র কীভাবে পড়ছে তার সর্বশেষ দৃষ্টান্ত বুয়েটের উপাচার্যের এক বক্তব্য।
এই গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক ও ছাত্ররা উপাচার্য এবং উপ-উপাচার্যের নানা দুর্নীতি ও অপকীর্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করছেন, তাদের উভয়ের পদত্যাগ বা অপসারণ দাবি করছেন। দাবি পূরণ না হলে তারা আগামী কয়েকদিনের মধ্যে সবাই পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। এই ঘোষণার মুখে উপাচার্যও ঘোষণা করেছেন, ‘কুছ পরোয়া নেই। বর্তমান শিক্ষকরা পদত্যাগ করলে তাদের জায়গায় নতুন শিক্ষক নিয়োগ করা হবে!’ এর থেকে গর্দভতুল্য আহাম্মকি কথা আর কী হতে পারে? ‘নিজেদের অর্থায়নে’ পদ্মা সেতু তৈরির ঘোষণার সঙ্গে বুয়েট উপাচার্যের এই আহাম্মকি কথাবার্তার তফাত্ কোথায়?
Click This Link ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।