আমার যা ভালো লাগে আমি তাই লিখি। কে কি ভাবলো তা নিয়ে কোন মাথা ব্যাথা নাই । কলিং বেল টিপ দিয়েছে অনেকক্ষন হয়েছে, আরো একবার দিবে কিনা তা নিয়ে চিন্তার শেষ পর্যায়ে দ্বিতীয় বার বেল চাপ দিতেই দরজা খুলে দিল 'তিলোত্তমা' । শুভর সামনে এখন যে মেয়েটি দাঁড়িয়ে আছে এই কি সেই 'তিলোত্তমা'? মাত্র ৫ বছরে এত পরিবর্তন কি করে হতে পারে ? চোখে চশমা,চামড়া গুলি কেমন জানি কুঁচকে গেছে ,পরনে কালো রঙ্গের শাড়ী দেখলেই মনে হবে ৩৫ উর্ধ একজন গৃহিণী । কিন্তু কতইবা আর বয়স হবে তিলোত্তমার ? ২৫ কি ২৬ !
'কিরে তুই কি বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকবি ?' তিলোত্তমার কথায় যেন ঘুম ভাঙ্গল শুভর ।
'আয় ভিতরে আয় , কি দেখছিস অমন করে ? সেই তখন থেকে হাবলার মত মুখের দিকে তাকিয়ে আছিস কেন?',বলল তিলোত্তমা ।
শুভ মুচকি হেসে উওর দিল, তুই দেখি হেব্বি রূপবতী হয়ে গেছিস ।
হও তা একটু হইছি বটে,মেয়ে বড় হলে তার সাথে মিল রাখার জন্য মায়েরেও বয়সটা ও কমিয়ে আনতে হয় ।
শুভ চোখ বড় বড় করে বলল ,মানে কি ? তোর মেয়ে হইল কবে?
কথা শেষ করা মাত্র উযরা রুম থেকে দরজার সামনে এসে শুভর দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে বলল "এই তুমি কে ?"
-তিলোত্তমা উওর দিল ,এইটা তুমার একটা মামা।
কেমন মামা, আম্মু?
-উযরা তুমি বেশি কথা বল ।
মামা হল মামা তার আবার ধরন কি ?
আম্মু নিচের দোকানের মামা যেমন এই মামাটাও কি তেমন ?
-উযরা তুমি খুব পেকেছ,শুধু প্রশ্ন আর প্রশ্ন ।
মা-মেয়ের কথা শুনে ফিক ফিক করে হেসে উঠল শুভ, হাটু গেরে উযরার সামনে বসে বলল
"ঐ তোর বয়স কত রে?"
-আমার বয়স ৪ বছর ।
আরে বাবা, তুই দেখি অনেক বড় হয়ে গেছিস ।
-হুম ।
তিলোত্তমা ওদের কে ড্রয়িং রুমে পাঠিয়ে রান্না ঘরে চলে গেল ।
ভাবতেই জানি কেমন লাগছে এত দিন পর শুভ এল তার বাসায় । এই দিন গুলিতে অনেক পাল্টে গেছে ছেলেটা । বড় বড় চুল গুলি সব ছোট করে কাটা ,মোটা ফ্রেমের চশমার বদলে ফ্রেমলেস চশমা , যে ছেলে কিনা বাচ্চা দেখলেই না সিটকাতো সে আজ উযরার সাথে কি রকম গা ঘেঁষা ঘেঁষি করে দুষ্টামি করছে ।
ঐ শুভ তোর চায়ের চিনি কয় চামচ ?, চিৎকার করে বলল তিলোত্তমা ।
২ চামচ ।
তিলোত্তমা ডায়েনিং টেবিলে চা দিয়ে শুভকে ডাক দিল "ঐ এই রুমে চলে আয় ,গল্প করতে করতে চা খাওয়া যাবে" ।
চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে তিলোত্তমা প্রশ্ন করল , দুপুরে কি খাবি ?
-ইলিশ ভাজা, সাদা ভাত সাথে আলু ভাজি । বাসায় ইলিশ আছে তো ? নাকি আমি নিয়ে আসব ?
তুই আমার বাসায় আসবি আর ইলিশ থাকবে না তা কি হতে পারে? তুই বস আমি রান্নাটা চাপিয়ে আসি ।
রান্না ঘর থেকে তিলোত্তমা শুভর দিকে তাকিয়ে দেখছে আর ভাবছে , "কি দ্রুত উযরার সাথে ভাব জমিয়ে ফেলেছে শুভ । সেই ক্লাস টেনের কোচিং ক্লাস দেখে আসছি,যার সাথে একবার সে মন খুলে গল্প করেছে সেই মরেছে ।
কি যেন একটা আছে তার মাঝে ,একটা মায়া ,একটা অদ্ভুদ আকর্ষন। "
উযরা মেয়েটা ৪ বছর বয়েসেও নাড়ি নক্ষত্র সব বুঝে গেছে । প্রশ্নের পরে প্রশ্ন করে যাচ্ছে শুভকে।
ইলিশ ভাজার গন্ধ নাকে লাগতেই শুভ রান্না ঘরের দিকে উঁকি দিল । তিলোত্তমা শাড়ীর আঁচল টা কোমরে গুজে ব্যাস্তভঙ্গিতে ইলিশ মাছ ভাজছে, রান্না ঘরের দরজার সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে শুভ।
পলকহীন চোখে তাকিয়ে আছে ওর দিকে।
তিলুর সামনের চুলগুলো চোখের উপর উড়ে উড়ে খুব ডিসটার্ব করছে ও কে। শুভর খুব ইচ্ছে করছে, আলতো করে চুলগুলো কানের পিছনে সরিয়ে দিতে। কিন্তু সেই অধিকার কি তার আছে?
হঠাৎ কি মনে হতে, মেয়েটা ফিরে চাইলো পিছন দিকে । শুভর দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে দিল ও।
বলল, ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে না থেকে একটু সরিয়ে দে না চুলগুলো দেখছিস না আমার হাত বন্ধ?
শুভ মৃদু একটু হেসে এগিয়ে যায়। আপন মনেই ভাবে, "একটুও চেন্জ হয় নাই মেয়েটা। কাছে যেতেই ওর গায়ের সেই পুরোনো এসে গন্ধ নাকে লাগে আর মেরুদণ্ড দিয়ে বয়ে যায় এক শিতল ধারা । এখনো এই গন্ধে নিজেকে উদভ্রান্তের মত লাগে"
২। কোচিং এর আর ৮/১০ মেয়ের চেয়ে তিলোত্তমা ছিল একটু অন্যরকম ।
চটপটে আর দারুন আড্ডাবাজ। শুভ বয়সে তিলোত্তমার এক বছরের ছোট হলেও কিছু দিনের ভিতরে দুজনের মাঝে ভালো একটা সম্পর্ক গড়ে উঠে।
কিন্তু দুজনের সম্পর্কের কিছু দিনে অতিবাহিত হওয়ার পরেই শুভ তার বাবার হাত ধরে চলে যায় আমেরিকায় । সেখানে যাওয়ার পর থেকে মাঝে মাঝেই তিলোত্তমার সাথে তার কথা হত । কিন্তু হঠাত করে একদিন শুভ তিলোত্তমার ফোনে লাইন পেল না , চিঠি দিল উওর আসল না ।
অথচ কি গভীরই না ছিল সেই ভালোবাসার মধুর সম্পর্ক । আসলেই কি ভালোবাসা ছিল সেইটা? নাকি কিছু সস্তা প্রেমের অভিলাষী মৌহ ?
আজ এতটা বছর পড়ে শুধু মাত্র তিলোত্তমার জন্যে শুভর ছুটে আসা কিন্তু কি পেল সে ? কিছুই না সব কিছুই এক মরীচিকা ।
৩। চিঠিটা শুভর টেবিলের উপর রাখা আছে। কাল রাতে হোটেলের বেলবয় এসে দিয়ে গেছে।
ও জানে, এইটা তিলোত্তোমার চিঠি। ও ছাড়া আর কে চিঠি দিবে শুভকে? কিন্তু শুভ ছুয়ে ও দেখেনি ঐ চিঠি টা । সে ভুলে যেতে চায় তিলু কে। নিস্পাপ অভিমানে ভিজে যায় ওর চোখ। কেনো মনে রাখবে ওকে? ও তো শুভকে ছাড়া বেশ ভালো আছে।
তাহলে শুভ কেনো ওর জন্য কষ্ট পাবে?
আজি এই দেশ ছেড়ে চলে যাবে ,শুভ। ২টায় ফ্লাইট। এসেছিল শুধুমাত্র তিলোত্তমা কে দেখার জন্য। এখন মনে হচ্ছে, না এলেই ভালো করতো। ব্যাগপ্যাক গুছিয়ে বের হয়ে গেলো।
কি মনে করে যেন চিঠিটাও নিয়ে নিলো।
গাড়িটা জ্যামে আটকে আছে। বারবার চিঠিটার দিকে হাত চলে যাচ্ছে। যত চেষ্টাই করুক, ওকি পারবে তিলোত্তমা কে ভুলতে থাকতে?মনের কাছে হার মানতে হল শুভকে, খুলেই ফেলল চিঠি খানি। সম্মোধনহীন চিঠিটা
"আমি জানি, তুই আমাকে এখনো ভালবাসিস।
আমি কি করবো বল? ৫ বছর আগে ডক্টর যখন বলল, আমি আম্মুর রোগটা বয়ে বেড়াচ্ছি,যার কোন প্রতিষেধক নেই। SLE{Systemic lupus erythematosus} যে রোগটা আমাকে মা হতে দেবে না। তাই চিন্তা করলাম, বিয়ে করব না। উযরা আমার মেয়ে না, ওকে আমি এডাপ্ট করেছি।
আমি এখন অপারেশন থিয়েটারে আছি ।
ডক্টর এর কাছ থেকে তোকে চিঠি লিখার জন্য এই সময়টুকু চেয়ে নিয়েছি। তোকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে জানিস? ডক্টর বলেছেন, অপারেশন সাকসেসফুল হলে আরো বেশ কিছুদিন বাঁচবো। যদি বেঁচে ফিরি, বিয়ে করবি আমায়? বাকি জীবন টা তোর বুকে মাথা রেখে কাটিয়ে দিতাম। খুব কষ্ট হচ্ছে জানিস? পৃথিবীটা এমন কেন রে ?
আমি আর পারছি না বুকের বাম পাশটা অসম্ভব ব্যাথা করছে ! কতকিছু বলার ছিল কিন্তু তার কিছুই আর বলা হল না ।
তোর তিলু"
গাড়ি ঘুরিয়ে, উদভ্রান্তের মত তিলোত্তমার বাসার দিকে ছুটল শুভ।
একবুক আশা নিয়ে সিড়ি বেয়ে উঠে যাচ্ছে আর বারবার বলছে, আমি আসছি তিলু ,আমি আসছি! বাসার দরজা খোলা, অনেক মানুষ জটলা বেঁধে আছে ঘরের ভিতরে। ওদের মধ্যে কোথাও তিলুকে দেখতে পাচ্ছে না। হঠাত উযরা কে দেখতে পেয়ে বলল, 'ঐ তোর আম্মু কই?'
উযরা শুভকে পাশের রুমে নিয়ে আসল। যেখানে খাটিয়ায় শুইয়ে রাখা হয়েছে শুভর তিলোত্তোমা কে । ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।