সাপের শরীর হয়ে আঁধারের গাছ/ কুয়াশার বন্যায় ডুবো দেবী মাছ!
সারা রাইত মাথার মধ্যে দপদপ করসে চেরাগের শিখার মতন। এক রাইতেই চোখ ঢুইকা বোতামের ঘর হইসে। সকালে উইঠা ভালমতন পাউডার ঘইষা বাইর হওনের আগেও আয়নাটা ভাল কইরা দেখতাছিলাম। আইজ অবশ্যি নয়ন কানের কাছে বকবক কইরা বকবে! কি যে ভালবাসে পোলাটা। পাগল হইয়া যাওনের মত।
হাতটারে চাইপা ধইরা কয় কি নিয়া চিন্তা তুমার গোলাপি?আমারে কও। তুমি কোন চিন্তা করবানাতো। আমার বুকটা মুচড়ায়। তোমার সব চিন্তা এখন আমার কান্ধে।
তাই কি হয়! আব্বায় যে এত্ত সহজে আমার বিয়া হইতে দিবনা এটা তোমারে কেমনে বুঝায় গো জানের জান! একটা শ্বাস বুকের মধ্যে টাইনা সবুজ রঙ্গের বাটিটা পলিথিনে ভরলাম।
ভাত গরম। এট্টু আগেই খালায় রাইন্ধা বাটিত ভইরা দিসে। অফিসে গিয়াই মুখ খুইলা দিতে হইবো। দুনিয়াত গরম ও পড়সে আল্লারে! দুপ্পহারের টাইম হইতে হইতেই ভাত কিরাম জানি সিঝা যায়!
বাসস্টপে মানিকরে দেইখা মিচকা মাইরা হাসলাম। আগায়া আইসা বুক বরাবর খাড়াইতেই কিরাম জানি শইলের ভিত্রে শির শির করতাছিলো।
লম্বায় চওড়ায় এক্টিং নায়কের লাহান। কিন্তু চক্ষে চুরা চুরা ভাব। এই গতিকের পোলাগো সব মাইয়াই চেনে। প্রেমে পড়লে চুইষা ছিবড়া বানায়া ফেলবে। বিয়া করার নাম ও নিবেনা।
এর চাইতে নয়ন লাখোগুন ভালো। দুই বছর ধইরা যাওনের আর আসনের পথে খালি তাকায়া রইছে। কোনদিন একটুক খারাপ আচরন করে নাই। ওহ নয়নরে ভাবতেই পিপড়ার সারির মতন কত স্বপ্ন যে সামনে আইসা হাজিরা দেয়।
বাসের সিটে বইতেই মানিক ও আইসা বসলো।
বউকগিয়া! আমার কি! একটু চাইপা বসলাম তাও মনের ভিত্রে খুঁত খুঁত করতেছে। নয়ন পাখির ভিতরটা যে নরম পুরা সেন্টিমেন্টাল! টেকনিক্যালের মোড় আসতেই বুকের ভিত্রে দপ কইরা উঠলো। ওইতো খাড়ায়া আছে। ইশ সাহেব হলুদ রঙ্গের শার্ট টা পরসে আইজ আবার !
চুরি কইরা দেখতে যে কি ভাল্লাগে তোমারে। কুনুদিন বুঝবানা।
আগায়া আইসা কাশি দিল! জিগাইলো ভাল আছি কিনা। ভেতরটা উইড়া যাইতেছিলো। কোন মতে উত্তর দিলাম,
“হ নয়ন ভাই ভালা আছি, আফনে কিরাম আছেন?
পাশে মানিক্যারে আর সহ্য হইতেছিলো না। মনে হইলো একবার কই পিলিজ পিছনে গিয়া বসেন। তাই কি আর হয়।
দেখি পিছনের সিটে বইসা আমার পাখিটা গজগজাইতেছে। আরে আমি কি করুম!
আইজ যে কান্ড ঘটাইলো! বাপরে বাপ! এত রাগ সুনার চানের। কি হইলো না হইলো ডেরাইভারের গালে গিয়া চড় বসাই দিলো। নাহ আর পারা যায়না। মানিক ভাই আপনে একটু ওই সিটখানে বসবেন? লজ্জার মাথা খাইয়া বইলাই ফেললাম।
আর উপায় নাই। আমারে একলা পাইলে যে সে আছাড় দিবেনা তা কে কবে? গতিক বোঝা যায়না। এত কিছুর ভিত্রেও কি যে সুখ লাগতেছে! ফোন দিতেই ঝাড়ি দিয়া কয় কি হইছে!
আরে কি হইছে তা কি আর আমি বুঝিনা?
আহ্লাদ নিয়া কইলাম, সাহেবের এত্ত রাগ ক্যান? বইবা আমার পাশে?
গটগটায়া আসতেছে। হাসি চাপতেই তাকাইলাম রাস্তার দিকে। একখান বিরাট বোর্ডে নায়িকা অপুর দাঁত বাইর করা হাসি।
ফুলা ফুলা গাল। টাইট জামায় হুরপরী লাগতেছে। অন্য সময় হইলে নয়ন পাখিই কইতো, কি দেখতাছো ? আমার গোলাপিরে এর চাইতেও সুন্দর লাগে!
মানুষটাযে কি! পিঠের পিছন দিয়া সুখ বায়া নামে। কোন কপালে ওরে আমি পাইলাম।
নতুর ছবি বাইর হইছে।
সামনে শুক্কুর বারে দেখতে যাওনের বাইনা ধরতে হইবো। কইলেই নিয়া যাইবো। হেইতো না কইতে জানেনা।
-ওই তর এত দেমাগ কিসের?
ওরে পাগলারে! কিসের দেমাগ কারে দেমাগ দেখামু। রাইগা আছো দেইখা এরাম কইরা কইতে হইবো? একবার মনে হইলো ঝাড়ি দি, পরে মনে হইলো সারারাইত পর তোমারে দেখতেছিগো এখন এরাম কইরা কথা না কইলে হয়না? কিছুই কইতে না পাইরা শেষে এট্টু আগের কথা মনে হইলো।
মুখ বাঁকায়া বললাম,
-দেমাগের কি দেখলা? আগে কও তুমি এমন করলা ক্যান?
হে কি সব কইলো। আমার কানের ভিত্রে কিছু যায়না। আমি খালি তারে দেখতেছি। এক সময় মনে হইলো যেন আমি কইতেছি, আমার পাশে বসনের স্বাদ থাকলে আমার ইষ্টিশনে চইলা আসবা।
আমিও যেন কি! টেকনিক্যালের মোড় থাইকা আমিন বাজারে যাইতে হইলে হুদাই খরচ।
আর ক্যানইবা যাইবো। ভালবাসে দেইখা কি মাথা কিন্যা ফেলসি? নিজেই নিজেরে ধমকাইলাম। একটা স্টুপেজ দরকার হইলে দাঁড়ায়া আসুম। তাও কারো পাশে বসুম না।
গোলাপি তোর কপাল দেইখা নিজেরেই নিজে হিংসা করা দরকার! নয়ন রে পাইছোস আর কি লাগে তোর ! হুঁশ নাই গাধি মাইয়া?
এ কয়দিন অফিসে খালি কাম আর কাম।
কোনদিকে তাকানোর ফুরসত নাই। আইজ পাশের খালায় জিগাইলো নয়নের কথা। পোলা মাইনসের বিশ্বাস নাই। কবে আছে কবে ফুরুত কইরা উড়াল দিবে জলদি বিয়া কইরা ফেলতে কয় খালায়।
গত কাইল আব্বায় ফোন দিছিলো।
এই মাসে দু হাজার ট্যাকা বেশি চাইছে। খায়া না খায়া থাকলেও তো দু হাজার টেকা বেশি দেওনের মুরাদ নাই। আব্বা কি রকম অবুঝ ভাবতেই গলা ধইরা আসতেছে।
কয়দিন ধইরা খালি বোতাম ঘর বানানোর কাম। একই কাম করতে করতে চোখ ম্যাজম্যাজ করে।
ভাল্লাগেনা। ফ্যাক্টরিতে কাম ভাগ ভাগ করা। হলঘরের মত বড় এই ঘরের শেষ মাথায় নয়নের মেশিন। ম্যালা জনের মাথার উপর দিয়া তাকায়াও দেখা যায়না। তয় খাওনের টাইমে সাহেবরে দেখা যাইবো।
ইশ ফু্লবাবুটা! আইজ হলুদ শার্ট খান পরসে। কি রকম সোন্দর যে লাগতেছিলো।
ইখানে কাম শুরু করনের আগের জীবন টা ভাবলেই দম বন্ধ লাগে।
মা মইরা গেল অথর্ব ভাইটারে বাঁচায়া রাইখা। বিছানায় সারাদিন শুইয়া থাকে।
লিকলিকা ঠ্যাং। মায়ে আহ্লাদ কইরা ভাইয়ের নাম রাখছিলো হৃদয়! হায়রে হৃদয়! ভাইয়ের কথা মনে হইতেই বুকটা মুচড়ায়।
ওরে কাইলকা শুক্কুরবার। সিনেমায় যাওনের কথা। বাস থাইকা শেষ মুহূর্তে নামার সময় লজ্জার মাথা খাইয়া যেই বলছি কাইল সিনেমা দেখবা? ওমনি সাহেবের কি হাসি! ইশ! মনটা জুড়ায়া যায়!
খাইতে বইসা খালায় কইলো গোলাপি তর মনটা খারাপ খারাপ লাগে ক্যান রে?কিছু হইছে? তর ভাইটা ভালা তো? কিছু কইলাম না।
খালি মাথাখান আস্তে কইরা নাড়া দিলাম।
বাপে ভাইয়ের নাম কইরা চাপ দিয়া টাকা নিয়া যায়। নতুন মায়ের বয়স আমার মতই হইবো। কতদিন বাড়িত যাওয়া হয়না! কাঁচা মরিচ দিয়া ছাতু মাখায়া খাইতে যে কি ভাল লাগতো। মা মইরা যাওনের পর থাইকা ছাতুও কেউ বানায় না খাওয়াও হয়না।
নতুন মায়ে এসব পারে কি না কে জানে। হৃদয় রে এইখানে যে আইনা রাখতে পারবে তার ভরসাও নাই। নয়ন কি এত সব ঝামেলার কথা শুইনা ওরে বিয়া করতে চাইবো? ভাইটারে দেখে রাখে দেইখাই তো বাপের সাথে যোগাযোগ! নাইলে নাড়ি কাটার সাথে সাথে মায়ের সাথে সব সম্পর্ক শেষ হইয়া যায় তো বাপ! সে তো বীজ বুইনা দিয়াই খালাস। এত্ত বড় মাইয়া কই বিয়া দেওনের লাইগা চিন্তায় ঘুম আইবোনা তা না সেই নিজে কয় তুই বিয়া করলে তোর ভাইরে কে দেখবে? আমার পালার মত সামর্থ নাই। যেন মায়ের সঙ্গে শুইছিলো অন্য কেউ! ভাবলে রাগে শরীল চিটপিটায়! তা বইলা তো ফালায়া দিতে পারেনা! আহারে ভাই আমার! কি সোন্দর দুই খান চোখ! কথা কয় মায়া কইরা।
বুবু বইলা ডাকলে চোখ বায়া কান্দন আসে। আহারে ভাই তুই হাঁটতে পারোস না। তর কত কষ্ট
কোনো পোলায় কি চাইবে বৌয়ের লগে শালা ফ্রি পাইতে! মানুষে কত যৌতুক চায়। টিভি সাইকেল ঘড়ি আর নয়ন যদি তারে বিয়া করে তো একটা ন্যাংড়া শালা পাইবো! হাহ মোর কপাল!
খাওয়া শেষ হইলে টিফিন বাটি খান ধুইতে ধুইতে একবার মনে হইলো যদি নয়ন রাজী হইয়া যায় তাইলে কি কয়দিন পর এক বাটিতেই খাবার রাইন্ধা নিয়া আসুম? একদিন কথায় কথায় কইলো ট্যাংরা মাছ দিয়া ঢ্যাড়স খাইতে মন চাইতেছেগো গোলাপ ফুল। মানুষ টা এত আদর কইরা গোলাপ ফুল কয়! কত কি যে লাফায়া লাফায়া মাথার মইধ্যে আসে দিশা নাই!
সকাল থাইকা ভিতর ছটফটাইতেছে।
একবার টিরাঙ্ক খুইলা পিত্তি রঙের জর্জেটের জামা টা বাইর করলাম। ভেতরে কি সোন্দর কমলা রঙ দিয়া জঙলী ফুল চুমকি বসায়া বানাইছে। একটাই ভাল জামা। জামাটা কিননের সময় নয়ন ছিলো পাশে। কাঁচুমাচু হইয়া কইলো গোলাপি এই জামাটা আমি তোমারে কিন্যা দিতে চাই।
না করবানা। আমি হাসছিলাম। তারপর কইছিলাম। আপনের কিন্যা দেওনের টাইম আসলে দিয়েন। এখন আমিই কিনুম।
ফোন বাজতেছে! তিনটার শো দেখনের কথা। পাগল হয়া গেছে মনে হয় আড়াইটা বাজতেছে ফোন দিয়া যায়। হাতে নিয়া বইসা আছি। কেন যে যাইতে ইচ্ছা করতেছেনা! সকাল থাইকা বুকের ভিত্রে কেমন করছে আর এখন কেমন জানি ডর লাগতেছে।
যা আছে কপালে আইজ ভাইটার কথা কমুনে।
ছাইড়া গেলে যাইবো।
খালারে একবার খালি চিল্লায়া কইলাম যাইতেছি।
দেরী হইয়া যাইতো। তয় সময় মত বাসটা ধরতে পারছিলাম। ঘন্টা পড়তেছিলো তখন ঢুকছি হলের ভিত্রে।
চিপসের প্যাকেট হাতে ধইরা শুকনা মুখে দাঁড়ায়া ছিল সাহেব। বুকের মইধ্যে উথলায়া উঠছিলো। কই থাইকা এত ভালবাসা আসে!
অন্ধকারের ভিতরে তার হাতের মধ্যে হাত ঢুকায়া বইসা ছিলাম। সারা জগতের সুখ কান্ধের উপর। কেমন কইরা বলবো নয়ন।
তোমারে কেমন কইরা বলবো। তুমি আমারে ছাইড়া যাইবানাতো?
পর্দায় শাকিব খান গুন্ডাগো পিটাইতেছে আর আমার চোখ দিয়া টপটপ কইরা পানি পড়তেছে। কিছুতেই নিজেরে থামাইতে পারতেছিনা। চোখের সামনে খালি ভাসে লাল টকটকা শাড়ি পইরা ঘোমটা দিয়া ছাপর খাটের মইধ্যে বইসা রইছি। গ্যান্দা ফুল ছিঁড়া সারা বিছনায় ফেইলা রাখছে কেউ।
কান্দন তার চোখে পড়সে!আমি কেমনে কেমনে কইরা জানি কইয়া ফেললাম। মুখের দিকে তাকাইতে পারতেছিনা। লজ্জায় কষ্টে ভিতরেটা কেমন যে হইতাছে! মাথার উপর নরম একটা হাত দেখি আস্তে কইরা মাথায় হাত রাখছে। মনে হইলো ছাতা হইয়া হাত খান বৃষ্টি আটকায়া দিল। ঢোক গিলা ফেলাইলাম।
শুধু চাইয়া রইলাম নয়নের চোখের দিকে। হেতো চুপ কইরা রইছে। আকুল হইয়া কইতে মন চাইলো কিছু কইবানা জান তুমি কিচ্ছু কইবানা?
বাসের মইধ্যে দুইজনে একসাথে পাশে বইসা আসলাম। একবারের জন্যও হাত ছাড়ি নাই। মনে হইতেছিলো হয়ত আইজ ই শেষ বার! নয়ন আর কুনু দিন ই হাত ধরবোনা আমার।
ঘাড়ের মইধ্যে মাথা দিয়া বাইরে তাকায়া রইলাম। সারি সারি কত গাড়ি ঘোড়া সবই ঠিক থাকবো হয়ত খালি পাশের মানুষটাই আর থাকবোনা।
নয়ন কিছুই কয়না। হয়ত ভাবতেছে। জানগো তুমি খালি ভালা থাইকো।
চোখের সামনে থাইকো। আর কিচ্ছু চাওয়া নাই।
গতকাল বড় দেইখা একটা টিফিন বাকসো কিন্যা আনছি নিউমার্কেট থাইকা। আইজ নতুন বাটিতে কইরা ভাত নিয়া যামু। একলগে বইসা দুপুরে খামু।
ইশ!
হৃদয়রে নিয়া আসছি। হেরে দেখনের লাইগা খালার বাড়ির পাশেই একটা দুই কামরার ছাপড়া নিলো সাহেব। সেদিন বাড়িত আগাইয়া গেল চুপচাপ। পরদিন যে কি হইলো! খালি মনে আছে হে কইলো
লও আইজকাই বিয়া কইরা ফালাই।
কোনমতে আমার মুখ দিয়া বাইর হইলো ,
-আইজকা?
জলদি হাত চালায়া সবজিতে ত্যাল মশলা ফোড়ন দিতাছি।
অফিসের টাইম হইয়া যাইতেছে। আর ঐদিকে সাহেব নাকি তার হলুদ শার্ট পাইতেছেন না। একটু চোখ তুইলার আলনার পিছনে তাকাইলেই হয়। তা না সমানে চিল্লাইতেছেন। আ জ্বালা!
এখানে নমির লেখা নয়নের কথা ....
....................................................................................................
প্রচ্ছদ: সাদিয়া সুলতানা
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।