যা ইচ্ছা হয় লিখি ধানমন্ডি সাত মসজিদ রোডে এত জ্যাম দেখি নাই কখনো। মনে হয় না এই জ্যাম সহজে ছাড়বে। আমি গপ্প করতে আর আড্ডা দিতে অনেক পছন্দ করি। তাই শিকারীর দৃষ্টিতে রিকশাওয়ালার দিকে তাকালাম। ঘেমে ঘুমে একাকার।
আমি চেনা মানুষের ভঙ্গিতে বললাম, কি গরম মামা!
হ, বৃষ্টি খালি উঁকি দিয়া যায়। পয়েন্ট অব অর্ডারে আহে না। গামছা বের করে ঘাম মুছতে মুছতে উত্তর দিল রিকশাচালক মামা (সবাইকে মামা ডাকা আমার অভ্যাস হয়ে গেসে, নিজের গার্লফ্রেন্ড রেও মামা ডেকে ফেলি মাঝে মাঝে)
আমি একটু অবাক হলাম। আপনি পয়েন্ট অব অর্ডার বুঝেন? আমারই তো ক্লিয়ার আইডিয়া নাই।
মামা একটু বিরক্ত।
আপনে সংসদ দেখেন না!
আমি ঘাড় চুলকিয়ে বললাম, সারাদিন ইংরেজী মুভি দেখি তো, সময় হয় না।
সংসদ দেখেন না! আপনে আমার রিকশা থেইকা নামেন! মামা রীতিমত উত্তেজিত!
আমি একেবারে কাঁদকাঁদ। এই জ্যামে নামব! এই রোদে! বললাম, আজকে থেকেই সংসদ অধিবেশন দেখা শুরু করব।
তাইলে থাকেন। আপনারে আমার পসন্দ হইসে।
মামা খুশি।
আমিও খুশি। মহা আনন্দে বললাম, অনেক রোদ, আসেন আলোচনা করি, আপনে রিকশার মধ্যে চলে আসেন।
মামা অবাক হয়ে তাকালেন। তারপর, বললেন, মশকরা করেন?
আমি জিভ কাঁটলাম, আয়হায়, বলেন কি! আচ্ছা থাক, ওখান থেকেই গল্প করি।
আচ্ছা, আপনি তো রিকশা চালান, কখনো সামনে থেকে এ্যাক্সিডেন্ট দেখসেন?
হ, কাইল রাইতেই তো দেখলাম।
কি দেখলেন?
একটা ভ্যান গাড়ি, একটা ট্রাকের লগে ধাক্কা খাইল, ওই পোলা অইখানেই কাইত।
আমি বললাম, কাইত মানে? ঘুমায় গেল?
মামা উদাস হয়ে বললেন, হ। জন্মের লাইগা ঘুমায় গেল।
আমি একটু চুপ হয়ে গেলাম।
কিভাবে হল এ্যাক্সিডেন্ট টা? আমি জিজ্ঞেস করলাম।
পোলা সাইড দেয় নাই, ট্রাক মাইরা দিসে, পোলার মাথা গাছে গিয়া ঠেকসে।
আমি আবার চুপ হয়ে গেলাম।
আপনার পরিবারে কে কে আছে?
মামার চোখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল, মাইয়া আর বউ। মাইয়ারে পড়ালেখা করাইতেসি।
কলাতিয়া কলেজে পড়ে। এখনো বিয়া দেই নাই। মাইয়ারে অনেক বড় করুম।
বাহ! আপনার তো মনে হয় সুখি পরিবার। আমি হেসে বললাম।
সুখ? হ, কইতে পারেন, তয় মাইয়া একটু বড় হইসে, নজর লাগতাসে। অনেক পোলা পিছনে লাগসে। আমার সামনেই একদিন এইটুক একটা পোলা কইয়া উঠল, কি মাল। মামার চোখে সামান্য জল দেখলাম।
আমি একদম চুপ হয়ে গেলাম।
জ্যাম এখনো ছাড়ে নি। কতক্ষণ আরো ওয়েট করতে হয় কে জানে। এত গরমে নামতে ইচ্ছা হচ্ছে না, কিন্তু তাড়াহুড়োয় আছি। বাসা থেকে মেসেজ, তাড়াতাড়ি আসো। নামতেই হবে।
মামাকে ৫০টাকা দিয়ে বললাম, রাখেন, আমি বরং নেমে যাই, তাড়াহুড়ো।
মামা একটু হেসে বললেন, আইচ্ছা। ভাল থাইকেন।
আমিও হেসে নেমে পড়লাম। হাঁটতেসি আর ভাবতেসি, কত সুখে আছি এই মানুষগুলোর তুলনায়।
একটু এগোতেই, কান্নাকাটির আওয়াজ। পেছনে ফিরে তাকালাম।
যে রিকশাটাতে আমি ছিলাম, তাকে ঘিরে জটলা। এত তাড়াতাড়ি এত মানুষ! এই জ্যামে তো এক্সিডেন্ট ও হয় না। কাছে গেলাম।
আমার মাইয়াটারে মাইরা ফেলাইলো রে, আমার কলিজাটারে। আল্লাহ...
সেই মামা, পাশে একটা মোবাইল, তাতেও একই আহাজারি লাউডস্পিকারে।
যা বুঝলাম, আজকে কলেজ থেকে আসার সময় মামার মেয়েটার ওড়না ধরে টান দিয়েছিল কেউ। প্রতিবাদ করেনি কেউ। এত অপমান মেয়েটা সহ্য করবে কেন? চিরদিনের মত ঘুমিয়ে গেছে সেও।
চোখের পানি আটকাতে পারলাম না। কিন্তু ওই যে তাড়াহুড়ো, বিবেকহীনের মত ঘুরে হাঁটা শুরু করলাম। কানে বাজছে দুটো কথা, মেয়েরে এখনো বিয়া দেইনাই। অনেক বড় করুম।
মনে মনে ঠিক করলাম, আর কখনো আড্ডা দিতে যাব না এভাবে, বেশ তো আছি, শুধু শুধু মানুষের কষ্টের ভাগীদার হবার কি দরকার? আমি পারব না ইভ টিজিং ঠেকাতে, আমি পারব না কোন এক্সিডেন্ট ঠেকাতে।
কি দরকার? ভালই তো আছি, সুখেই তো আছি...
(কাহিনী কাল্পনিক, বাস্তবের সাথে কোন মিল নেই)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।