আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

লুলীয় রোম্যান্টিকতা,,,,, অতঃপর

বলা শেষ বন্ধুমহলে আমার ইমোশন নিয়া অতিরঞ্জিত রটনা ছড়ানো ছিটানো অবস্থায় আছে। আমি নাকি দুনিয়ার1n only রোম্যান্টিকতা বিবর্জিত একজন মানুষ। এই বোকাগুলারে ক্যামনে বুঝাই যে,জন্মের শুরু থেকেই I was so romantic & emotional also. আমার জন্ম হয়েছিল হলি ফ্যামিলিতে। জন্মের পর চোখ খুলেই এক সেইরাম সুন্দরী নার্সের কোলে নিজেকে আবিষ্কার করলাম। নার্স আমায় কোলে নিয়ে আদর করছে।

দেখেই মাত্রাতিরিক্ত রোম্যান্টিক হয়ে বলে বসলাম, “ওয়াও, what a beautiful nurse.” অথচ আমার অবুঝ আপনজনেরা বলছিল, হাসপাতালে জন্মের সাথে সাথেই নাকি আকাশ বাতাস কাঁপায়া এমনভাবে “ওয়া ওয়া” করেকাঁদছিলাম যে নার্স আমাকে কোলে নিয়েছিলো, সে নাকি আমার আওয়াজ শুনে ভয়ের চোটে ভিড়মী খেয়ে পড়ছিলো। নানা আমার কান্না শুনে নাকি বলছিলো আগামীতে এলাকার সব ওয়াজ আমারে দিয়াই করাবে, আমার গলার আওয়াজ নাকি একাই একশ মাইকের কাজ করবে। তারপর নার্সের কোল থেকে আমাকে রীতিমত কেড়ে নিয়ে গেল, যা ছিল সম্পুর্নভাবেই আমার ইচ্ছা বিরুদ্ধ কাজ। আরে আজব, Complement আর Crying কি এক হল নাকি! জোরাজোরির কারনে বেশ কিছুক্ষন হাত পা ছুড়াছুড়ি আর চান্সে নানার চশমা টেনে ফেলে দিয়েছিলাম। আমার সব কান্ডকীর্তি দেখে ঐ দিনেই আমার নাম ঠিক করা হল, ““রুদ্র””।

নামটা একটুও পছন্দ হয় নাই। এইটা কোন নাম হল! মাইয়ারা তো এই নাম ঠিক মত মুখেই নিতে পারবে না আর ডাকলেও নামের শর্ট ফর্ম বানিয়ে নামের বারোটা বাজিয়ে দেবে। এই নিয়ে একটু গাইগুই করতে চেয়েছিলাম, পরে দেখলাম নাম নিয়ে তাদের এই প্রবল উৎসাহের জোয়ারে আমার আপত্যি গ্রহণযোগ্যতা হারাবে। তাই চুপ ছিলাম। তাদের এমন অদ্ভুত আচরন সেই তখন থেকেই ভীষণ পীড়াদায়ক ছিল।

এতকিছুর পরেও,যতই দিন যাচ্ছিল, আমার রোমান্টিকতার পরিমাণও আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছিল। জীবনের প্রথম ক্রাশ খেয়েছিলাম পাশের বাসার জয়া আপুর উপর। জয়া আপু বাসায় থাকলেই বিভিন্ন বাহানায় তার আশেপাশে ঘুরাঘুরি করতাম। কিন্তু কোন ভাবেই কিছু হচ্ছিল না। একদিন জানতে পারলাম আপুর পেইন্টিংসের প্রতি বিশাল ঝোঁক আছে।

ফিউচার ক্যারিয়ার হিসেবে পেইন্টিং বেছে নিয়ে কাজ শুরু করে দিলাম। আমার ঘরে থাকা যাবতীয় রংপেন্সিল দিয়ে খাট চাদর ফ্লোর দেয়াল প্রায় সব জায়গাতেই আকাঝুকি শুরু করে দিলাম, বেশ ভালোভাবেই কাজ চলছিল। প্ল্যান ছিল রুমের কাজ শেষ করে জয়া আপুকে বাসায় এনে দেখাব, কিন্তু তার আগেই আম্মু দেখে সব শেষ করে দিল আর চিৎকার চেচামেচি তো আছেই। সে সাথে আমার শিল্পকর্মের সব যন্ত্রপাতি জব্দ করে। আরে, মডার্ন আর্টের মর্ম সে কি বুঝবে!! তারপরেও হাল ছাড়ি নাই।

খোঁজখবর শেষে জানতে পারলাম Oil Paintingটা বেশ ভালো। ঘরের সব তেলের বোতল আর গ্যালন এনে বেপক চিন্তায় পরে গেলাম, সব তেলের তো একই রং, ক্যামনে কি করি। ধুর যা আছে কপালে, আঁকতে থাকি, পরেরটা পরে দেখা যাবে। পুরা ফ্লোরে একে হাত ধুয়ে এসেও দেখি শুঁকায় নি আর কোন রংও ধরেনি। ভাবলাম সময় লাগবে, তাই রুম থেকে বেড়িয়ে গেলাম।

যাবার আগে সবাইকে না করে গেলাম আমার রুমে ঢুকতে। আমি ভুলেই গেছিলাম, দুপায়া জাতিরে [মানুষ] যে বিষয়ে না করা হবে, সেটা তখনই করবে। কিছুক্ষন পর বাসায় ফিরেই দেখলাম, আব্বু আম্মু দুজনেই শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে ব্যান্ডেজ বেঁধে বসে আছে এবং একসাথেই আমার দিকে অগ্নিদৃষ্টি দিচ্ছে। আর কাজের বুয়াটা দমকল বাহিনীর মত আমার রুমে পানির বন্যা বইয়ে দিয়েছে। আহারে, আমার সাধের পেইন্টিংস!!! ঐটা ছিল আমার জীবনের প্রথম ব্যার্থতা, কারন অনেক চেষ্টা করেও কোন Structure দাড় করাতে পারিনি।

তারপরেও জয়ার জন্যে অন্যভাবে এগুতে চেয়েছিলাম, কিন্তু বেচারির কপাল খারাপ ছিল, কারন সে আমার চাইতে ৬ বছরের বড় ছিল। অনেক চেষ্টা করেও বুঝাতে পারিনি যে প্রেম মহান, এর মাঝে বয়সের বাহানা আনার কোন মানেই হয় না। আফসুস, শুধু বয়সেই বড় ছিল, তবে বুঝতে শিখেনাই কিছুই। পরে মনে হয় আমার কাজিনের প্রেমিকার প্রেমে পড়ছিলাম। ঐ বেচারিও আমার চেয়ে বছর খানেকের বড় ছিল, যদিও এটা আমার জন্যে তেমন কোন সমস্যা ছিল না।

শুধু ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে মেয়েটারে ছেড়ে দিয়েছিলাম। একদিন দেখি ঘরে আমাকে নিয়ে কানাঘুষা চলছে, আমাকে নাকি স্কুলে ভর্তি করানো হবে। লোকমুখে শুনেছিলাম, স্কুল এমন একটি স্থান, যেখানে কারনে অকারনে নিরীহ বাচ্চাদের কানে ধরে উঠবস আর পশ্চাৎদেশে বেত্রাঘাতের মাধ্যমে শাস্তির আদানপ্রদান ঘটানো হয়। এই নিয়ে দুশ্চিন্তায় তো আমি কার্টুন দেখা বন্ধ করে দিয়েছিলাম। যাই হোক, অবশেষে আমাকে মোটামোটি জোর জবরদস্তি করেই স্কুলে পাঠানো হল।

ক্লাসের মেয়েদের তেমন একটা ভালা পাই নাই বলে উদাস নয়নে বসেছিলাম। ঠিক তখনই দেখলাম ডিজনির কার্টুনের কোন এক পরী যেন হাতে মার্কার খাতা আর হাবিজাবি নিয়ে ক্লাসে আসল। ওর হাতে বেতের জায়গায় তারা আর পেছনে ডানা লাগিয়ে দিলে ডিজনি কার্টুনে ওর চান্স নিশ্চিত। সমস্যাটা বাধল এজন্যেই। ম্যাম যখনি ক্লাসে আসত, আমি দেখতাম অলিভ পাতার মুকুট পড়ে আর হাতে তারার লাঠি নিয়ে আমার সামনে “ফুলে ফুলে, দোলে দোলে” গানের তালে তালে দুলছে।

আর ঘোর কাটার পর দেখতাম আমার দুপাশের বিদ্যাসাগরদের সাদা খাতা আর সামনের White Board কালো হয়ে গেছে কিন্তু আমার সাদা খাতা তার পূর্বের অবস্থায় বহাল তবিয়তে আছে। কলমের একটা আঁচড়ও খাতায় পড়তে দেইনি। ক্লাশনোট না উঠাবার কারনে একদিন ম্যাম সর্বজন সম্মুখে বেদম প্রহার করল। ঐদিনই প্রথমবারের মত আবিষ্কার করলাম, “সুন্দরী ললনারা অনেক নিষ্ঠুর হয়, আর বয়সের সাথে সাথে তাদের নিষ্ঠুরতা সমানুপাতিক হারে বাড়তেই থাকে। ” রাগে অপমানে ক্লাস থেকে বেড়িয়ে চলে আসছিলাম।

ম্যাম জানতে চাইলেন, - রুদ্র, কি হল, কোথায় যাচ্ছ? - ম্যাম, আপনি না বড় নিষ্ঠুর। বলেই বেড়িয়ে আসলাম। অবশেষে ভগ্ন হৃদয় নিয়ে বাসায় প্রত্যাবর্তনের সাথে সাথেই ঘোষণা দিলাম, আমি আর স্কুলে যাব না। কারন বলতে অপারগ ছিলাম আর ছোটখাট বিষয়ে ব্যাপক ভাংচুরের কারনে আমি বাসার ছোটখাট গুন্ডা হিসেবে পরিচিত ছিলাম বিধায় কয়েক দফা বৈঠক আর অনশনের শেষে সমঝোতায় আসা হল, যে আমাকে অন্য ক্লাসে দেয়া হবে। পরের দিন আমাকে ওয়ানের কোন শাখা খালি না পেয়ে আমাকে দ্বিতীয় শ্রেণীতে ভর্তি করে দেয়া হল।

ক্লাসে গিয়েই দেখি বৃদ্ধ একজন শিক্ষক এসেছেন। বাঁচা গেল, তিনি আর যাই হোক, ঐ নিষ্ঠুর রমণীর মত করে মারতে পারবে না। তারপর টিফিন পিরিয়ডেই দেখি ক্লাসে তামিল মুভির কাহিনী চলছে। দুইটা ছেলে এসে কয়েকজনের ব্যাগ থেকে টিফিনবক্স বের করে নিচ্ছে, কিছু ফেলে দিচ্ছে, কিছু খাচ্ছে। খারাপ লাগল যখন দেখলাম ২টা মিলে এক পিচ্ছি মেয়ের টিফিন নিয়ে ফাজলামো করছে[যদিও এখনও সেদিনের সেই পিচ্ছি দাবি করে, সে নাকি আমার চাইতে এক বছরের বড়।

এ নিয়ে পরে আবার কথা হবে]। আমি টিফিনবক্স বের করা মাত্রই ওরা এসে আমারটায় ধরে টান দিল। মেজাজ এতটাই গরম হয়ে গেল যে, প্রথমে টিফিনবক্স, পরে স্কেল, তারপরে ব্যাগ অবশেষে আরও কি কি দিয়ে যেন মারলাম। রেগে অন্ধ হয়েছিল তাই খেয়াল করিনি কখন ২টাই লেজগুটিয়ে পালিয়েছে। সেদিনই ক্লাসের নয়া হিরো হয়ে গেলাম।

জানতে পারলাম, পিচ্ছি মেয়েটার নাম নীলা আর ২ উঠতি গুন্ডা হচ্ছে রিপন আর অপু,ওরা মাঝে মাঝেই ক্লাসের সবাইকে ভয় দেখাত, তাদের কথা না শুনলে অপুর বড় ভাইদের দিয়ে নাকি রাস্তায় মারবে। সেই ভয়ে ক্লাসের কেউ তাদের কিছু বলত না। তারপরে আরেকদিন রিপন অপু এসে তাদের রাজত্ব পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করেছিল, তখন আরেকদফা দিয়েছিলাম। পরে আর কখনই তাদের টু শব্দ করতে শুনিনি। তারপর থেকে বন্ধুবান্ধবের আর অভাব রইল না, সারাদিন ক্লাস ফাঁকি দিয়ে এপাড়ায় ও পাড়ায় ঘুরাঘুরি করতাম।

আর যখন কাউকে পেতাম না, তখন নীলার বাসায় চলে যেতাম। নীলা সেই পিচ্ছি বয়স থেকেই আমার জ্ঞানের পরিধি বাড়াবার প্রচেস্টায় জ্ঞান ফলাত আর ওর আম্মু আমার শারীরিক পরিধি বাড়াবার লক্ষে একটু পরপর কিছু না কিছু খেতে দিয়ে যেত। দুনিয়ার এমন কোন আজাইরা বিষয় নেই যেটায় ওর আগ্রহ ছিল না। নীলা ছিল পরিকল্পনা মন্ত্রী আর আমি ছিলাম ওর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি। একটা ছোট ডেমো দেই, “নীলার স্বপ্ন ছিল আমাদের একটা জাহাজ থাকবে, তাতে চড়ে আমাদের বাড়ির ডোবাটা থেকে শুরু করে Foreign সমুদ্রে ঘুরব।

আমি বড়শি দিয়ে মাছ ধরব আর সে রান্নাকরবে। তারপরে একসাথে জাহাজের ছাদে বসে মাছ ভাজা, মাছ ভুনা খাব। তিমি মাছ ধরা বারন ছিল, কারন সে এত বড় মাছ ভাঁজতে পারবে না। আর আমরা দুজনেই কম খেয়ে অভ্যস্ত। অতঃপর নেমে গেলাম জাহাজের খোঁজে, অনেক চেষ্টা তদবির করেও তেমন কারো সাহায্য পাইনি, পাইনি মানে একটা ছোটখাট নৌকাও মেনেজ করতে পারিনি।

তখন রাগে দুঃখে ওকে জানিয়ে দিলাম, বুঝলি নীল, দুনিয়া ভ্রমনের জন্যে জাহাজ তেমন একটা সুবিধার জিনিস না। আমরা উড়োজাহাজ নিয়া ঘুরব আর মাছের বদলে পাখি শিকার করব। বেচারিও তা এক বাক্যে মেনে নিয়েছিল। ” এমনি করে আমাদের প্রতিটা পরিকল্পনার পরীরা আকাশে হারিয়ে যেত আর কল্পনারা তাদের সাথেই ভেঙ্গে যেত। তখন চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ি, একদিন হেডস্যার ক্লসে এলেন, সাথে এলিয়েনের মত এক সুন্দরী।

পুরাই বার্বিডল। নাম রূপা আর ছোটখাট ইন্ট্রু দিয়ে স্যার চলে গেলেন। রূপার রূপের প্রখরতায় ক্লাসের পোলাপানের মন তামাটে বর্ন ধারন করেছে। কিছুদিন পরেই দেখলাম রূপার অনুরাগীর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে, আর আমার আশেপাশে বন্ধুদের আনাগোনা ক্রমবর্ধমান হারে হ্রাস পাচ্ছে। ঝামেলা বাধল যখন পরীক্ষার রেজাল্ট দিল।

স্কুলের পরীক্ষায় আমি কখনই দ্বিতীয় হইনি। Actually দ্বিতীয় তৃতীয় না, কোন শিক্ষকই আমার রোলকে দশের বাধ ভেঙ্গে ভেতরে আনতে পারেনি। এই নিয়ে আমি কখনই অহংকার করিনি। এবার রূপা প্রথম হয়েছে। আর নীলা ছিল আমাদের ফার্স্ট গার্ল।

বেচারি পরীক্ষায় প্রথম ছাড়া কখনই কিছু হতে পারেনি। এবার হয়েছে ভাবলাম খুশী হবে উলটা সে ক্লাসে আসাই ছেড়ে দিয়েছে। বাসায় গেলাম দেখা করতে, সে দেখাই করবে না। পরে অনেক কষ্টে ওর রোমে ঢুকে বুঝাতে চাইলাম, আরে একবার প্রথম না হলে কি হয়, পরেরবার তুই হবি, এখন সব বাদ দিয়ে ক্লাসে আয়। সে তখন উল্টা ঝারি দিয়ে কিছু উষ্ণবাক্য ছুড়ল যার সার্মরম ছিল, - “তুই তো জীবনেও প্রথম হস নাই, হবিও না।

তুই আমার কষ্টের কি বুঝবি?” - আরে আজব, তোর জন্যেই এলাম আর তুই আমাকে খোঁচা দিচ্ছিস? - আমি জানি তুই মজা নিতে এসেছিস! এই কথা শোনার পর আর কিছু না বলে সোজা বাসায় চলে এলাম। আর রূপার দেমাগ দিন দিন বেড়েই চলছিল, প্রথম হবার পর তা যেন ৮০সিসি বাইকের সাথে নস লাগালে যা হয়, ঐ অবস্থা হয়েছে। নীলা অনেক পচা পচা কথা বললেও নিলার জন্যে বেশ কয়েকটা পরীক্ষায় পার পেয়েছিলাম। আর আজকাল নীলার এমন দুরবস্থা দেখে সিদ্ধান্ত নিলাম, আমিও প্রথম হব, নীলা না পারলেও আমি প্রথম হয়ে রূপার দেমাগ ভেঙ্গে দেব। যেই ভাবা সেই কাজ।

কাছের কিছু বন্ধুদেরও পড়তে বললাম, আর যাই হোক রূপাকে আর প্রথম হতে দেয়া যাবে না। কেউ এই নিয়ে আগ্রহ দেখাল না। কিন্তু আমি ঠিকই কার্টুন দেখা, বাইরে ঘুরাঘুরি সব বাদ দিয়ে পড়ালেখা শুরু করে দিলাম। আমার এই অবস্থা দেখে, বাসার সবাই যার-পর-নাই চিন্তিত। আম্মুর তো কাঁদোকাঁদো অবস্থা।

- বাপ আমার, তোর কি হইছে বল না, কি লাগবে তোর? - মা কিছুই হয়নি তো। - আমার রুদ্র কার্টুন না দেখে কি করে থাকে, কেউ কিছু বলেছে তোকে? বললে আমাকে বল, আমি বকে দেব। - মা কিছুই হয় নি, যাও তো, আমি পড়ছি। বিরক্ত করনা এখন। আম্মুর চেহারা দেখে মনে হল কেউ যেন তাকে এই মুহূর্তে হাই ভোল্টেজ শক দিয়েছে।

চুপচাপ রুম থেকে বেড়িয়ে গেলেন। পরদিন আম্মু আমাকে না জানিয়ে স্কুলে যেয়ে শার্লক হোমস টাইপ কাজ করে এলেন যার সারমর্ম হচ্ছে, কোন এক মেয়েকে পেছনে ফেলার লক্ষে আমি নাকি জীবন বাজি রেখে পড়া শুরু করেছি। বাসায় হাসাহাসির নতুন খোরাক হয়ে গেলাম। এমনিতেই পড়ালেখার প্রতি অনিহা আমার জন্মলগ্ন থেকেই তার উপর বাসায় এমন আচরন। মেজাজ কন্ট্রোলে রাখাটাই কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

সবভুলে পড়তে লাগলাম। পড়ালেখা আসলেই একটা বিরক্তিকর জিনিস, এই জন্যেই হয়তোবা দীর্ঘ চার বছর এটা নিয়ে থাকার পরেও এর প্রতি বিন্দু পরিমান আকর্ষণ বা মায়া সৃষ্টি হয় নি। কিছুদিন পর নীলার সাথে দেখা, আমাকে দেখে না দেখার ভান করে চলে যাচ্ছিল। - কিরে দেখছ নাই মনে হয়!!! - দেখছি, তবে বলার কিছু নাই, তাই চলে যাচ্ছি। - মানে কি, এভাবে বলছিস কেন? - বাসায় এমন কি বললাম যে আমাকে হারিয়ে দেবার জন্যে সব ছেড়ে ছুঁড়ে বিদ্যাসাগর হতে চলছিস? - মানে কি? - থাক আর ভনিতা করতে হবে না, প্রথম হতে চাইছিস, ভালো কথা।

তা আমাকে পেছনে ফেলে কেন? তুই কি ভাবিস, আমি কিছুই জানিনা? অবাক হয়ে গেলাম, শালী বলে কি। ওর মাথাটাই মনে হয় পুরা গেছে। কথা না বাড়িয়ে চলে এলাম। তবে কেন যেন মনে হচ্ছিল, ও আর যাই হোক, প্রথম হতে পারবে না। পরীক্ষার পর আমার বাসায় সবাই বেশ শান্তিতে আছে।

তারা মোটামোটি নিশ্চিত, এবার আর যাই করি, ফেইল মারব না। অবশেষে রেজাল্ট পেলাম, নীলা প্রথম, রূপা দ্বিতীয় আর তারপরের বিশাল ব্যাবধানে আমি আঠারোতম স্থানে আছি। আমার নানা ঐদিনেই পারলে হেলিকপ্টারে করে এলাকায় মিষ্টি বিতরন করে। আম্মু নিশ্চিত ছিল আমি ফাটাফাটি কিছু করব, কিন্তু আমি তো আমিই। পরে জানতে পেরেছিলাম, রিপন আমার নামে খুব বাজে ভাবে নীলার কাছে কিছু কথা বলেছিল যে কারনে নীলা দূর্ব্যাবহার করেছিল।

আর পরে নীলা তা জানতে পেরে ওদের নাকি অনেক বকাঝকা শুনিয়েছে। তারপর একদিন নীলা বাসায় এসেছিল সরি বলতে। কিন্তু আমার ভিতরে কোথাও একটা রাগ ছিল যে কারনে নীলার সাথে আর কথা বলিনি। তারপর মাঝে মাঝেই দেখা হত, আমিই এড়িয়ে চলতাম। প্রাইমারী লেভেলে আমার রোমান্টিকতায় মুগ্ধ হয়ে দেশ ও জাতির ভবিষ্যতের কথা ভেবে আমাকে Boys schoolএ বদলি করা হল।

নতুন স্কুল ভালই লাগছিল, নতুন অনেক বন্ধুবান্ধব পেয়েছি, আর আগের যারা ছিল তাদের সাথে তো যোগাযোগ আছেই। মাঝে হুট করেই অসুস্থ হয়ে পরি তাই কিছুদিনের জন্যে দুনিয়াবি খোঁজ খবর রাখার অবস্থায় ছিলাম না। পরে একদিন স্কুলে গিয়ে শুনি কোচিংএ নাকি একদল সুন্দরীর আগমন ঘটছে। একদিক থেকে ভালই হল, কোচিংএ এবার তাহলে যাওয়াটা নিয়মিত হবে। পরদিন কোচিংএ আগেভাগেই চলে যেতাম, সুন্দরীকে দেখতে।

বাঁধ সাধল বৃষ্টি, ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে। আসার আর টাইম পেলনা। বৃষ্টির মাঝে যেতে ইচ্ছে হছে না আবার না যেয়েও উপায় ছিলনা। বৃষ্টি আমার একেবারেই পছন্দের না, তারপরেও ভিজেই চলে এলাম কোচিংএ। গিয়েই তো চক্ষু চরখগাছ, আমি কাউন্ট করার অবস্থায় নাই।

একপাল সুন্দরী ললনা বসে আছে। মাঝখানে পালেরগোদাকে চিনতে যদি ভুল না করি তাহলে এটা রূপা। শালীর রূপ দিন কি দিন বাড়তেছে তো বাড়তেই আছে। রূপাকে দেখেই আমার মন ভিজিয়া গেল। বৃষ্টিতে যতোটা না শরীর ভিজেছে, তার চাইতে বেশী।

তারপর রূপা নিজ থেকে এসেই কথা শুরু করল। সেই থেকে শুরু, পোলাপানের নতুন করে অবাক হবার পালা। প্রতিদিন কোচিংএ একসাথে আসা যাওয়া, পাশাপাশি বসা, একসাথেই ফাঁকি দেয়া। বেশ ভালোই যাচ্ছিল দিনকাল। বৃষ্টি এলেই রূপাকে আটকানো যেত না, সে ভিজবেই।

আমাকে অনেকদিন বলেও ভেজাতে পারেনি, তাই একদিন ইমোশনালি ক্যাচাল করে আমাকে নিয়ে বৃষ্টিতে ভিজল। বৃষ্টি শেষে রূপাকে ওর বাসায় পৌঁছে দিয়ে আমি আমার বাসায় উঠার আগেই গায়ে জ্বর উঠে গেল। জ্বর বলে তো সেইরাম জ্বর। প্রায় এক মাসের জন্যে বিছানাবাসী হয়ে গেলাম। এরই মাঝে একদিন নীলা বাসায় এল।

পাশে বসেই কলারে ধরে বলল - রূপার হিমু হবার শখ হইছে তোর, তাই না? - মানে কি, কি বলছিস এইসব? - শোন, আমার সামনে ঢং করবি না, বুইরা পোলাপানের ঢং আমার একেবারেই সহ্য হয় না। - আরে আজব, কি হইছে বলবি তো আগে, নাকি? - তোর সাথে তো বৃষ্টি একেবারেই যায় না। না তোর পছন্দ, না তোর শরীরের। তাইলে এমনে ভিজে জ্বর বাধালি কেন? - না মানে ইয়ে,,,,, - মেন মেন করবি না, স্পষ্ট করে বল। - রূপা জোর করে,, - আমারও তো বৃষ্টি অনেক পছন্দের, একদিনও তো তুই আমাকে সাথে নিয়ে ভিজলি না।

। অনেক সহ্য করছি। শোন, আর যদি কখনও ওর আশেপাশে তোরে দেখি, তাইলে বুঝবি। - কি উল্টা পাল্টা বকতেছিস? তোরও কি জ্বর হইছে? - দেখ পিচ্ছি, এতকিছু বুঝানো যাবেনা এখন। তুই শুধু ওর থেকে দূরে থাকবি।

- কেন? - যদি আমি ছাড়া আর অন্য কোন মেয়ের সাথে প্রেম করছিস, তাইলে তোর খবর আছে রে পিচ্ছি। মনে রাখিস। - তোরে না কইছি, আমারে পিচ্ছি বলবি না। গায়ে জ্বর আছে দেখে বেঁচে গেলি। নয়তো মাইরা ছাতু বানায়া দিতাম।

- Same thing for u baby. আর কথা বাড়াব না, জলদি সুস্থ হয়ে যা। Being ill for long, it doesn’t suit u babe. বলেই হাসি দিয়ে চলে গেল। মাথাটা আবার ব্যাথা করছে। নীলা কি শুরু করল। কি হইছে এইডার? যা ইচ্ছে হোক।

বেশ কিছুদিন জ্বরের জন্যে না কোথাও যেতে পেরেছি, না আর কারো সাথে যোগাযোগ হয়েছে। তারপর একদিন কোচিংএ এসে দেখি রূপা আসেনি। মনটাই খারাপ হয়ে গেল। আমার সাথে সাথে বেচারিও হয়ত জ্বরে ভুগছে। পরে দেখি কাহিনী ভিন্ন।

আমি যেদিন থেকে আসিনা, তার কিছুদিন পর থেকেই নাকি আবির নামের কারো সাথে রূপাকে মাঝে মাঝেই দেখা যায়। খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারলাম, আবির নাকি একজন উঠতি ইঞ্জিনিয়ার, কোন রকমে উঠে গেলেই নাকি ক্যারিয়ার পুরাপুরি খাড়া। আর মেয়েরা ক্যারিয়ার সচেতন পোলাপানরে বেশ ভালা পায়। ইঞ্জিনিয়ারিংএর ব্যাপারে তেমন একটা স্বচ্ছ ধারনা ছিল না। বাসায় যে এই ব্যাপারে জানতে চাইব, তারও উপায় নাই।

নতুন করে বাসায় Laughter Champion শুরু হয়ে যাবে। সিদ্ধান্ত নিলাম, ইঙ্গিনিয়ার হব। বাসায় গিয়েই মিশনে নেমে গেলাম। যে করেই হোক, পারফেক্ট ইঞ্জিনিয়ার হতেই হবে, যত দ্রুত সম্ভব। অতঃপর আমার প্রাইমারী এক্সপেরিমেন্ট শেষে রেজাল্ট হিসেবে কিছু বাল্ব আর টিউব লাইটের ফিউজ হয়ে যাওয়া, গ্যাস লাইনে আগুন আর পানির লাইনে ফাটল, আর এইগুলার মাঝে মহান আবিষ্কার হিসেবে ২টা সার্কিট ব্রেকারের উড়ন্ত মুহূর্তকে ধরা যায়।

যদিও এর পরপরই আম্মুর হাতে আমি ধরাশায়ী হই। আম্মু ঐদিন অনেক অত্যাচার করে। তখন বুঝতে পারলাম, এই দেশে জ্ঞানীর কদর নাই। যাই হোক, সেই দিনেই আমার ইঞ্জিনিয়ারিং ক্যারিয়ারের ইতি ঘটে। কি আর করা, সোজা আগের পজিশনে ব্যাক করলাম।

আবার সেই আগের বন্ধু বান্ধব, আবার সেই আড্ডা। কিন্তু ভিতরে ভিতরে একটা কষ্ট প্রতিনিয়ত পুড়িয়ে মারছে আমায়। “এ জীবনে প্রেম হলনা”। এভাবে অনেকদিন কেটে গেল, মেয়েদের কাছ থেকে দূরে থাকাতাম। এমনকি নীলারও আমার রুমে প্রবেশ করা বারন ছিল।

তারপরেও নীলা কথা বলার অনেক চেষ্টা করেছিল, পরে আর না পেরে একটা চিঠি দিয়েছিল যাতে লিখা ছিল, “শোন পিচ্ছি, রজকিনীর চণ্ডীদাস হবার বয়স এখনও হয়নি। Own up. আর ভুল করেও ভাবিস না, এভাবে ignore করে আমার হাত থেকে বেঁচে যাবি। তোরে ছাড়ছি না। আর আমি জানি তুই আমাকে অনেক ভালবাসিস, কিন্তু বুঝতে পারিস না। পারবি কি করে, তুই তো এখনও অনেক পিচ্ছি।

বড় হলে ঠিকই ছুটে আসবি। ” চিঠি পড়ে বুঝলাম, এই মাইয়ার জ্বর এখনও ভালো হয় নাই। সব ভুলার জন্যে আমি নিজেকেই নিজে বন্দী করে রেখেছিলাম। অনেকটা ব্যাঙএর শীতনিদ্রার মত। এজন্যে বাসার সবাই এবং বাসার ইনকামিং মেহমানরা বেশ শান্তিতেই বাস করতে লাগল।

তবে তাদের এই সুখ বেশী দিন সয় নাই। একদিন বাসার সবাই একপ্রকার ধরে বেধেই আমাকে ফ্যান্টাসি কিংডমে নিয়ে গেল। সেখানে জেমসের কনসার্ট চলছিল। আব্বু আম্মু দুজনেই বাচ্চাদের মত রোলার কোস্টারে চড়ে বাচ্চাদের মত হাউকাউ শুরু করে দিল। আর আমি এইসব বাদ দিয়ে দর্শকদের উন্মাদনা আর গুরুর পারফর্মেন্স দেখে সেখানেই আরেক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিলাম, আমি গায়ক হব।

যেই ভাবা সেই কাজ। ঘোষণা দিলাম, আমাকে আজকেই একটা গীটার কিনে দিতে হবে, নয়তো বাসায় যাব না। আব্বু বুঝতে পারল, লেক কেটে পিরানহা আনার মর্ম। এদিকে আম্মু বেজায় খুশী, সে নাকি এখানে এসে আগের রুদ্রকে খুঁজে পেয়েছে। ঐদিনই আম্মু আমাকে গীটার কিনে দেয় আর আব্বুকে আমার গীটার টিউটর হিসেবে নিয়োগ দেয়।

আব্বুর প্রতিভা আমি প্রথমদিনেই ধরে ফেলি, আব্বু অসাধারণ গীটার বাজায়। কিন্তু আমার প্রতিভা একমাস পাশে থেকেও আব্বু বুঝতে পারে নি। একদিন আব্বু বিরস বদনে আম্মুকে জানাল, তোমার ছেলের ব্রেন বলে তো কিছু নাইই, তার উপর তার আঙুল আর গলা, সঙ্গীত জগতের বিপরীতমুখী অবস্থানে আছে। তাই আমি ইস্তফা দিলাম, বহুত হইছে, তোমার পোলারে থামাও। আমাকে নিয়া আব্বুর এই থিসিস স্টেটমেন্ট আম্মুকে পুরাই হতাশ করে।

তখন আর সেই বয়েস ছিল না যে কারো কথায় সব ছেড়ে দেব। মাঝরাত নাকি সংগীত সাধনার জন্যে আদর্শ সময়। আর পায় কে, শুরু করে দিলাম। এখানেও ঝামেলা আমার পিছু ছাড়েনি। আমি যখনি হেড ব্রেকিং মেটাল গান গাইতে যাই, আব্বুর ঘুম তো যায়ই, মাঝে মাঝে নাকি সে বিছানা থেকেও পড়ে যায়।

আমার জন্যে নাকি তার বিপি বেড়ে গেছে, ঔষধ খেতে হচ্ছে। কি আর করা, আব্বু দিকে তাকিয়ে বাসায় রবীন্দ্র সংগীত চর্চা শুরু করলাম। আমার রবীন্দ্র সংগীত শোনার পর আব্বুর প্রথম মন্তব্য ছিল, “আজ যদি রবি বাবু বেঁচে থাকতেন, তাহলে আমাদের পুরা পরিবারের বিরুদ্ধে মানহানীর মামলা করতেন”। এই ঘর প্রতিভার মূল্যায়ন করতে জানে না, জানবেও না। তারপর থেকে বাসার বাইরেই প্র্যাকটিস করতাম।

একটা সময় এল যখন আমি আর আমার গীটার ছাড়া কোন আড্ডাই জমত না। সেই থেকেই শুরু, কলেজে তারপর ভার্সিটিতে সবার পরিচিত মুখ। আশেপাশে মেয়েদের আনাগোনাও অগনিত ছিল। তাদের কাছ থেকে নিজেকে সবসময় দূরে রাখতাম বলেই হয়ত NR² [নন রোম্যান্টিক রকস্টার] নামটা পেয়েছিলাম। কোন মেয়ে কিছুটা কাছে আসলেই মনে হত, আরেকটা বেটার অপশন পেলেই রূপার মত আবার চলে যাবে।

আবার, মাঝে মাঝেই নীলার কথা মনে পড়ত। কলেজে, ভার্সিটিতে এত এত মেয়ে দেখেছি, এত বান্ধবী পেয়েছি, তবে তাদের কেউ নীলার মত ছিল না। আমার আড্ডার কমন প্লেস ছিল ছবির হাট, নীলার সাথে মাঝে মাঝেই সেখানে দেখা হত। অনেক ইচ্ছে হত, একটা বার কথা বলতে। নীলা আমাকে দেখলেই তাকিয়ে থাকত, কোন একটা অপরাধবোধের জন্যে ওর চোখে তাকাতে পারতাম না, চোখ নামিয়ে চলে আসতে হত।

নীলা যেদিন ডেন্টালে চান্স পায়, সেদিনই বাসায় এসে জানিয়ে যায়। আম্মু নাম্বার দিয়েছিল, এখনও আছে। তবে কেন জানি যোগাযোগ করা হয় নি। সবকিছু ভেবে দেখলাম হয়তোবা নীলার চিঠির কথাটাই ঠিক ছিল, হয়তোবা নিলাকেই পছন্দ করতাম, আর রূপার ব্যাপারটা মোহ ছাড়া কিছুই ছিল না। কারন কোন মেয়ে কাছে আসলেই তার মাঝে নীলাকে খুঁজতাম, একবারের জন্যেও রূপাকে খুঁজিনি।

এভাবে একলা একা আর কত। ভালো লাগত না কিছুই। আবার নীলাকেও কিছু বলতে পারতাম না, হয়তোবা ইগো প্রব্লেম ছিল। আমি না হয় বুঝতাম না, কিন্তু সে তো বুঝত। আবার বলেনাই কেন।

নীলার সাথে দেখা না হলে ভালো লাগত না। দেখা হলেও খারাপ লাগত, কারন এমনভাবে তাকাত, তখন নিজেকে অনেক বোকা আর অসহায় মনে হত। এইরকম মানসিক অশান্তি আর ভালো লাগত না। অনেক হইছে, আর না। আমারও তো ইচ্ছা হয় আর সবার মত প্রেমিকা পেতে, তাদের সাথে ঝগড়া করে বিড়ি টানতে।

কিন্তু সামনে যেতে পারছিলাম না। ভয় হত, নীলার জীবনে যদি কেউ থাকে!! নাহ, অসম্ভব, থাকতেই পারেনা। আমার নাই, ওর কেন থাকবে, মাইরা ছাতু বানায়া দিব যেই থাকুক না কেন। আর লেট করা যাবে না। আজকালকার পোলাপান কিছু করার না থাকলে প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে খালি প্রেম করে।

যা করার জলদি করতে হবে। আর তাছাড়া কোন এক মহান লোক বলছে, “ego” is the only requirment to destroy any relationship. So, be a wise man and skip the “e” & let it “go” যেই ভাবা সেই কাজ। শুরু করে দিলাম সার্চ দ্যা খুঁজ। ঐ মহান বানী আমাকে সম্পূর্ণরূপে মহান বানাতে পারেনি। আমি নীলার কলেজ, বাসা নাম্বার সব জানার পরেও কিছু করতে পারিনি।

তারপর বেশকিছুদিন নীলার দেখা পাইনি। একদিন পেয়ে গেলাম, তবে দৃশ্যটা সুখকর ছিল না। নীলা ফুচকা খাচ্ছে, পাশে রিপন বসে আছে। বেশ হাসিখুশি পরিবেশ। আর সহ্য করা যায় না।

ছোটবেলায় এমন কাহিনী হলে রিপনের উপর ষ্টীমরুলার চালাতাম। এখন আর এইসব হবে না, তাই সেখান থেকে উঠে একটু দূরে বসলাম। সিগারেটটা অর্ধেকও শেষ হয়নি, দেখি কইথেকে যেন একদল জুনিয়র রিপনকে চ্যাংদোলা করে আমার সামনে নিয়ে এল। - সব্বনাশ, করছিস কি রে? - ভাই, যেই আপারে দেখলে আপনার বিড়ি খানার মাত্রা বাইরা যেত, এই শালা আজকে ঐ আপুর পাশে বইসা ভেটকাইতে ছিল। তাই ধইরা আনছি।

- বহুত দয়া করছস। এইবার এইটারে ছাড়। - না ভাই, এরে প্লাস্টিকের ফ্রেমে ভইরা ছবির হাটে টাঙ্গাইয়া থুমু। রিপন সেই তখন থেকেই তাকে ছেড়ে দেয়ার জন্যে গাইগুই করছে। আর তখনই দেখি নীলা আমার দিকে তাকিয়ে আসছে।

অউ নউ, আমি ভাগব ঠিক তখনই নীলার চিৎকার। - রোদ, দাড়া বলছি। - নীল Its রুদ্র, রোদ না। - Its নীলা। - বুঝলাম, চিল্লাস কেন, জলদি বল, আমাকে যেতে হবে।

- যেয়ে দেখা!!! - ওকে, কি হইছে বল। - রিপনকে এভাবে আনালি কেন? - না মানে, ইয়ে - মেন মেন করার স্বভাব এখনও গেল না, গুণ্ডামিটা তো ঠিকই আছে। - তোর পাশে রিপনকে দেখে ওরা,,, আরেহ, এখনও ঝুলিয়ে রাখছিস, ছাড় এটাকে এখুনি। বলায় হয়তোবা সমস্যা ছিল। পোলাপান রিপনকে প্রায় ছুড়েই ফেলে দিল।

বেশ খানিকটা দূরে গিয়ে পড়ল। সেখান থেকেই ভাগা দিল। - আমার পাশে দেখলে কি ধরে আনতে হবে নাকি? তোর পাশে তো প্রতিদিন কাউকে না কাউকে দেখছি, কই আমি কি কাউরে ধরাইয়া আনাইছি? কবি সাহেব অবনত মস্তকে চুপচাপ দাঁড়িয়ে। - জবাব দিচ্ছিস না কেন? ওর কথাগুলা আমার কাছে প্রেসার কুকারের মত লাগছিল। যেকোন মুহূর্তে আমাকে প্রেসারাইজড করে ফাটিয়ে দেবে।

- কত দিন এখানে আসছি, আমার কি কোন প্রয়োজন ছিল এখানে একা একা বসে থাকার? একটা বারও জানতে চাইছিস, এখানে একা একা কি করি, কেন আসি? আর আজ যখন আমাকে একা দেখে বেচারা রিপন পাশে বসছে, অমনি মনের ভেতরে বার্ন বাডি শুরু হয়ে গেল!!! এই মাইয়াডা যত কথা কয়, এর অর্ধেকও যদি শুনত, আমার দুনিয়াটা স্বর্গ হয়ে যেত। - নীল শোন - কথা বলবি না আমার সাথে। - আরে শোন না - বললাম না আমি শোনব না। বলেই দেখি ২চোখের নিচে ২টা জলপ্রপাত বানিয়ে ফেলছে। আশেপাশের সব তাকিয়ে আছে।

জুনিয়রগুলা দেখছে কিভাবে একটা মেয়ে আমাকে ঝারির উপর রাখছে। ডিপার্টমেন্টে আর মুখ দেখানো যাবে না। কিছু একটা করা দরকার এখুনি। - নীল, তুই তো জানিস, আমি এমনিতেই কম বুঝি, কিন্তু তুই তো বুঝতি, তুই কেন চলে গেলি। এত কিছু পারিস, আমাকে একটা বার বুঝাতে পারলি না? - হুম, আমি বুঝাতে যাই, আর উনি প্রত্যেকবার অপমান করে মজা পাবে, এই তো? - ওরে নারে, তুই আমাকে তাই ভাবিস? আচ্ছা যা ইচ্ছে ভাবতে পারিস, সমস্যা নাই।

এখন দয়া করে কান্না থামা। - কেন, মেয়েরা দেখবে, ইমেজ ঘোলা হয়ে যাবে মেয়েদের কাছে? - নীল, তোর কান্না দেখে অনেক কষ্ট হচ্ছে, আমারও কান্না চলে আসছে [এটা চাপা ছিল]। প্লীজ থাম। - আর এতদিন যে কাঁদছি, তখন কই ছিলি? হুম!!! - কথা দিচ্ছি, আর হবেনা, কখনও কাঁদতে দেব না। - গাল ছুঁয়ে কথা দে? - গাল? - কি বললাম? ঠিক বুঝতে পারছিলাম না, তারপরেও টিস্যু বের করে আপাতত গাল মুছে দিলাম।

- শুধু কথাই বলবি? খিদে লাগছে। - দেখলাম না ফুচকা নিয়ে বসলি? - খেতে আর দিলি কই, এখন কি আনাবি? এই, তোরা হা করে কি দেখছিস, কিছু নিয়ে আয় জলদি। একটু পরেই দেখলাম ওরা চটপটির ভ্যান নিয়ে আসছে, পেছন পেছন ভ্যানের মালিক দউরাচ্ছে। এইগুলারে বলি কি আর করে কি। নীলা একবার আমার দিকে আরেকবার ওদের দিকে তাকাচ্ছে।

ধুর, একটা কাজ যদি ঠিক মত হয়। - আমি কি পুরা ভ্যান খাব? - আরেহ, আমি কি ভ্যান আনতে বলছি নাকি? ঐ সবগুলা এখান থেকে ভাগ, আর সামনে আসবি না। সবকটারে বিদায় করে নীলাকে নিয়ে বসলাম। মুখ গোমড়া করে আছে এখনও। - নীল - হুম - তুই কি জানিস, নারী হেসে ওঠার আগ পর্যন্ত পৃথিবী ছিল বিষন্ন, বাগান ছিল জঙ্গল আর পুরুষ ছিল সন্ন্যাসী।

- বাহ, জনাব তো দেখছি মেয়ে পাটানোর ডায়লগ তো বেশ ভালো ভাবেই রপ্ত করেছেন। তারপর একটু চুপ থেকে নিজে নিজেই হাসছে। শুরু হল কথার রেলগাড়ি। কথাই শেষ হতে চাচ্ছে না। যা বলার নীলা বলে যাচ্ছে, আমি একনিষ্ঠ শ্রোতার মত শুধু শুনছি।

তখন জানতে চাইলাম, - শুনলাম অনেক বড় ডেন্টালিস্ট হয়ে গেছিস? - Its ডেন্টিস্ট। - ঐ হইছে। - না হয় নাই। - আচ্ছা ভুল হইছে, এখন বল, ডেন্টালিস্টের জীবন কেমন লাগছে? - দেশীবিদেশী মাছ ভাজা আর পাখি ধরার স্বপ্নটা মাটি হলেও হরেক পদের জাতিয় বিজাতীয় দাঁত দেখেবেশ ভালই কেটে যাচ্ছে। জীবনের একটা পথ সে খুঁজে পেয়েছি।

আচ্ছা ইঞ্জিনীয়ারিং পড়ে তুই কি পেয়েছিস। জ্ঞানীরমত হামবড়া ভাব নিয়ে বললাম, "হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছিরে" এভাবে কথা চলেই যাচ্ছিল, কিন্তু যা বলতে চাইছি তা আর বলা হয়ে উঠছে না। তারপর দুজনেই যখন খাব ঠিক তখনই শুরু হল ঝুম বৃষ্টি। কিছু বুঝার আগেই ২জনে কাক ভেজা হয়ে গেছি। এখন আফসোস হচ্ছে, পিচ্ছিগুলা থাকলে একটা ব্যাবস্থা হয়ে যেত।

আর এদিকে নীলা আমাকে টেনে গাছতলায় নিয়ে যাচ্ছে আর বলছে - রোদ জলদি চল, ভিজলে তো জ্বর বাধিয়ে ফেলবি। হাতের কাছে কিছুই নেই, তাই হাতটাই নীলার মাথার উপর ধরে আছি। আর ও আমাকে বাচ্চাদের মত বলে যাচ্ছে তো বলেই যাচ্ছে। - নীল শোন, আজ যতক্ষণ বৃষ্টি থাকবে, ততখন রিক্সায় ঘুরব। - আমি দাঁতের ডাক্তার, বৃষ্টিতে ভিজে জ্বর বাধালে তো ট্রিটমেন্ট করতে পারব না।

- ভিজব না। - মানে কি? - শোন কোন এক মহামানব বলে গেছে, “Some people feel the rain, others just get wet” - তোর তো ভালো উন্নতি হইছে। - থেঙ্কুসসসস। - হুম। - নীল - বল - নাহ, কিছু না - আহা, বল না - বললাম তো কিছু না।

- বলবি, নাকি চলে যাব। - বলছি বলছি - জলদি বল - আমার বৃষ্টি ভেজার সাথী হবি? - আজকে আছি তো। - শুধু আজকের জন্যে না। - আচ্ছা কাল হলে কালকেও থাকব। - না, শুধু কালকের জন্যেও না।

- মানে কি, তুই কি সারাজীবন আমাকে খালি বৃষ্টিতেই ভিজাবি? - ওহ, তাই তো, ভেজার জন্যে আরেকজনকে খোঁজতে হবে তাহলে। - কি বললি কমিনা? আরেকবার বলে দেখ, একটা দাঁতও আস্ত রাখব না। - ডেন্টালিস্ট হইছিস বলে কি দাঁত নিয়া থ্রেট দিতে হবে? - রোদ, Its Dentist Dentist Dentist Dentist,,,, বলেই চেচাতে লাগল। - থাম, আর জীবনেও ভুল হবে ন। - আচ্ছা থামলাম, ধরে নে রাজিও হলাম।

পরে যদি আমাকে একা করে চলে যাস আরেকটা রূপার কাছে, তখন আমি কি করব? - কি আর করবি, আইসা পড়িস। একসাথেই থাকব। বলেই একটা শয়তানি হাসি দিতে চেয়েছিলাম। তখনই বুঝলাম এটা ছিল দুনিয়া সৃষ্টি হবার পরের তৃতীয় বৃহত্তম ভুল। বৃষ্টির পানি আর চোখের পানিতে একাকার আর মারতেছে তো মারতেই আছে।

সে অবস্থাতেই কোন রকমে একটা রিক্সায় উঠলাম। - কি বললি, আবার বল। কষ্ট দিতে মজা লাগে না? - দুষ্টামি করতে চাইছিলাম রে ডার্লিং, এমন ভাবে নিবি জানলে কখনই বলতাম না রে। মাফ করে দে। তুই চাইলে এখনি কাজি অফিসে যেয়ে পার্মানেন্ট একটা বেবস্থা করে আসতে পারি।

- এহ, শখ কত, কিছু একটা হয়ে আয়। আর আপাতত জরিমানা হিসেবে Mr. NR² একটা গান শুনাবে। আর ভুলেও যদি মন খারাপ করা গান গাছিস, তাইলে রিক্সা থেকে ফেলে দেব। মনে রাখিস। নে এখন শুরু কর।

বাহ, নামের প্রসার বহুদুর পর্যন্ত চলে গেছে। শ্রীকান্তের আমার সারাটা দিন, মেঘলা আকাশ গানটা গাইছি। এখনও বৃষ্টি ঝরছে। আমার কাঁধে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে নীল গান শুনছে। এমন মনোযোগ দিয়ে এর আগে কেউ আমার গান শুনেছে বলে মনে পড়ে না।

আজ প্রথম আমার বৃষ্টি অনেক ভালো লাগছে। আজ প্রথম মনে হচ্ছে, বাবার কথাই ঠিক ছিল, আমি গানের জগত থেকে অনেক দূরে আছি। কারন, এমন একজন শ্রোতার জন্যে এমন হেরে গলায় গান সম্পূর্ণ রুপেই অবিচার। গান শেষে ভাবছি, আমি কি স্বপ্নের ঘোরে আছি? নীলকে পেয়েছি, তার ভালবাসাটাও পেয়েছি, একবারও বলতে হয়নি তাকে ভালোবাসি। - রোদ - হুম - তুই কিন্তু এখনও বলিসনি আমাকে ভালবাসিস কি না।

- এখনও কিছু বলে বুঝাবার বাকী আছে? - জানিনা। - হুম, অনেক বৃষ্টি অনুভব করা হইছে। চল, এখন বাসায় ফিরি। নয়তো অসুখ বাধিয়ে ফেলবি। - তুই পাশে থাকলে আমার কখনই কিছু হবেনা রে।

- হলেও সমস্যা নেই, ইঞ্জিনিয়ার তো, ঠিক করে নেব। বৃষ্টির জোরটা বোধহয় আরেকটু বেড়েছে। মাঝে মাঝেই বজ্রপাত হচ্ছে আর নীল আমাকে খামচে ধরছে। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ২০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।