আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চোখের আলো নেই বলে...

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে এমএ করেছেন তিনি। চাকরির সব শর্তও পূরণ হয়েছে। এর পরও মিলছে না চাকরির জন্য অনুষ্ঠেয় পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ। আসেনি প্রবেশপত্র। দোষ তাঁর একটাই—চোখের আলো নেই।

দেখতে পান না তিনি।
অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেডে চাকরির আবেদন করে আশাহত এই প্রার্থী ফারজানা আক্তার। এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়ার পর চোখের সমস্যা থেকে তিনি এখন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী।
অগ্রণী ব্যাংকে অফিসার (ক্যাশ) পদের জন্য আবেদন করেছেন ফারজানা। সংশ্লিষ্ট পদের লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা আগামী শুক্রবার।

অন্যরা সবাই প্রবেশপত্র পেয়েছেন। তবে ফারজানা এখনো পাননি।
ফারজানা প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, ‘ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট পদে আবেদন করতে যা যা চাওয়া হয়েছে, সব যোগ্যতাই আমার আছে। চাকরির বিজ্ঞাপনে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষেত্রে বয়স ৩২ বছর নির্দিষ্ট করা থাকলেও প্রতিবন্ধীদের জন্য কিছু বলা হয়নি। আমার বয়স ৩১ বছর চলছে।

সরকারের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, প্রতিবন্ধীরা ৩২ বছর পর্যন্ত চাকরির জন্য আবেদন করতে পারবেন। সে অনুযায়ী আমি আবেদন করি। তবে বয়সের কথা বলে আমাকে প্রবেশপত্র দেওয়া হচ্ছে না। ’
গত বছরের ২৮ মে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিধি-১ শাখা থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সরকার প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে সরকারি-আধা সরকারি দপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত-আধা স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা, প্রতিষ্ঠান ও করপোরেশনের চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩০ বছরের পরিবর্তে ৩২ বছর নির্ধারণ করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব আবদুস সোবহান সিকদারের সই করা ওই বিজ্ঞপ্তিতে সব মন্ত্রণালয় বা বিভাগকে তাদের অধীনের সব পর্যায়ের নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষকে কার্যক্রম গ্রহণেরও অনুরোধ জানানো হয়েছে।


ফারজানা বলেন, ‘ব্যাংকে চাকরি পাব কি পাব না, তা পরের কথা। কিন্তু আগে আমাকে পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগটা দিতে হবে। আমাকে তো সে সুযোগই দেওয়া হচ্ছে না। এ ছাড়া আমাদের জন্য তো চাকরির আলাদা বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয় না। আমরা ব্যাংকসহ বিভিন্ন জায়গায় অফিসার পদে আবেদন করি।

তারপর লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে যে কাজটি আমাদের জন্য সুবিধাজনক, সে ধরনের কাজে নিয়োগ দেওয়ার নজির আছে। ’
অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান খন্দকার বজলুল হক টেলিফোনে প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, ‘প্রবেশপত্র না পাওয়ার কী কারণ আছে, তা আমার জানা নেই। সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে প্রতিবন্ধীদের জন্য বয়সের কথা উল্লেখ থাকলে প্রবেশপত্র দিতে বাধ্য। ’
তবে বজলুল হক বলেন, ‘দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হলে ব্যাংকে কাজ করা সম্ভব নয়। এটা অসম্ভব।

যে বাকপ্রতিবন্ধী তাঁকে তো আর শিক্ষকতার চাকরি দেওয়া যাবে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ পাস করা এক জিনিস, আর ব্যাংকে চাকরি করা অন্য জিনিস। এর পরও তাঁর প্রতি যদি অন্যায় করা হয়ে থাকে, তিনি যেন আমার বরাবর আবেদন করেন। অন্যদের সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি দেখা হবে। ’
হাতে আছে আর মাত্র একটি দিন।

শেষ মুহূর্তে প্রবেশপত্র পেলেও পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন কি না, তা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ফারজানা। কারণ, প্রবেশপত্র পাওয়ার ওপর নির্ভর করছে শ্রুতিলেখক ঠিক করার বিষয়টি। এরপর কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে শ্রুতিলেখকের বিষয়ে অনুমতি পাওয়ার ঝামেলা তো আছেই।
ব্যাংকের এ পদটির জন্য ফারজানা যে আবেদনপত্র পূরণ করেছেন, সেখানে উপজাতি, মুক্তিযোদ্ধা এবং প্রতিবন্ধী কোটার কথা উল্লেখ ছিল।
জাতীয় প্রতিবন্ধী ফোরামের সভাপতি রজব আলী খান নজিব প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, ‘চাকরির বিজ্ঞপ্তিতে যেসব যোগ্যতা চাওয়া হয়েছে, সে সব যোগ্যতা থাকলে প্রবেশপত্র দিতেই হবে।

প্রতিবন্ধী বলে প্রবেশপত্র পাবেন না, তা মানা যায় না। আমার জানামতে, কৃষি ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংকে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী নারীরা কাজ করছেন। এ ক্ষেত্রে শুধু প্রয়োজন সহকর্মীদের মন-মানসিকতার পরিবর্তন এবং একটু সহযোগিতা। ’।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com     দেখা হয়েছে ১৩ বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.