আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং অবিভক্ত বাংলার প্রথম মুসলমান শিক্ষামন্ত্রী খান বাহাদুর সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী ৮৪তম মৃত্যুবার্ষিকীতে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি

আমি সত্য জানতে চাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং অবিভক্ত বাংলার প্রথম মুসলমান শিক্ষামন্ত্রী খান বাহাদুর সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী। তিনি বাংলাদেশের (তৎকালীন পূর্ব বাংলা) টাঙ্গাইলস্থ ধনবাড়ীর নবাব ছিলেন। তার দৌহিত্র মোহাম্মদ আলী বগুড়া পাকিস্তানের তৃতীয় প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। এছাড়া তার এক পুত্র সৈয়দ হাসান আলী চৌধুরী পুর্ব পাকিস্তান সরকারের মন্ত্রী ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং অবিভক্ত বাংলার প্রথম মুসলমান মন্ত্রী খান বাহাদুর সৈয়দ নওয়াব আলীর ৮৪তম মৃত্যুবার্ষিকীতে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।

(নওয়াব প্রসাদ, ধনবাড়ী, টাঙ্গাইল) 'নওয়াব বাহাদুর সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী ১৮৬৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর, বাংলাদেশের (তৎকালীন পূর্ব বাংলা) টাঙ্গাইলস্থ ধনবাড়ীর বিখ্যাত জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর প্রপিতামহ শাহ সৈয়দ খোদা বক্স আড়াইশ বছর আগে বর্তমান টাঙ্গাইল জেলার ধনবাড়ীতে বসতি স্থাপন করেন। নওয়াব আলী চৌধুরী শৈশবে গৃহ শিক্ষকের কাছে আরবী, ফার্সি, ও বাংলায় বিশেষ শিক্ষা লাভ করেন। তাঁর আনুষ্ঠানিক লেখাপড়া শুরু হয় রাজশাহীর কলেজিয়েট স্কুলে এবং পরবর্তিতে তিনি কলকাতার বিখ্যাত সেন্ট জোভিয়ার্স কলেজ থেকে এফ.এ. পাশ করেন। (টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীর নবাব এস্টেটের বৈঠকখানা) ১৮৯৫ থেকে ১৯০৪ পর্যন্ত নওয়াব সাহেবের কর্মতৎপরতা ছিল প্রধানত সাহিত্য ও সংস্কৃতি কেন্দ্রিক।

১৮৯৫ সালে মিহিরও সুধাকর পত্রিকা একত্রিত হয়ে সাপ্তাহিক মিহির-সুধাকর নামে আত্মপ্রকাশ করে। নওয়াব আলী চৌধুরী এর মালিক ছিলেন। এজন্য একটি প্রেস ক্রয় করে তিনি কলকাতায় তার নিজ বাসভবনে স্থাপন করেন। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, পন্ডিত রেয়াজউদ্দিন আহমদ আল মাশহাদী, কবি মোজাম্মেল হকের সাহিত্য প্রকাশনায় নওয়াব আলী চৌধুরীর দান ছিল অপরিসীম। ফলে উল্লেখিত লেখকগন তাদের বিভিন্ন প্রকাশনায় নওয়াব আলী চৌধুরীর নামে উৎসর্গ করেন।

(নবাব এস্টেটের অফিস ভবন, টাঙ্গাইল, ধনবাড়ী) ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন থেকে রাজনীতিতে সক্রিয় হন সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী। ১৯০৫ সালের ১৬ অক্টোবর হিন্দু জাতীয়তাবাদের প্রবর্তকদের প্রবল বাঁধার মুখে বঙ্গভঙ্গ কার্যকর হয়ে পুর্ব বাংলা ও আসাম নামক একটি মুসলিম প্রধান প্রদেশ জন্ম লাভ করলে নওয়াব আলী চৌধুরী একটা সর্বভারতীয় মুসলিম রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান গঠন করার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেন। তিনি মুসলমানদের অনগ্রসরতার জন্য অশিক্ষাকে দায়ী করেন। ১৯০৫ সালের যেদিন বঙ্গভঙ্গ কার্যকর হয় সেদিনই ঢাকার নর্থব্রুক হলে তার ও ঢাকার নবাব স্যার সলিমুল্লাহের উদ্দোগে প্রাদেশিক রাজনৈতিক সংগঠন গঠিত হয়। ((টাঙাইলের ধনবাড়ীর নবাব এস্টেটের ৭০০ বৎসর পুরোনো মসজিদ) ১৯১১ সালে ২৯ আগস্ট ঢাকার কার্জন হলে ল্যান্সলট হেয়ারের বিদায় এবং চার্লস বেইলির যোগদান উপলক্ষে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে পৃথক দুটি মানপত্রে নবাব সলিমুল্লাহ ও নওয়াব আলী চৌধুরী ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবী জানান।

১৯১২ সালের ৩১ জানুয়ারি লর্ড হার্ডিঞ্জের ঢাকায় অবস্থান কালে নওয়াব সলিমুল্লাহ ও নওয়াব আলী সহ ১৯ জন সদস্য বিশিষ্ট একটি প্রতিনিধি দল তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বঙ্গভঙ্গ রদের ফলে মুসলমানদের যে সমূহ ক্ষতি হচ্ছে সে কথা তুলে ধরেন। এ লক্ষ্যে ১৩ সদস্য বিশিষ্ট নাথান কমিটি গঠিত হলে নওয়াব আলী চৌধুরী এর অন্যতম সদস্য হন। এর অধীনে ছয়টি সাব কমিটি গঠিত হলে তিনি ৬ টি বিভাগের সদস্য নিযুক্ত হন। ১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে আর্থিক সংকটের কারনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কাজ চাপা পড়ে যায়। সে সময় নওয়াব আলী চৌধুরী ইম্পেরিয়াল কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন।

তিনি বিষয়টি আবার ১৯১৭ সালের ৭ মার্চ ইম্পেরিয়াল কাউন্সিলের সভায় আবার উপস্থাপন করেন। (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) ১৯২০ সালের মার্চ ১৮ ভারতীয় আইনসভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিল অ্যাক্টে পরিনত হয় এবং ২৩ মার্চ তা গভর্নর জেনারেলের অনুমোদন লাভ করে। লর্ড হার্ডিঞ্জ কর্তৃক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার নয় বছর পর ১৯২১ সালের জুলাই মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যথারীতি ক্লাস শুরু হয়। ১৯২২ সালে তিনি ছাত্র ছাত্রীদের বৃত্তি বাবদ ১৬ হাজার টাকার একটি তহবিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রদান করেন। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকালে অর্থাভাব দেখা গেলে নিজ জমিদারীর একাংশ বন্ধক রেখে এককালীন ৩৫,০০০ টাকা প্রদান করেন।

(নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) ২০০৩ সালের ৯ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এস. এম. এ. ফায়েজের সভাপতিত্বে সিন্ডিকেটের এক সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সিনেট ভবনের নাম "সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরীর সিনেট ভবন" করা হয়। (নওয়াব মঞ্জিল, ধনবাড়ী, টাঙ্গাইল) নওয়াব আলী চৌধুরী ছিলেন অবিভক্ত বাংলার প্রথম মুসলমান মন্ত্রী । শিক্ষাবিস্তারে তার আন্তরিকতার জন্য সে সময় তাকে শিক্ষা মন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তাঁর ইন্তেকালের পুর্ব পর্যন্ত তিনি মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। এদেশে নওয়াব আলী চৌধুরী ৩৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনে জমি ও আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন।

১৯১০ সালে তিনি নিজস্ব এলাকা ধনবাড়ীতে নওয়াব ইনস্টিটিউট নামের একটি হাই স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়া সোনাতলা, কোদালিয়া, গফরগাঁও, পিংনা, জঙ্গলবাড়ি, হয়বতনগরসহ বিভিন্ন স্থানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনে সহায়তা করেন। শিক্ষানুরাগী অনন্য জমিদার নওয়াব আলী চৌধুরী বিভিন্ন গ্রন্থ রচনা করেছেন। তার রচিত গ্রন্থ সমূহঃ ১। ঈদুল আযহা (১৮৯০) ২।

মৌলুদ শরীফ (১৯০৩) ৩। ভারনাকুলার এডুকেশন ইন বেঙ্গল (১৯০০) ৪। প্রাইমারি এডুকেশন ইন রুরাল এরিয়াস্‌ (১৯০৬) কর্ম জীবনে বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী ১৮৯৬ সালে খান বাহাদুর, ১৯১১ সালে নওয়াব, ১৯১৮ সালে কমান্ডার অব দ্যা ইন্ডিয়ান এম্পায়ার (সিআইই) এবং ১৯২৪ সালে নওয়াব বাহাদুর পদবি লাভ করেন। (নওয়াব প্রসাদের লেক, ধনবাড়ী, টাঙ্গাইল) নওয়াব আলী চৌধুরী ১৯১১ সালের রংপুর অধিবেশনে মাতৃভাষা বাংলার পক্ষে প্রথম সোচ্চার হয়ে বলেছিলেন, "বাংলা আমাদের মাতৃভাষা, মাতৃস্তনের ন্যায়, জন্মভূমির শান্তি নিকেতনের ন্যায় বাংলা ভাষা। বাংলাভাষা আমাদের নিকট প্রিয়, কিন্তু হতভাগ্য আমরা, প্রিয় মাতৃভাষার উন্নতিকল্পে আমরা উদাসীন।

অধঃপতন আমাদের হবে না - তো কার হবে? তৎকালীন প্রতিকুল পরিবেশে একজন জমিদার হয়ে বাংলা ভাষা রাষ্ট্রভাষা প্রশ্নে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার স্বাক্ষর রাখেন। ১৯২১ সালে বাংলাভাষাকে প্রদেশের সরকারী ভাষা করার জন্য লিখিত প্রস্তাব পেশ করেন। কর্ম জীবনে বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী ১৮৯৬ সালে খান বাহাদুর, ১৯১১ সালে নওয়াব, ১৯১৮ সালে কমান্ডার অব দ্যা ইন্ডিয়ান এম্পায়ার (সিআইই) এবং ১৯২৪ সালে নওয়াব বাহাদুর পদবি লাভ করেন। (নবাব আলী হাসান আলী রয়েল রির্সোট সেন্টার) বর্তমানে সৈয়দ নওয়াব নবাব আলী চৌধুরীর জমিদারি নবাব আলী হাসান আলী রয়েল রির্সোট সেন্টার হিসাবে খ্যাতি লাভ করেছে। যে কেউ এখানে এসে বেড়াতে পারেন , পারেন এক রাত থেকে নবাবদের জমিদারি উপভোগ করতে।

ঢাকা থেকে মাত্র চার ঘণ্টার পথ। দেড়শ কিলোমিটার দূরে এই নবাব প্যালেস। টাঙ্গাইল জেলার ধনবাড়ি পৌরসভায় অবস্থিত এই মনোরম প্যালেসটির পরিচালনায় রয়েছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান লাইট হাউজ গ্রম্নপ। ঢাকা বিশ্বদ্যিালয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, রাষ্ট্রভাষা বাংলা করার প্রথম প্রসত্দাবক এবং ব্রিটিশ সরকারের প্রথম মুসলিম মন্ত্রী নওয়াব সৈয়দ নবাব আলী চৌধুরীর সেই ঐতিহ্যবাহী মঞ্জিলটি আজকের রয়েল রিসোর্ট। চার গম্বুজ বিশিষ্ট অপূর্ব স্থাপত্য রীতির শতাব্দী প্রাচীন এই নবাব প্যালেসটি পর্যটকদের দারম্নণভাবে আকর্ষণ করে।

প্রাচীর ঘেরা নবাব মঞ্জিল বা নবাব প্যালেস এবং নবাব কাচারিকে বর্তমানে পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত করা হয়েছে। প্রাসাদটি দৰিণমুখী এবং দীর্ঘ বারান্দা সম্বলিত। ভবনের পূর্বদিকে বড় একটি তোরণ রয়েছে। তোরণের দু'পাশে রয়েছে প্রহরীদের দু'টি কৰ। তোরণটি জমিদার নওয়াব আলী চৌধুরী ব্রিটিশ গর্ভনরকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য নির্মাণ করেন।

প্রাচীরঘেরা চত্বর অংশে আবাসিক ভবন দু'টি ছাড়া আরও আছে ফুলের বাগান, চিড়িয়াখানা, বৈঠকখানা, গোমসত্দাঘর, নায়েবঘর, কাচারিঘর, পাইকপেয়াদা বসতি এবং দাস-দাসী চত্বর। যা আজকেও আপনি দেখতে পাবেন। এখানে থাকবেন আপনি নবাবী স্টাইলে। তবে সেটা নির্ভর করবে আপনার সামর্থের ওপর। রয়েছে চার ধরনের আবাসন ব্যবস্থা।

মঞ্জিল (মূল রাজপ্রাসাদ), প্যালেস (কাচারিঘর), ভিলা (২০০ বছরের পুরনো টিনশেড ভবন) এবং কটেজ (সমপ্রতি নির্মিত টিনশেড বাংলো)। মঞ্জিল এবং প্যালেসের খাট, সোফাসহ সব আসবাবপত্র সেই প্রাচীন আমলের যা নবাবরা ব্যবহার করতেন। কিন্তু ভিলা এবং কটেজে নবাবদের আসবাবপত্র পাওয়া যাবে না। ভাড়া এক থেকে পাঁচ হাজার টাকা। দল বেধে গেলে পাওয়া যাবে বিরাট ছাড়।

শিক্ষানুরাগী এই মহান পুরুষ ১৯২৯ সালের ১৭ এপ্রিল (বাংলা ১৩৩৬, ১ বৈশাখ) দার্জিলিংয়ে (বর্তমানে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে) ইডেন ক্যাসেলে ইন্তেকাল করেন। আজ তাঁর ৮৪তম মৃত্যুবার্ষিকী। খান বাহাদুর সৈয়দ নওয়াব আলীর মৃত্যুবার্ষিকীতে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.