আমি বোতল ভূতের আত্মা!!
প্রায়শই আমরা কারো মধ্যে একটু গাম্ভীর্য দেখলেই বলি -তার মধ্যে ব্যক্তিত্ব আছে, আবার কেউ অনেক উচ্ছ্বসিত হলে বলি তার ব্যক্তিত্ব নেই। আসলে কারো মধ্যে ব্যক্তিত্ব আছে আর কারো মধ্যে ব্যক্তিত্ব নেই, এই কথাটি ঠিক নয়। প্রত্যেকটি মানুষের মধ্যেই ব্যক্তিত্ব উপস্থিত, সেটি কেবলমাত্র ব্যক্তিভেদে আলাদা হয়। মনোবিজ্ঞানের ভাষায় ব্যক্তিত্ব হচ্ছে কোনো একজনের মানসিক প্রক্রিয়া ও আচরণের এমন এক স্বতন্ত্র ধরন, যা কেবল তার মধ্যেই বিদ্যমান থাকবে যেটি কিনা অন্যদের কাছ থেকে সেই ব্যক্তিকে আলাদা করবে। গ্রিক ও রোমান সভ্যতার যুগে মাটি, বাতাস, আগুন ও পানি—এই চারটি মহাজাগতিক উপাদানের সঙ্গে তুলনা করে চার ধরনের ব্যক্তিত্বের ধরন চিহ্নিত করা হতো।
ধরনগুলো হচ্ছে মাটির মতো বিষাদময় বা সর্বংসহা, বাতাসের মতো প্রত্যয়ী বা আশাবাদী , আগুনের মতো ক্রুদ্ধ বা মেজাজি এবং পানির মতো প্রবহমান বা উদাসীন। পরবর্তীতে বিজ্ঞানের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে বং ব্যক্তিত্ব নির্ণয়েরও নানা পদ্ধতি প্রবর্তিত হয়েছে। তবে, পৃথিবীর প্রায় সাতশ কোটি মানুষের ব্যক্তিত্ব সাতশ কোটি রকম।
কারও মানসিক প্রক্রিয়া ও আচরণ এককথায় কারো ব্যক্তিত্ব যদি নিজের, অন্যের কিংবা সমাজের জন্য পীড়াদায়ক হয় তখন বলা যায় যে তার ব্যক্তিত্তে সমস্যা রয়েছে। ব্যক্তিত্বের সমস্যাগুলোকে প্রথমত তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়।
এগুলোকে বলা হয় "ক্লাস্টার" আসুন, তিনটি ক্লাস্টারের অন্তর্গত ব্যক্তিত্তের বিভিন্ন সমস্যার সিম্পটম সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক-
▼ প্যারানয়েড পারসোনালিটি ডিসঅর্ডার; অহেতুক সন্দেহপ্রবণতা, সহজে কাউকে বিশ্বাস না করা, পরশ্রীকাতরতা, অনুভূতিপ্রবণতা, প্রায়ই বিরক্ত এবং অসন্তুষ্ট থাকা এসব এধরণের ব্যক্তিত্তের অধিকারীদের বৈশিষ্ট্য। এরা নিজেকে সব সময় অন্যদের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে এবং প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে থাকে।
▼ সিজোটাইপাল পারসোনালিটি ডিসঅর্ডার: এ ধরনের ব্যক্তিত্বের মানুষ সামাজিকতা এড়িয়ে চলে, সামাজিক উদ্বিগ্নতায় ভোগে। তাদের কথোপকথনে অসামঞ্জস্যতা থাকতে পারে এবং তারা বেশ আত্মকেন্দ্রিক হয়ে থাকে। অনেক সময় তারা মনে করে, তারা অন্যদের মনের কথা বুঝতে পারে।
মাঝেমধ্যে তারা মনে করে, অন্যরা সব সময় তাকে নিয়ে সমালোচনা করছে।
▼ সিজয়েড পারসোনালিটি ডিসঅর্ডার: আবেগ কম থাকা, একা থাকতে পছন্দ করা, আনন্দের অনুভূতি কম থাকা ইত্যাদি পরিলক্ষিত হয়। তবে এই সমস্যায় যারা ভোগে তাদের অন্তর্দৃষ্টি অন্যদের চেয়ে বেশি থাকে।
▼ অ্যান্টিসোশ্যাল পারসোনালিটি ডিসঅর্ডার: এদের আচরণ হয় নির্মম। অন্যের প্রতি সাধারণত এদের কোনো অনুভূতি কাজ করে না।
এরা দায়িত্বজ্ঞানহীন হয়, হঠাৎ করেই রেগে যায় এবং মেজাজ হয় খিটখিটে। তারা পারিবারিক ও সামাজিক দায়িত্ব এড়িয়ে চলতে পছন্দ করে এবং অপরাধ করলেও এদের মধ্যে কোনো অপরাধবোধ বা অনুতাপ থাকে না। যেকোনো সময় ছোট থেকে বড় নানা ধরনের অপরাধের সঙ্গে তারা জড়িয়ে যেতে পারে।
▼ বর্ডারলাইন পারসোনালিটি ডিসঅর্ডার: এরা অস্তিত্বের সংকটে ভোগে, কারও সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক বজায় রাখতে পারে না। এদের আবেগের বহিঃপ্রকাশ কেমন হবে, তা আগে থেকে ধারণা করা যায় না।
এরা হঠকারী আচরণ করে, নিজের ক্ষতি নিজে করে ফেলতে পারে এবং হাত-পা ধারালো অস্ত্র বা ব্লেড দিয়ে কাটে, দেয়ালে মাথা ঠুকে ইত্যাদি।
▼ হিস্ট্রিয়োনিক পারসোনালিটি ডিসঅর্ডার: এরা নাটুকেপনা করতে পছন্দ করে, অন্যকে প্রভাবিত করার ক্ষমতা প্রবল এবং অন্যের মনোযোগ পেতে ভালোবাসে। তবে এ ধরনের মানুষের অনুভূতিগুলো খুব একটা গভীর নয় এবং বাহ্যিক বা শারীরিক সৌন্দর্যকে এরা বেশি গুরুত্ব দেয়। ।
▼ নার্সিসিস্টিক পারসোনালিটি ডিসঅর্ডার: নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে, গ্রিক দেবী নার্সিসিসের মতো এরা নিজেকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে।
নিজেকে এরা অনেক বড় মনে করে এবং অন্যদের চেয়ে আলাদা এবং ক্ষমতাবান ভাবে। এরা অন্যের প্রশংসা চায়, কিছুটা স্বার্থপর ও হিংসুটে স্বভাবের হয়ে থাকে। অন্যের মতামতের মূল্য এদের কাছে কম।
▼ এভয়ডেন্ট পারসোনালিটি ডিসঅর্ডার: এরা সব সময় টেনশনে ভোগে। হীনম্মন্যতার উপস্থিতির জন্য সমাজের অন্যদের চেয়ে এরা নিজেকে ছোট মনে করে।
এদের মধ্যে সর্বদা অন্যের কাছ থেকে প্রত্যাখ্যান হবার ভয় কাজ করে। ঝুঁকি নিতে ভয় পাবার ফলে সামাজিক কর্মকাণ্ডে এরা সাধারণত নিজেকে যুক্ত করে না।
▼ ডিপেনডেন্ট পারসোনালিটি ডিসঅর্ডার: এ ধরনের ব্যক্তিত্বের সমস্যায় আক্রান্তরা অন্যের ওপর নির্ভরশীল হয়ে থাকে। নিজে নিজে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে না, এমনকি নিজের চাহিদা বা প্রয়োজনের কথাও প্রকাশ করতে পারে না। নিজের ঘাড়ে কোনো দায়িত্ব এসে পড়তে পারে, এটা নিয়ে এরা সর্বদা ভীত থাকে।
▼ অবসেসিভ-কম্পালসিভ পারসোনালিটি ডিসঅর্ডার: নিয়মনীতি কঠোরভাবে মেনে চলতে চায় এ ধরনের ব্যক্তিত্বের সমস্যায় আক্রান্তরা। এরা সবকিছুর মধ্যে পারফেকশন খুঁজে বেড়ায় এবং স্বভাবটা হয়ে যায় খুঁতখুঁতে এবং শুচিবায়ুগ্রস্ত। এরা অপেক্ষাকৃত দৃঢ়চেতা হয়, বেশি কাজ করতে পছন্দ করে। সতর্ক থাকা, অন্যকে সন্দেহ করা এদের আরেক বৈশিষ্ট্য। সে চায় অন্যরা তার মত অনুযায়ী চলুক।
আপাতত এসবই ব্যক্তিত্বজনিত কিছু সমস্যাবলী। কিন্তু অনেক সময় এমনও দেখা যায়, প্রতিটি আলাদা আলাদা সমস্যার কিছু বৈশিষ্ট্য মিলিয়ে কারো ব্যক্তিত্ব তৈরি হয়। সেক্ষেত্রে মানুষের ব্যক্তিত্ব তার মনকে প্রভাবিত করে।
© 2013 ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।