আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শ্রমিকের স্বার্থ আর কত উপেক্ষিত হবে ?



ন্যায্য দাবী আদায়ের সংগ্রামে আরো তিন হাজার শ্রমিক মামলার শিকার হলো। আমাদের গার্মেন্টস মালিকেরা উচ্চকন্ঠে বলে থাকেন যে, দেশের সার্বিক রপ্তানী আয়ের ৭৮% তাদের অবদান। তবে এই ক্ষেত্রে তারা যন্ত্রপাতি, কাপড়, সুতা, কারীগরী সহায়তাসহ আমদানীর হিসাবটা উপস্থাপন করেন না। ধারণা করা যায় যে, এই খরচের হিসাব বাদ দিলে আমাদের গার্মেন্টস শিল্পের অবদান প্রায় ২০ - ২৫% হবে। প্রবাসী আয়ের পর এটাই আমাদের অর্থনীতির সবচেয়ে বড় চালিকা শক্তি, সন্দেহ নাই।

আর এই চালিকা শক্তির কৃতীত্ব যতটা মালিকদের তার থেকে বেশি শ্রমিকদের। কারণ, নিম্ন মজুরীর এই দেশে তারা নামমাত্র মজুরীতে শ্রম না বিলালে এই গার্মেন্টস মালিকদের একার পক্ষে এটা করা সম্ভব হতো না। এখানে আরেকটা দিক কিন্তু আমরা উপেক্ষা করে যাই - গার্মেন্টস মালিকরা কিন্তু তাদের এই সব কারখানা তাদের বাবার টাকায় তৈরী করে না, করে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে। যা আবার বছরের পর বছর খেলাপী হয়ে থাকে। জনগণ, অর্থাৎ আমাদের টাকায় তারা কারখানা তৈরী করে, ঢাকায় বিলাসবহুল বাড়ী বানিয়ে, সর্বোচ্চ মূল্যের একাধিক গাড়ীর মালিক হয়ে, কালক্রমে একটা থেকে দশটা গার্মেন্টসের মালিক হয়।

আর আমাদেরই শ্রমিক ভাই বোনরা নামমাত্র মজুরীতে ও অমানবিক ব্যবহার সহ্য করে এটা সম্ভব করে। দেশের এই অর্থনৈতিক অবস্থায় মাত্র ৩০০০ টাকায় ঢাকা শহরে বাড়ি ভাড়া দিয়ে পরিবার নিয়ে জীবন যাপন করা কতটুকু সম্ভব, পাঠকরা একবার সেটা ভেবে দেখবেন। কিছু সংখ্যক 'দালাল' শ্রমিক সংগঠনের নেতা নেত্রী এই ন্যুনতম মজুরী মেনে নিয়ে সরকার ও মালিক পক্ষের সাথে সমঝোতা করে আসলেই কি শ্রমিকদের অধিকার অর্জিত হয়ে যাবে ? ন্যয্যতঃই যখন শ্রমিকরা এর প্রতিবাদ জানাতে যায়, তার পরিণতি হয় এই মামলার শিকার হওয়া। আমাদের দেশে সরকারী মামলায় পড়ার কী হ্যাপা, তা আর ব্যাখ্যার প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। বিবেচনা করুন প্রায় কপর্দকহীন সেই সব ভাগ্যাগত শ্রমিকদের কথা।

তাদের কী হবে ? পুলিশ তো সরকার ও মালিক পক্ষকে খুশি করতে বেশি বেশি মামলা করে কৃতিত্ব নিয়ে নিল। এখন সেই সব মামলা খাওয়া শ্রমিকদের কী হবে, যারা দেশের অর্থনীতিকে চালু রেখেছে তাদের শ্রম দিয়ে, রক্ত দিয়ে। এই প্রতিদান আমরা তাদের দিতে পারলাম। কী বিচিত্র এই দেশ !

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.