বেসরকারী নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি ট্রাস্টের চেয়ারম্যান এম এ হাসেম একসময়ের তামাক ব্যবসায়ী হলেও বর্তমানে তিনি বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় শিল্পপতি। স্বাধীনতার আগে তামাক ব্যবসায়ী হিসেবে যাত্রা শুরু করেছিলেন। স্বাধীনতার পর পণ্য আমদানির ব্যবসায় নাম লেখান তিনি। তারপর আর পেছন ফিরে তাকাননি।
ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তিন দশকে গড়ে তোলেন পারটেক্স গ্রুপের একের পর এক প্রতিষ্ঠান।
অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এম এ হাসেম যোগ দেন বিএনপিতে। এরপর তাঁর ব্যবসার আরও স্কীতি ঘটে। বিলাসবহুল গাড়ি, জমি দখলসহ নানা ঘটনায় তিনি হয়ে ওঠেন আলোচিত। দেশে জরুরি অবস্থা জারির পর সন্দেহভাজন দুর্নীতিগ্রস্তদের যে দ্বিতীয় তালিকা প্রকাশ করা হয় তাতে এম এ হাসেমের নাম ছিল।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে পারটেক্স গ্রুপের অধীন মোট ২০টি কোম্পানি পরিচালিত হচ্ছে।
এসব কোম্পানির তালিকায় স্টার পার্টিকেল বোর্ড মিলস, ড্যানিশ কনডেন্সড মিল্ক বাংলাদেশ, ড্যানিশ ফুড প্রোডাক্টস, ড্যানিশ মিল্ক বাংলাদেশ, আম্বার কটন মিলস, আম্বার পাল্প অ্যান্ড পেপার মিলস, পারটেক্স বেভারেজ, পারটেক্স ফার্নিচার ইন্ডাস্ট্রিজ, ড্যানিশ ডিস্ট্রিবিউশন নেটওয়ার্ক, পারটেক্স প্লাস্টিক, রুবেল স্টিল মিলস, পারটেক্স রিয়েল এস্টেট, স্টার ভেজিটেবল ওয়েল মিলস, স্টার কোকোনাট মিলস, ঢাকা কম লিমিটেড, করভি মেরিটাইম কোম্পানি, ফটোরোমা লিমিটেড, ফিরোটেকনিক লিমিটেড, হাসেম করপোরেশন ও পারটেক্স লিমিটেড। এসব কোম্পানিতে হাজার কোটি টাকার পুঁজি লগ্নি রয়েছে। তবে নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, পারটেক্স গ্রুপের বেশ কিছু কোম্পানির মালিকানায় এম এ হাসেম আর নেই। এগুলো তাঁর দুই ছেলে আজিজ আল কায়সার ও রুবেল আজিজের মালিকানায় দিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁরা বর্তমানে এসব কোম্পানির মালিক ও পরিচালক।
এম এ হাসেম শুধু পারটেক্স হোল্ডিংয়ের মালিকানায় থাকা কোম্পানিগুলোর মালিক। যদিও এসব পৃথক্করণের সব আনুষ্ঠানিকতা এখনো শেষ হয়নি।
যৌথ মূলধনী কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, স্বাধীনতার পর এম এ হাসেমের প্রথম কোম্পানি ছিল হাসেম ট্রেডিং করপোরেশন। দীর্ঘ তিন দশক ধরে এই কোম্পানি তেল, আটা, গম, চিনিসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর অন্যতম আমদানিকারক। এই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দ্রব্যমূল্য অস্থিতিশীল করার অভিযোগ উঠেছে।
আশির দশকের শুরুতে সামরিক সরকার যখন ঢালাওভাবে শিল্পায়নের নীতি গ্রহণ করে তখন এম এ হাসেম গড়ে তোলেন স্টার পার্টিকেল বোর্ড। ১৯৮৩ সালে এটি শিল্প হিসেবে যাত্রা শুরু করে। সামরিক সরকারের আমলে তিনি আরও গড়ে তোলেন পারটেক্স লিমিটেড, স্টার ভেজিটেবল অয়েল ও রুবেল স্টিল মিলস।
নব্বইয়ের দশকের শুরুতে তিনি সম্পর্ক গড়ে তোলেন তৎকালীন ক্ষমতাসীন দল বিএনপির সঙ্গে। আম্বার কটন মিলস, আম্বার পাল্প অ্যান্ড পেপার মিলস, পারটেক্স বেভারেজ, পারটেক্স রিয়েল এস্টেট, ড্যানিশ মিল্কের মতো কোম্পানি গড়ে তোলেন ১৯৯২ থেকে ১৯৯৫ সময়ে।
আওয়ামী লীগের আমলে তিনি এতটা দ্রুতগতিতে না এগোলেও থেমে থাকেননি। ঢাকা কম, ড্যানিশ ডিস্ট্রিবিউশন নেটওয়ার্ক ও পারটেক্স প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রিজ গড়ে তোলেন এ সময়। ২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এম এ হাসেম যোগ দেন বিএনপিতে। বিপুল অর্থ খরচ করে নোয়াখালী-২ (বেগমগঞ্জ-সোনাইমুড়ী) আসনের সাংসদ নির্বাচিত হন। সাংসদ হয়ে এম এ হাসেম নতুন আরও ব্যবসা খোলার পাশাপাশি নজর দেন জমি সংগ্রহের ওপর।
আমাদের নোয়াখালী প্রতিনিধি জানান, নোয়াখালীর উপকূলীয় চরাঞ্চলে ২০০ একর সরকারি খাসজমি দখল করে মৎস্য প্রকল্প গড়ে তোলেন। চৌমুহনীতে নিজ নামে মেডিকেল কলেজ করার অজুহাতে ২৫ একর জমি দখল করে নেন বলে অভিযোগ আছে, যার আনুমানিক মূল্য ৫০ কোটি টাকা। এ ছাড়া ময়মনসিংহের ভালুকায় ৪৭ একর বনের জায়গা বেআইনি দখলের অভিযোগ আছে এম এ হাসেমের বিরুদ্ধে। ২০০৩ সালে বনের জায়গা ঘিরে পারটেক্স গ্রুপের সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেওয়া হয়। ২০০৪ সাল থেকে বন বিভাগ এই জমি উদ্ধারের চেষ্টা করছে।
ভালুকার হবিরবাড়ী বিটের কর্মকর্তা ২০০৪ সালের ৪ জানুয়ারি ভালুকা থানায় জবরদখলের অভিযোগে থানায় জিডি করেন। একই মাসের ২৬ তারিখে আরও একটি জিডি করা হয়। পরের বছর ময়মনসিংহ জেলা যুগ্ম জজ আদালতে মামলা দায়ের করে বন বিভাগ। মামলায় এম এ হাসেম প্রধান আসামি।
সর্বশেষ এই ব্যক্তিকে দেখা গেলো নোবেল জয়ি ড. ইউনুসের সঙ্গে।
সম্মানিত ড. ইউনুস এসব ব্যক্তিবর্গকে নিয়ে সামাজিক ব্যবসায় কতটা সফল হবে?
তথ্য সূত্র: প্রথম আলো, ২৯ মে ২০০৭ দেখুন:
আরো দেখুন: জিজ্ঞাসাবাদে হাসেম: ঢাকা ও আশপাশে পাঁচ শ বিঘা জমি অবৈধ দখলে ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।