------ শিশুতোষ কার্টুন গল্প
‘বউ হারালো হুলো বিড়াল’
সম্পাদনা- হাসান ইকবাল
বাংলাদেশে শিশুদের উপযোগী এনিমেটেড ছবি কিংবা ছাপা আকারে কার্টুনের বই হাতে গোনা কয়েকটি। যদিও এখন কিছু কিছু দেশীয় কমিকস প্রকাশিত হচ্ছে। তা আমাদের অসংখ্য ক্ষুদে পাঠকের তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল। প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় আমরা অনেকদূর পৌঁছে গেছি। আবার অনেকদূর পিছিয়েছিও বটে।
আমাদের দেশের বেশিরভাগ ছেলেমেয়েয়া এখন বিদেশী কার্টুন কিংবা গেমসে আসক্ত হয়ে গেছে বলা যেতে পারে। এজন্য দায়ী আমরাই । আমরা বাচ্চাদেরকে ভালো মানের বই, কমিকস ও কার্টুন তুলে দিতে পারছিনা।
টম এন্ড জেরী, পাপাইন, মিকি মাউস, দ্য জাঙ্গল বুকস, স্কুবি ডু, পাওয়ার পাফ গার্লস, নিনজা টারটল, ডোরেমন, সুপারম্যান, স্পাইডারম্যান, ডেক্সাটারস ল্যাবরেটরি, ডোনাল্ড ডাকের মতো ছবি কার্টুন তৈরী করতে পারেনি আমাদের চিত্রকর, চলচ্চিত্রকার ও এনিমেটেড ছবি নির্মাতারা। সেজন্য আমাদের প্রকাশনায় গ্ণুগত ও সৃজনশীল বই এবং সৃষ্টিশীল কাজ কম।
আমাদের আগামী প্রজন্মদের জন্য ভালো ভালো শিশুতোষ লেখা জরুরি। জন্মের পর একটি শিশু সামাজিকীকরন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যে বিকাশ হতে থাকে। সে সময় থেকে সে যেন একটি পরিশীলিত মূল্যবোধের মাধ্যমে বড় হতে পারে, সে দায়িত্বটুকু আমাদেরকেই পালন করতে হবে। ভালো ভালো বই তাদের হাতে তুলে দিতে হবে। কোন বই কিংবা বিনোদন মাধ্যমের নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে শিশুরা বেড়ে উঠুক সেটা কারো কাম্য নয়।
‘বউ হারালো হুলো বিড়াল’ একটি শিশুতোষ কার্টুন গল্প। স্বাধীনতা পূর্ববর্তী সময়ে স্কুল পড়ুয়া ছেলে-মেয়েদের কাছে এটি ছিল ব্যাপক জনপ্রিয় একটি সিরিজ। ১৯৬৬ সালে হোসেন কামাল সম্পাদিত মাসিক ‘মুকুল’ তৎকালীন কেন্দ্রীয় বাংলা উন্নয়ন বোর্ডের অর্থানুকুল্যে প্রকাশিত হত। সেই সময় ‘মুকুল’ পত্রিকা সংগৃহীত এই সিরিজটি ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করতো। সে সময় পত্রিকাটির প্রচ্ছদ ও অঙ্গসজ্জা করতেন হোসেন জামাল।
পুরাতন মুগলটুলী, শিরিন প্রেস, ঢাকা-১ থেকে মুদ্রিত হতো এই দৃষ্টিনন্দন শিশুতোষ পত্রিকাটি। পত্রিকাটির সম্পাদনা বিভাগে ছিলেন-আবদুল হক, কবি মঈনুদ্দীন, কবি তালিম হোসেন, এম নাসির আলী এবং কবি হোসনে আরা। ‘বউ হারালো হুলো বিড়াল’ এই শিশুতোষ কার্টুন গল্পটির অঙ্গসজ্জা করেছিলেন হোসেন জামাল। পত্রিকাটির দাম ছিল তখন সাইত্রিশ পয়সা।
সিসিমপুর এখন বাংলাদেশের ছেলেমেয়েদের উপযোগী করে তৈরী করা হচ্ছে নানান বৈচিত্রতা নিয়ে।
সিসিমপুরের চরিত্র গুলোতে আমরা কিছু শিক্ষণীয় উপাদান যেমন খুঁজে পাই তেমনি কিছু আনন্দের খোরাকও রয়েছে । সিসিমপুরের একেকটি চরিত্র বড়ই বৈচিত্রময়। হালুম -একটি রয়েল বেঙ্গল টাইগার। মাছ খেতে খুবই ভালোবাসে। ইকরি মিকরি -একটি ছোট দানো।
যথেষ্ট ভাবুক একটি চরিত্র। শিকু -একটি ছোট শেয়াল। বিজ্ঞানমনষ্ক, যুক্তিবাদী গোয়েন্দা। শিকু বলতে পারো অনুষ্ঠানের উপস্থাপক। টুকটুকি -একটি মেয়ে পুতুল।
বই পড়তে ভালোবাসে। দ্য নিউ টুকটুকি অপরা-এর উপস্থাপক। মানব চরিত্রের মধ্যে আছে লাল মিয়া -ডাকপিয়ন। এই চরিত্রটি অনুষ্ঠানের মধ্যভাগে মারা গেছে। তাঁর স্মৃতিতে সিসিমপুরে একটি পাঠাগার আছে।
মুকুল ময়রা -বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাসকৃত একটি যুবক ও উদ্যোক্তা। সুমনা ময়রা -সিসিমপুরের স্কুলের শিক্ষক। গুণী ময়রা -মিষ্টির দোকানদার। আশা ময়রা -গুণীর স্ত্রী, এবং সিসিমপুরের একমাত্র গ্রন্থাগারটির গ্রন্থাগারিক। পলাশ ময়রা -গুণী ও আশার ছেলে।
এই চরিত্র গুলো শিশুদের মনে দাগ কাটলেও আমরা পুরোপুরি বিদেশী কার্টুন গল্পের প্রতি নির্ভরতা কমাতে পারিনি। আনন্দের সবটুকু রেশ তারা এখান থেকে নিতে পারেনা বলেই এটা হচ্ছে।
আমাদের দেশীয় সংস্কৃতিকে উপজীব্য করে ছেলেমেয়েদের উপযোগী সাহিত্য রচনা ও বিনোদনের মাধ্যম তৈরী করা জরুরী। শিশুদের মেধা ও মননে ভালো বিষয় গুলোর অনুরননের ক্ষেত্র আমাদেরকেই চিহ্নিত করতে হবে।
সময়ের পাতা ঘুরে এসে ‘মুকুল’ পত্রিকার জানুয়ারি ১৯৬৭ থেকে জুন ১৯৬৭ নাগাদ ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত সিরিজ গুলোর গল্প তুলে ধরছি আমাদের স্কুল পড়ুয়া ছোট্ট বন্ধুদের জন্য।
পুরনো আবহ ঠিক রেখে আমাদের বর্তমান শিশুদের যুগোপযোগী করে অঙ্গসজ্জা করেছেন আমার সহকর্মী উর্মি রুবিনা। তার প্রতি আমার অশেষ কৃতজ্ঞতা। শিশুদের জন্য ভালো কিছু করার প্রয়াস নিয়েই এই সম্পাদনা। আমাদের বাচ্চাদের ভালো লাগলে ভবিষ্যতে তাদের জন্য আরো ভালো কিছু করার অনুপ্রেরণা পাব।
ছোট্ট বন্ধুরা,
পুষি বিড়াল কার না পছন্দ।
তোমরা নিশ্চয়ই অনেকেই বাসা বাড়িতে বিড়াল পুষে থাক। হুলো বিড়াল, মিনি বিড়াল। বিড়াল ছানা নিয়ে কবিতাও তোমরা পড়েছ। তোমাদের মতো এক ছোট্ট বন্ধু রাশা, সেও বিড়াল পুষতো, একদিন হলো কি, রাশার বিড়াল হুলোর মিনি হারিয়ে গেলো। দেখোতো দেখি কি বিপদ! আজ তোমাদেরকে সেই হুলো বিড়ালের গল্প শোনাবো, যে হুলো তার সঙ্গী মিনিকে হারিয়ে ফেলেছিল।
বেচারা হুলো বিড়ালের আহা সে যে কি কান্না! তারপর মিনি বিড়ালটার কিহলো? কোথায় গেল হুলোর প্রিয় বন্ধু মিনি? তা জানাতেই জন্য হাজির করা হলো "বউ হারালো হুলো বিড়াল"। এই গল্পে তিনটি চরিএই উপজীব্য। হুলো, মিনি আর পুশি। তিনজাই তারা খুব ভালো বন্ধু। ওরা একসাথে গান গায়, খেলাধুলা করে, বেড়াতে যায় এবং একসাথেই শিকার ধরে।
এক বন্ধুর প্রতি আরেক বন্ধুর গভীর ভালোবাসা আছে বলেই তাদের বিপদে পুশি পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। মনে সাহস জুগিয়েছে। এরকম বন্ধুতা সকলের কাম্য।
হুলো, মিনি আর পুশি’র গল্প কেমন লাগলো, তোমাদের মতামত জানিও কিন্তু!
হাসান ইকবাল
২৯ জুন ২০১২, ঢাকা। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।