অনেক আশা নিয়ে তারা গিয়েছিল চোখের অপারেশন করাতে। কিন্তু অপারেশনের পর তারা চিরতরে তাদের চোখের দৃষ্টি হারল!!!!
হবিগঞ্জের একটি হাসপাতালে চোখের ছানি অপসারণের ২০ দিন পরও ১৩ জন রোগী দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাননি। তাঁদের চোখে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভূত হচ্ছে। কারও কারও চোখ দিয়ে রক্ত ঝরছে। এ নিয়ে রোগী ও স্বজনেরা আতঙ্কে আছেন।
চক্ষু বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের অস্ত্রোপচারের এক দিন পরই রোগীরা দেখতে পাওয়ার কথা। রোগীদের সবার বাড়ি জেলার বানিয়াচং উপজেলায়। একসঙ্গে ১৩ জন রোগীর ক্ষেত্রে এমন ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করে একাধিক চক্ষু বিশেষজ্ঞ প্রথম আলোকে বলেন, রোগীদের ক্ষেত্রে সংক্রমণের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ১০ জুন হবিগঞ্জ জাসপোস আধুনিক চক্ষু হাসপাতালে বানিয়াচংয়ের ৫২ জন রোগীর বিনা মূল্যে ছানি অস্ত্রোপচার করা হয়। হাসপাতালের চক্ষু বিশেষজ্ঞ মো. আবু জাফর ওই দিন একাই ৫২ জনের অস্ত্রোপচার করেন।
এঁদের মধ্যে ১৩ জন এখনো দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাননি। হাসপাতালের চিকিৎসক ও কর্তৃপক্ষের দাবি, রোগীরা বাড়ি যাওয়ার পর ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তবে রোগীরা পুনরায় দৃষ্টি ফিরে পাবেন কি না, এ নিয়ে কিছু বলতে পারছেন না তাঁরা।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকার দুজন চক্ষু বিশেষজ্ঞ বলছেন, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে অস্ত্রোপচার করা হলে সংক্রমণ অস্ত্রোপচারের সময়ও হতে পারে। লক্ষণ শুনে মনে হচ্ছে, যে চোখে রোগীদের অস্ত্রোপচার হয়েছে, সে চোখে তাঁদের দেখার সম্ভাবনা ক্ষীণ।
কারণ, এ ধরনের অস্ত্রোপচারের পরদিনই রোগীর দেখতে পাওয়ার কথা।
ওই ১৩ রোগী হলেন—বানিয়াচং উপজেলা সদরের ছিলাপাঞ্জা মহল্লার মহরম বিবি (৬৮), পাড়াগাঁওয়ের জাহারা খাতুন (৬০), মহব্বতখানীর মসতুরা ঠাকুর (৬৪), এশাদ উল্লাহ (৭৬), আলেক চান বিবি (৭০), দোয়াখানীর শ্রীচরণ নমশূদ্র (৬০), সুদস্য রানী সরকার (৬৫), চান্দের মহল্লার রাবিয়া খাতুন (৬৫), তাতারীর মুলুকজান বিবি (৬২), বানেশ্বর বিশ্বাসের পাড়ার ফরচান বিবি (৭০), প্রথমরেখ মহল্লার লেচু মিয়া (৭০), জাতুকর্ণপাড়ার আতাবুর রহমান (৭৫) ও আলাউদ্দিন মিয়া (৬৮)। এঁদের মধ্যে সাতজন গত ২৯ জুন আবারও জাসপোস হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। বাকি রোগীদের হাসপাতালে আনা হচ্ছে।
বানিয়াচংয়ের জাতুকর্ণপাড়ার রোগী আতাবুর রহমান জানান, তাঁর বাঁ চোখে অস্ত্রোপচার হয়েছে।
এখন ওই চোখে একেবারেই দেখতে পাচ্ছেন না। চোখে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করছেন। সঙ্গে রক্তও পড়ছে।
জানতে চাইলে জাসপোস আধুনিক চক্ষু হাসপাতালের শল্যচিকিৎসক মো. আবু জাফর বলেন, ‘অস্ত্রোপচারের পর রোগীদের ভিশন পরীক্ষা করেই ছাড়া হয়েছে। তাঁরা বাড়িতে যাওয়ার পর চোখে সংক্রমণ হয়েছে।
অস্ত্রোপচারে কোনো সমস্যা হলে তা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ধরা পড়ত। তার পরও আমরা রোগীদের ঢাকা সরকারি চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে পাঠাব। ’
রোগীদের ভালো হওয়ার ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করে হবিগঞ্জ জাসপোস হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিকুল বারী আউয়াল জানান, তাঁর ধারণা রোগীরা বাড়িতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকায় এ সমস্যা তৈরি হয়েছে।
বানিয়াচং সদরের আলম নামে এক ব্যক্তি জানান, দৃষ্টি ফিরে না পাওয়া তাঁর এক আত্মীয় এশাদ উল্লাকে কয়েক দিন আগে মৌলভীবাজার বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেখানকার চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তাঁর রোগী আর দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাবেন না।
রোগীকে চট্টগ্রাম নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
বিএনএসবি হাসপাতালের পরিচালক মোজাহিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই রোগী দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাবেন না—এমন মন্তব্যের বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে কয়েকজন রোগীকে চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ’
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।