আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ক্ষমতার ‘নিম্নচাপ’(গল্প)

এসো আবার চড়াই উৎড়ই.......... হাগু চেপেছে, ঠিক এমন একটি সময় দেশের সর্বমতার অধিকারীর হগু চাপাটা শুধু অশোভনীয়ই নয়, অন্যায়ও বটে। তারপরও হাগু যখন চেপেছে তখন চাপ সারাতেই হয়। এই ব্যক্তির বিশেষ কোন পরিচয় দেওয়ার ইচ্ছেটা লেখকেরও যেমন নেই, পাঠকেরও ইনার পরিচয়টা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয়নি, তারপরও সময়টা যে গুরুত্বপূর্ণ। ধরে নেওয়া যাক ইনি যেকোন দেশেরই সামরিক জান্তা, প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি বা বাদশাহ, আবার পোপ, ধর্মীয় মোল্লা, বিজনেস টাইকুন হতে পারেন। সমস্ত আয়োজন সারিয়ে এসে, সমস্ত কিয়ারেন্স নিয়ে এসেইতো তিনি ডায়াসে মাইক্রোফোনের সামনে দাড়িয়েছিলেন, তারপরও হাগু চাপাটা সত্যিই ঘোরতর রীতিবিরুদ্ধ হয়ে গেল।

সময় যাচ্ছে, পা কাঁপছে, শরীরে অস্বস্তি শুরু হয়ে গেছে, ২৪ ঘন্টার যে বডিগার্ডের দল বেডরুম বা টয়লেটের সামনেও দাড়িয়ে থাকে, তাদেরকেও তিনি এই মুহুর্তে কথাটা শেয়ার করতে পারছেন না, কেমন যেন। লজ্জ্বাবোধ চেপে বসেছে, সেই সাথে তিনি এও ভাবছেন যে, ইহা কোন ষড়যন্ত্র নয়তো? এমনও হতে পারে সেনা বিল্পবের ইঙ্গীত, বক্তব্যের স্বর ভেঙ্গেঁ ভেঙ্গেঁ যাচ্ছে, সেই সাথে মনে পড়ছে, গত এক সপ্তাহের খাবারের লিস্ট। মনে মনে ইশ্বরকে একটা গাল দিলেন, এও ভেবে বসলেন ইশ্বর হয়তো তার সাথে নেই। এখন যদি তিনি কোন কারণে স্থান ত্যাগ করেন, মিডিয়া ব্রেকিং নিউজ পাবে, বিরোধী পক্ষ এক হাজার একশ একটা কুৎসা রটানোর সুযোগ পাবে, স্ব-পক্ষের ল্যাং মারার দল লাল কার্ড পাওয়ার মত ফাউল করবে, যেখানে রেফারী তাদের অনুকূলেই রায় দিবে, শুভাখাংক্ষীরা হতাশ হবে, আরও বড় কথা রাষ্ট্রের এই মূহুর্তে তিনি সামান্য একটা কাজে এই গুরুত্বপূর্ণ সভা ত্যাগ করতে পারেন না। পিঠ কপাল, নাক দরদর করে ঘামছে, কিছু কিছু জিজ্ঞাসু দৃষ্টি তৈরী হচ্ছে।

বক্তব্য মন্থর হয়ে পড়ছে। মনে মনে ইশ্বরের স্বরণাপন্ন হলেন। ঠিক এখনই ফ্রেশ রুমে যাওয়া উচিত, যারা তাকে ফোকাসে রেখে ফায়দা লুটছে, যারা মিডিয়াতে খবরের জন্য আগ্রহী হয়ে উঠছে, যারা টেলিভিশনে, রেডিওতে বা ইন্টারনেটে লাইভ শুনছে বা দেখছে, যে নিরাপত্তা বলয় তৈরী হয়েছে ও যারা তৈরী করেছে, মনে মনে সকলের চৌদ্দ গুষ্ঠি উদ্দার করে চলেছেন তিনি, বুঝতে পারলেন যারা নিজেদের ভালো বুঝে না তাদের জন্য নয়, যারা ফায়দা লুটছে তাদের সুবিধার্থেই তিনি আজ এখানে দাড়িয়ে, তাদের লিখে দেওয়া কথাগুলোই এখন তিনি পড়ছেন। বক্তব্যের এখানে সেখানে ভুল-ভ্রান্তি তৈরী হচ্ছে, সেই সাথে প্রবল বেগ তৈরী হল, মুহুর্তের মধ্যে তিনি দ্রুত গতিতে ছুটে চললেন নিকটস্থ ফ্রেশ রুমের দিকে, সেই সাথে ছুটে চলল নিরাপত্তা বলয়, মিডিয়া ব্যক্তিত্বরা ও ক্যামেরা। রাতে বাসায় ফিরে বিল্লাল সাহেব বিধ্বস্ত অবস্থায় সোফায় হেলান দিলেন, তার একা ফ্যাটের জীবনে তিনি একাই পড়ে রইলেন কেউ খবর নিল না, পরদিন সকালে ঘুম ভেঙ্গেই একটা অস্বস্তিকর দূর্গন্ধে তার নাক কুঁচকে এল..................।

সপ্তাহ কয়েক পরে পার্টিতে যখন সেই ছোট্ট জারটি হাজির করা হল, সকলে উল্লাসে ফেটে পড়লেন, কেউ কেউ হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখলেন, কেউ কেউ দূর্গন্ধ এড়িয়েও একটু স্বাদ ও গন্ধ নিলেন, অতি উৎসাহীর দল মাথায় নিয়ে শ্লোগান দিয়ে ফেলল। রাষ্ট্র মতার সর্বময় মতাধারী সেই ব্যক্তি প্রতিদিন রাতে ঘুমাতে গিয়ে ভাবেন, পরদিন ঘুম ভেঙ্গেই আর দশটা স্বাভাবিক মানুষের মতই তিনি চলছেন, তাকে ঘিরে নিরাপত্তা বলয় নেই, মেপে মেপে বাধা ধরা শিখিয়ে দেওয়া বুলি পড়তে হচ্ছে না, ছোট্ট ছোট্ট হাঁসি-কান্না-ভালোবাসা-ঘৃণার জীবন। পাঠক আমরা এতটুকুই জানতে পেরেছি, যা যা জানতে পারিনি তার বেশীর ভাগই অন্যান্যরা জানিয়ে গিয়েছেন বা যাবেন। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.