দ্বৈরথ
বাংলাদেশে কয়েক বছর ধরেই বিভিন্ন নামে সুন্দরী প্রতিযোগীতা হচ্ছে। ইউনিলিভারের আয়োজনে যেটা হয় সেটাই বোধহয় সবচেয়ে আলোচিত। মিডিয়ার আর বহুজাতিক কোম্পানির ব্যবসায়ী মনোবৃত্তিকে চরিতার্থ করবার জন্য নারীকে পণ্য বানাবার সুপরিকল্পিত আলো-ঝলমলে অনুষ্ঠান সাময়িকভাবে দেশের সব সমস্যাকে ভুলিয়ে দিয়ে রঙিন এক অন্য বাংলাদেশের গল্প শোনায় বটে, তবে তাতে বিদ্যমান ক্ষয়িষ্ণু সমাজের লজ্জা ঢাকা পড়ে না। যে মেয়েটা আজ মুখে চড়া মেকআপ চড়িয়ে স্টেজে কিছু ক্যাটওয়াক, নৃত্যকলা আর আপাত-বোকা বোকা প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশগ্রহণ করে বিজয়িনী হয়, সে হয়ত খুব দ্রুত মিডিয়ার স্পটলাইটে চলে আসে, তার হাস্যোজ্জল মুখের ছবি শোভা পায় পত্রিকায়, মিডিয়ায় আর পোস্টারে, তবে দেশের সর্বত্র যে মেয়েরা রূপে নয়, মেধা দিয়ে তাদের যোগ্যতা প্রমাণ করে চলছেন সর্বদা তারা যে এতে অপমানিত হন সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। এক একটি হাস্যোজ্জল মুখের ছবি তাদের এই মেসেজই দিয়ে যায়, দেখ, আমাকে দেখ, যতই পড়াশুনা কর, প্রকৌশলী হও, চিকিৎসক হও, গবেষনা করে ফাটিয়ে ফেল চারিদিক, এই আদিম পুরুষতান্ত্রিক সমাজে তুমি কখনই আমার মত রূপ বেচা সাফল্য পাবে না।
প্রতি বছর বেশী, আরো বেশী মেয়ে দোকানে ছোটে ফেয়ার এন্ড লাভলি কিনতে, কারণ ফর্সা না হলে বৃদ্ধ পিতাকে চা খাওয়াবার জন্য বিমানবালা হওয়া যায় না, চাকরী পাওয়া যায় না। যেন মেয়েরা সব শোকেসে সাজিয়ে রাখবার পুতুল হবার জন্য জন্ম নেয়, যে যত সুন্দরী সে তত আদৃতা। আমরা একজন যোগ্য সহকর্মী চাই না কোথাও, চাই দৃষ্টিনন্দন একজন সহচরী আশপাশে।
কোন এক বিচিত্র কারণে ছেলে-মেয়ে আলাদা করে দেখবার অভ্যাস তৈরী হয় নি তেমন। তাই আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু একজন মেয়ে, জীবনের অনেক ঘাত-প্রতিঘাতে তার মানসিক সমর্থন আমাকে ভেঙে না পড়ার সাহস যুগিয়েছে।
বেশীরভাগ মেয়েদের চিন্তাভাবনা অনেক গোছানো মনে হয়েছে। শুধু ছেলেরাই সংসারের হাল ধরতে সক্ষম, এই মধ্যযুগীয় ধারণাকে ভেঙে অনেক মেয়েই ছেলেদের সাথে পাল্লা দিয়ে কাজ করছে। মেয়েদের শুধু দৃষ্টিনন্দন পুতুল হবার উৎসাহ না দিয়ে বরং দেশটাকে গড়তে তাদের যে অবদান সেটাকে উৎসাহ দেয়া উচিত। যখন পড়াতাম আমার কয়েকজন ছাত্রী ছিল নৌবাহিনীর অফিসার। আমার ভাবতে খুবই ভাল লাগত একদিন এই মেয়েরাই নৌবাহিনীর রিয়ার-এডমিরাল পর্যন্ত পৌঁছে যাবে।
রূপ তত জরুরী ব্যাপার নয়। সেটা থাকাটা একটা প্লাস পয়েন্ট হতে পারে, কিন্তু যখন সেটাকেই একমাত্র মানদন্ড হিসেবে দাঁড় করাবার বাণিজ্যিক প্রচেষ্টা চলে তখন মনে হয় সেটাকে অবিলম্বে থামানো উচিত।
দেবী দূর্গার দশভূজা রূপটাই আমার ভাল লাগে। রূপক আকারে মেয়েদের সর্বক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবার ব্যাপারটাকে তুলে ধরার চেষ্টা বলে মনে হয়। পুরুষ প্রধান সমাজ মেয়েদের অপ্সরী তিলোত্তমা রূপে দেখতে চাইবে এটাই স্বাভাবিক, কিন্তু এখন মনে হয় সময় হয়েছে মেয়েদের শুধু রূপের বিচার না করে, গুণগত মানে তারা কতদূর এগিয়েছে সেটা বিবেচনা করা।
মেয়েদের আর 'বার্বি ডল' না বানিয়ে বরং সব কিছুতেই তারা যেন ছেলেদের সাথে সমান যোগ্যতা নিয়ে অবদান রাখতে পারে সেটাই নিশ্চিত করা উচিত।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।