বিএনপি সরকারের সময় তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য তৎকালিন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা সাংবাদিক ও মিডিয়ার জোরালো ভূমিকা চেয়েছিলেন। সাংবাদিকরা জাতির বিবেক উল্লেখ করে তিনি সাংবাদিকদের আরো সাহসী হবার অনুরোধ করেছিলেন।
অথচ, সরকারে গিয়ে তিনি সাংবাদিকদের সংবাদ প্রকাশে আরও সংযমী হতে বলেন। তারঁ কথার সূত্র ধরে সরকারি দলের অন্য নেতারাও সাংবাদিক ও মিডিয়ার সমালচনা করে যাচ্ছেন। সম্প্রতি, আ;লীগের সাধারন সম্পাদক ও এলজিআরডি মন্ত্রী আশরাফুল ইসলাম জনসমাবেশে বলেন, মিডিয়ার লেখনীতে বাঙালি জাতির মুক্তি আসেনি।
আমাদের যা কিছু অর্জন তার সব কিছু আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে এসেছে। তিনি আরও বলেন, বর্তমান সাংবাদিক ও টক শোগুলোতে অংশ নেয়া ব্যক্তিদের অভিজ্ঞতা যেমন অপ্রতুল জ্ঞানের পরিধিও তেমনই সীমিত। এরপর পরই স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু সাংবাদিকদের পুলিশ থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দেন। বিধিবাম! যে যায় লঙ্কায় সেই হয় রাবন। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৩ ও ২০০৫ সালে বেসরকারি রেজি: প্রাইমারি স্কুল শিক্ষকদের এক সমাবেশে বলেছিলেন, তাঁর দল ক্ষমতায় গেলে বেসরকারি রেজি: প্রাইমারি স্কুল জাতীয়করণ করা হবে।
কিন্তু এ সরকারের সাড়ে তিন বছর পেরিয়ে গেলেও তিনি সে কথা তিনি রাখতে পারেননি। এদিকে, দীর্ঘদিনেও প্রত্যাশিত দাবি পূরণ না হওয়ায় ১ লাখ বেসরকারি রেজি: প্রাইমারি স্কুল শিক্ষক আন্দোলন কর্মসূচীর একপর্যায়ে, পুলিশের ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হলেন। চাকরী জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষকদের ওপর শাহবাগ এলাকায় পুলিশের বর্বরোচিত হামলায় আহত শিক্ষক বয়বৃদ্ধ আজিজুর রহমান শেষ পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করেন। আওয়ামী লীগ নির্বাচনী ইশতেহারে উল্লে¬খ করা হয়েছিল- ঘরে ঘরে চাকরী দেয়া হবে। বিদ্যুৎয়ের অভাব দূর করা হবে।
কৃষককে বিনামূল্যে সার দেয়া হবে। প্রশাসনকে দলীয় মুক্ত করা হবে। দ্রব্যমূল্য কমিয়ে আনা হবে। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির আমূল পরিবর্তন সূচনা হবে। এককথায়, যা কিছু ভালো তার সবকিছু করা হবে।
বিন্তু বাস্তবে অনেক ক্ষেত্রেই উল্টো রাজার উল্টো দেশের মতো বিপরীত চিত্রই দেখা যাচ্ছে। আ’লীগের বর্ষিয়ান নেতা সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত বলেছিলেন, ‘রেল সারা বিশ্বেই লাভজনক। এখানে কেন লোকসান হয়, সেই কালো বিড়াল কোন অন্ধকারে তা খুজে বের করব। হ্যা, দেশবাসী মিডিয়ার কল্যানে জেনেছে- তিনি সেটি বের করেছেনই। অত:পর সেটাকে পোষ মানিয়ে...।
এ জন্য মন্ত্রীর এপিএস তার ড্রাইভার আলি আজমকে সঙ্গে নিয়ে প্রমান সাইজের একটি বস্তায় ভরে কালো বিড়ালটিকে বুড়িগঙ্গা নদীর জলে ভাসাতে যাচ্ছিলেন। এ সময় ড্রাইভার আলি আজম দুর্নিতীবাজদের খবর দিয়ে ডেকে এনে কালো বিড়ালটিকে রক্ষা করেছেন। পরে বিড়ালটিকে থলেতে ভরে নিরাপদে নিয়ে গিয়েছেন। এসময় তারা কালো বিড়ালের বদলে বস্তা ভরে কাঠাল রেখে যান। যতো দোষ নন্দঘোষ ওই ড্রাইভার আলি আজমের।
এ জন্য তাকে উপযুক্ত শিক্ষা দেয়া হয়েছে। গুণধর এপিএসের ড্রাইভার আলি আজম এখন কোথায় কেউ জানে না। তার স্ত্রীও বলেছেন, তার স্বামীর কোন খবর তার কাছে নেই। যদিও বর্ডার গার্ড বলেছে, তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
বর্তমানে দেশ জুড়ে হৈ চৈ ফেলে দিয়েছে পুলিশ।
‘পুলিশ’ শব্দটি টক অব দ্য কান্ট্রি হয়ে গেছে। র্যাব, ডিবি, সোয়াট ও ঈগল বাহিনিকে পিছে ফেলে সর্বত্র আলোচনার বিষয় পুলিশ। পত্রিকার পাতায় পুলিশ। টিভিতে পুলিশ। চায়ের ষ্টল থেকে ড্রইং রুমে আলোচ্য বিষয় পুলিশ।
সবারই কথা এ দেশের পুলিশ শেষ হয়ে গেছে। পুলিশ ঘুষ খায়, পুলিশ নিজেই সন্ত্রাসী-অপরাধীদের সহযোগী, পুলিশ অহেতুক বেপরোয়া লাঠি চার্জ করে, পুলিশ সাংবাদিকদের লাঠিপেটা করে রক্ত ঝরাচ্ছে, রাজনীতিবিদদের মারধর করছে, অহেতুক হয়রানি করছে, প্রকাশ্যে নারীর শীলতাহানি করছে এ রকম হাজারো কথা। এগুলো কি মিথ্যে? অথচ, বিস্ময়কর হলেও সত্যি, পুলিশ মন্ত্রী এদের গুণকির্তন করে বলেছেন, পুলিশ আগের চেয়ে ভালো হয়েছে’। পুলিশ মন্ত্রীর সাম্প্রতিক বয়ান ‘আমি কেনো কেউ বলতে পারবে না কবে সাংবাদিক সাগর-রুনি হত্যাকান্ডের তদন্ত কাজ শেষ হবে’। এতোকিছুর পরও উক্ত পুলিশ মন্ত্রী নিজেকে সফল বলে দাবি করেছেন।
এ ব্যাপারে রসিক আমজনতার ধারণা, পুলিশ মারামারিতে আগের চেয়ে ভালো পারফরমেন্স... এ্যাচিভমেন্ট দেখাচ্ছে! এ ব্যাপারে পুলিশ প্রতি মন্ত্রী সাংবাদিকসহ দেশবাসীকে উপদেশ দিয়েছেন ‘পুলিশ থেকে দূরে থাকুন’। বর্তমানে বিরোধী দল বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার জন্য জোর আন্দোলন সংগ্রামের কর্মসূচী চালিয়ে যাচ্ছে। আর আওয়ামী লীগ এ ব্যবস্থার ঘোর বিরোধীতা করছে। দেশের সাধারন লোকজন আগেও যে তিমিরে ছিলো এখনও সেখানেই আছে। পরিবর্তন বলতে শুধুমাত্র, দেশ উদ্ধারকারী নেতা-নেত্রীর মুখগুলোর বদল ঘটেছে।
সত্যি, উল্টো রাজার উল্টো দেশ, হায় রে! আমার বাংলাদেশ। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।