আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

লুলীয় অনুগল্পঃ টেকনিশিয়ান

আমার চোখে ঠোটে গালে তুমি লেগে আছো !! -এনাফ ইজ এনাফ ! -কি হল আবার ? আমি তো জানি বাঙ্গালীরা কোন কিছুতেই সন্তুষ্ট না । তুমি বলছো এনাফ ! আর লাগবে না ? নিশি আমার দিকে চোখ গরম তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষন ! -আরে কি হয়েছে বলবা তো ? -তোমার কাছে মনে হচ্ছে আমি ফান করছি ? -না । মোটেই না ! আমার কাছে মনে হচ্ছে তো তুমি বেশ সিরিয়াস ! কি হয়েছে বলতো ? -তোমার আসার কথা কয়টায় ? -কেন পাঁচটায় ? -এখন কটা বাজে ? -কেন পাঁচটা বাজে । -এখন পাঁচটা বাজে ? ভাল করে দেখো ! ঘড়ি কোথায় তোমার ? -আরে এই যুগে কেউ ঘড়ি পরে নাকি ! আমার কাছে মোবাইল আছে না ! আমি মোবাইল বের করে দেখালাম । -এই দেখো ! পাঁচটা বাজতে এখনো পাঁচ মিনিট বাকি ! নিশি খানিকটা অবাক হয়ে আমার হাতের মোবাইলটা নিল ! কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো মোবাইলের স্ক্রীনের দিকে ।

চোখে খানিকটা অবিশ্বাস ! কিছুক্ষন পরেই নিশি আরো রেগে গেল ! আমার দিকে তাকিয়ে বলল -তুমি আমার সাথে ফাজলামী কর ? -আরে ফাজলামীর কি করলাম ? তোমাকে সময় দেখালাম ! এখানে ফাজলামীর কি দেখলা ? -এখন পাঁচটা বাজে ? -আরে আমি তোমাকে প্রমানই দেখলাম ! -দেখো মেজাজ গরম করাবা না ! খবরদার বলতেছি ! নিশির দিকে তাকিয়ে দেখি ও আসলেই খানিকটা রেগে গেছে ! আমার দিকে ওর হাত ঘড়িটা বাদিয়ে দিয়ে বলল -দেখো ! আমি ওর ঘড়ির দিকে তাকালাম ! নিশি নতুন ঘড়ি কিনেছে টাইটান থেকে ! সাদা রংয়ের ! ওর মামা নাকি কিনে দিয়েছে । ঘড়ি কিনেছে তা আমাকে বারবার দেখানোর কি হল ! -কটা বাজে ? আমি ঘড়ির দিকে তাকালাম ! মনে হয় টাইমটা ঠিক দিচ্ছে না । দামী ঘড়ি হলেও সময় ঠিক মত দিবে এর কোন মানে নাই ! আমি বললাম -তোমার এই ঘড়ির সময় তো ভুল ! নিশির আমার কথার জবাব না দিয়ে বলল -কয়টা দেখাচ্ছে সেইটা বল ! -ছয়টা চল্লিশ ! -আর তোমার ঘড়িতে কয়টা বাজে ? -চারটা ৫৫ ! দেখো এমন হতে পারে যে তোমার ঘড়ির টাইম ঠিক দিচ্ছে না ! একটু সময় এগিয়ে গেছে ! -তাই ? -হুম ! অবশ্যই ! এমন হতে পারে না বল ? কোন কারনে মন কর ব্যাটরী ডাউন হয়ে গেল ! -ব্যাটারী ডাউন হলে ঘড়ি তো স্লো হওয়ার কথা ! দের ঘন্টা এগুলো কিভাবে ? -না মানে ? ব্যাটারী ডাউন নাও হতে পারে । মনে কর ব্যাটারীতে চার্য বেশি হয়ে গেল ! তাই ঘড়ির কাটা জলদি জলদি দৌড় দিল । -কিভাবে শুনি ? আমি একটু চিন্তা করলাম ! কি বলা যায় ! তারপর বলল -আরে ঘড়িটা তোমার সংস্পর্শ পেয়েছে না ? -মানে ? -আরে মনে কর আমি যখন তোমার সাথে দেখা করতে আসি, শত গাড়ির জ্যাম, গাড়ির হর্ণ তারপর বাসের ভিতর ভিড় সব কিছুতেই একটা বেহাল দশা ! শরীরে একদম এনার্জি থাকে না ।

কিন্তু যখনই তোমাকে দেখি শরীরে আলাদা একটা এনার্জি চলে আসে ! নিশি আমার দিকে তাকিয়ে রইলো ! আমি বলেই চললাম -আরে বুঝলে না ! তোমাকে দেখলে আমার যেমন একটা জোশ চলে আসে তেমনি তোমার সংস্পর্শে ঘড়ির ব্যাটারীর চার্য বেড়ে গেছে ! বুঝেছোই তো ! মেয়ের সংস্পর্শে আসলে যা হয় আর কি !! নিশি কিছুক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে চোখ গরম করে তাকিয়ে রইলো আমার দিকে ! -তুমি একটা মানুষই ! -আরে সত্য বলছি ! -হুম হয়েছে ! তুমি আর কত টেকনিক বের করবা বল তো ? -টেকনিক ? এসব কি বল ? তোমার ঘড়ি ফার্ষ্ট হয়েগেছে এটাও আমার দোষ ? -দেখো ! ফালতু কথা বলবা না ! বলছি ! মেজাজ গরম আছে আর গরম করাবা না ! -আচ্ছা তোমার বিশ্বাস হচ্ছে না ? আচ্ছা ঠিক আছে ! আসো আগে চা খাই ! আগুন গরম চা খেয়ে মাথা ঠান্ডা করি । তারপর আবার ঝগড়া করবো । ঠিক আছে ! আসো ! আরে আসো ! আমি নিশির হাত ধরে ওকে উঠিয়ে নিয়ে সামনের চায়ের দোকানের দিকে রওনা দিলাম ! মাথার ভিতর একটাই চিন্তা খেলা করছে ! প্রাথমিক ঝড়টা সামলানো গেছে কোন মতে । এখন সামনে আরো কি করা যায় দেখা যাক ! দুপুর বেলা এমন ঘুম চলে আসবে বুঝতেই পারি নি । ঘুম থেকে উঠেই দেখি পাঁচটা বেজে গেছে ।

কোন রকমে হাত মুখে পানি দিয়েই দৌড় দিয়েছিলাম । তবুও জানতাম শেষ রক্ষা হবে না ! বাসের ভিতরে বসে বসে ভাবছিলাম কিভাবে নিশিকে দেরি হওয়ার ব্যাপারটা বোঝবো ! ঘুমানোর কথা বলা যাবে কারন তাহলে ও তুল কালাম কান্ড ঘটিয়ে ফেলবে । কি করবো ভাবছিলাম তখনই পাশে বসা লোকটার দিকে চোখ গেল । লোকটা নিজের মোবাইলের ব্যাটারী খুলে সীম বদলালো ! টাইম ঠিক করার জন্য আমার কাছে সময় জানতে চাইলো ! তাখনই মাথায় আইডিয়াটা এল ! আমি আমার মোবাইলের ঘড়ি টাইম দেড় ঘন্টা পিছিয়ে দিলাম । আর মনে মনে ঠিক করতে লাগলাম নিশিকে কি কি বলবো ! -কি ? কি ভাবছো ? -না মানে এটা কিন্ত একটা যুগান্তকারী আবিস্কার ! এতো দিন মানুষ কেবল ঘড়ি টাইম পেছানোর কথা শুনছে ।

আজকে তারা শুনবে ঘড়ির টাইম এগুনোর কথা ! -শুনো ! ফালতু প্যাচাল বন্ধ কর ! তোমার বুদ্ধি আমি ধরে ফেলেছি ! এখন সত্যি করে বল কেন দেরি করেছো ! তোমাকে বেশ কয়েকবা রফোন দিয়েছিলাম । তুমি ধরনি ! আমি একটু মাথা চুলকালাম ! -সত্যি বলবো ? -হুম ! -আমি না ঘুমিয়ে পড়েছিলাম ! -ঘুম ? -আসলে কাল রাতে তুমি আমার সাথে অনেক্ষন ঝগড়া করলে না ? -আমি ঝগড়া করেছি ? -না না না ! আরে তুমি না ! আমাদের মাঝে কাল রাতে যে যুক্তিযুক্ত আলোচনা হল আর কি ! -দ্যাটস বেটার ! তারপর ? -তারপর আর কি ? ফোন রাখার পর ঘুম আসতে দেরী হয়েছিল ! তারপর আজকে ক্লাস করে খুব ক্লন্ত লাগছিল খুব ! একটু শুয়েছি আর ....... নিশি চুপ করে কিছুক্ষন বসে রইলো আমার হাত ধরে ! -এই কথাটা বলা যেত না ? -না মানে সাহস হচ্ছিল না ! তাই টেকনিক খাটিয়েছি ! -আহারে আমার টেকনিশিয়ান ! নতুন থিওরী নিয়ে এসেছে । তুমি পারও বটে !! এমন হাস্যকর কথা কেবল তুমিই বলতে পারো । -কাজ তো হয় ! -ছাতা হয় ! চলতে থাকে আমাদের কথার ফুলঝুড়ি ! যাক এই যাত্রায় ঝামেলা দুর হল ! আপনারাও এই টেকনিক প্রয়োগ করতে পারেন ! প্রথমিক ধাক্কা কাটলেও কাটতে পারে ! Click This Link ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১১ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।