আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শ্রমিকের ন্যায্য অধিকার কে দিতে পারবে?

সততাই সর্ব উৎকৃষ্ট পন্থা। আজ দৈনিক পত্রিকায় একটি কলাম ছাপানো হয়েছে- আসলে ওরা একটু ভাল থাকতে চায়... এখানে বিশ্লেষণ করা হয়েছে- গার্মেন্টস শ্রমিকের ন্যায্য অধিকার কি বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত? এরা শুধু শোষিতই হচ্ছে। তাদের কষ্টের ঘাম দ্বারা ফায়দা লুটছে শুধুই গার্মেন্টস মালিকরা। শ্রমিকের ন্যায্য অধিকার আদায়ের কথা যদি বলতে হয় তাহলে তা প্রতিষ্ঠিত হতে পারে একমাত্র ইসলাম দ্বারা। এখনকার সময়ে তথাকথিত চুশিলরা শ্রমিকের ন্যায্য অধিকার আদায়ের কথা বড় বড় কথা বলে।

প্রকৃতপক্ষে তারা শুধু বড় বড় কথাই বলতে পারে কাজের বেলা কিছুই না। কিন্তু পক্ষান্তরে ইসলাম শ্রমিকের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠিত করেছে ১৪০০ বছর আগে। আসুন দেখি ইসলাম শ্রমিককে কি কি অধিকার দিয়েছেঃ মানুষের জীবনে চাহিদার অন্ত নেই। চাহিদা বহুল জীবনের প্রয়োজন মেটানোর জন্য অর্থের প্রয়োজন। শ্রমিকদের অর্থ-উপার্জনের একমাত্র পথ শ্রমের বিনিময় গ্রহণ।

মালিকগণ শ্রমিকদের যে অর্থ প্রদান করে থাকে, এতে যদি তাদের নিত্য প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণ না হয়, তবে সে স্বীয় প্রয়োজন পূরণার্থে মালিকের নিকট দাবী-দাওয়া পেশ করার অধিকার রাখে। তাদের যথোপযুক্ত দাবী পূরণের কথা উল্লেখ করে মহানবী (ছাঃ) বলেন, ‘শ্রমিকদেরকে যথারীতি খাদ্য ও পোষাক দিতে হবে’। (মুসলিম, মিশকাত হা/৩৩৪৪। ) বৃদ্ধ বা অসুস্থকালীন ভাতা ও সামাজিক নিরাপত্তা লাভ শ্রমিকগণের সবচেয়ে বড় প্রাণের দাবী। শ্রমই শ্রমিকগণের একমাত্র পুঁজি।

শ্রমিক বৃদ্ধ বা অসুস্থ হয়ে পড়লে তার জীবিকা নির্বাহের কোন পথই থাকে না, যা দিয়ে সে অন্ন সংস্থানের ব্যবস্থা করবে। সে তখন একেবারে অসহায় দিশেহারা হয়ে পড়ে। খাদ্যের জন্য সে তার যৌবনের উষ্ণ রক্ত ও শক্তি-সামর্থ্য ব্যয় করে আজ সে নিঃস্ব ও রিক্ত অথচ মালিকগণ ভুলেও তার করুণ দৈন্যদশার দিকে ফিরে তাকায় না। তাই বৃদ্ধ, পঙ্গু, অসুস্থ, অসহায় ও দুর্বল লোকদের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব মালিক তথা সরকারের। সরকার রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে তাদের সমস্ত প্রয়োজন পূরণ করবে, প্রয়োজন অনুপাতে ভাতা নির্ধারণ এবং তাদের সামাজিক নিরাপত্তা বিধান করবে।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, أَنَا أَوْلَى بِالْمُؤْمِنِيْنَ مِنْ أَنْفُسِهِمْ، فَمَنْ مَاتَ وَعَلَيْهِ دَيْنٌ وَلَمْ يَتْرُكْ وَفَاءً: فَعَلَىَّ قَضَؤُهُ وَمَنْ تَرَكَ مَالاً فَلِوَرثَتِهِ- ‘আমি মুমিনের অভিভাবক। তাদের মধ্যে হ’তে কেউ মৃত্যুবরণ করলে এবং তার উপর কর্য (দেনা) থাকলে আর তা পরিশোধের কোন ব্যবস্থা না থাকে তবে তা পরিশোধের দায়-দায়িত্ব আমার উপর। আর যদি সে সম্পদ রেখে যায়, তবে তার অংশীদারগণ এ সম্পদের অধিকারী হবে’। (বুখারী ও মুসলিম; মিশকাত হা/৩০৪৪। ) শ্রমিকদের সঙ্গে মালিকের সম্পর্ক কি রকম হবে, আচার-ব্যবহার কি রকম হবে সে সম্পর্কে ইসলামের সুন্দর নীতিমালা রয়েছে।

মালিকরা তাদের অধীনস্থ শ্রমিকদের সঙ্গে কিরূপ আচরণ করবে সে সম্পর্কে রাসূল (সাঃ) বলেছেন, ‘এরা (শ্রমিকরা) তোমাদের ভাই, আল্লাহ এদের তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন। অতএব আল্লাহ তা‘আলা যে ব্যক্তির ভাইকে তার অধীন করে দিয়েছেন, তার উচিত সে যা খাবে তাকেও তা খাওয়াবে, সে যা পরবে তাকেও তা পরাবে, আর যে কাজ তার পক্ষে সম্ভব নয়, সে কাজের জন্য তাকে কষ্ট দেবে না। আর যদি কষ্ট দেয় তাতে নিজেও তাকে সাহায্য করবে। ’ (আহমদ ৫/১৬৮, আবু দাউদ ২/৩৩৭) রাসূল (সাঃ) আরও বলেছেন, ‘তোমার যে পরিমাণ কাজ অনায়াসে করতে পারবে, সে পরিমাণ কাজই তোমরা (তোমাদের অধীনস্থদের জন্য) আয়োজন কর। ’ (নাসাঈ, ইবনে মাযাহ) বর্তমান বিশ্বে শ্রমিকের অধিকার আদায়ের মাধ্যম হিসেবে আন্দোলনকে বেছে নেয়া হয়েছে, কিন্তু আন্দোলনের মাধ্যমে সাময়িকভাবে অধিকার আদায় করলেও চিরস্থায়ীভাবে সম্ভব নয়।

শ্রমিক-মালিকের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় রাখা একমাত্র ইসলামের আদর্শ অনুসরণের মাধ্যমেই সম্ভব। শ্রমিক-মালিক উভয় পক্ষ যদি ইসলামের প্রদর্শিত নীতিমালা অনুসরণ করে তাহলে শ্রমিকরা দাবি আদায়ের নামে ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ করবে না, মালিকদেরও শোষণ করার মানসিকতা থাকবে না। উভয়ের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠবে এবং একে-অপরের সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করবে। আর এর মাধ্যমেই সমাজে বা দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.