নাজমুল ইসলাম মকবুল
ক্ষমতার গুড় বড়ো মিটা
নাজমুল ইসলাম মকবুল
নেতা এবং পাতিনেতায়
ভরা মোদের দেশটা
প্রায় সকলে শুধুই করে
বড়ো হওয়ার চেষ্টা।
যায় যদি যাক রসাতলে
মোদের বাংলাদেশটা
সমাজ এবং দেশের জন্য
নেই যে প্রেমের লেশটা।
কাড়ি কাড়ি অর্থ বিলান
জানেন কি সেই কেসটা
হতে হবে এমপি মন্ত্রী
মেয়র উপদেষ্টা।
ডজন লাইনের ছড়া দিয়েই আজকের নিবন্ধ শুরু করতে ইচ্ছে হলো। উন্নত জীবন যাপনের প্রত্যাশায় যুক্তরাজ্যসহ উন্নত দেশগুলোতে অবস্থানরত আমাদের আত্মীয় স্বজন প্রতিবেশী ও বন্ধু বান্ধবরা দেশে আসেন নিকের জন্য।
এই ক’বছর পুর্বেও তারা সেখানে যেতেন নিকের জন্য। শেকড় থাকতো স্বদেশে। এখন শেকড় গাড়েন বিদেশে। স্বদেশ হয়ে যায় মেহমানখানা। শুধু তাই নয় বিবি বাচ্ছাদের সেখানে নিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন একটু শান্তি সুখের আশায়।
আয় রুজগারের অর্থ কড়ি বিনিয়োগও করছেন সেখানে। অনেকেই দেশে থাকা জমি জিরাত বাসা বাড়ি দোকান পাট বিক্রি করে টাকা পয়সা নিয়ে যান বিদেশে। দেশের টাকা বিদেশে নিয়ে রেস্টুরেন্ট দোকান কিংবা বাসাবাড়ি কিনে সেখানে ব্যবসা বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন আরামছে। সিংহভাগ প্রবাসীকেই দেশে বিনিয়োগ না করার কারন জিজ্ঞেস করলে গড়গড় করে এর কারনগুলো বলতে থাকেন আর তাদের অন্তরের গভীর থেকে বের হয়ে আসে ােভ হতাশা আর দীর্ঘশ্বাস। তাদের মতে আমাদের দেশে বিনিয়োগের অনুকুল পরিবেশ নেই।
কারন হিসেবে তারা বলেন, আইনশৃঙ্খলার অবনতি, মানবাধিকারের চরম লংগন, রাজনৈতিক হানাহানি, দুবৃত্তায়ন, বিদ্যুৎ গ্যাস ও রাস্তাঘাটের বেহাল দশা, টপ টু বটম ঘুষ দুর্নীতি লুটপাট নৈরাজ্য, মিথ্যা মামলায় জেলে গিয়ে নাজেহাল হওয়ার আশংকা, রাজনৈতিক নেতা পাতিনেতা কিংবা সন্ত্রাসীদের ধার্য্যকৃত চাঁদা প্রদান, ডাকাতি লুটতরাজ ও জমিদখল ইত্যাদি। অনেক বিজ্ঞ রাজনীতি সচেতন ব্যক্তি নিজ জন্মস্থানে রাজনীতি না করে বিদেশে গিয়ে রাজনীতি করেন এবং সেখানের রাজনীতিতে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করতেও দেখা যায়। সাংবাদিকতার সুবাধে আমাদের দেশের রাজনীতি ও উন্নত দেশগুলোর রাজনীতির তুলনামুলক বিশ্লেষনের জন্য প্রবাসী কমিউনিটি নেতৃবৃন্দের সাথে প্রায়ই মতবিনিময় হয়। উত্তরে তারা যা বলেন তাতে আমাদের হতাশা আরও বেড়ে যায়। তাদের বক্তব্যের সার নির্যাস হচ্ছে, আমাদের দেশে বিগত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতায় দেখা যাচ্ছে ৫ বছর একদল মতার গুড় ভন করেন এবং পরবর্তী ৫ বছর অন্যদল মতার গুড় ভন করেন।
যে দল যে সময় মতার মিটা গুড় ভন করেন সে দলেরই নেতা পাতিনেতার চেহারা মুবারকে যেন সোনা রূপার পানি পড়া শুরু হয়ে যায়। চেহারা ছুরতে গ্লেজ মারে। জিসিম মুবারক থেকে যেন চক চক করা তেলের ঝর্নাধারা নির্গত হতে শুরু করে। আপাদমস্তক শুধু নাদুস নুদুস ও খুবছুরত হয়না কাপড় চোপড়ও তখন খুবছুরত খুবছুরত লাগে। রাস্তা ঘাটে চলাচলের সময় তাদের হাটা চলার হাব ভাবে বুঝা যায় যেন নবাব সিরাজুদ্দৌলার সৎ ভাই।
বাসা বাড়ীতে দর্শনার্থীদের লম্বা লাইন পড়ে যায়। সিংহভাগ মন্ত্রী এমপি উপদেষ্টার পৈত্রিক বাড়ি নিজ নির্বাচনী এলাকায় বা মফস্বলে হলেও তাদের একাধিক বিলাসবহুল বাড়ীর শুভ উত্থান ঘটে জেলা বা বিভাগীয় সদর, রাজধানী অভিজাত পাড়া ও উন্নত বিশ্বের চোখ ধাধানো শহরে। মনোরঞ্জনের জন্য বাগান বাড়িও থাকে বেহিসেবী। সেসব আরামদায়ক স্থান থেকে নিজ নির্বাচনী এলাকায় বিভিন্ন দিবসে লিডার মহোদয়ের শুভাগমন ঘটে বিভিন্ন সভা সমাবেশ ও অনুষ্ঠানে। পুর্বেই ইনফরমেশন দেওয়া হয় বিধায় নির্বাচনী এলাকার বর্ডারে লিডার মহোদয়ের তশরিফ আনয়নের সাথে সাথে ভুমিকম্প শুরু করার জন্য যুক্ত হয় ঝাকে ঝাকে গাড়ির বহর আর নাদুস নুদুস নেতা পাতিনেতার গগন বিদারী শ্লোগান।
সেসাথে গাড়ি বহরের বিকট শব্দের হর্ন বা হুইসেল। নির্বাচনী এলাকায় মহামান্যবর লিডার তশরিফ মুবারক আনছেন তাই সে এলাকার মাটিতে যদি ভুমিকম্প শুরু না হয় পানিতে যদি জলকম্পন শুরু না হয় তাহলে তিনি কিসের লিডার। তাই আমরা নাখান্দা সাধারন পাবলিক তথা ভোটারদের জানান দিতেই এই মহা বন্দোবস্ত। মহা ধুমধাম। মহা আয়োজন।
সভাস্থলে মান্যবর লিডার জিসিম মুবারক আনয়ন পর্যন্ত চলতে থাকে এসব ভুমিকম্প। সভাস্থলে অবস্থান পর্যন্ত এবং বয়ানের ফাঁকে ফাঁকেও চলে হাততালি, ঢোলের বাড়ি কিংবা গলাফাটানো শ্লোগান। এখন প্রশ্ন হচ্ছে যারা নিজের কর্মদিবস মাটি করে, গাড়ির তেল জ্বেলে এসব ভুমিকম্পন দিব্যি চালিয়ে যাচ্ছেন সেসব রতি মহারথিদের খরছের টাকা কিংবা খাবার আসে কোত্থেকে? এদের পেট চলে কেমনে? খাওয়া পরা আয়েশ আরাম ফোন মোবাইল গাড়ির তেল কি আকাশ থেকে নাজিল হয় সেই ঐতিহাসিক মান্না সালওয়ার মতো?
প্রবাসী রাজনীতিবিদরা বলেন উন্নত দেশের মন্ত্রী এমপি উপদেষ্টারা একা একা রাস্তায় হাটেন, নিজে বাজার সওদা করেন, প্রোগ্রামে একাই যান। সেখানে যাবার পথে ভুমিকম্প আমদানির জরুরত হয়না। পুলিশি নিরাপত্তারও জরুরত দেখা দেয়না।
জনসাধারনের কাজ কর্ম ও সময়ের অপচয় করে বিশাল শুভাযাত্রা আমদানি করে তাতে শরিক হয়ে তৈল মর্দনের প্রয়োজন হয়না। জনগন বা নেতা পাতিনেতারাও লিডারের দরবার হতে অবৈধভাবে ফায়দা হাসিলের চিন্তা করেনা এবং সে সুযোগও নেই। সে সংস্কৃতিও চালু হয়নি সেসব দেশগুলোতে। তাই বাংলাদেশের সমসাময়ির দেশ মালয়েশিয়া সিঙ্গাপুরসহ অনেকগুলি দেশ আজ উন্নতির চরম শিখরে উন্নীত হতে পারলেও আমাদের েেত্র দেখা যায় তলাবিহীন ঝুড়ি। আমরা খাদের কিনারা থেকে উঠার চেষ্টা করলে খাদ আমাদেরকে আরও নিচ দিকে টানে।
কারন আমাদের কোন মাহাথির নেই। কারন আমরা শুধু মতায় যেতে চাই আর নিজের আখোর গোছাতে চাই। মুখে গনতন্ত্রের কথা বললেও যারা দেশ চালাই তাদের নিজ দলেও গনতন্ত্রের একটু ঝিরি ঝিরি বাতাস লাগানোর চেষ্টা করিনা।
অপরদিকে যারা নিজ বা চেলা চামুন্ডাদের কৃতকর্মের বদলা হিসেবে মতাচ্যুত হন তাদের সিংহভাগ নেতা পাতিনেতার মুবারক চেহারা দিন দিন ফ্যাকাশে হয়ে যায়। চেহারার সুনা রূপার পানি কোথায় যেন হারিয়ে গিয়ে পোসাক পরিচ্ছদেও মলিন মলিন একটা ভাব দেখা দেয়।
জিসিম মুবারকের ওজন কমে যায়। উপচে পড়া তেল যেন শুকিয়ে বিবর্ণ হয়ে যায়। অফিস আদালতের অফিসার থেকে শুরু করে সাধারন পাবলিকেরা পর্যন্ত আর সেদিনের মতো আদব তমীজ করেনা। রাস্তায় চলাচলের সময় কেমন যেন অপরাধী অপরাধী একটা ভাব দেখা যায়। আলাপচারিতার সময় গলাটা যেন শুকনো শুকনো লাগে।
এছাড়া হামলা কিংবা গ্রেফতার হয়ে জেলে যাবার উৎকন্ঠাতো থাকেই। বাড়ীতে দর্শনার্থী তথা আম পাবলিকের ভীড় কমে যায়। গুনতে গুনতে দিনগুলো যেন পার হতে চায়না। দিনরাত যেন লম্বা লম্বা লাগে। ব্লাডপ্রেসার কিংবা হার্টের ব্যথা বেড়ে যায়।
টেন্ডার ভেন্ডারে মুভ করা মুশকিল হয়ে পড়ে। হাট বাজার আচার বিচার কিংবা প্রশাসন থেকে আয় রুজগারও হাতছাড়া হয়ে যায়। অনেকে দোয়া দুরুদও করেন মধ্যবর্তী নির্বাচনের। কিন্তু মতার গুড়তো বড়ো মিটা। যারা এর স্বাদ পায় রাতারতি কি ছেড়ে দেবে এমন মজার জিনিস।
যারা মতা থেকে ছিটকে পড়েন তারা দোয়া করতে থাকেন কচ্ছপগতির পরিবর্তে খরগোশ গতিতে যেন ৫টি বছর চলে যায়। কিন্তু সেই আরবী প্রবাদবাক্য সেখানেও এসে ধাধা লাগিয়ে দেয় 'আল ইনতেযারু আশাদ্দু মিনাল মাউত' অপক্ষা মৃত্যুর চেয়েও কষ্টদায়ক।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।