মাত্রাতিরিক্ত রকমের জ্ঞেয়ানী জনেরা আমার ব্লগের উটকো অতিথি বলে বিবেচিত হবে।
মামলা কি; জানেন???
নাকি খালি হুদাই চিল্লান; "তুই আমারে চিনস, তোরে দেইখা নিমু, তোর বিরুদ্ধে মামলা করমু, তোরে জেলের ভাত খাওয়ামু, তোরে গুষ্টি শুদ্ধা নাই কইরা ফালামু" আরো কত কি! (এই খানে গালি-গালাজ সেন্সর করা হল। )
এইসব ফালাফালির পিছনের কারন হইল তিনটাঃ
এক, মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব; আল্লাহ্র এই দুনিয়ার হগল কিছু হেতে (মানুষ) একলাই বুঝে আর কেউ বুঝে নো।
দুই, হেতে যা বুঝে হেইডাই ঠিক আর বাকি গুলান সব বেবুঝ-বেক্কেল।
প্রথম দুইটা কারন মোটামুটি ঠিক আছে, কোন রকমে চালান যায়।
কিন্তু তিন নাম্বারটা হইল সবচেয়ে ভয়াবহ; এইটার কারনেই দুনিয়ার সকল কারনের সৃষ্টি।
তিন, মানুষ সমাজবদ্ধ জীব। আর সমাজে বেশি বুঝইন্না মানুষের কোন অভাব নাই। যেহেতু অভাব নাই, তাই কার চেয়ে কে বেশি বুঝে এইটা নিয়াই সারাদিন একটা আর একটার সাথে লাইগা থাকে।
এই বার আসেন আসল কথায়; এইসব লাগা-লাগির ভিতর অনেক কিছু হয়ে যেতে পারে; যেমনঃ হুমকি, চাঁদাবাজি, জোচ্চুরি, খুন, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানি, অপহরন, ধর্ষণ ইত্যাদি আরো অনেক রকমের অপরাধ ঘটে যেতে পারে যা কিনা আমাদের সভ্য সমাজে কারোই কাম্য নয়।
যেহেতু আদিকাল থেকেই আমরা মানুষ সমাজ বদ্ধ হয়ে বসবাস করার চেষ্টা করে আসছি তাই আমাদের সমাজে বিভিন্ন ধরনের মানুষের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। আর সবার মন-মানুশিকতা, আচার-ব্যবহার, চাহিদা-প্রয়োজনীয়তা, ইচ্ছা-অনিচ্ছা ইত্যাদি এক নয়। যেহেতু এক নয় তাই মতের অমিলের কারনে যেকোনো সময় যেকোনো পরিস্থিতিতে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটার আশংকা আমরা উড়িয়ে দিতে পারি না। আর এই জন্যই সমাজের সুরক্ষা তথা সমাজে বসবাসকারী সকল সাধারন থেকে শুরু করে অসাধারন মানুষের সুরক্ষায় পুলিশ বাহিনীকে সদা সর্বদা নিয়োজিত রাখা হয়েছে। এরপর থেকে আমাদের পুলিশ ভাইদের কে কারনে অকারনে পশুর সাথে তুলনা করার আগে একটি বার ভেবে দেখবেন যে আপনি কি তাহলে নিজেকে পশুর চেয়েও নিচু পর্যায়ে নামিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন না।
আমাদের সমাজে পুলিশ বাহিনীর উপস্থিতির কারনে-ই আমরা আমাদের ভিতরের পশুত্বকে নিয়ন্ত্রন করতে বাধ্য হই। যাই হোক; সেসব অনেক জ্ঞেয়ানী-গুণীদের কথা আমিতো একটি নগণ্য মানুষ মাত্র। চলেন আসল পোষ্টে যাই...
আজকের বিষয় হল এজাহার, নালিশ, অভিযোগ বা মামলাঃ
মামলা-মোকদ্দমা এই দুইটা শব্দ শুনলেই আমাদের সাধারন মানুষের মনে প্রথম যে কথাটি বেজে উঠে তা হল "হায় আল্লাহ্ তুমি আমারে কই আইন্না ফালাইলা"। আমাদের সমাজে একটা প্রচলিত ধারনা আছে যে, "মামলা যে করে আর যার বিরুদ্ধে করে এই দুটাই খুব তাড়াতাড়ি ফতুর হয়"। আর কেউ কেউ ক্ষমতার জোরে তার প্রতিপক্ষকে বুঝিয়ে দিতে চায়, "মামলার ঠেলা এইবার সামলা"।
মানহানি, প্রানহানি, সম্পদহানি, ইজ্জতহানি এতসব হানি'র মদ্ধে যে কি মধু আছে, যে মামলা খাইসে সে বুঝছে। যাই হোক; আমাদের দেশের প্রক্ষাপটে এই সব কথার সত্যতা খুজতে গেলে হয়ত কিয়দাংশ পজেটিভ রেজাল্ট আসতে পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে; সমস্যা, হয়রানী, অর্থব্যয়, ভোগান্তি, কষ্ট, পরিশ্রম, লোকে কি বলবে ইত্যাদি ভেবে যদি আপনি ঘরে বসে থাকেন, পুলিশের দ্বারস্থ না হন, অন্যায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ না করেন তবে বর্তমানে চলমান পরিস্থিতির মতই ধীরে ধীরে একদিন আমাদের এই পুরো সমাজ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়বে।
তাই সচেতন সমাজের কাছে আমার অনুরধ, আসুন আমরা নিজেদের মদ্ধে সচেতনতার প্রচার চালাই। আসুন আজ আমরা শিখি কখন, কেন, কি ভাবে এবং কার কাছে এজাহার বা অভিযোগ দিতে হয়।
কখন এজাহার দেয়া যায়?
কোন ব্যক্তি নিজে ক্ষতিগ্রস্ত হোক বা না হোক, দেখা সাক্ষী হোক বা না হোক, কোন আসামী বা সন্দেহজনক ব্যক্তির নাম বলতে পারুক বা না পারুক, তিনি যদি নিশ্চিত হন যে একটি আমলযোগ্য অপরাধ সংঘটিত হয়েছে তাহলে তিনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে এজাহার দায়ের করতে পারেন। এজাহার বা প্রাথমিক তথ্য বিররণী (FIR-First Information Report) হচ্ছে অপরাধ সংঘটনের পর পুলিশের কাছে পৌঁছানো সর্বপ্রথম লিখিত বা মৌখিক সংবাদ। এজাহার দেয়া বা এফআইআর করাকেই মামলা করা বলা হয়।
এজাহারের শর্তাবলীঃ
=> এজাহার কোন গুজবের ভিত্তিতে হবে না, সুনির্দিষ্ট হতে হবে।
=> এজাহার বর্ণিত অপরাধটি আমলযোগ্য হতে হবে।
=> থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা তার অনুপস্থিতিতে কোন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে প্রদান করতে হবে।
=> সংবাদটি লিপিবদ্ধ করতে হবে।
=> লিপিবদ্ধ করে তা সংবাদদাতাকে পড়ে শোনাতে হবে।
=> এটা সংবাদদাতা কর্তৃক স্বাক্ষরিত হতে হবে।
এজাহারের বৈশিষ্ট্যঃ
একটি ত্রুটিমুক্ত এজাহারে যেসব তথ্য থাকতে হয়ঃ
=> কি দোষ অর্থাৎ অপরাধের প্রকৃতি কি? অপরাধটি কি আঘাত না চুরি না ধর্ষণ।
(অপরাধটি যদি সম্পত্তি সংক্রান্ত হয়, চোরাই মালের তালিকা, শনাক্তকরণ চিহ্ন (যদি থাকে) অবশ্যই এজাহারে উল্লেখ করতে হবে)।
=> কে করল অর্থাৎ অপরাধীর নাম কি? যদি আসামীর নাম প্রকাশ পায় তাহলে প্রত্যেক আসামীর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ও অপরাধের বিবরণ উল্লেখ করতে হবে।
=> কখন অর্থাৎ কোন তারিখে কোন সময়ে ঘটনা ঘটেছে তার উল্লেখ করতে হবে। (ঘটনার তারিখ, সময় ও দিনের নাম (ইংরেজি ও বাংলায়) উল্লেখ করতে হবে।
=> কোথায় অর্থাৎ ঘটনাস্থলের নাম (সম্ভব হলে মৌজার নাম, জেএল নং ও থানা হতে দূরত্ব) এবং দিকের বর্ণনা।
=> অপরাধী কিভাবে অপরাধ সংঘটন করল।
=> কে বা সহায় অর্থাৎ অপরাধ সংঘটনকালে অন্য কোন অপরাধী তাকে সাহায্য করেছিল কিনা, করে থাকলে তাদের নাম।
এজাহার যারা গ্রহণ করত পারেঃ
সাধারণত থানার ওসি, সেকেন্ড অফিসার বা ডিউটি অফিসার এজাহার বা মামলা গ্রহণ করে থাকেন।
এজাহারে সাক্ষীর গুরুত্বঃ
এজাহারই হচ্ছে সংঘটিত অপরাধের লিখিত মূল দলিল। এজাহার জিআর মামলার ভিত্তি হলেও সর্বক্ষেত্রে এজাহার বা প্রাথমিক তথ্যবিবরণীকে মৌলিক সাক্ষ্য হিসেবে গণ্য করা বাঞ্ছনীয় নয়।
সাক্ষ্য আইনের ১৫৭ এবং ১৪৫ ধারার বিধানুযায়ী এজাহারকে সাক্ষীর সাক্ষ্যের অসঙ্গতি প্রমাণ করার জন্য অথবা সাক্ষীর সাক্ষ্যের সত্যতা সমর্থনের জন্য ব্যবহার করা হয়। তবে এজাহারকে মৌলিক সাক্ষ্য হিসেবে গণ্য করা হয় না।
তবে এক্ষেত্রে জেনে রাখা ভালো যে, যদি কেউ মিথ্যা মামলা, অভিযোগ, এজাহার, নালিশ বা FIR করে এবং পুলিশি তদন্তে তা প্রমানিত হয় তবে কিন্তু খবর আছে। কারন মিথ্যা মামলার ক্ষেত্রে; বাদী মামলা দায়েরের পর পুলিশ তার কাজের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে মামলাটি তদন্ত করবে। যদি তদন্ত সাপেক্ষে মামলাটি মিথ্যা বলিয়া প্রমানিত হয় সেক্ষেত্রে পুলিশ বাদীর বিরুদ্ধে (পেনাল কোডের ২১১ ধারায় এবং মামলাটি যদি কোন বিশেষ আইনে রুজু হয়ে থাকে তবে ঐ আইনের সংশ্লিষ্ট ধারায়) ব্যবস্থা গ্রহনের নিমিত্তে বিজ্ঞ আদালতে পুলিশ প্রতিবেদন দাখিল করিবে।
সেক্ষেত্রে বিজ্ঞ আদালত উক্ত পুলিশ প্রতিবেদন আমলে নিয়ে মামলা রুজুকৃত ধারায় বাদীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহনের আদেশ দিবেন।
তারমানে হইল যদি আপনি কারো বিরুদ্ধে হত্যা মামলার ধারায় মামলা দায়ের করেন এবং তা যদি মিথ্যা প্রমানিত হয় তবে আপনার দায়েরকৃত মামলার ধারায় আপনার বিচার করা হবে। সুতরাং ভেবে দেখেন ব্যপারটা কতটা ভয়াবহ হবে মিথ্যা অভিযোগ দায়েরকারীর ক্ষেত্রে।
>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>
আমার পোষ্টটি আপনাদের ভালো লাগলে ফেসবুকের এই পেজে একটি লাইক দিবেন। এই মর্মে আপনাদের অবগত করা যাচ্ছে যে, ফেসবুক লাইকের আবেদন কোন ব্যক্তিগত বা আর্থিক লাভের জন্য করা হয় নাই।
নিতান্তই আমার পোষ্টের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের ইচ্ছে যদি কারো থাকে তবে তিনি একটি ফেসবুক লাইক দেয়ার মাধ্যমে জানাতে পারেন। আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ।
>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>
(০১) বিদ্রঃ যদি প্রয়োজন মনে করেন তবে আপনাদের কমেন্টের উপর ভিত্তি করে গঠন মূলক আলোচনা করা যেতে পারে। সেই সাথে আপনাদের নিকট আমার অনুরোধ "দয়া করে পোষ্টের বিষয়বস্তু সম্পর্কিত মন্তব্য করবেন"।
(০২) বিদ্রঃ লাইক দেয়া না দেয়া আপনার একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার; এই ব্যাপারে কোনরূপ কটু মন্তব্য না করার জন্য লেখক আপনাদের অনুরোধ জানাচ্ছেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।