একদিন তুমি ডাক দেবে, আমি প্রতীক্ষায় আছি প্রতিদিনই নানা কারণে মৃত্যু ঘটছে হাজারো মানুষের, সেই সাথে মৃত্যু হচ্ছে তাদের অবাস্তবায়িত হাজারো স্বপ্নের। জন্মিলে মরিতে হইবে এটাই প্রকৃতির নিয়ম কিন্তু, প্রশ্ন এসে দাঁড়ায় তখনই, যখন মানুষ নিজেই নিজের মৃত্যুকে ডেকে নিয়ে আসে। আর সেই মৃত্যু দূতকে আসার পথ প্রশস্ত করে দিতে হাতে নেয় মরণ নেশা সিগারেট, বিড়ি এমনকি গাজা হেরোইন’র মত মাদক। হাজারো পরিবারের তিলে তিলে গড়া স্বপ্ন ধুলিস্মাত হয়ে যায়। কিশোর বয়সে অনেকে বন্ধুদের সাথে সিগারেটে এক-দু’টান দিতে দিতে অবশেষে চেইন স্মোকারে পরিণত হয়।
আমাদের দেশের ১৫ বছরের বেশি বয়স্কদের মধ্যে ৩৬.৮ভাগ (৩ কোটি ২৩ লক্ষ জন) কোন না কোন ভাবেই তামাক ব্যবহার করছেন। এর মধ্যে রয়েছে বিড়ি, সিগারেট, হুক্কা, জর্দা, গুল, সাদাপাতা ইত্যাদি। আর এই তামাকজাত পন্যের ব্যবহারের পরো শিকার হয়ে প্রতিবছর হাজার হাজার অধুমপায়ী মারা যান এবং চিরতরে পঙ্গুত্ব স্বীকার করতে হয় অনেকেই। তামাক ব্যবহারের প্রত্যক্ষ ফল হিসাবে বাংলাদেশে প্রতি বছর ৩০ বছরের বেশি জনগোষ্ঠির মধ্যে ৫৭,০০০ মানুষ মৃত্যুবরণ করে এবং ৩,৮২,০০০ জন স্থায়ী পঙ্গুত্ববরণ করেন। তামাক প্রস্তুতকারক কোম্পানীগুলো বাংলাদেশের কৃষকদের নানান সুযোগ সুবিধা দেয়ার কথা বলে তামাক চাষে উদ্ধুদ্ধ করছে।
ফলে কৃষকেরা বেশি মুনাফা লাভের আশায় ফসলী জমিতে তামাক চাষ করছেন। অথচ যে দেশে খাদ্য ঘাটতি নিত্যসঙ্গী, সে দেশে ৪৯,০০০ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হচ্ছে প্রতি বছর এবং দিন কে দিন এর চাষের হার বেড়ে চলেছে। যার প্রভাব পড়ছে আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে।
তামাক ব্যবহারের ফলে যেসব প্রাণঘাতি অসুখ হয় তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ক্যান্সার। যা আমরা সবাই জানি, কিন্তু মানি না।
এই তামাকে রয়েছে ক্ষতিকারক দ্রব্য বেনজোপাইরি। যা প্রাণীদেহে ক্যান্সার উৎপাদনকারী একটি রাসায়ণিক। এছাড়া হৃদরোগ, হার্টএটাক, হাঁপানী, দাঁতের ক্ষয়, কম ওজনের শিশু জন্ম, সময়ের আগে জন্ম নেয়া, গর্ভস্থ সন্তানের মৃত্যু ইত্যাদি নানান রোগের অন্যতম কারণ তামাক। ২০০৪ সালের এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, তামাক ব্যবহারের ফলে ১২,০০,০০০ লক্ষ মানুষ তামাক ব্যবহার জনিত প্রধান ৮টি রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। রোগীদের ২৫ ভাগ মাত্র হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন ধরে নিয়ে হিসাব কষলে দেখা যায় এর ফলে বছরে দেশের অর্থনীতিতে ৫০০০ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে।
অন্যদিকে তামাক খাত থেকে বছরে আয় হচ্ছে ২৪০০ কোটি টাকা। সুতরাং তামাক ব্যবহারের ফলে দেশের অর্থনীতিতে বছরে মোট ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ২৬০০ কোটি টাকা।
মজার বিষয় হল, তামাক ব্যবহারের ক্ষেত্রে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও তেমন পিছিয়ে নেই। প্রতিনিয়তই বাড়ছে নারী তামাক ব্যবহারকারীর সংখ্যা। নারীরা ধোয়া জাতীয় তামাক ব্যবহার তুলনামূলক কম করলেও ধোয়াবিহীন তামাক ব্যবহারের ক্ষেত্রে পুরুষের তুলনায় তারা অনেক এগিয়ে।
বাংলাদেশের ৪৩ ভাগ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তামাক সেবন করেন। অর্থাৎ দেশে বর্তমান তামাক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৪কোটিরও বেশি। এদের মধ্যে নারী ২৯ ভাগ এবং পুরুষের মধ্যে ৫৮ ভাগ। আবার ধোয়াবিহীন তামাক ব্যবহারের ক্ষেত্রে নারীরা ২৮ ভাগ এবং পুরুষ ২৬ ভাগ। ৪৫ ভাগ পুরুষ এবং ১.৫ ভাগ নারী সিগারেটের মাধ্যমে ২১ ভাগ পুরুষ ও ১.১ ভাগ নারী বিড়ির মাধ্যমে ধুমপান করেন।
তবে পুরুষের ধুমপানের ফলে নারীদের ও শিশুদের পরোক্ষ ধুমপানের শিকার হওয়ার হার সবচেয়ে বেশি। সর্বোপরি ধুমপান না করেও পরোক্ষ ধুমপানের শিকার হচ্ছেন বাংলাদেশের ১ কোটিরও বেশি নারী ও শিশু।
২০০৫ সালে বিশ্বের অনেক দেশের মত বাংলাদেশেও ধুমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন পাশ হয়। ২৬ শে মার্চ ২০০৫ হতে এই আইন কার্যকর হয়। এই আইনে পাবলিক প্লেস এবং পাবলিক পরিবহনে ধুমপান নিষিদ্ধ করা হয়।
এ বিধান লংঘন করলে ৫০ টাকা জরিমানা করার বিধান রয়েছে। এছাড়াও তামাকজাত পণ্যের বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ। তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার উৎসাহিত করার উদ্দেশ্যে কোন পুরস্কার, বৃত্তি প্রদান, স্পন্সর, কোন টুর্নামেন্টের আয়োজন বা বিনামূল্যে নমুনা প্রদান নিষিদ্ধ করা হয়েছে। উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেটে ৩০ ভাগ জায়গা পরিমান স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সতর্কবাণী ব্যবহার করবে। কোন ব্যক্তি এসকল বিধান লংঘন করলে অনুর্ধ ৩ মাস বিনাশ্রম কারাদন্ড বা অনোধিক ১০০০ টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন।
ব্যক্তি অর্থে কোম্পানি সমিতি বা সংস্থা অন্তর্ভূক্ত হবেন।
২০০৫ সালে উল্লেখিত আইনের আওতায় যা দেয়া তার বাস্তবায়ন বর্তমানে তেমন নেই বললেই চলে। তাছাড়া বিদ্যমান আইনে ধোয়াবিহীন তামাকের ক্ষেত্রে কোন বিধান দেয়া নেই। তাই ধোয়াবিহীন তামাক ও আইনের আওতায় এনে যথাযথ আইনের বাস্তবায়ন জরুরি হয়ে পড়েছে এবং একই সাথে তামাকজাত পণ্যের ওপর মুদ্রাস্ফীতির চেয়ে অধিক হারে করের হার বৃদ্ধি ও মূল্য নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা তৈরীও জরুরী। যাতে প্রতিবছর তামাকজাত পন্যের “প্রকৃত” মূল্য কমপক্ষে ৫ ভাগ হারে বৃদ্ধি পায়।
এরফলে নতুন করে তামাকসেবীরা উৎসাহিত হবে না এবং এর ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে এখনই জনসচেতনতা তৈরী করতে হবে, যাতে সমাজকে এই অবক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষা করা যায়। তবে শুধু সিগারেট এর দাম বৃদ্ধি করে এই অবক্ষয় রোধের আন্দোলন নয়, সকল ধরনের তামাক এবং তামাকজাত পণ্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেই কেবল সামাজিক অবক্ষয় রোধ করতে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।