খুব জানতে ইচ্ছে করে...তুমি কি সেই আগের মতনই আছো নাকি অনেকখানি বদলে গেছো... তিলোত্তমা পদ্মা !
হাসান কামরুল
পদ্মা এদেশের মানুষের কল্যানে বয়ে যাওয়া এক বৃহত্তম নদীর নাম। পদ্মার ইলিশ মানেই জিহ্বে জল আসার ব্যাপার। পদ্মার ইলিশ এখন কুটনৈতিক কূটচালে ব্যবহৃত হ”্ছ। ে বাংলা ভাষাভাষি দুনিয়ার সব মানুষের নিকট পদ্মার ইলিশের কদর অন্যরকম ।
দক্ষিন বঙ্গের ৩ কোটি মানুষের ভরসা ¯হলও এই পদ্মা ।
এ নদীর বুক বিদীর্ণ করে যান, মাল ও মানুষ পারাপারে ঘুরে বেড়ায় ফেরি নামক জলযান। রাজধানীর সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগে ফেরিই হচ্ছে মানুষের ভরসা ¯হল। যদিও প্যাসেঞ্জার লঞ্চও রয়েছে। তবুও ফেরি নির্ভরশীলতা সর্বাধিক। ফেরি দিয়ে নদী এপার ওপার হতে ৪ বা ৫ ঘন্টা সময়ের ব্যাপার ।
পদ্মা নিয়ে আলোচনা সমালোচনার টর্নেডো বয়ে যাচ্ছে দেশের উপর দিয়ে। কারন বিশ্ব ব্যাংক পদ্ম সেতু নির্মানে ঋন দেবেনা বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে।
আমার আলোচনার বিষয়বস্তু বা দৃষ্টিভঙ্গি একটু ভিন্ন দিকে। যে জায়গাটায় পদ্মা সেতু করার জন্য সাইট সিলেকশন করা হয়েছে ও ভবিতব্য পদ¥া সেতুর স্বপ্নে বিভোর জাতি। সেই নদীর ড্রাফট আসলে কতো।
নদীর নাব্যতা বা ড্রাফট বিবেচনায় নিলে ভবিতব্য পদ্মা ব্রীজের নিচে একটা হাইওয়ে রাস্তার ডিজাইন মুল ম্যাপে রাখা উচিত।
পদ্মা সেতুর প্রয়োজন অনস্বীকার্য। কারন একটা সেতু একটা অঞ্চলের অর্থনীতির মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে। যেমন যমুনা সেতু দিয়েছে। আগের দিনে বাড়ি কোথায় জিঙ্ঘাসা করলে উত্তর বঙ্গের লোকজন তাদের পরিচয় দিতে দ্বিধাবোধ করতো ।
এর কারন যোগাযোগ ব্যব¯হার অনুন্নয়ন। তখনকার দিনে উত্তর বঙ্গ মানে একদিনের পাড়ি। কিন্তু এখন উত্তর বঙ্গ থেকে সকালে সব্জি এনে কাওরানবাজারে বিক্রি করে বিকেলে বাড়ি চলে যাওয়া যাচ্ছে। উত্তরবঙ্গে এখন গ্যাস সঞ্চালন লাইন বসানো হয়েছে। অবকাঠামোর উন্নয়নও চোখে পড়ার মতো।
এর পিছনের কারন হচ্ছে যমুনা সেতু। পদ্মা সেতু হোক। দক্ষিন বঙ্গের মানুষ সকালে রওনা দিয়ে অফিস করে বিকেলে বাড়ি ফিরে যাক এটা আমাদেরও প্রত্যাশা বটে।
সেতুর পূর্বে নদীর তলদেশের অব¯হা বিবেচনায় নেয়া প্রয়োজন। প্রথমে নদীতে পানি থাকা দরকার।
তাও আবার অল্প সল্প হলে চলবেনা। কমপক্ষে লাইটার ভেসেল বা ছোট জাহাজ মানে ২ হাজার থেকে ৫ হাজার টনের জাহাজ চলাচলের উপযোগীতা থাকতে হবে। নদীতে যদি পর্যাপ্ত ড্রাফট না থাকে তাহলে সেডিমেন্টেশনে নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাবে। কারন ব্রীজের একেকটা স্পানে বাধা পেয়ে বালিকারাশির চলার পথ সংক্ষিপ্ত হয়ে উঠবে। বালুকনা স্পানে আটকে ব্রীজের আশে পাশে ডিপোজিট হবে।
ফলে বছর দশেক বা বিশ ত্রিশ বছর পর দেখা যাবে ব্রীজের নীচে বা আশপাশ এলাকায় বিশালাকৃতির চর জমে গেছে। যেমনটা যমুনা ব্রীজ থেকে দক্ষিনে তাকালে দেখা যায়। কারন একেকটা ব্রীজের আয়ুস্কাল ধরা হয় একশ বছর। অর্থাৎ ব্রীজটাকে জনকল্যানে ১০০ বছর ব্যবহৃত হতে হবে। এর কম হলে রাষ্ট্রের ক্ষতি হয়ে যাবে।
বিআইডাব্লিউটিএ‘র হিসেব অনুয়ায়ী প্রস্তাবিত পদ¥া ব্রীজের উপরে ১০ কিমি ও নীচের দিকে ১০ কিমি এলাকায় নদীর গড় ড্রাফট ৩ দশমিক ৩৬ মিটার। অর্থাৎ ১০ বা ১১ ফুটের বেশি ড্রাফট এ অঞ্চলে নেই। তাহলে ১০ ফুট গভীর একটা নদীতে পদ্মা ব্রীজ হতে যাচ্ছে।
এছাড়াও পদ্মা নদীতে রয়েছে অসংখ্য চর। প্রতি বছরই বর্ষার পর নতুন নতুন চর পড়ে তিলোত্তমা পদ্মার বাকে।
সে চরগুলো সরানো প্রয়োজন। নদীর গতি স্বাভাবিক না হলে নদী মরে যাবে। আর মরা নদীতে ১০০ বছরের পরিকল্পনায় ৬ কিমি দীর্ঘ সেতু নির্মান হয়তো ভবিষ্যতে অপ্রয়োজনীয়ও হয়ে যেতে পারে।
বাংলাদেশের সৌন্দর্য্য কিন্তু নদী দিয়ে। নদী মাতৃক দেশ বলেই এ অঞ্চলের মানুষদের মন উদার ও বিশাল।
কিন্তু দু:খজনক হলেও সত্য, আমাদের গর্ব করার জায়গাগুলো ক্রমাগত সংকোচিত হচ্ছে। নদী মাতৃক দেশে নদী বাচিয়ে রাখার কোন উদ্যোগ নেই। বৃহৎ বৃহৎ নদীগুলো শুকিয়ে মরা খালে পরিণত হচ্ছে। পদ্মা, মেঘনা , যমুনা শুকিয়ে যাওয়া নদীর নমুনা।
অতি প্রয়োজনীয় নদীগুলোর খনন অত্যাবশ্যক।
নদী শাসন বন্ধ করতে হবে। নদীর তীরজুড়ে গড়ে উঠা সকল প্রকার স্ট্রাকচার নির্মান বন্ধ করতে হবে। সেতুর প্রয়োজন। তারও আগে প্রয়োজন নদী খনন। নদী খনন না করে সেতু নির্মান কতোটা ফলপ্রসু হবে তা ভবিষ্যতেই জানা যাবে।
তাই ভবিষ্যত পদ্মা সেতুর নিচ দিয়ে যেন ৫০ বছর পর রাস্তা নির্মানের প্রয়োজন না পড়ে। সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
স্বপ্নের পদ্মা সেতুর বাস্তবায়ন হোক। কেটে যাক সকল প্রকার অনিশ্চয়তা। তিলোত্তমা পদ্মা ফিরে পাক তার হারানো জৌলুস।
এমন প্রত্যাশাই দক্ষিন বঙ্গের ভুক্তভোগি লক্ষ কোটি জনতার।
হাসান কামরুল : ভূতত্ত্ববিদ ও কলাম লেখক।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।