জুনের শেষে বউ-বাচ্চাদের নিয়ে বেড়াতে গিয়েছি কক্সবাজার। তখন প্রচন্ড বৃষ্টি আর ঝড় চলছে। অফসিজনে কক্সবাজারের অন্যরকম মজা হলেও তখনকার টানা বৃষ্টি ভোগালোও বেশ। লাবনী বিচ দিয়ে ঝিনুক মার্কেটে সন্ধ্যার পর এসে আটকে রইলাম দীর্ঘ সময়। ইচ্ছা ছিলো সি-ক্রাউন হোটেলের রেস্টুরেন্টে গিয়ে খাবো।
এর আগে অনেকবার ওখানে খেয়েছি আর ওখানকার খাওয়াটা মনে আছে খুব। বৃষ্টির তীব্রতা তা হতে দিলোনা। মার্কেটের সাথেই ‘হান্ডি’ নামের ঝলমলে এক রেস্টুরেন্ট দেখা যাচ্ছিলো। আপাতত ওখানেই খাব বলে সিদ্ধান্ত নিয়ে ঢুকে পড়লাম। চমৎকার রেস্টুরেন্ট।
ইন্টেরিয়র ডেকোরেশন খুবই সুন্দর। আমরা দুজনেই আলোচনা করছিলাম এসে ঠিক হলো কিনা, খাবারের দাম যদি লাগাম ছাড়া হয়?
মেনু আসার পর দেখা গেলো দাম খুব বেশী নয়, বরং অন্য যায়গার তুলনায় কমই বলা চলে। আমরা দুটি হায়াদ্রাবাদী বিরিয়ানীর অর্ডার দিলাম। এই জিনিসের নাম অনেক শুনেছি, ভালো-খারাপ দুইই কমেন্ট পেয়েছি, তবে নিজে খাইনি। দেখা যাক এবার।
প্রতি হাফ প্লেট ১৮০ টাকা। কক্সবাজারের অন্যান্য যায়গার সাথে তুলনায় বেশী নয়।
এলো বিরানী। প্লেট আলাদা আর দুটি ছোট ছোট ডিশে দুই হাফ বিরানী আলাদা। দেখতে হালকা ঝোল দিয়ে মাখানো পোলাওয়ের মতো।
ভালো লাগলো। খাওয়া শুরু করলাম। হুমমমম……… অসাধারণ। সুগন্ধী পোলাওয়ের সাথে খাশীর দুটি টুকরো, সাথে প্রচুর কাজু বাদাম দেয়া, সাথে আরো কিছু নাম না জানা এক্সেসরিজ। আরো আছে কিশমিশ আর দু-এক টুকরো পাতলা করে কাটা রান্না টমেটো।
এক কথায় দারুন স্বাদ। দুটি নিয়েও আমরা সবাই পেট পুরে খেলাম। দুই বছর বয়সী ছোট ছেলেটা একটা হাড্ডি নিয়ে তার শেষ দেখতে লাগলো। বিরানীর পর্ব শেষে এবার বসলাম ডেজার্টের মেন্যু নিয়ে। কাস্টার্ড ৫০ টাকা, ফিরনি ৪০ টাকা, মিষ্টি দই ৫০ টাকা, জুস ৮০-১০০ টাকা ইত্যাদি।
আমার কাস্টার্ড খেতে ইচ্ছা করলেও তা নেই, শেষ। আমি নিলাম দই আর মা-৫ বছর বয়সী বড় ছেলে নিলো ফিরনি। । প্রচলিত প্লাস্টিকের কাপে নয়, দই-ফিরনি এলো চমৎকার কাঁচের বাটিতে। দইয়ের টেস্ট অদ্ভুত ও কিছুটা ডিফারেন্ট।
মুখে দিলে স্মুথ ফিলিংস না হয়ে কিছুটা বালু-বালু ধরণের ফিলিংস হয়। অর্ধেক খেয়ে আমরা দই আর ফিরনি এক্সচেঞ্জ করলাম। হায় হায়, এ কি অসাধারণ ফিরনি। ফখরুদ্দিন আর স্টার ফেল। আফসোস হচ্ছিলো কেনো দইটা নিলাম।
ছোট পোলা তখনও হাড্ডি নিয়ে আছে। অনেকটা জোর করেই হাড্ডি সরিয়ে নিলাম। এবার উঠার পালা, রাত তখন এগারোটা বেজে গেছে।
পরদিন লাঞ্চের জন্য বের হবো। খাব কোথায়? আবার সেই হান্ডিতে, কোন কথা নাই।
ব্যাটারী চালিত টুকটুকি নিয়ে চলে এলাম হান্ডি রেস্তোরাঁয়। আজ ভাতের অর্ডার দিলাম। সাথে আমি নিলাম গরুর কালো ভুনা আর বউ নিলো চিকেন ঝাল ফ্রাই। সাথে সুরী শুটকি ভর্তা, ডিম ভর্তা আর ডাল। প্রথমেই চিকেন এলো, গরু তখনও রেডি হয়নি।
ওদের সাথে আমিও ঝাল ফ্রাই খেলাম। টেস্ট দারুন। ভর্তার স্বাদও ভুলার মতো নয়। গরুর কালো ভুনা এলো কিছুক্ষণ পর। দেখতে প্রচলিত কালো ভুনার চেয়ে আলাদা।
অন্যগুলো একটু ভিজা ভিজা হলেও এটা শুকনা-শুকনা। আমার আবার ঝোল-ঝোলটাই পছন্দ তাই একটু দমে গেলাম। খেতে শুরু করার পর অবাক হলাম। এর ভেতরে এক রকম স্বাদ আর বাইরে আরেক রকম। স্বীকার করে নিলাম- এমন টেস্টি কালো ভুনা আমি আর খাইনি।
সাথে ডালটা আরো জমিয়ে দিলো। ঠিক যেনো পর্যটনের মোটেলের সরকারী বাবুর্চির রান্না করা ঘন ডাল। ভাত যা অর্ডার করলাম খেলাম তার চেয়ে ডাবল। । ছোটটা হোটেল থেকে আসার পথে সেই যে ঘুমিয়েছে, পুরো খাবার সময়টা ঘুম।
আমিও আর জাগাইনি। খাবার শেষ হলো। মনে ছিলো কাস্টার্ডের কথা। কাস্টার্ড না থাকলেও ওয়েটার আধ ঘন্টা সময় দিলে তা বানিয়ে নিয়ে আসতে পারবে বলে জানালো। বাইরে ঝুম বৃষ্টি।
আমরা সানন্দে আধঘন্টার অনুমতি দিলাম।
কাস্টার্ড এলো। দেখতে দারুন। তবে খেতে দেখাটার মতো দারুন নয়। একটু মিষ্টি কম বলে ডায়াগনোসিস করে ফেললাম আমি।
স্ত্রীও তাতে সম্মত। আফসোস হচ্ছিলো ফিরনিটা কেনো নিলাম না।
খাবার শেষে খবর নিয়ে জানলাম ‘হান্ডি’র মেইন ব্রাঞ্চ চিটাগাং-এ। বাংলা, ইন্ডিয়ান, চাইনিজ, থাই সব ধরণের খাবারই আছে ওদের। সাথে টেস্টি সব ডেজার্ট।
আমরা অফ সিজনে প্রচন্ড বৃষ্টির ভেতর গিয়েছি, তবে হান্ডি ছিলো মোটামুটি প্যাকড।
হান্ডিতে অসাধারণ এক ফুড জার্নি শেষ করলাম এবারের কক্সবাজার ট্যুরে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।