রোজার মাস নিজেকে পবিত্র ও পাপমুক্ত করার মাস। রোজার পরে আসে ঈদ। ঈদ সবার জন্যে আনন্দের সবার মনে খুশির জোয়ার বয়ে চলে ঈদের চাঁদ দেখে।
আমার নানী আগেরকার দিনের মানুষ। টাকা চিনতো না।
নানী আমাকে খুব ভালবাসতো। আমি বাড়ী গেলে নানী আমার কাছে আর কিছু না শুধু দুই টাকার পান দাবী করবো। দুনিয়ায় নানীর আর কোন চাওয়া পাওয়া ছিল না। পান পাইলে সব কষ্ট ভুলে যেত আমার নানী। নানীর বয়স ৯০ বছর।
হাটাচলা করতে পারতো। একদিন নানী গোছল করতে পুকুরে নামলো, আমার মা ঘাটে বসা। নানী ডুব দিয়ে আর ওঠে না। মায়ের বুক কেপেঁ উঠলো, মা পানিতে নেমে নানীকে তুলে ধরে চিৎকার করতে শুরু করলো। মামিসহ আরো কয়েকজন এসে নানীকে তুলে নিয়ে আসলো।
নানী অবচেতন। পানিতে স্টোক করেছে। সবাই কাঁদছে। আমি তাড়াতাড়ি এসে নানীকে খুলনা স্যার্জিক্যালে নিয়ে গেলাম। সিটি স্ক্যান করালাম।
ব্রেন এর একসাইড ব্লোক হয়ে গেছে। কিছু করার নেই। ডাক্তার ঔযধ দিলেন। নানীকে বাড়ী নিয়ে আসলাম। ২১ দিন নানীকে বাথরুম করানো, ইনজেকশান দেওয়া স্যালাইন দেওয়া, সব আমি করতাম।
নানী আমাকে অননেক আদর করতো। ভালবাসতো। শেষ যেদিন নানী পরপারে যাবে সেদিন সকালে যথারিতী নানীকে গোছল দিয়ে শুয়ে রাখলাম। আমার মামাতো বোন এর কোলে নানীর মাথা। নানী কেমন যেন করতে লাগলো।
আমি বুঝতে পারছি নানী আর আমাদের মাঝে থাকবে না। আমি বারান্দায় বসে আছি হতবম্বের মত। সবাই চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করলো। মা আমাকে ডাকলো- এই দিকে আয়, তোর নানী তোমাকে খুজছে। আমি যেয়ে নানীকে আমার কোলে নিলাম।
আমাকে দেখে নানী হাসলো। আমাকে কি যেন বললো। তারপর নানী কলেমা পড়ে আল্লাহর কাছে চলে গেল। এই রোজার মাসে নানী আমাদের কাদিয়ে চলে গিয়েছিল। প্রতি ঈদে নানী আমাকে টাকা দিত।
নামাজ পড়তে যাবার আগে আচলে বাঁধা টাকা খুলে আমাকে দিয়ে বলতো দুটাকা নে। পাপড় কিনে খাস। নানীর দুটাকা দুটাকা না। যা থাকতো সব টাই দুটাকা। নানী নাই।
ঈদের নামাজ পড়তে যাবার আগে নানীকে খুব মনে পড়ে। দুটাকা কেউ দেয় না। বারান্দায় বসে নানীকে মনে করে মা আর আমি কাদি। তারপর নামাজ পড়তে যাই। খালি হাতে যাই।
কেউ আমাকে দুটাকা দেয় না। পাপড় কিনে খাইতে বলে না। আমার নানী..........আমাকে দিয়ে গেল চোখের জলের ঈদ। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।