আজ অনেকদিন পর টিভি দেখতে গিয়ে দুটি অবুঝ শিশুর কান্না দেখে অনেকটা খারাপ লাগা থেকে এই লেখা-
খুব ছোট বেলায় নতুন কুঁড়ি অনুষ্ঠানটা খুব মনোযোগ দিয়ে দেখা হত। যা ছিল ব্যবসার উদ্দেশ্যবর্জিত শিশুদের প্রতিভা বিকাশের জন্য একটি আন্তরিক প্রয়াস। কিন্তু আমাদের বিকৃত মানসিকতার রাজনীতির বলী হয় এই অনুষ্ঠানটি। এই জাতীয় আরও অনেক ভাল উদ্যোগ শুধুমাত্র এই রাজনৈতিক নোংরামির জন্য অতল গহ্বরে হারিয়ে গেছে।
যদিও আমার লেখার মূল বিষয়বস্তু এইটা না।
আমেরিকান আইডল, ইন্ডিয়ান আইডল- নকলরে ধারাবাহিকতায় বাংলা রূপ "ক্লোজ আপ ওয়ান"। বিচারকদের প্রতিদিন একই জাতীয়- মন্তব্য( তোমার গানটা প্রথমে ভালই ছিল, কিন্তু মাঝখানে ঝুলে গেছে) আর হুজগে বাঙ্গালির এসএমএস বৃষ্টির কল্যাণে তারা ভালই ব্যবসা করেছিল। আর এরপরই চালু হয় সবচেয়ে ক্ষতিকর আমাদের শিশুদের নিয়ে ব্যবসা- খুদে গানরাজ জাতীয় অনুষ্ঠানগুলো।
আমাদের অতিলোভী আর অতি উৎসাহী অভিভাবক শ্রেণী আর এসএমএস দাতাদের কল্যাণে এই বার ও ব্যবসা সফল। এর পর এমন কোন ক্ষেত্র বাদ রাখে নাই(চোরের মার কড়া সুর- এই বিষয় টা মনে হয় বাদ পড়েছিল) যে ব্যবসা করে নাই।
শুধুমাত্র বিনোদনের জন্য এই অনুষ্ঠান করা ঠিক আছে।
কিন্তু কোমলমতি শিশুদের নিয়ে এই সব করাটা কতটা যুক্তিসংগত আর মানবিক হয় এইটাই বিবেচনার বিষয়।
এই শিশুগুলো যারা হার-জিত, হিংসা-বিদ্বেষ কিছুই বোঝে বা বোঝার বয়স হয়নি তাদের মধ্যে এই বিষয়গুলো অনেকটা জোর করেই ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে ।
আর সবচে নির্মমতার কাজটা আমাদের উপস্থাপকগন করে থাকেন ফলাফল ঘোষণার সময় । শ্বাসরুদ্ধকর একটা পরিবেশ সৃষ্টি করতে গিয়ে তারা শিশুদের সাথে যে নির্মম ব্যবহার করেন যে কিনা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না, ফলাফল হাতে নিয়েও ঘোষণার জন্য সময়ক্ষেপণ করে শিশুদের মস্তিষ্কে যে চাপ তৈরি করেন তা সুস্থভাবে চিন্তা করলে তা শিউরে উঠার মত ।
তারপরই আসে কান্না পর্ব। এই পর্বে এসএমএস বাড়ানোর জন্য দীর্ঘ সময় ধরে এই কোমলমতি শিশুদের কান্না প্রচার করা হয়। এমনকি উপস্থাপক ছাগলদ্বয় তাদের সান্ত্বনাটুকুও দেয় না। আর বিউগলে তখন করুণ সুর বেজে উঠে। ভাবখানা এমন যে কাঁদরে মনা কাঁদ।
আর ক্যামেরাম্যান তখন যতরকম ভাবে পোজ নিতে পারে নিতে থাকে ।
আমেরিকান আইডলরে ফলো করতে গিয়ে আমার যা করছি, ঠিক সেই জাতীয় উদ্যোগ নিয়েছিলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ।
আর সেটা হল নতুন কুঁড়ি এবং পুরোপুরি মানবিক উপায়ে। এর মাধ্যমে শিশুদের মাঝে প্রতিযোগিতা মূলক মনোভাব তৈরি করার চেষ্টা করা হয়েছিল। এবং এই উদ্যোগটি সম্পূর্ণ সফল হয়েছিল।
নতুন কুঁড়িতেও শিশুরা প্রথম হয়েছে। যারা হেরেছে তারাও অনেকে কান্না করেছে কিন্তু সেই কান্নাকে ঘিরে এই জাতীয় নোংরামি করা হয়নি। আর সেখানে এসএমএস ব্যবসার মত কোন ব্যাপার ছিল না ।
এখন যারা এই জাতীয় উদ্যোগ নিচ্ছে এর পুরোটাই মানবিকতা বিবর্জিত একটি একান্তই ব্যবসা বহুল প্রয়াস।
তাই অভিভাবকদের প্রতি বিশেষভাবে অনুরোধ ভেড়ার পালের মত আগের গুলোর পিছনে পিছনে না ছুটে এই অনুষ্ঠান গুলোতে অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত থাকুন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।