আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জীবন দিয়ে প্রতিবাদ যুগ্ম সচিব মনোয়ারের

দুই দুই বার পদোন্নতি বঞ্চনা ও দীর্ঘদিন ধরে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) ছিলেন যুগ্ম সচিব মো. মনোয়ার হোসেন। তাই সরকারের দুই ধরনের বৈষম্যমূলক আচরণ সহ্য করতে না পেরে তিনি আত্মহননের পথ বেছে নিলেন। তার পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, মনোয়ার কাফরুল থানাধীন মিরপুর-১৩ নম্বর সেকশনের ন্যাম গার্ডেনের কোয়ার্টারের ২ নম্বর ভবনের ৭০৩ নং ফ্ল্যাটের অষ্টম তলায় সপরিবারে বসবাস করতেন। প্রতিদিনের মতো গতকাল যখন কর্মকর্তারা অফিসে যাওয়ার জন্য বের হচ্ছেন তখনই কর্মকর্তারা মনোয়ার হোসেনকে ধরাধরি করে অ্যাম্বুলেন্সে তুলতে দেখেন। পরিবারের সদস্যদের কাছে কর্মকর্তারা জানতে চাইলে তারা জানান, হার্ট অ্যাটাক করেছেন হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি।

এরপর অফিস থেকে ফিরে কর্মকর্তারা জানাজায় শরিক হন। তার ছেলে সাজ্জাদ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, বুধবার রাতে খাওয়া শেষে বাবাকে স্বাভাবিক দেখাচ্ছিল। রাত ২টা পর্যন্ত আমরা সবাই এক সঙ্গে গল্প করেছি। আড়াইটার দিকে বাবা ঘুমাতে যান। মাকে বলেন আমি আজ গেস্ট রুমে ঘুমাবো।

সকাল ৭টার দিকে আমি ঘুম থেকে উঠে দেখতে পাই গেস্টরুমের জানালার সঙ্গে নাইলনের দড়িতে ফাঁস নিয়ে কে যেন ঝুলছে। কান্না জড়িত কণ্ঠে সাজ্জাদ বলেন, কাছে গিয়ে দেখি বাবা। কিন্তু ততক্ষণে সব শেষ। পুলিশ জানায়, পরিবারের সদস্যরা মনোয়ার হোসেন বেঁচে আছেন ভেবে লাশ নামিয়ে আনেন। কিন্তু অনেক আগেই তার মৃত্যু হয়েছিল।

ওই বাসা থেকে তার লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে নিয়ে যাওয়া হয়। দুই বছর আগে যুগ্ম সচিব অবস্থায় তাকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ওএসডি করা হয়। কাফরুল থানার এসআই মাসুদুর রহমান বলেন, নিহতের স্ত্রী অভিযোগ করেছেন, ওএসডির কারণে তার স্বামী মানসিক দুশ্চিন্তায় ভুগছিলেন। তার জুনিয়ররা পদোন্নতি পেয়ে সচিব হয়েছেন বলে তিনি প্রায়ই এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করতেন। এ বিষয়টি সহ্য করতে না পেরে তিনি আত্মহত্যা করেছেন।

মনোয়ার হোসেনের বাড়ি রাজশাহী নগরীর হেতেমখাঁয়। স্ত্রী ছাড়াও সাজ্জাদ ও সাদিক নামে তার দুই ছেলে রয়েছে। ছেলে সাজ্জাদ বাদী হয়ে কাফরুল থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা করেছেন। মনোয়ারের পারিবারিকসূত্রে জানা গেছে, স্ত্রীকে মনোয়ার মাঝে মধ্যেই বলতেন তাকে অহেতুক ওএসডি করে রাখা হয়েছে। কিন্তু জুনিয়রদের পদোন্নতি দিয়ে করা হচ্ছে সচিব।

জুনিয়র হওয়ার পরও তাদের স্যার বলতে হচ্ছে। এটা চরম অপমানের। যুগ্ম সচিব মনোয়ার হোসেনের কয়েক সহকর্মীর সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, তার সর্বশেষ কর্মস্থল ছিল ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের পরিচালক। এর আগে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে কাজ করেছেন ৮৩ স্পেশাল ব্যাচের এ কর্মকর্তা। তার ব্যাচের কর্মকর্তা ড. খন্দকার শওকাত হোসেন, নজরুল ইসলাম খান ও নিয়াজ উদ্দিন মিয়া এখন সরকারের সচিব পদে কর্মরত আছেন।

এছাড়া তার জুনিয়র অনেক কর্মকর্তাই এখন অতিরিক্ত সচিব। বর্তমান সরকারের আমলে দুই দুইবার তিনি পদোন্নতি বঞ্চিত হন। বর্তমান সরকারের আমলে জানুয়ারি মাসে তাকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা করা হয়। এরপর তার চাকরির বয়সসীমা দুই বছর বাড়লেও তাকে আর পদায়ন করা হয়নি। তার পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বাদ মাগরিব মনোয়ার হোসেনের নামাজে জানাজা তার অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সে অনুষ্ঠিত হয়েছে।

এরপর তাকে বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.