আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আহসান হাবীব: আমি কোন আগন্তুক নই

শরীরে আচড়ের দাগ, নষ্ট হল বুঝি আবার মানবতা! দেশবিভাগের পর যে সব কবি ঢাকাকেন্দ্রিক সাহিত্যচর্চায় ব্রতী হন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কবি আহসান হাবীব, আবুল হোসেন, গোলাম কুদ্দুস এবং সৈয়দ আলী আহসান। এদের মধ্যে উজ্জলতম আহসান হাবীব। কবি আহসান হাবীবের জন্ম ১৯১৭ সালের ২ ফেব্রুয়ারি। ত্রিশের দশকের কবিতায় রবীন্দ্র বিরোধিতা এবং আধুনিকতার যে একটা ঝোঁক কবিদের মধ্যে পরিলক্ষিত হয় শার্ল বোদলেয়ার এবং টি এস এলিয়ট এর সাহিত্যকীর্তির প্রভাবে, সেই ত্রিশের আধুনিকতার সার্থক উত্তরাধিকার ছিলেন কবি আহসান হাবীব। সমালোচক হুমায়ূণ আজাদের মতে, বাংলাদেশের কবিতায় তিনিই প্রথম আধুনিক কবি।

সাহিত্য রচনায় তিনি বেছে নিয়েছেন দেশ, মাটি, মানুষ, নিসর্গ ও প্রেম৷ শৈশবে বেড়ে ওঠা জন্মগ্রাম শংকরপাশা আর পারিবারিক অর্থনৈতিক দূরাবস্থার প্রভাব তাঁর সাহিত্যে ছাপ ফেলে৷ তার কবিতায় নাগরিক চেতনার প্রকাশ লক্ষ্যনীয়। আমার কাছে আহসান হাবীবেব সবচেয়ে যে দিকটি আকর্ষণীয় মনে হয় সেটি হল তার কবিতায় সংলাপ বা কথপোকথনের ধারার ব্যবহার। এই ধারারই একটি কবিতা দোতলার ল্যান্ডিং মুখোমুখি দুজন। প্রচণ্ড আশাবাদের কবি আহসান হাবীবেব কাব্যে আমরা অহরহ পেয়েছি আশার জয়গান আমি এই পথ থেকে ফিরবো না, কেননা, মানুষকে কোথাও না কোথাও যেতেই হয় অকাল সমৃদ্ধ এক সুস্থির আবাস তাকে অবশ্যই গড়ে নিতে হয় কোনোখানে। আহসান হাবীব সারাজীবনই পেশা হিসেবে পত্রিকার সাহিত্য পাতার সম্পাদক ছিলেন।

কলকাতায় তিনি তকবীর (১৯৩৭), বুলবুল (১৯৩৭-৩৮) ও সওগাত (১৯৩৯-৪৩) পত্রিকায় কাজ করেন। দেশভাগের পর ঢাকায় এসে তিনি আজাদ, মোহাম্মদী, কৃষক, ইত্তেহাদ প্রভৃতি পত্রিকায় কাজ করেন। দৈনিক পাকিস্তানেও কাজ করেন। তবে তার সবচেয়ে বড় কীর্তি সদ্য স্বাধীন পশ্চিম পাকিস্থানের একটি দৈনিক পত্রিকা দৈনিক বাংলার সাহিত্যপাতাকে অন্য একটা পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া। পরবর্তীতে বাংলা কবিতার অনেক প্রধান কবির বেড়ে ওঠা এই পত্রিকার হাত ধরে।

আল মাহমুদ, শামসুর রাহমান, নির্মলেন্দু গুনসহ পরবর্তী অনেক কবির কবিতা এই পত্রিকায় ছাপা হত। এই পত্রিকাকে কেন্দ্র করেই পশ্চিমবঙ্গের বাইরে সাহিত্যের আলাদা একটা কণ্ঠস্বার তৈরি হয়েছিল। বাংলার মাটিজল থেকে উঠে আসা এই কবি নিজেই ঘোষণা করেছেন 'আমি কোন আগন্তুক নই'। বাংলা সাহিত্যে তার আগমন স্বত:স্বাভাবিক এক ঘটনা। প্রিয় এই কবির মৃত্যুবার্ষিকী আজ।

এই দিনে জানাই শ্রদ্ধা ও ভালবাসা। আজ তার গুরুত্বপূর্ণ কিছু কবিতা শেয়ার করছি- দোতলার ল্যান্ডিং মুখোমুখি দুজন মুখোমুখি ফ্ল্যাট একজন সিঁড়িতে, একজন দরজায় : আপনারা যাচ্ছেন বুঝি ? : চলে যাচ্ছি, মালপত্র উঠে গেছে সব । : বছর দুয়েক হল, তাই নয় ? : তারো বেশী । আপনার ডাক নাম শানু, ভালো নাম ? : শাহানা, আপনার ? : মাবু । : জানি ।

: মাহবুব হোসেন । আপনি খুব ভালো সেলাই জানেন । : কে বলেছে । আপনার তো অনার্স ফাইন্যাল, তাই নয় ? : এবার ফাইন্যাল । : ফিজিক্স-এ অনার্স ।

: কী আশ্চর্য ! আপনি কেন ছাড়লেন হঠাৎ ? : মা চান না । মানে ছেলেদের সঙ্গে বসে… : সে যাক গে, পা সেরেছে ? : কী করে জানলেন ? : এই আর কি ! সেরে গেছে ? : ও কিছুনা , প্যা সেজটা পিছলে ছিল মানে… : সত্যি নয় । উচুঁ থেকে পড়ে গিয়ে… : ধ্যাৎ । খাবার টেবিলে রোজ মাকে অতো জ্বালানো কি ভালো ? : মা বলেছে ? : শুনতে পাই । বছর দুয়েক হল, তাই নয় ? : তারো বেশী ।

আপনার টবের গাছে ফুল এসেছে ? : নেবেন ? না থাক । রিকসা এল, মা এলেন , যাই । : আপনি সন্ধ্যে বেলা ওভাবে কখনও পড়বেন না, চোখ যাবে, যাই । : হলুদ শার্টের মাঝখানে বোতাম নেই, লাগিয়ে নেবেন, যাই । : যান, আপনার মা আসছেন ।

মা ডাকছেন, যাই । অসুখ আমি বড় অসুখী। আমার আজন্ম অসুখ। না না অসুখে আমার জন্ম। এই সব মোহন বাক্যের জাল ফেলে পৃথিবীর বালক-স্বভাব কিছু বয়স্ক চতুর জেলে মানব-সাগরে।

সম্প্রতি উদ্দাম হাতে নৌকো বায়। আমরা বিমূঢ়। কয়েকটি যুবক এই অসুখ-অসুখ দর্শনের মিহি তারে গেঁথে নিয়ে কয়েকটি যুবতী হঠাৎ শৈশবে গেলো ফিরে এবং উন্মুক্ত মাঠে সভ্যতার কৃত্রিম ঢাকনায় দুঃসাহস-আগুন জ্বালিয়ে তারস্বরে কেবল চিৎকার করে : আমরা বড় অস্থির। কী চাই, আমাদের কী চাই, কী চাই! ওরা বলে : সন্ত্রাসতাড়িত আমরা সন্ত্রাসিত পৃথিবীতে তাই আমরা কেবল ছুটি। বলে আর ঊর্ধ্বশ্বাসে ছোটে।

কোথায় ছুটেছে যদি জানতে চাও ওরা অনায়াসে জবাবে জানায়, নেই ঠিকানা, অথবা কোনো ঠিকানার বাসনাও নেই। নৈরাশ্যের হাওয়া থেকে ক্রোধের আগুন জ্বেলে নিয়ে ওরা বলে : পুড়ুক পুড়ুক দু’পাশের শ্যামশোভা, পুরনো ঘরের পুরনো সম্ভার সব পোড়াবো এবং শূন্যতাকে একমাত্র সত্য বলে রেখে যাবো দুয়ারে সবার। আর এই উন্মাদ উৎসবে যদি হঠাৎ কখনো ব্যথিত প্রবীণ কোনও পথচারী প্রশ্ন করে : শূন্যতার বোঝা কে বয় এমন করে, কোন অর্থে, কী লাভ, কী লাভ! ওরা বলে : অর্থ নেই। অর্থ নেই এ জীবনে এই শুধু সার জেনেছি। জেনেছি কোনো লাভ নেই অর্থের সন্ধানে।

লাভ নেই লাভের আশায় কালক্ষেপে অথবা শূন্যের কড়ি গুণে গুণে লাভ নেই অলিক ছায়ায়। তার চেয়ে উদ্দাম জোয়ারে ভেসে যাবো। এবং যেহেতু ভেসে ভেসে ডুবে যাওয়া একমাত্র সত্য পৃথিবীতে সত্যের সজ্জিত বৃদ্ধ গাধাটাকে ডুবিয়ে আমরাও কিছুকাল মত্ত হাতে নৌকা বেয়ে জোয়ারের জলে ভেসে যাবো। এবং একদা ডুবে যাবো। কান্না প্রেম নেই তবু প্রেমের কান্না মরেনি তুমি নেই তবু তোমাকে পাওয়ার বাসনার সোনা ঝরেনি এই সর্পিল জীবনের পথে আলগোছে ছুঁয়ে যাওয়া তুমি যেন কোন চৈত্র রাতের দূর সমুদ্র হাওয়া! তুমি নেই তবু একটি বিপুল বিস্ময় আছে মনে- হঠাৎ কখনো পাখি ডেকে যায় বনে, হঠাৎ কখনো বাতার পাশে হেনার গন্ধ জাগে; হঠাৎ কখনো দুঃস্বহ অনুরাগে একটি ব্যকুল গান রেখে যাও সেখানে আমার গানের শ্রান্ত পাখিরা নীড় খুঁজে ফেরে যেখানে।

কোনো কোনো দিন বৈশাখী মেঘ, দোলা দিয়ে যাও তুমি, কেঁপে ওঠে ঘন অমাবশ্যায় নির্জন বনভূমি। সাড়া দাও তুমি গহন অন্ধকারে, চেনা পৃথিবীর দিগন্ত রেখা ঘুঁচে যায় বারেবারে। জাগে শুধু সেই অন্ধকারের গহনে কুঁড়ির গন্ধ অন্ধ আবেগে অনাদি কালের দহনে। তোমার পাখার সুর জেগে ওঠে রূপালি নদীর তীরে আমার পায়ের চিহ্ন তখন রাতের পাহাড় ঘিরে, ছুঁয়ে যেতে চায় তোমার আকাশ আলগোছে ভালবেসে। হঠাৎ কখনো পথ ঢেলে দাও তোমার কৃষ্ণ কেশে! যারে পেতে চাই নিজের ছায়ায় ঢাকা সে বৈশাখী মেঘ তবু রেখে যায় ঝড়ের ইশারা আকাশে।

সেই বৈশাখী মেঘের আবেগে আষাঢ়ের আঙিনাতে যদি কোনদিন বন্যা নামায় এমনি ঝড়ের রাতে- এই আশা নিয়ে প্রেমের কান্না জাগে, দিনের পৃথিবী ঘুমালে তখন স্বপ্নের দোলা লাগে। যে পায় সে পায় তুমি ভালো না বাসলেই বুঝতে পারি ভালোবাসা আছে। তুমি ভালো না বাসলেই ভালোবাসা জীবনের নাম ভালোবাসা ভালোবাসা বলে দাঁড়ালে দু’হাত পেতে ফিরিয়ে দিলেই বুঝতে পারি ভালোবাসা আছে। না না বলে ফেরালেই বুঝতে পারি ফিরে যাওয়া যায় না কখনো। না না বলে ফিরিয়ে দিলেই ঘাতক পাখির ডাক শুনতে পাই চরাচরময় সুসজ্জিত ঘরবাড়ি সখের বাগান সভামঞ্চে করতালি জয়ধ্বনি পুষ্পার্ঘ্য ইত্যাদি সব ফেলে তোমার পায়ের কাছে অস্তিত্ব লুটিয়ে দিয়ে তোমাকে না পেলে, জানি যে পায়, সে পায় কি অমূল্য ধন।

আমার সন্তান তাকে কেন দুদিনেই এমন অচেনা মনে হয় ! সন্ধ্যায় পড়ার ঘরে একা বসতে ভয় পেত। নিজেই নিজের ছায়া দেখে কেঁপে উঠত। কনিষ্ঠকে সঙ্গী পেলে তবেই নির্ভয়ে বসত সে পড়ার ঘরে। আমার সন্তান যে আমার হাতের মুঠোয় হাত রেখে তবে নিশ্চিন্তে এ-পাড়া ও-পাড়া ঘুরেছে, গেছে মেলায় এবং নানা প্রশ্নে ব্যতিব্যস্ত করেছে আমাকে আজ তাকে কেন দুদিনেই এমন অচেনা মনে হয় ! কোথায় বেরিয়ে যায় একা একা ব্যস্ত পায়ে একা একা ক্লান্ত হয়ে ফেরে, তার কোথায় কী কাজ, তার কেন ক্লান্তি? যখন বাড়িতে কেন সে দুধের সর না পেলেও এখন একবার ক্ষুব্ধ দৃষ্টি মেলে দিয়ে তাকায় না মার চোখে চোখে? যা পায় তা খায় কেন মুখ বুজে কেন সে হঠাৎ এমন উত্কর্ণ হয়ে বাইরে চোখ ফেরায়। খোকন কিছু যেন শুনতে চায়।

ঘরে নয় বাইরে কিছু শুনবে বলে কান পাতে। কখনো না খেয়ে হঠাৎ বেরিয়ে যায় কোথায়, কোথায়? কী ভাবনায় আমার খোকন দুদিনেই এমন গম্ভীর হয়ে গেল এমন বিষন্ন কেন দীর্ণবুক দুঃখী মানুষের মতো হাঁটে কেন এমন বয়স্ক কেন মনে হয় আমার খোকাকে। কেন সে আমাকে কিছুই বলে না আর আমাকে আমার পূর্বপুরুষের ছেঁড়া মাদুরে বসিয়ে রেখে অসহায় হেঁটে যায় একাকী এমন রাজদর্পে এবং তখন তার রাজবেশে আহা সারা পথ এমন উজ্জ্বল হয়ে জ্বলে ওঠে কেন। আর তার কিশোর দেহের কী আশ্চর্য মহিমা। দু চোখে প্রজ্ঞার আগুন যেন কণ্ঠস্বর যেন স্বর্গীয় সংকেতে ঋদ্ধ শব্দাবলি ছড়ায় দুপাশে।

দেখে দেখে মনে হয় কোনো নব পয়গম্বর যেন। আমার সন্তান যায় হেঁটে যায় সামনে যায় দেহ তার দীর্ঘতর হয়। আরো দীর্ঘ সন্তানের দেহ পিতার গর্বিত বুক উঁচু কাঁধ প্রশস্ত ললাট ছাড়িয়ে সে আরো দীর্ঘ দীর্ঘতর হয়ে আমার হাতের নিশ্চিত আশ্রয় ছেড়ে ছুটে যায়। আসন্ন সন্ধ্যায় অন্ধকারে ভয় পেয়ে বুকফাটা চিত্কারে পখন জানতে চাই, এই অন্ধকারে কোথায় সে যেতে চায়, বলে সামনে যাব। সামনে কী ভয়াল অন্ধকার।

বলে অন্ধকার পেরোলেই আলো। বলি তাকে ওপথে অনেক হিংস্র জন্তুর তীক্ষ্ণ নখর তোমাকে চায় উত্তরে খোকন নিচু হাত ঊর্ধ্বে তুলে ঘোরায় তলোয়ার। ওপথে নিশ্চিত মৃত্যু বলে আমি যখন আবার অসহায় শিশুর মতোই কাঁদতে থাকি তখন বয়স্ক কোনো পিতার কণ্ঠস্বরে খোকা বলে ‘মৃত্যুই জীবন’। এবং সে আরো বলে তুমি আর হাতের আড়ালে রেখো না আমার হাত ভয়ের কাফনে জড়িয়ে রেখো না আর অন্ধকার ছড়িয়ে রেখো না আমার দু চোখে পিতা তোমার চারপাশে বড় অন্ধকার তাই সামনে যাব আরো সামনে সূর্যোদয়ে যাব। ইতিহাস আয়োজিত সাজানো মেলায় আলোয় দাঁড়াবো বলে যখন খোকন যায় আরো দূরে যতদূরে আমার দুর্বল দৃষ্টি চলে না, তখন কেঁদে বলি, তুই চলে গেলে অন্ধকার অপমান নিঃসঙ্গতা এইসব রেখে তুই চলে গেলে খোকা আমার কী থাকে বল যখন কান্নায় ভেঙ্গে পড়ি হঠাৎ তখন সন্তানের সেই দৃষ্টি ফেরায় আমার চোখে, বলে ‘পিতার গৌরব আমি কোন আগন্তুক নই আসমানের তারা সাক্ষী সাক্ষী এই জমিনের ফুল, এই নিশিরাইত বাঁশবাগান বিস্তর জোনাকি সাক্ষী সাক্ষী এই জারুল জামরুর , সাক্ষী পুবের পুকুর, তার ঝাকড়া ডুমুরের ডালে স্থিরদৃষ্টি মাছরাঙা আমাকে চেনে আমি কোন অভ্যাগত নই খোদার কসম আমি ভিনদেশী পথিক নই আমি কোন আগন্তুক নই।

আমি কোন আগন্তুক নই, আমি ছিলাম এখানে, আমি স্বাপ্নিক নিয়মে এখানেই থাকি আর এখানে থাকার নাম সর্বত্রই থাকা- সারা দেশে। আমি কোন আগন্তুক নই। এই খর রৌদ্র জলজ বাতাস মেঘ কান্ত বিকেলের পাখিরা আমাকে চেনে তারা জানে আমি কোন অনাত্মীয় নই। কার্তিকের ধানের মঞ্জরী সাক্ষী সাক্ষী তার চিরোল পাতার টলমল শিশির, সাক্ষী জোৎস্নার চাদরে ঢাকা নিশিন্দার ছায়া অকাল বার্ধক্যে নত কদম আলী তার কান্ত চোখের আঁধার আমি চিনি, আমি তার চিরচেনা স্বজন একজন। আমি জামিলার মা'র শূন্য খা খা রান্নাঘর শুকনো থালা সব চিনি সে আমাকে চেনে।

হাত রাখো বৈঠায় লাঙলে, দেখো আমার হাতের স্পর্শ লেগে আছে কেমন গভীর। দেখো মাটিতে আমার গন্ধ, আমার শরীরে লেগে আছে এই স্নিগ্ধ মাটির সুবাস। আমাকে বিশ্বাস করো, আমি কোন আগন্তুক নই। দু'পাশে ধানের তে সরু পথ সামনে ধু ধু নদীর কিনার আমার অস্তিত্বে গাথা। আমি এই উধাও নদীর মুগ্ধ এক অবোধ বালক।

প্রিয়তমাসু তোমার দু হাতে ফুল তুলে দেব এই ছিল সাধ হাতে নিয়ে হাত আংটি পরাব এই ছিল সাধ তুমি শুধু বল, ফুল নয়, চাই ভাত দাও ভাত। আংটিও নয়, ভাতে ভরে দাও আমার দু হাত। সাগরের তীরে বসব দুজন এই ছিল সাধ মনে ছিল সাধ তোমাকে দেখাব আকাশের চাঁদ, তুমি শুধু বল, সাগর চাই না। আকাশের চাঁদ কী হবে আমার, একটি পাতার ঘর তুলে দাও, রাতে ঘুমাবার। মনে ছিল সাধ গজমতি হার পরিয়ে তোমায় ঘরে নিয়ে যাব তুমি বলো, দাও ছেঁড়া কাঁথা ছুঁড়ে লজ্জা বাঁচাব।

মনে সাধ ছিল ময়ূরপঙ্খী নায়ে তুলে নিয়ে সাগরে ভাসব, তুমি দুটি হাত সামনে এগিয়ে বললে, আমার খেয়া পারাবার কড়ি হাতে নাই সারাদিন এই পারাপার আছে কিছু কড়ি চাই। তোমাকে আমার রানী করে নেব এই সাধ ছিল তোমাকে আমার ঘরণী বানাব এই সাধ ছিল মনে সাধ ছিল সঙ্গিনী হবে সখের মেলায় তুমি মেতে গেলে কালো অঞ্চলে ভাত কুড়োবার মরণ খেলায়। ডুবে যাচ্ছি কি আশ্চর্য দীপাবলী জ্বেলেছো চারদিকে। বাহুমূলে চিবুকে গ্রীবায় এমনকি ভ্রমরকৃষ্ণ খোঁপায় রেখেছো জ্বেলে আলোর উৎসব দু'চোখ নামালে দেখি বুকের দুপাশে জ্বলে উজ্জ্বল আলোকস্তম্ভ পথ নেমে যায় অমরাবতীর পথে আশা ছিলো যাবো। যাবো তাই সমস্ত সংসার চরাচর তুচ্ছ করে এগোলেই দেখি সব আলো নিভিয়ে কৌতুকে তুমি, বসে আছো অন্ধকার হয়ে।

আমি সেই মৃত্যুর অধিক অন্ধকারে ডুবে যাই ডুবে যাচ্ছি দেখো ডুবে যাচ্ছি দেখো। একবার বলেছি তোমাকে একবার বলেছি, তোমাকে আমি ভালোবাসি। একবার বলেছি, তোমাকে আমি, তোমাকেই ভালোবাসি। বল এখন সে কথা আমি ফেরাব কেমনে ! আমি একবার বলেছি তোমাকে ... এখন তোমাকে আমি ঘৃণা করি। এখন তোমার দৃষ্টির কবলে এলে ক্ষতস্থান জ্বলে জ্বলে ওঠে।

তোমার সান্নিধ্যে এলে তুমি উষ্ণ নাভিমূল থেকে বাতাসে ছড়াও তীব্র সাপিনীর তরল নিঃস্বাস। আমি যতবার ছুটতে চাই, তোমার দৃষ্টির বাইরে যেতে চাই, তুমি দু চোখে কী ইন্দ্রজাল মেলে রাখ ! আমি ছুটতেও পারি না আমি ফেরাতে পারি না কথা আমি একবার বলেছি, তোমাকে ... সম্রাজ্ঞীর বেশে আছ। নতজানু আমি দাসানুদাসের ভঙ্গি করপুটে, দেখি তোমার মুখের রেখা অবিচল, স্থির জঙ্ঘা তোলে না টঙ্কার, তুমি পবিত্রতা পবিত্রতা বলে অস্পষ্ট চিত্কার কর, তুমি কেবলি মালিন্য দেখ, অশ্লীলতা, ক্রমান্বয়ে ঘৃণা ক্রোধ বাড়ে, উত্তেজনা বাড়ে নামে উষ্ণ জলস্রোত। তুমি এইভাবে প্রবল ঘৃণায় আমাকে ভাসিয়ে দিয়ে অহঙ্কার রাখতে চাও অটুট। তবুও পৃথিবীতে আছে কিছু মানুষের অবস্থান, তারা অপমানে ধন্য হয় উপেক্ষায় ঋজু; তারা স্বভাব-কাঙাল ! যদি একবার বলে তবে ফেরাতে পারে না।

আমি ফেরাতে পারি না। আমি একবার বলেছি, তোমাকে আমি ভালোবাসি। ভালোবাসা ভালোবাসা ভালোবাসা ভালোবাসা ! সে কেমন, কোন দীপ্র স্বর্গীয় প্রতাপ যার মৃত্যু নেই জন্মান্তর নেই? একবার বলেছি তোমাকে কবিতাটির আবৃত্তি শেয়ার করছি। আবৃত্তি করেছেন প্রখ্যাত আবৃত্তিকার মেহেদী হাসান - একবার বলেছি তোমাকে ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।